একখানা হাদিসে কুদসি ও এর ব্যাখ্যা

 

একখানা হাদিসে কুদসি ও এর ব্যাখ্যা- 


মুবহাম ও মুতাশাবিহাত সংক্রান্ত একখানা হাদিসে কুদসি, যেমন-

خلقت محمدا من نور وجهى 

‘খালাকতু মুহাম্মাদান মিন নূরী ওয়াজহী’ এর শাব্দিক অর্থ হলো- আমি (আল্লাহ) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার চেহারার নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছি। এ শাব্দিক অর্থের উপর ভিত্তি করে কিছু সংখ্যাক বিভ্রান্ত লোক আল্লাহর শরির, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা শরিরে বিভিন্ন অংশ সাব্যস্ত করার অপচেষ্টা করে। যা বিভিন্ন মুহকাম আয়াতের স্পষ্ট অর্থের ব্যতিক্রম হয়। আল্লাহর শানে এরূপ ব্যতিক্রম অর্থ সাব্যস্ত করলে ঈমান হারা হওয়ার আশঙ্খা রয়েছে। তবে আলোচ্য হাদিসে কুদসির প্রকৃত মর্ম কি হবে, এ সম্পর্কে নবী বংশের উজ্জ্বল নক্ষত্র গাউসুল আজম শায়খ সৈয়দ আব্দুল কাদির জিলানী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় سرالاسرار ‘সিররুল আসরার’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন-


قال الله تعالى فى الحديث القدسى (خلقت محمدا من نور وجهى) والمراد من الوجه الذات المقدس المتجلية فى صفات الارحمية كما قال الله تعالى فى الحديث القدسى: (سبقت رحمتى على غضبى) وقال الله تعالى لنبيه : (وما ارسلناك الا رحمة للعالمين) سورة الانبياء- وقال الله تعالى: قد جاء كم من الله نور وكباب مبين) سورة المائده وقال الله تعالى فى الحديث القدسى (لولاك لما خلقت الافلاك) 


ভাবার্থ: হাদিসে কুদসীতে আল্লাহতা’য়ালা এরশাদ করেছেন-


خلقت محمدا من نور وجهى 


হাদিসে উল্লেখিত الوجه ‘আল ওয়াজহু’ দ্বারা মুরাদ বা মর্ম হচ্ছে الذات المقدسة المتلجلية فى صفات الارحمية অর্থাৎ ‘وجه’ দ্বারা আল্লাহর পবিত্র যাত বা সত্ত্বা বুঝানো হয়েছে, যা অসীম করুণার গুণাবলীতে জ্যোতিস্কমান। যেমন- আল্লাহতা’য়ালা অন্য হাদিসে কুদসিতে এরশাদ করেছেন-


سبقت رحمتى على غضبى 


অর্থাৎ আমার রহমত গযবের উপর অগ্রগামী। আর আল্লাহতা’য়ালা নবীজিকে সম্বোধন করে ফরমান-


وما ارسلناك الا رحمة للعلمين 


অর্থাৎ আমি আপনাকে সারা জগতের রহমত করে পাঠিয়েছি। (সূরা আম্বিয়া) আল্লাহতা’য়ালা আরো এরশাদ করেন-


قد جاء كم من الله نور وكتاب مبين 


অর্থাৎ নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক সম্মানিত নূর এবং এক উজ্জ্বল কিতাব এসেছে। (সূরা মায়েদা) অন্য এক হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতা’য়ালা আরো এরশাদ করেছেন-


لو لاك لما خلقت الافلاك 


অর্থাৎ যদি আমি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম তাহলে নভোম-ল ও ভূম-ল কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’ যে সমস্ত বিভ্রান্তকারী লোক আয়াতে মুতাশাবিহাত, আয়াতে মুবহামাত ও মুতাশাবিহাত অর্থবোধক হাদিসে কুদসি ও হাদিসে রাসূল উল্লেখ করে আল্লাহতা’য়ালার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, যেমন- হাত, পা, চেহারা, চক্ষু ইত্যাদি সাব্যস্ত করে তারা চরম বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত রয়েছে। কেননা আল্লাহতা’য়ালার শানে এরূপ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সাব্যস্ত করা আয়াতে মুহকাম এর খেলাফ বা পরিপন্থী। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সঠিক আকিদা হলো-


منزه عن الجسمية 


অর্থাৎ আল্লাহতা’য়ালা শরিরবিশিষ্ট হওয়া থেকে পুতঃপবিত্র। এ সম্পর্কে গাউসে পাক রাদিয়াল্লাহু সিররুল আসরার কিতাবে উল্লেখ করেছেন-


فالحق منزه عن الصور والمادة وخواص الاجسام- 


অর্থাৎ প্রকৃত কথা হলো আল্লাহতা’য়ালা আকার, উপাদান, বিশেষ আকৃতি বা শরিরবিশিষ্ট হওয়া থেকে পবিত্র। শাফী মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হাফিজ শামসুদ্দিন মুহাম্মাদ বিন আহমদ রহমতুল্লাহ আলাইহি (ওফাত ৭৪৯ হিজরি) তদীয় ازالة الشبهات ‘এযালাতুশ শুবহাত’ নামক কিতাবের ৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-


ومنها: صفة الوجه وقد ذكره فى ايات كثيرة- فاذا اردت (ان) تعلم ان حقيقة مظهره من الصورة- فاعلم ان حقيقة من غمام الشريعة- بارق نور التوحيد 


ভাবার্থ: কোরআনে কারিমের অনেক আয়াতে আল্লাহতা’য়ালার صفة الوجه উল্লেখ রয়েছে। তুমি যখন এর প্রকৃত মর্ম উদঘাটন করতে চাও তখন তুমি শরিয়তের নীতিমালা অনুযায়ী এর মর্ম উদঘাটন করবে। যাতে আল্লাহর একত্বাবাদের নূরের ঝলক উদ্ভাসিত হয়। মুদ্দাকথা হলো- আয়াতে সিফাত বা হাদিসে মুতাশাবিহাত এগুলোর মুরাদ বা মর্ম উদঘাটন করার ক্ষেত্রে আল্লাহর যাত-সিফাত ও শান-মানে যাতে কোন প্রতিবন্ধকতা বা জটিলতা না আসে সেক্ষেত্রে পূর্ণ সতর্ক থাকতে হবে। নচেৎ গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট, এমনকি ঈমান হারা হওয়ার আশঙ্খা রয়েছে।

স মা প্ত

__________

কিতাব : মি’রাজুন নাবী ﷺ

লেখকঃ  হযরতুল আল্লামা অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী (মা.জি.আ.)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন