হযরত আলী (رضي الله عنه)-এর পক্ষ থেকে খারেজীদের সংশয় সমূহের যথার্থ জবাব


হযরত আলী (رضي الله عنه)-এর পক্ষ থেকে খারেজীদের সংশয় সমূহের যথার্থ জবাব :


খারেজীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পূর্বে হযরত আলী (رضي الله عنه) তাদের বেরিয়ে যওয়ার কারণগুলি জানতে চাইলে তারা কিছু সংশয় উপস্থাপন করে এবং তিনি প্রত্যেকটির যথার্থ জবাব দেন।


তাদের সংশয়গুলির সংক্ষিপ্ত জবাব নিমণরূপ-



প্রথম সংশয় : 


উষ্ট্রের যুদ্ধে তাদের জন্য নারী ও শিশুদেরকে যুদ্ধবন্দী ও ক্রীতদাস হিসাবে গ্রহণ করার বৈধতা কেন দেওয়া হয়নি, যেমন দেওয়া হয়েছিল অর্থ-সম্পদের ক্ষেত্রে? হযরত আলী (رضي الله عنه) জবাব দেন কয়েকটি দিক থেকে, (দিকগুলো হলোঃ)


(১) ত্বালহা ও যুবায়র (رضي الله عنه) বায়তুল মাল থেকে যে সামান্য অর্থ নিয়েছিলেন তার বিনিময়ে তাদের জন্য মাল নেয়ার বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়াও তা ছিল খুবই সামান্য সম্পদ।


(২) নারী ও শিশুরা তো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। তাছাড়াও তারা ইসলামী ভূমিতে বসবাসকারী মুসলিম। তারা মুরতাদ হয়েও যায়নি যে, তাদেরকে ক্রীতদাস হিসাবে গ্রহণ করা জায়েয হবে।


(৩) তিনি তাদেরকে বলেন, ‘আমি যদি নারী ও শিশুদেরকে ক্রীতদাস হিসাবে গ্রহণ করা বৈধ করতাম তাহ’লে তোমাদের মধ্যে কে আছে যে (উম্মুল মুমিনীন) আয়েশা (رضي الله عنه)-কে নিজের অংশে ক্রীতদাস হিসাবে গ্রহণ করার যোগ্যতা রাখ?! তখন নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তাদের মধ্যে অনেকেই সঠিক পথে ফিরে এসে আলী (رضي الله عنه)-এর আনুগত্য মেনে নেয়।



দ্বিতীয় সংশয় : 


হযরত আলী (رضي الله عنه) কেন মু‘আবিয়া (رضي الله عنه)-এর সাথে ছিফ্ফীনের সন্ধি চুক্তি লেখার সময় নিজের নামের প্রথমে ‘আমীরুল মুমিনীন’ কথাটি মুছে ফেলেন এবং তাঁর কথা মেনে নিলেন? তিনি জবাব দেন এই বলে যে, ‘আমি তো তাই করেছি যা স্বয়ং রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) হুদায়বিয়ার সন্ধিতে করেছিলেন। তিনি নিজের নামের প্রথম থেকে ‘রাসূলুল্লাহ’ শব্দটি কাফেরদের দাবী অনুযায়ী মুছে ফেলেন’।



তৃতীয় সংশয় :


তিনি হকের পথে থাকার পরেও কেন তাহকীম বা শালিস নিয়োগ করলেন? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘হক্বের পথে থাকার পরেও রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বানু কুরায়যা-এর ক্ষেত্রে হযরত সা‘দ বিন মু‘আয (رضي الله عنه)-কে শালিস নিয়োগ করেছিলেন’।



চতুর্থ সংশয় : 


হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেছিলেন, ‘আমি যদি খেলাফতের হকদার হয়ে থাকি, তাহ’লে তারা আমাকে খলীফা নির্বাচন করবে’। খারেজীদের দাবী তিনি নিজের খলীফা হওয়ার যোগ্যতার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেছেন।


এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ছিল হযরত মু‘আবিয়া (رضي الله عنه)-এর প্রতি ইনছাফ করা। যেমন রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) নাজরানের নাছারাদেরকে মুবাহালার জন্য আহবান করেছিলেন তাদের প্রতি ইনছাফ প্রদর্শনের জন্য। এরপর তাদের অনেকেই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসে এবং তাঁর আনুগত্য মেনে নেয়। আর বাকীদের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করেন, যা ‘নাহরাওয়ান’ যুদ্ধ নামে পরিচিত। এতে তারা নয় জন ব্যতীত সকলেই নিহত হয়।


পক্ষান্তরে হযরত আলী (رضي الله عنه)-এর পক্ষের নয় জন শাহাদত বরণ করেন। এই যুদ্ধেই খারেজী নেতা আব্দুল্লাহ বিন ওহাব রাসবী নিহত হয়। যুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে খারেজীরা পরাজিত হয় এবং তাদের ফিৎনাও সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বলা হয়, সেদিন বেঁচে যাওয়া নয়জন খারেজীই বিভিন্ন দেশে তাদের বীজ বপন করে। পরাজিত খারেজীদের বংশধর ও অনুসারীরা এর পরেও বিভিন্ন সময় আত্মপ্রকাশ করে এবং ফিৎনা-ফাসাদ বাঁধানোর চেষ্টা করে। যদিও রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর সময়ে ও পরবর্তীতে হযরত আবুবকর, হযরত ওমর ও হযরত ওছমান (رضي الله عنه)-এর যুগে কিছু খারেজী আক্বীদার লোক ছিল, কিন্তু তাদের ফিৎনা সবচাইতে মারাত্মক আকার ধারণ করে আলী (رضي الله عنه)-এর খিলাফতকালে। সেই থেকে যুগে যুগে বিভিন্ন নামে-বেনামে খারেজী দল বা খারেজী ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছে।

_________________

কিতাবুল ফিতান ও অভিশপ্ত খারেজী সম্প্রদায়

সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন