আলবানী’র অসার বক্তব্য

 

আলবানী’র অসার বক্তব্য


আশ্চর্যের কথা হলো, উপরোল্লিখিত দলীলসমূহ এবং উম্মতের মাঝে নববী যুগ থেকে পর্যায়ক্রমে চলে আসা এই সর্বসম্মত আমলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নাসিরুদ্দীন আলবানী তার “সিফাতুস সালাতে” পুস্তকে ঘোষণা করেন যে “পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতি এক-ই।”

কিন্তু এই দাবির পক্ষে তিনি না কোনো আয়াত পেশ করেছেন, না কোনো হাদিস; আর না কোনো সাহাবী বা তাবেয়ীর ফাতওয়া। এহেন বক্তব্যের ভিত্তি তিনি শুধু এটাকেই বানিয়েছেন যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিগত পার্থক্যের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস নাই। অথচ তার এই দাবি প্রমাণ করার জন্য উচিত ছিল উপরোল্লিখিত দলিল সমূহ বিশ্লেষণ করা। কিন্তু তিনি তা না করে কেবল পার্থক্য সম্বলিত একটি হাদীসকে {যা বক্ষ্যমান নিবন্ধে উল্লেখিত হয়েছে} শুধু এ কথা বলে যয়ীফ বলে আখ্যা দিয়েছেন যে হাদীসটি ‘মুরসাল’। আর মুরসাল হওয়ায় এটি দুর্বল। এ ছাড়া অন্য কোনো আলোচনাই তিনি দলীল সম্পর্কে করেননি।



কিন্তু তার এই কথাটি একগুঁয়েমি ছাড়া কিছু নয়। কারণ মুহাদ্দীসীনে কিরামের নিকট হাদিস মুরসাল হলেই তা অগ্রহণীয় হয়ে যায় না। কেননা প্রথমত আয়িম্মায়ে দ্বীনের অধিকাংশের মতে বিশেষত স্বর্ণযুগের ইমামগণের নিকট যদি প্রয়োজনীয় শর্তাবলী উপস্থিত থাকে, তাহলে মুরসাল হাদিসও সহীহ হাদিসের মতো গ্রহণযোগ্য।

দ্বিতীয়তঃ যে ইমামগণের নিকট ‘মুরসাল” হাদীসকে সহীহ বলার ব্যাপারে দ্বিধা রয়েছে, তারাও মূলত কিছু শর্তের সাথে মুরসাল হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করার উপযোগী মনে করেন। প্রবন্ধের শুরুতে বর্ণিত মুরসাল বর্ণনাটিতেও সেসব শর্ত বিদ্যমান; যার কারণে গায়রে মুকাল্লিদদের বিখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিস নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান “আউনুল বারী”-(১/৫২০ দারুর রাশীদ, হালাব সিরিয়া) তে লিখেছেন-“এই মুরসাল হাদীসটি সকল ইমামের উসূল ও মূলনীতি অনুযায়ী দলীল হওয়ার যোগ্য”। তার পূর্ণ বক্তব্যটি দেখুন আওনুল বারী-২/১৫৯।



পুরুষ মহিলার নামাযের পার্থক্য নেই প্রমাণ করতে আলবানী দ্বিতীয় যে কাজটি করেছেন, তা খুবই গর্হিত। সেটা হলো, তিনি ইবরাহীম নাখয়ী (رحمة الله)-কে নাকি বলেছেন, “মহিলা পুরুষের মতোই নামায আদায় করবে”। এই কথাটি নাকি মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাতে আছে। অথচ সেই কিতাবের কোথাও এই উক্তিটি নাই। আল্লাহ-ই ভালো জানেন তিনি কি করে এই কথা বলতে পারলেন!!



অথচ ইতিপূর্বে মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার একাধিক বর্ণনা সহীহ সনদে ইবরাহীম নাখয়ী থেকে উদ্ধৃত হয়েছে, যেখানে ইবরাহীম নাখয়ী (رحمة الله) স্পষ্ট-ই মহিলা পুরুষের নামাযের পার্থক্যের কথা বলেছেন।


আলবানী সাহেব তার নিজের দাবি প্রমাণ করার জন্য তৃতীয় আরেকটি কাজ করেছেন। সেটা হলো, ইমাম বুখারী (رحمة الله)-এর রিজালশাস্ত্রের একটি কিতাব “তারীখে সগীর” থেকে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি তিনি পেশ করেছেন -



ﻋﻦ ﺍﻡ ﺍﻟﺪﺭﺩﺍﺀ ﺍﻧﻬﺎ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﺠﻠﺲ ﻓﻰ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺟﻠﺴﺔ ﺍﻟﺮﺟﻞ-



“উম্মে দারদা থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নামাযে পুরুষের মতো বসতেন।”



আলবানী সাহেব খেয়াল করতে পারেননি যে, এই বর্ণনাটি দ্বারা নামাযে পুরুষ ও মহিলার বসার ভিন্নতাই প্রমাণ হয়, এক হওয়া নয়। যদি উভয় বসার পদ্ধতি এক হতো, তাহলে “পুরুষের মতো বসা” কথাটির কোনো অর্থ থাকতো না। তাই এই কথা থেকে এটি বুঝা যায় যে, সেই যমানায় পুরুষদের মতো মহিলারা বসতো না। কিন্তু তিনি যেহেতু ভিন্নভাবে বসতেন তাই এটি ইতিহাসের বর্ণনায় চলে এসেছে।



আরেকটি মজার ব্যাপার হলো, উম্মে দারদা হলেন একজন তাবেয়ী। তিনি ৮০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তাবেয়ীর বক্তব্য দ্বারা আলবানী সাহেব দলীল পেশ করেন। অথচ তিনিই আমাদের বর্ণিত প্রথম হাদীসটি মুরসাল বলে প্রত্যাখ্যান করেন। আশ্চর্য ব্যাপার!!



সুতরাং যদি নামাযের পদ্ধতি বর্ণনার ক্ষেত্রে তাবেয়ীর আমল দলীল হয়ে থাকে (আসলে কথা এটাই, অর্থাৎ তাবেয়ীর কথা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য) তাহলে ইতঃপূর্বে বিখ্যাত একাধিক তাবেয়ী ইমামগণের উদ্ধৃতিতে মহিলাদের নামাযের পদ্ধতির ভিন্নতার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে; আর একথা-ও প্রমাণিত হয়েছে যে, আয়িম্মায়ে তাবেয়ীদের তালীম ও শিক্ষা অনুযায়ী রুকু, সেজদা, ও বৈঠকসহ অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের নামায পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন ছিল। এক্ষেত্রে শুধু একজন তাবেয়ী মহিলার ব্যক্তিগত আমলকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করাটা কিছুতেই যুক্তিযুক্ত হতে পারেনা। বিশেষ করে যখন যখন ঠিক এই বর্ণনাটির মাঝেই সুষ্পষ্ট একথার ইঙ্গিত রয়েছে যে, এ ক্ষেত্রে এ মহিলা অন্য সাহাবী ও তাবেয়ী মহিলা থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।



সুতরাং বোঝা গেল যে নামাযের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মহিলারা পুরুষদের থেকে আলাদা; এটাই দলীল দ্বারা প্রমাণিত। গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের বক্তব্যটির কোনো দলিল নেই। আল্লাহ তায়ালা সত্যকে সত্য হিসেবে মেনে নেবার তৌফিক আমাদের দান করুন, আমীন!

                                                            সমাপ্ত

________________

কিতাবঃ পুরুষ ও নারীর নামায পদ্ধতি এক নয়

🖋মুফতী মাওলানা এস, এম, সাকীউল কাউছার

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন