কুমন্ত্রণা
প্রায় আল্লাহর যিকির করার পরও শয়তানের কুমন্ত্রণা যায় না। যেমন; নামায সবচেয়ে বড় যিকির কিন্তু নামাযে তো অনেক বেশি কুমন্ত্রণা আসে, এমনকি ভুলে যাওয়া বিষয়ও শয়তান স্মরণ করিয়ে দেয়! কুমন্ত্রণার প্রতিকার: নিঃসন্দেহে যিকিরের মাধ্যমে শয়তান পালিয়ে যায় আর নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করেন। যেমনটি কোরআনে পাকের সূরা গাফির এর ৬০ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
ٱدْعُونِىٓ أَسْتَجِبْ لَكُمْۚ
"Call upon Me; I will respond to you."
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আমার নিকট দোয়া করো, আমি কবুল করবো।
এরপরও প্রায় দোয়া কবুলের প্রভাব প্রকাশ পায় না, অতঃএব জানা গেলো যে, যিকিরের মাধ্যমে শয়তানকে তাড়ানো এবং দোয়া কবুল হওয়ার কিছু শর্তও রয়েছে, যেমনিভাবে ঔষধের ব্যাপার হলো যে, সংযমতা অবলম্বন না করলে ঔষধ কাজ করে না, যেমন; কেউ “ডায়াবেটিক” রোগে আক্রান্ত হয়েছে, তারপরও মিষ্টান্ন খেয়েই যাচ্ছে, তবে ঔষধ কি করবে। সুতরাং যিকিরের মাধ্যমে কুমন্ত্রণা হতে মুক্তি পেতে এবং শয়তানকে তাড়ানোর জন্য গুনাহ হতে বেঁচে থাকাটা আবশ্যক। যদি খোদাভীরুতা অবলম্বন না করে তবে যিকির নামক ঔষধের কুমন্ত্রণা রোগে প্রভাব বিস্তার করা অসম্ভব হয়ে পড়বে!
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাজ্জালী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: শয়তান ক্ষুধার্ত কুকুরের মতো, যে তোমার নিকটেই আসে, যদি তোমার এবং তার মধ্যখানে রুটি বা মাংস না থাকে তবে তাড়ালে চলে যায় অর্থাৎ শুধু আওয়াজ করেই তাকে তাড়ানো যায় আর যদি তোমার সামনে মাংস থাকে এবং সে ক্ষুধার্তও হয় তবে সে মাংসের উপর ঝাপিয়ে পরে এবং শুধু আওয়াজ করে তাড়ালেও যায়না। তো যে অন্তর শয়তানের খাবার বিহীন হয়, সেই অন্তর থেকে যিকিরের কারণে শয়তান দূর হয়ে যায়, যখন অন্তরের মধ্যে কামভাবের প্রাধান্য থাকে, তবে অন্তরের ভিতরের অংশ শয়তানের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং সেই সময় করা আল্লাহর যিকিরকে অন্তরের চারিদিকে ছড়িয়ের দেয়। খোদাভীরু লোকদের অন্তর, যা নফসের কুপ্রবৃত্তি ও মন্দ স্বভাবের পরিপন্থি, তাদের প্রতি শয়তান কুপ্রবৃত্তির কারণে আসেনা বরং উদাসীনতার কারনে যিকির থেকে দূরে থাকার কারণে আসে। যখন সে যিকিরের দিকে ধাবিত হয়, তখন সে দূর হয়ে যায়। (ইহইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ৪৫ পৃষ্ঠা) তবে যারা রাত দিন গুনাহে লিপ্ত থাকে এরূপ ব্যক্তি তো যেনো শয়তানের বন্ধু এবং শয়তান তার বন্ধুদের নিকট হতে এত সহজেই পালিয়ে যায়, তা আর কোথায়! ১৭তম পারা, সূরা হজ্ব এর ৪ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
كُتِبَ عَلَيْهِ أَنَّهُۥ مَن تَوَلَّاهُ فَأَنَّهُۥ يُضِلُّهُۥ وَيَهْدِيهِ إِلَىٰ عَذَابِ ٱلسَّعِيرِ
It has been decreed for every devil that whoever turns to him - he will misguide him and will lead him to the punishment of the Blaze.
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: যার সম্বন্ধে (এ নিয়ম) লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যে, যে কেউ তার সাথে বন্ধুত্ব করবে, তবে সে অবশ্যই তাকে পথভ্রষ্ট করে দেবে এবং তাকে দোযখের শাস্তির পথ প্রদর্শন করবে।
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: আসল যিকির অন্তরে ঐ সময় অর্জিত হবে, যখন অন্তরকে খোদাভীরুতার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করা হয়, তাছাড়া একে খারাপ গুণ হতে পবিত্র করতে হবে, অন্যথায় যিকির শুধু আসা যাওয়াই করবে, অন্তরে এর (অথার্ৎ যিকির) রাজত্ব এবং নিয়ন্ত্রন থাকবে না, সুতরাং সে শয়তানের রাজত্বকে দূর করতে পারবে না। তিনি আরো বলেন: যদি তুমি শয়তান থেকে বাঁচাতে চাও তবে প্রথমে খোদাভীরুতার মাধ্যমে পরহেযগারীতা অবলম্বন করো, অতঃপর যিকিরের ঔষধ ব্যবহার করবে, আর এভাবেই শয়তান তোমার থেকে পালিয়ে যাবে।
(ইহইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ৪৫-৪৭ পৃষ্ঠা)
নফস ও শয়তাঁ হো গেয়ে গা‘লিব,
উন কে চুঙ্গাল সে তু ছুঁড়া ইয়া রব!
কর কে তাওবা মে ফির গুনাহো মে,
হো হি জা‘তা হোঁ মুবতালা ইয়া রব!
নি’ম জাঁ কর দিয়া গুনাহোঁ নে,
মরযে ইচইয়াঁ সে দে শিফা ইয়া রব!
امين بجاه النبي الامين
صَلُّوْا عَلَيْ الْحَبِيْب صَلَّي الله عَلَيْ مُحَمَّد
_____________
কিতাব: ওয়াসওয়াসা এবং এর প্রতিকার
লেখক: আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন