খারেজীদের কিছু বৈশিষ্ট্য ও আলামত
১. তারা হবে নবীন, তরুণ ও নির্বোধ, অথচ নিজেদেরকে অনেক জ্ঞানী ভাববে।
[সূত্রঃ বুখারী হা/ ৩৬১১, ৫০৫৭, ৬৯৩৪; মুসলিম হা/ ২৪৬২, ২৪৬৯]।
২. তারা সর্বোত্তম (অর্থাৎ খুব ভালো ভালো) কথা বলবে, কিন্ত সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ (অর্থাৎ নিত্যনতুন ফিত্না সৃষ্টি) করবে।
[সূত্রঃ মুসলিম হা/২৪৬২; আবুদাঊদ হা/৪৭৬৭; আহমাদ হা/২০৪৪৬]।
৩. বাহ্যিকভাবে সুন্দর কথা বলবে অর্থাৎ তাদের কথাগুলো সঠিক মনে হবে।
[সূত্রঃ বুখারী হা/ ৫০৫৭]।
৪. মুখে ঈমানের কথা বললেও তাদের অন্তরে ঈমানের লেশমাত্র থাকবে না।
[সূত্রঃ বুখারী হা/৩৪১৫]।
৫. তাদের ঈমান ও ছালাত তাদের গ্রীবাদেশ অতিক্রম করবে না।
[সূত্রঃ মুসলিম হা/২৪৬২]।
৬. পথভ্রষ্ট হয়ে যাওয়ার পর এরা আর ঈমানের দিকে ফিরে আসবে না। যেমন তীর আর ধনুকের ছিলাতে ফিরে আসে না।
[সূত্রঃ বুখারী হা/ ২৪৬২]।
৭. তারা হবে ইবাদতে অন্যদের চেয়ে অগ্রগামী অর্থাৎ ইবাদাতে তারা আগে আগে থাকবে, কিন্তু নিজেদের ইবাদতের জন্য হবে অহংকারী। লোকেরা তাদের ইবাদত দেখে অবাক হবে।
[সূত্রঃ আহমাদ হা/১২৯৭২; ইবনু আবী আছিম, আস-সুন্নাহ হা/৯৪৫]।
৮. তাদের নিদর্শন হ’ল, তাদের মাথা থাকবে ন্যাড়া।
[সূত্রঃ বুখারী হা/৩৬১০; মুসলিম হা/২৪৫১; ইবনু মাজাহ হা/১৫৭]।
৯. তারা মুসলমানদের হত্যা করবে আর কাফের, মুশরিক ও মূর্তিপূজারীদের ছেড়ে দিবে।
[সূত্রঃ বুখারী হা/ ৩৬১০; মুসলিম হা/ ২৪৫১]।
১০. তারা দ্বীনদারিতার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করবে, এমনকি দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে।
[সূত্রঃ বুখারী হা/ ৩৬১০; মুসলিম হা/ ২৪৫১; আহমাদ হা/ ৭০৩৮; ইবনু আবী আছিম, আস-সুন্নাহ, হা/ ৯২৯-৯৩০]।
১১. তারা মুসলিম শাসকদের নিন্দা করে, অপবাদ দেয় এবং তাদেরকে পথভ্রষ্ট ও কাফির বলে দাবী করে। যেমনটি খুওয়াইছারা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে করেছিল।
১২. তারা মানুষকে কিতাবুল্লাহর দিকে আহবান করবে। কিন্তু সে বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞানই থাকবে না। অর্থাৎ কিতাবুল্লাহ দিয়ে দলীল গ্রহণ করবে। কিন্তু না বুঝার কারণে দলীল গ্রহণের ক্ষেত্রে ভুল করবে।
[সূত্রঃ আবুদাঊদ হা/ ৪৭৬৫; আহমাদ হা/ ১৩৩৩৮; মিশকাত হা/ ৩৫৪৩]।
১৩. তারা ইবাদতের ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করবে।
[সূত্রঃ আহমাদ হা/১২৯৭২; বায়হাক্বী, মাজমা যাওয়ায়েদ ২২৯/৬]।
১৪. তারা সর্বোত্তম দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। যেমন আলী ও মু‘আবিয়া (رضي الله عنه)-এর বিরুদ্ধে করেছিল।
[সূত্রঃ আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ৭/৩০৫]।
১৫. তারা তাদের নিহতদেরকে জান্নাতী মনে করে। যেমন তারা নাহ্রাওয়ানের যুদ্ধের ময়দানে পরস্পরকে ‘জান্নাতমুখী’ ‘জান্নাতমুখী’ বলে ডাকছিল’।
[সূত্রঃ আল-বিদায়া ১০/৫৮৭]।
১৬. ওরা এমন জাতি যাদের অন্তরে রয়েছে বক্রতা।
[সূরা আলে-ইমরান ১০৬ নং আয়াতের তাফসীর, মুসনাদে আহমাদ হা/২২৩১৩]।
১৭. মতভেদ ও মতানৈক্যের সময় এদের আবির্ভাব হবে।
[সূত্রঃ বুখারী হা/ ৬৯৩৩]।
১৮. মক্কা থেকে পূর্বের কোন এলাকা থেকে দলটির আবির্ভাব হবে।
[সূত্রঃ সহীহ আল বুখারী, হা/ ৭১২৩]।
১৯. যেসব আয়াত কাফেরের জন্য প্রযোজ্য তারা সেগুলিকে মুমিনদের উপর প্রয়োগ করবে।
[সূত্রঃ আবুদাঊদ হা/৪৭৬৯]।
২০. তাদের আগমন ঘটবে শেষ যামানায়।
[সূত্রঃ বুখারী হা/৩৪১৫[।
২১. তারাও কুরআন ও সুন্নাহ দিয়েই কথা বলবে কিন্তু অপব্যাখ্যা করবে।
[সূত্রঃ বুখারী হা/ ৩৪১৫]।
ফলে তারা আলেমদের সাথে সবচেয়ে বেশী শত্রুতা পোষণকারী হবে। প্রতিপক্ষের বিরোধিতা করতে গিয়ে জাল হাদীছ পর্যন্ত রচনা করে।
[সূত্রঃ আল-খাওয়ারিজ আক্বীদাতান ওয়া ফিকরান ৫৪-৬৮ পৃঃ]।
২২. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের নামে এ সম্পর্কিত শরী‘আতের দলীলগুলিকে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকে।
২৩. ক্বুরআনুল কারিম থেকে তারা কেবল ভীতি প্রদর্শন সংক্রান্ত আয়াতগুলি দিয়ে দলীল গ্রহণ করে। কিন্তু ভাল কাজের পুরস্কার বা উৎসাহমূলক আয়াতগুলিকে পরিত্যাগ করে।
২৪. তারা আলেমগণকে মূল্যায়ন করবে না। নিজেদেরকেই বড় জ্ঞানী মনে করবে। যেমন খারেজীরা নিজেদেরকে হযরত আলী (رضي الله عنه), হযরত ইবনু আববাস (رضي الله عنه) সহ সকল ছাহাবী (رضي الله عنه)-এর চেয়ে জ্ঞানী দাবী করেছিল।
২৫. ওরা হুকুম লাগানোর ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে।
[সূত্রঃ আল-খাওয়ারিজ আউয়ালুল ফিরাক্ব ফী তারীখিল ইসলাম পৃঃ ৩৭-৩৮ ও ১৪৬]।
২৬. তারাই সর্বপ্রথম মুসলিমদের জামা‘আত তথা আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামা'আত হ’তে বেরিয়ে গেছে এবং তাদেরকে পাপের কারণে কাফের সাব্যস্ত করেছে।
[সূত্রঃ ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৭৯/৩৪৯, ৭/৩]।
২৭. তারা ক্বিয়াস (ধারণা বা অনুমান) ভিত্তিক কাজে বেশী বিশ্বাসী।
[সূত্রঃ আল-মিলাল ওয়ান-নিহাল ১১৬/১]।
২৮. তারা মনে করে যালেম শাসকের শাসন জায়েয নয়।
[সূত্রঃ মাকালাতুল ইসলামমিয়্যন ২০৪/১]।
৩০. ওরা মুখে আহলে ইল্মদের তথা মুহাদ্দিসিন ও ফুকাহানে ক্বিরামে ইমামগণের কথার বকওয়ায করে কিন্তু তার মর্মাথ বুঝে না।
[সূত্রঃ আশ-শারী‘আহ ২৮ পৃঃ]।
৩০. ওরা লোকদেরকে মুসলিম সমাজ হ’তে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আহবান জানায়।
৩১. তারা আত্মহত্যার মাধ্যমে এবং অন্যকে হত্যার মাধ্যমে সীমালংঘন করতঃ রক্তপাত ঘটাবে।
৩২. যতবারই তাদের আবির্ভাব হবে, ততবারই তারা ধ্বংস হবে। এভাবে রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বিশ বার বলেন।
[সূত্রঃ ইবনু মাজাহ হা/১৭৪; আরনাঊত্ব ছহীহ বলেছেন, মুসনাদ ৩৯৮/৯]।
৩৪. ভূপৃষ্ঠে সর্বদাই খারেজী আক্বীদার লোক থাকবে এবং সর্বশেষ এদের মাঝেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে।
[সূত্রঃ ইবনু মাজাহ হা/১৭৪]।
৩৫. তারা হবে সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টি।
[সূত্রঃ মুসলিম হা/ ২৪৬৯, ২৪৫৭]।
_________________
কিতাবুল ফিতান ও অভিশপ্ত খারেজী সম্প্রদায়
সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন