হাদিসের নামে একটি বানোয়াট কাহিনী

 

হাদিসের নামে একটি বানোয়াট কাহিনী-


জাল হাদিসটি নিম্নরূপ-

ان الله قبض من نور وجهه قبضة ونظر اليهم فعرفت وذلقت فخلق الله من كل نقطة نبيا وان القبضة كانت هى النبى صلى الله عليه وسلم 

অর্থাৎ আল্লাহতা’য়ালা নিজের চেহারা থেকে একমুষ্টি নূর পৃথক করে উক্ত নূরের প্রতি দৃষ্টি করার পর উহা হতে তীক্ষè আলো বিশিষ্ট অনেকগুলো ঘামের ফোঁটা বের হলো, তৎক্ষণাৎ আল্লাহতায়ালা এ ঘামের প্রতিটি ফোঁটা থেকে একেকজন নবী সৃষ্টি করলেন এবং আল্লাহতা’য়ালা চেহারা থেকে পৃথক করা উক্ত মুষ্টি নূরই হলেন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ প্রসঙ্গে ইমাম আল্লামা মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল বাকী জারকানী মালেকী আলাইহির রহমত তদীয় الزرقانى ‘যারকানী’ নামক কিতাবের প্রথম খ- ২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করে এ রেওয়ায়েত সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন নিম্নে হুবহু তা প্রদত্ত হলো-


واما ما ذكر ان الله قبض من نور وجهه قبضة ونظر اليهم فعرقت وذلقت فخلق الله من كل نقطة نبيا وان القبضة كانت هى النبى صلى الله عليه وسلم ........................... فقال الحافظ ابو العباس احمد بن تيمية فى فتاويه ونقله الحافظ ابن كثير فى تاريخه واقره كل ذلك كذب مفترى باتفاق اهل العلم بحديثه- 


ভাবার্থ: উল্লেখ রয়েছে যে, আল্লাহতা’য়ালা স্বীয় চেহারার নূর হতে এক মুষ্টি নূর পৃথক করে উক্ত নূরের প্রতি দৃষ্টি করার পর উহা হতে তীক্ষè আলো বিশিষ্ট অনেকগুলো ঘামের ফোঁটা বের হলো। তৎক্ষণাৎ আল্লাহতা’য়ালা এ ঘামের প্রতিটি ফোঁটা থেকে এক একজন নবী সৃষ্টি করলেন এবং আল্লাহতায়ালার চেহারা হতে পৃথক করা উক্ত মুষ্টি নূরই হলেন আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম.................। এ জাতীয় কথাগুলো সম্পর্কে আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে তাইমিয়া তাঁর ফাতাওয়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং হাফিজ ইবনে কাছির রহমতুল্লাহ আলাইহি তাঁর তারিখ বা ইতিহাস গ্রন্থেও বর্ণনা করেছেন এবং তিনি (ইবনে কাছির রহমতুল্লাহ আলাইহি) এ বর্ণনাকে আপত্তিকর বলে স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন- সকল মুহাদ্দিসীনে কেরামের ঐকমত্যে এ সমস্ত বর্ণনা, অমূলক, মিথ্যা ও বানোয়াট। উপরোক্ত মিথ্যা বানোয়াট ঘটনা দ্বারা কয়েকটি কুফুরি স্পষ্টভাবে সাব্যস্ত হয়- ১. আল্লাহতা’য়ালা নিজেই তাঁর চেহারা মোবারকের নূর থেকে একমুষ্টি নূর পৃথক করে নবী বানালেন। (নাউজুবিল্লাহ) এতে প্রমাণিত হলো- আল্লাহ শরির ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশিষ্ট। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সৃষ্টির মাদ্দা বা উপাদান হলো আল্লাহর চেহারা থেকে পৃথক করা একমুষ্টি নূর। যা আল্লাহর সত্ত্বার অংশ। এটা সুষ্পষ্ট কুফুরি। কেননা আল্লাহতা’য়ালা শরির বিশিষ্ট হওয়া, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হওয়া, আকৃতি বিশিষ্ট হওয়া বা মাদ্দা হওয়া থেকে পাক ও পবিত্র। এ সম্পর্কে গাউসেপাক ‘সিররুল আসরার’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-


فالحق منزه عن الصورة والمادة وخواس والاجسام 


অর্থাৎ প্রকৃত সত্য কথা হলো আল্লাহতা’য়ালা আকৃতিবিশিষ্ট হওয়া, মাদ্দা বা উপাদান হওয়া এবং বিশেষ শরির বিশিষ্ট হওয়া থেকে পুতঃপবিত্র।


উল্লেখ্য যে, হাফিজ ইবনে তাইমিয়া উলামায়ে আহলে সুন্নাত এর মতে বিতর্কিত ব্যক্তি। তার বিভিন্ন আকিদা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের পরিপন্থী রয়েছে। তবে হাফিজ ইবনে কাসির রহমতুল্লাহ আলাইহি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। এজন্য সুন্নি উলামায়ে কেরামগণ হাফিজ ইবনে কাসির রহমতুল্লাহ আলাইহি সম্পর্কে কোনরূপ বিরূপ মন্তব্য করেননি। শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমতসহ অন্যান্য উলামায়ে কেরামগণ তাঁর ইলমি খেদমত ও অবদানের ব্যাপারে পঞ্চমুখ। শায়খ দেহলভী তাঁর মাদারিজুন নবুয়ত গ্রন্থে ১ম খ- ১৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-


بعد آزان در نظر آمد کہ شیخ کبیر عماد الدین بن کثیروی ازا اعاظم علمای حدیث وتفسیراست الخ 


অর্থাৎ অতঃপর আমার দৃষ্টিতে শায়খে কবির ইমাদুদ্দিন ইবনে কাছির, যিনি হাদিস ও তাফসির শাস্ত্রে শ্রেষ্ঠ উলামায়ে কেরামদের মধ্যে অন্যতম সুপন্ডিত ছিলেন।


২. এ মিথ্যা ও বানোয়াট ঘটনা আল্লাহর কালামের পরিপন্থী ليس كمثله شئ ‘আল্লাহতা’য়ালার কোন মিসাল বা উদাহরণ নেই। তাফসিরে কবির নামক কিতাবের পনেরো পারার ১৫ পৃষ্ঠায় এ আয়াতের কারিমার তাফসিরে উল্লেখ রয়েছে-


(المسئلة الاولى) احتج علماء التوحيد قديما وحديثا بهذه الاية فى نفى كونه تعالى جسما مركبا من الاعضاء والاجزاء وحاصلا فى المكان والجهة وقالوا لوكان جسما لكان مثلا لسائر الاجسام فيلزم حصول الامثال والاشباه له- وذلك باطل بصريع قوله تعالى (ليس كمثله شئ) الخ 


ভাবার্থ: নবীন ও প্রবীন তাওহীদপন্থী উলামায়ে কেরামগণ আল্লাহতা’য়ালা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোগে জিসিম বা শরির বিশিষ্ট নন মর্মে অত্র আয়াতে কারিমা দ্বারা দলিল প্রদান করেছেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হলে স্থান দিক হওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে, তারা বলেন- যদি তিনি (আল্লাহ) শরির বিশিষ্ট হন যেরূপ অন্যান্য শরির বিশিষ্টগণের মধ্যে বিদ্যমান আছে, তা হলে তার সাথে অন্যের মতো বা সাদৃশ্য হওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়ে, এ সকল ধ্যান ধারনা স্পষ্ট বাতিল। কারণ আল্লাহতায়ালার অমীয় বাণী ليس كمثله شئ ‘লাইসা কা মিসলিহী শাইয়ুন’ অর্থাৎ তিনি কোন বস্তুর মত নহেন। উপরোক্ত এবারত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো আল্লাহতায়ালা নিরাকার তাঁকে সাকার বলে আখ্যায়িত করা ঈমান বিধ্বংসী আকিদা। আল্লাহপাক যেন আমাদের সকলকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকাইদের উপর অটল থাকা এবং মরণপর্যন্ত ইস্তেকামত থাকার তাওফিক দান করেন। যাতে আমরা ঈমানের সাথে ইহজগত ত্যাগ করাতে পারি।। আমিন। বিহুর মতে সায়্যিদিল মুরসালিন।

__________

কিতাব : মি’রাজুন নাবী ﷺ

লেখকঃ  হযরতুল আল্লামা অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী (মা.জি.আ.)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন