চার ইমামের ফিক্বহের আলোকে নারী পুরুষের নামাজ পদ্ধতি ভিন্ন

 

চার ইমামের ফিক্বহের আলোকে নারী পুরুষের নামাজ পদ্ধতি ভিন্ন


ফিক্বহে ইসলামীর চারটি সংকলন মুসলিম উম্মাহর মাঝে প্রচলিত। যথা-

১-ফিক্বহে হানাফী


২-ফিক্বহে শাফেয়ী


৩-ফিক্বহে মালেকী


৪-ফিক্বহে হাম্বলী



এবার দেখুন এই চার ফিক্বহের ইমামদের মতামত।



১-ফ্বিকহে হানাফী



ﺍﺣﺐ ﺍﻟﻴﻨﺎ ﺍﻥ ﺗﺠﻤﻊ ﺭﺟﻠﻴﻬﺎ ﻣﻦ ﺟﺎﻧﺐ ﻭﻻ ﺗﻨﺘﺼﺐ ﺍﻧﺘﺼﺎﺏ ﺍﻟﺮﺟﻞ، ) ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻵﺛﺎﺭ - 1/609 )



ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله)-এর অন্যতম সাগরীদ ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) বলেন, “আমাদের নিকট পছন্দনীয় হলো, মহিলারা নামাযে উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবে। পুরুষের মতো এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেনা। {কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মদ রহঃ-১/৬০৯}



ﺭﻭﻯ ﺍﻣﺎﻣﻨﺎ ﺍﻷﻋﻈﻢ ﻋﻦ ﻧﺎﻓﻊ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺃﻧﻪ ﺳﺌﻞ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻳﺼﻠﻴﻦ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ؟ ﻗﺎﻝ ﻛﻦ ﻳﺘﺮﺑﻌﻦ ﺃﻣﺮﻥ ﺃﻥ ﻳﺤﺘﻔﺰﻥ،


ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺑﻮ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﻟﺤﺎﺭﺛﻰ ﻭﺍﻷﺷﻨﺎﻧﻰ ﻭﺍﺑﻦ ﺧﺴﺮﻭ ﻣﻦ ﻃﺮﻳﻘﻪ ﻋﻦ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﺍﻟﺜﻮﺭﻯ ﻋﻨﻪ، ﺭﺍﺟﻊ ﺟﺎﻣﻊ ﺍﻟﻤﺎﺳﺎﻧﻴﺪ - 1/400 ، ﻭﻫﺬﺍ ﺃﻗﻮﻯ ﻭﺍﺣﺴﻦ ﻣﺎ ﺭﻭﻯ ﻓﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺒﺎﺏ، ﻭﻟﺬﺍ ﺍﺣﺘﺞ ﺑﻪ ﺍﻣﺎﻣﻨﺎ ﻭﺟﻌﻠﻪ ﻣﺬﻫﺒﻪ ﻭﺃﺧﺬ ﺑﻪ،



আমাদের ইমামে আজম আবু হানীফা (رحمة الله) নাফে (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন, “হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, “রাসূল (ﷺ)-এর যুগে মহিলারা কীভাবে নামায পড়তেন?” তিনি বললেন, “আগে তারা চার জানু হয়ে বসতেন, পরে তাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে”। {জামেউল মাসানিদ-১/৪০০}



উক্ত হাদিসটি এ বিষয়ে বর্ণিত সবকিছুর চেয়ে শক্তিশালী। এ কারণেই আমাদের ইমাম এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। এ অনুযায়ী আমল করেছেন; এবং এটিকে নিজের মাযহাব বানিয়েছেন। {কিতাবুল আসার-এর টীকা-১/৬০৭}



মহিলাদের ক্ষেত্রে পার্থক্যের বর্ণনা হানাফী ফিক্বহের কিতাবে দেখুন -



১-বাদায়িউস সানায়ে-১/৪৬৬


২-হেদায়া-১/১০০-১১০


৩-আল মাবসূত লিস সারাখসী-১/৪৬৬


৪-ফাতওয়ায়ে শামী-১/৫০৪


৫-ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৭৩-৭৫


২-ফিক্বহে শাফেয়ী



( ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ( ﻭﻗﺪ ﺃﺩﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﺑﺎﻻﺳﺘﺘﺎﺭ ﻭﺃﺩﺑﻬﻦ ﺑﺬﻟﻚ ﺭﺳﻮﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺃﺣﺐ ﻟﻠﻤﺮﺃﺓ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﺃﻥ ﺗﻀﻢ ﺑﻌﻀﻬﺎ ﺇﻟﻰ ﺑﻌﺾ ﻭﺗﻠﺼﻖ ﺑﻄﻨﻬﺎ ﺑﻔﺨﺬﻳﻬﺎ ﻭﺗﺴﺠﺪ ﻛﺄﺳﺘﺮ ﻣﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﻟﻬﺎ ﻭﻫﻜﺬﺍ ﺃﺣﺐ ﻟﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺠﻠﻮﺱ ﻭﺟﻤﻴﻊ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺃﻥ ﺗﻜﻮﻥ ﻓﻴﻬﺎ ﻛﺄﺳﺘﺮ ﻣﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﻟﻬﺎ ) ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﻡ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺬﻛﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ )



ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন, “আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তার রাসূল (ﷺ) সেরকম শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দীয় হলেঅ, সেজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। আর সেজদা এমনভাবে করবে, যাতে সতরের চূড়ান্ত হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে, যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়। {কিতাবুল উম্ম-১/১৩৮)

৩-ফিক্বহে মালেকী



মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফক্বীহ ইমাম আবুল আব্বাস আল কারাফী (رحمة الله) ইমাম মালিক (رحمة الله)-এর অভিমত উল্লেখ করেন -



ﻭﺃﻣﺎ ﻣﺴﺎﻭﺍﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻟﻠﺮﺟﺎﻝ ﻓﻔﻲ ﺍﻟﻨﻮﺍﺩﺭ ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺗﻀﻊ ﻓﺨﺬﻫﺎ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺗﻨﻀﻢ ﻗﺪﺭ ﻃﺎﻗﺘﻬﺎ ﻭﻻ ﺗﻔﺮﺝ ﻓﻲ ﺭﻛﻮﻉ ﻭﻻ ﺳﺠﻮﺩ ﻭﻻ ﺟﻠﻮﺱ ﺑﺨﻼﻑ ﺍﻟﺮﺟﻞ



নামাযে মহিলা পুরুষের মতো কিনা? এ বিষয়ে ইমাম মালিক (رحمة الله) থেকে বর্ণিত: মহিলা ডান উরু বাম উরুর ওপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। রুকু সেজদা ও বৈঠকে কোনো সময়-ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবেনা। পক্ষান্তরে, পুরুষের পদ্ধতি হলো ভিন্ন। {আয যাখীরা-২/১৯৩}






৪-ফিক্বহে হাম্বলী



ইমাম আহমদ (رحمة الله)-এর ফাতওয়ার উল্লেখ আছে ইমাম ইবনে কুদামা (রহ)-এর আল-মুগীনী কিতাবে;



ﻓﺄﻣﺎ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﺬﻛﺮ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻓﻴﻬﺎ ﺭﻭﺍﻳﺘﻴﻦ ﻋﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﺇﺣﺪﺍﻫﻤﺎ ﺗﺮﻓﻊ ﻟﻤﺎ ﺭﻭﻯ ﺍﻟﺨﻼﻝ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩﻩ ﻋﻦ ﺃﻡ ﺍﻟﺪﺭﺩﺍﺀ ﻭﺣﻔﺼﺔ ﺑﻨﺖ ﺳﻴﺮﻳﻦ ﺃﻧﻬﻤﺎ ﻛﺎﻧﺘﺎ ﺗﺮﻓﻌﺎﻥ ﺃﻳﺪﻳﻬﻤﺎ ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﻃﺎﻭﺱ ﻭﻷﻥ ﻣﻦ ﺷﺮﻉ ﻓﻲ ﺣﻘﻪ ﺍﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﺷﺮﻉ ﻓﻲ ﺣﻘﻪ ﺍﻟﺮﻓﻊ ﻛﺎﻟﺮﺟﻞ ﻓﻌﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺗﺮﻓﻊ ﻗﻠﻴﻼ ﻗﺎﻝ ﺃﺣﻤﺪ ﺭﻓﻊ ﺩﻭﻥ ﺍﻟﺮﻓﻊ ﻭﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ ﻻ ﻳﺸﺮﻉ ﻷﻧﻪ ﻓﻲ ﻣﻌﻨﻰ ﺍﻟﺘﺠﺎﻓﻲ ﻭﻻ ﻳﺸﺮﻉ ﺫﻟﻚ ﻟﻬﺎ ﺑﻞ ﺗﺠﻊ ﻧﻔﺴﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﻭﺳﺎﺋﺮ ﺻﻼﺗﻬﺎ



তাকবীরের সময় মহিলারা হাত ওঠাবে কি ওঠাবে না? এ বিষয়ে কাজী [আবু ইয়াজ] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (رحمة الله) থেকে দু’টি মত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত হলো, হাত ওঠাবে। কেননা খাল্লাল হযরত উম্মে দারদা এবং হযরত হাফসা বিন সীরীন থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন যে, তারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউসের বক্তব্যও তাই। উপরন্তু, যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত ওঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে। এ হিসেবে মহিলারাও হাত উঠাবে। তবে সামান্য। আহমাদ (رحمة الله) বলেন, “তুলনামূলক কম উঠাবে”।


দ্বিতীয় মত হলো,“মহিলাদের জন্য হাত ওঠানোরই হুকুম নাই। কেননা হাত উঠালে কোনো না কোনো অঙ্গকে ফাঁক করতেই হয়, অথচ মহিলাদের জন্য এর বিধান দেওয়া হয়নি। বরং তাদের জন্য নিয়ম হলো, রুকু সেজদাসহ পুরো নামাযে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে। {আল মুগনী-২/১৩৯}।


আলোচনার এই পর্যায়ে হাদীস, আসারে সাহাবা, তাবেয়ীন ও চার মাযহাবের ইমামদের ঐকমত্যের প্রমাণ পেশ করার পর আমরা দেখবো আমাদের যে গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা মহিলাদের নামাযের ভিন্ন বিষয়টিকে উপেক্ষা করেন এবং পুরুষ ও মহিলার নামাযের অভিন্ন পদ্ধতির পক্ষে কথা বলেন, তাদের আলেমবর্গ এ বিষয়ে কী বলেন? আর তারা কী-ই বা ফাতওয়া দিয়েছেন এই বিষয়ে?

________________

কিতাবঃ পুরুষ ও নারীর নামায পদ্ধতি এক নয়

🖋মুফতী মাওলানা এস, এম, সাকীউল কাউছার

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন