একটি অবাস্তব ঘটনা- ২

 

একটি অবাস্তব ঘটনা- ২


কিছু সংখ্যাক বিভ্রান্ত লোক ওয়াজের নামে একটি অবাস্তব ঘটনা বর্ণনা করে থাকে। ঘটনাটি মুলতান নিবাসী মৌলভী মিয়া আব্দুল্লাহ লিখিত, মোস্তাফায়ী প্রেস থেকে মুদ্রিত, দলিলুল এহসান নামক গ্রন্থের ৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাটি হচ্ছে নিম্নরূপ-

کہ روزی پیغمبر صلی اللہ علیہ وسلم در مسجد مدینہ منورہ نشستہ بودند وباتمامی اصحابان صغار وکبار وعظ وحدیث شریف بیان میفرمودند کہ وحی جبرئیل علیہ السلام در خدمت پیغمبر صلی اللہ علیہ وسلم درآمد پیغمبر صلی اللہ تعالی علیہ وسلم ازسبب بیان حدیث ووعظ بطرف وحی علیہ السلام متوجہ نشدند ووحی علیہ السلاو دردل خود وسوسہ وکدرت بسیار در خاطر کردند گفت عجب ست کہ کلام ربانی ازجانب باری تعالی بہ آنحضرت میرسانم الحال بمن التفات نہ کردند ہون وقت حضرت راازروے کشت باطنی معلوم ومفہوم شدکہ بخاطر جبرئیل علیہ السلام کدرت گزشت پس جبرئیل علیہ السلام را نزدخود طلبیدہ پر سید کہ اے اخی جبرئیل کلام ربانی از کدام مقام بگوش میرسد گفت یا رسول اللہ بالاۓ عرش ایک قبۂ نورست بمثل حجرہ دران جایک سوراخ ست از انجا بگوش من آواز میرسد حضرت رسول علیہ السلام فرمود باز نزدآں قبہ برد ازان جاخبر گرفتہ زدوبمن برساں لکین اندرون قبہ نروی چون مہتر جبرئیل علیہ السلام بموجب فرمودہ رسول صلی اللہ علیہ وسلم بازرفت واندرون قبہ در آمد چہ بیند کہ اندرون قبہ نور محمد صلی اللہ علیہ وسلم ست وحضرت خود نشستہ اندو الحال مہتر جبرئیل علیہ السلام بازبہ جلدی پرواز فرمود وبرزمین ودر ونیمود چہ بیند کہ رسول خدا صلی اللہ علیہ وسلم در ہمون مکان باصحابان درحدیث ووعظ مشغول اند جبرئیل علیہ السلام از معائنہ این حال متعحب فرمایند وحیران گشت وشرمنا کہ شدہ گفت کہ اۓ خدایا از من خطا شدہ ما رامعاف فرمایند- 


অর্থাৎ ‘একদা পয়গাম্বর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীশরীফে বসে ছোট বড় অনেক সাহাবায়ে কেরামকে সাথে নিয়ে ওয়াজ নসিহত এবং হাদিসশরীফ বর্ণনা করতে ছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম ওহি নিয়ে আগমন করলে পয়গাম্বর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াজ নসিহত এবং হাদিস বর্ণনায় লিপ্ত থাকার কারণে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম অসন্তুষ্ট ও মনক্ষুন্ন হয়ে বললেন- আশ্চর্য! আল্লাহর পক্ষ থেকে কালামে রব্বানী এসেছে, আর আ’হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য মনস্ক হয়ে রইলেন। তখনই পয়গাম্বর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কশফে বাতিনী দ্বারা জিব্রাঈল আলাইহিস সালামের মনক্ষুন্ন হওয়ার ব্যাপারটি বুঝতে পেরে তাঁকে নিকটে ডেকে শান্তনার বাণী শুনালেন- হে ভাই জিব্রাঈল- বলতো, কালামে রাব্বানী কোন জায়গা থেকে তোমার কর্ণকুহরে পৌঁছে? জিব্রাঈল আমিন উত্তরে বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরশের উপরে কক্ষের মত একটি নূরের গম্বুজ আছে, যাতে একটি ছিদ্র রয়েছে, ঐ স্থান থেকে আমার কানে আওয়াজ পৌঁছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন- তুমি কার থেকে এ সংবাদ গ্রহণ করে থাকো? আল্লাহর হাবিবের ফরমান মোতাবেক জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম আবার আরশের উপর গিয়ে দেখলেন- সেই নূরের গম্বুজের ভিতরে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম উপবিষ্ট রয়েছেন। তৎক্ষণাৎ সম্মানিত দূত হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম জমিনে পুনরায় ফিরে এসে দেখলেন রাসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ স্থানেই সাহাবায়ে কেরামগণকে নিয়ে হাদিস ও ওয়াজ নসিহতে মশগুল রয়েছেন। হযরত জিব্রাঈল চাক্ষুসভাবে এ অবস্থা দেখে হতবাক ও লজ্জিত হয়ে বললেন- হে খোদা! আমি ভুল করেছি, আমাকে মাফ কর।’


উপরোল্লেখিত ঘটনাটি লিখে আ’লা হযরত আল্লামা আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী রহমতুল্লাহ আলাইহি এর নিকট প্রেরণ করে, ঘটনাটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে সঠিক কী না তা জানতে চাওয়া হয়। এতে আ’লা হযরত বেরলভী রহমতুল্লাহ আলাইহি যে সবিস্তার জওয়াব প্রদান করেছেন, তা السنية الانيقه فى فتاوى افرقه ‘আস সান্নিয়াতুল আনিকা ফি ফাতাওয়া-ই আফ্রিকা’ নামক কিতাবের ৫৫ থেকে ৬০ পৃষ্ঠাব্যাপী উল্লেখ রয়েছে । এর সারসংক্ষেপ হলো নিম্নরূপ-


১) جو اس حکایت سے نکلتے ہیں اسکے ظاہر سے جو عوام جہال کے خیال میں آے وہ تو صاف صاف حضور اقدس صلی اللہ تعالی علیہ وسلم کو معاذ اللہ خدا کہنا ہے اس کے کفر صریح ہونے میں شک کیا ہے – حضور اقدس صلی اللہ تعالی علیہ وسلم نے ہزاروں طرح جس کا انسداد فرمادیا ہے- 


অর্থাৎ এ বর্ণিত ঘটনার বাহ্যিক অর্থ থেকে সাধারণ মূর্খ মানুষের কাছে বোধগম্য হয় যে, এটাতো পরিস্কার ভাষায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খোদা বলা। নাউবুবিল্লাহ। যা কুফুরি হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্নভাবে তার প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন।


(ফাতাওয়া-ই আফ্রিকা ৫৭ পৃষ্ঠা)


২)جان بوجھکر متجاہل ہیں وہ تواس حکایت کے یہی معنی لیں گے کہ قرآن خود حضور کا کلام ہے فوق العرش وہی خدا ہیں اور زمین پروہی محمد جیسے بعض جھوٹے متصوفہ زندیق وبے دین کہا کرتے ہیں توصریح کفرکی غلیظ نجاست میں سننا اور نصرانی سے بدتر نصرانی بنناہے جو اسکا معتقد ہو بلکہ جو اسے جائز ہی رکھے یقینا قطعا کافر مرتدہے (فتاوی افریقہ) 


অর্থাৎ জেনে বুঝে যে সমস্ত জাহিল মূর্খ লোক, এ বর্ণিত ঘটনার এরূপ অর্থ গ্রহণ করে যে, কুরআন স্বয়ং রাসূলের বাণী। আরশের উপর তিনি খোদা আর জমিনের উপর তিনি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), যেমন কতেক মিথ্যুক, ভ-সুফি এবং ধর্মবিমূখ ব্যক্তিরা বলে থাকে। এটাতো স্পষ্ট কুফুরি, মারাত্মক নাপাক এবং খ্রিস্টানদের ভ্রান্ত আকিদাকেও হার মানায়। যে ব্যক্তি এরূপ বিশ্বাস করে এবং তা বৈধ মনে করে, সে তো নিঃসন্দেহে কাফির ও মুরতাদ।


(ফাতাওয়া-ই আফ্রিকা ৫৮ পৃষ্ঠা)


৩)البتہ یہ واقعہ صرف بے ثبوت ہی نہیں بلکہ یقینا غلط ہے محال ہے کہ جبرئیل امین علیہ الصلاۃ والتسلیم وحی لائیں اور حضور اقدس صلی اللہ علیہ السلام التفات نہ فرمایئں- 


অর্থাৎ এ বর্ণিত ঘটনা শুধু অবাস্তবই নয় বরং নিশ্চিত ভুল এবং محال বা অসম্ভব যে, হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম ওহি নিয়ে এসেছেন আর নবী সাল্লাল্লাহু অমনযোগী ছিলেন।


(ফাতাওয়া-ই আফ্রিকা ৫৯ পৃষ্ঠা)


৪)البتہ یہ واقعہ غلط باطل ہے بغیر رد کۓ اسکا بیان حرام ہے واللہ تعالی اعلم (فتاوی افریقہ) 


অর্থাৎ অবশ্যই এ বর্ণিত ঘটনাটি বাতিল ও ভুল। তা বর্ণনা করা হারাম। এটা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। আল্লাহতা’য়ালাই সর্বজ্ঞ।

(ফাতাওয়া-ই আফ্রিকা ৬০ পৃষ্ঠা)।


মোদ্দাকথা হলো- আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা আহমদ রেজা খাঁন রহমতুল্লাহ আলাইহি এর জবাব থেকে এ কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- দলিলুল এহসান নামক গ্রন্থে বর্ণিত উপরিলিখিত ঘটনাটি মিথ্যা, বানোয়াট এবং ঈমান বিধ্বংসী। এ সমস্ত ঘটনা বলা এবং শোনা হারাম। সুন্নি মুসলমান এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

__________

কিতাব : মি’রাজুন নাবী ﷺ

লেখকঃ  হযরতুল আল্লামা অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী (মা.জি.আ.)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন