মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে করণীয় বর্জনীয়

 

মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে করণীয় বর্জনীয়


ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ

﴾ ১ ﴿ জশনে বিলাদতের খুশিতে মসজিদ, ঘর, দোকান এবং বাহন সমূহ্ সহ নিজ এলাকার সব জায়গায় সবুজ পতাকা উড়াবেন, খুব বেশী আলো প্রজ্জলিত করবেন, নিজ ঘরে কমপক্ষে ১২টি বাল্ব অবশ্যই জ্বালাবেন। ১২ তারিখ রাতে ধূমধামের সাথে ইজতিমায়ে জিকির ও না’ত মাহফিলে অংশগ্রহণ করুন। সুবহে সাদিকের সময় সবুজ পতাকা উত্তোলন করুন। দুরূদ সালাম পড়তে পড়তে অশ্রুসিক্ত নয়নে “বসন্তের সকাল”কে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করুন। ১২ই রবিউন্ নূর শরীফের দিন রোযা রাখুন। যেহেতু আমাদের প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ প্রত্যেক সোমবার রোযা রাখার মাধ্যমে নিজ বিলাদত দিবস পালন করতেন। যেমন-



❏ হযরত সায়্যিদুনা আবু কাতাদাহ্ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ


বলেছেন: “রাসুলুল্লাহ্ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর নিকট সোমবার দিন রোযা রাখার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হল। (কেননা তিনি ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ প্রতি সোমবার রোযা রাখতেন) উত্তরে রাসূল ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করলেন: “এই দিন (সোমবার) আমার জন্ম হয়েছে এবং এই দিন আমার উপর ওহী নাযিল হয়েছে।” (ছহীহ্ মুসলিম, ৫৯১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৯৮, ১১৬২)



❏ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারী ইমাম কাসতুলানী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বর্ণনা করেছেন: “হুজুরের বিলাদতের দিন সমূহে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করার বৈশিষ্ঠ্যাবলীর মধ্যে এটি একটি পরীক্ষিত বিষয় যে মিলাদ উদযাপনকারীগণ ঐ বৎসর নিরাপদ থাকে এবং প্রতিটি আশা পূরণের তাড়াতাড়ি সুসংবাদ আসে। আল্লাহ্ তাআলা ঐ ব্যক্তিকে দয়া করুন, যিনি মিলাদুন্নবীর রাত সমূহকে ঈদ বানিয়ে নিয়েছেন। (মাওয়াহিবুল লাদুনিয়া, ১ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা)



﴾ ২ ﴿ বায়তুল্লাহ্ শরীফের নকশা (MODEL) ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও (কাপড়ের) পুতুল কর্তৃক তাওয়াফ দেখানো হয়ে থাকে। ইহা গুনাহ্। জাহেলী যুগে কা’বাতুল্লাহ্ শরীফে ৩৬০টি মূর্তি রাখা হয়েছিল। আমাদের প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ মক্কা বিজয়ের পর কা’বা শরীফকে মূর্তি থেকে পবিত্র করেছিলেন। এজন্য কা’বা শরীফের নকশাতে ও মূর্তি (পুতুল) না হওয়া চাই। তার স্থলে প্লাষ্ঠিকের ফুল রাখা যেতে পারে। (কা’বা শরীফের তাওয়াফের দৃশ্যের মধ্যে যেগুলোতে চেহারা স্পষ্ট দেখা যায় না, ঐগুলোকে মসজিদ কিংবা ঘরে রাখা জায়েয। তবে হ্যাঁ, যে জীবের ছবি যমীনে রেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভালভাবে দেখলে তার মুখাকৃতি সুস্পষ্ট দেখা যায়, তা ঝুলিয়ে রাখা জায়েয নয় বরং গুনাহ্)




﴾ ৩ ﴿ এমন দরজা বা গেইট (GATE)) দেয়া যাবে না, যাতে ময়ূর তথা অন্য কোন প্রাণীর ছবি নির্মিত থাকে। প্রাণীদের ছবি রাখার তিরস্কার সংক্রান্ত দুটি হাদীসে মোবারকা পড়ুন, আর আল্লাহ্ তাআলার ভয়ে প্রকম্পিত হোন।



(ক) “(রহমতের) ফিরিস্তা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর কিংবা প্রাণীর ছবি থাকে।” (ছহীহ্ বুখারী শরীফ, ২য় খন্ড, ৪০৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৩২২)


(খ) “যে ব্যক্তি (প্রাণীদের) ছবি তৈরী করবে, আল্লাহ্ তাআলা তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত শাস্তি প্রদান করতে থাকবেন, যতক্ষণ না সে এটার ভিতর (প্রাণ) ফুঁকে দেবে। আর (ইহা সত্য যে) সে উহাতে কখনও প্রাণ দিতে পারবে না।” (ছহীহ্ বুখারী শরীফ, ২য় খন্ড, ৫১ পৃষ্ঠা, হাদীস-২২২৫, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ্, বৈরুত)



﴾ ৪ ﴿ জশনে বিলাদতের আনন্দে কিছু কিছু লোক গান বাজনার আয়োজন করে থাকে, এটা করা শরীয়াত মতে গুনাহ্। এ ব্যাপারে দুটি হাদীসের পেশ করা হল:



(ক) ছরকারে মদীনা ইরশাদ করেছেন: “আমাকে ঢোল ও বাঁশী ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” (ফিরদাউসুল আখবার, ১ম খন্ড, ৪৮৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৬১২)


(খ) হযরত দাহ্যাক ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ থেকে বর্ণিত: “গান অন্তরকে নষ্ট করে দেয় এবং আল্লাহ্ তাআলাকে অসন্তুষ্ট করে দেয়।” (তাফসীরাতে আহমদীয়্যাহ্, ৬০৩ পৃষ্ঠা)



﴾ ৫ ﴿ না’তে পাকের ক্যাসেট চালাতে পারবেন, তবে ছোট আওয়াজে এবং সেখানেও আযান ও নামাযের সময়ের প্রতি সজাগ থাকতে হবে এবং এর দ্বারা অসুস্থ ব্যক্তির ও অন্যান্যদের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। (মহিলাদের কণ্ঠের না’তের ক্যাসেট চালাবেন না)


﴾ ৬ ﴿ সর্বসাধারণের চলাফেরার রাস্তায় এভাবে সাজ সজ্জা করা বা পতাকা লাগানো, যাতে রাস্তায় চলাফেরা করা কিংবা গাড়ী চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এরূপ করা না-জায়িয।


﴾ ৭ ﴿ আলো, সাজ-সজ্জা দেখার জন্য মহিলাদের পর্দাহীনভাবে বের হওয়া হারাম ও লজ্জাজনক কাজ। তাছাড়া পর্দা সহকারেও মহিলাদের প্রচলিত নিয়মে সাধারণভাবে পুরুষদের সাথে মেলামেশা, এটাও খুব দুঃখজনক। সাজ-সজ্জা করতে গিয়ে বিদ্যুৎ চুরি করাও জায়েয নেই। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বৈধ পন্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আলোকসজ্জা করতে হবে।


﴾ ৮ ﴿ মিলাদুন্নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর জুলুছে যতদূর সম্ভব অযু রাখুন। নামায জামাআত সহকারে পড়ার প্রতি দৃষ্টি রাখবেন। আশিকানে রাসূলগণ কখনও জামাআত ত্যাগকারী হয় না।


﴾ ৯ ﴿ মিলাদুন্নবীর জুলুসকে ঘোড়ারগাড়ী ও উটের গাড়ী থেকে মুক্ত রাখা উচিত। কেননা উহার পায়খানা-প্রস্রাব জুলুসে অংশগ্রহণকারী আশিক্বানে রাসূলদের কাপড়-চোপড় নষ্ট করে দিতে পারে।


﴾ ১০ ﴿ জুলুছের মধ্যে মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত বিভিন্ন রিসালা ও মাদানী ফুলের বিভিন্ন লিফলেট খুব বেশি করে বণ্টন করুন। সাথে সাথে ফল-ফ্রুটও মানুষের হাতে হাতে বন্টন করতে থাকুন। তা মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে পায়ের নিচে পিষ্ট হলে ঐগুলোর অসম্মানী হবে।


﴾ ১১ ﴿ আলোকসজ্জা ও না’রা ধ্বনি মিলাদুন্নবীর জুলুছের প্রচার ও প্রসারতা বাড়িয়ে দেয়। (জুলুছের সার্বিক কর্মকান্ড) শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার মধ্যে শুধু নিজেদেরই নয় বরং সকলেরই কল্যাণ নিহিত রয়েছে।


﴾ ১২ ﴿ খোদা না করুন! বিরুদ্ধবাদী কর্তৃক যদি হালকা-পাতলা ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে যায় তবুও উত্তেজনায় বশীভূত হয়ে প্রতিউত্তরের চেষ্টা করবেন না। এটা করলে আপনাদের জুলুস ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবে এবং দুশমনের উদ্দেশ্য সাধিত হবে।



❏ গুনছে চাটকে ফুল মেহকে হার তরফ আয়ি বাহার,


হো গেয়ী সুবহে বাহারা ঈদে মিলাদুন্নবী।


(ওয়াসায়িলে বখশিশ, ৪৬৫ পৃষ্ঠা)



ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ


(মাদানী আবেদন, প্রতি জায়গায় প্রতি বছর সফরুল মোজাফ্ফর মাসের শেষ সাপ্তাহিক ইজতিমায় মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য মাকতুবে আত্তার (আত্তারের চিঠি) পড়ে শুনিয়ে দিন। ইসলামী ভাই ও বোনেরা! সাধ্যমতে সংশোধন করুন।)



ﺑِﺴۡﻢِ ﺍﻟﻠّٰﮧِ ﺍﻟﺮَّﺣۡﻤٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﯿۡﻢَِ 

সগে মদীনা মুহাম্মদ ইল্ইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীর ( ﻋُﻔِﻰَ ﻋَﻨْﻪُ ) পক্ষ থেকে সকল আশিকানে রাসূল ইসলামী ভাই ও ইসলামী বোনদের খেদমতে জশনে বিলাদতের আনন্দে উদ্বেলিত সবুজ সবুজ পতাকা ও উজ্জ্বল বাতি ও মনোরম লন্ঠনগুলোতে চুম্বনরত আন্দোলিত, মধুর চেয়েও মিষ্ঠ মক্কী ও মাদানী সালাম।



ﺍَﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺑَﺮَﻛَﺎﺗُﻪ ﺍَﻟﺤَﻤﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟﻌﻠَﻤِﻴﻦ ﻋَﻠٰﻰ ﻛُﻞِّ ﺣَﺎﻝ


তুম বি করকে উনকা চর্চা আপনে দিল চমকাউ,


উচে মে উচা নবী কা ঝান্ডা ঘর ঘর মে লেহরাও।



﴾ ১ ﴿ চাঁদ রাতে এই শব্দগুলো মসজিদে তিনবার ঘোষণা করুন “সকল ইসলামী ভাই ও ইসলামী বোনদের মোবারকবাদ যে, রবিউন্ নূর শরীফের চাঁদ দেখা গিয়েছে।”


রবিউন নুর উম্মিদো কি দুনিয়া সাথ লে আয়া,


দোআও কি কবুলিয়ত কো হাতোহাত লে আয়া।



﴾ ২ ﴿ পুরুষরা দাড়ি মুন্ডিয়ে ফেলা কিংবা এক মুষ্টি থেকে কম রাখা উভয়টি হারাম। ইসলামী বোনেরা বেপর্দায় চলাফেরা করা হারাম। দয়া করে ইসলামী ভাইয়েরা জশনে বিলাদতের সম্মানে চাঁদরাত থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত দাড়ি মুন্ডানো এবং ইসলামী বোনেরা বেপর্দা হওয়া যেন ছেড়ে দেন এবং এর বরকতে ইসলামী বোনেরা সর্বদা সম্পূর্ণ শরীয়াত মোতাবেক পর্দা করার এবং সাধ্যমত মাদানী বোরকা পরিধানের নিয়্যত করে নিন। (পুরুষদের দাড়ি মুন্ডানো বা এক মুষ্ঠি থেকে ছোট রাখা এবং মহিলাদের বেপর্দা হওয়া হারাম, যদি কেউ এ কাজগুলি করে থাকে, তাহলে তার তাড়াতাড়ি তাওবা করে এ সমস্ত গুনাহ্ থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব।)



❏ ঝুক গেয়া কা’বা সবি ভুত মুহ কে বাল আউন্দে গিরে,


দবদবা আমদ কা থা, আহলান ওয়া সাহলান মারহাবা।


(ওয়াসায়িলে বখশিশ, পৃষ্ঠা-২৫৭)



﴾ ৩ ﴿ সুন্নাত ও নেকী সমূহের উপর স্থায়িত্ব অর্জন করার মাদানী ব্যবস্থাপনা হচ্ছে এই, সকল আশিকানে রাসূল ইসলামী ভাই ও ইসলামী বোনেরা প্রতিদিন ‘ফিকরে মদীনা’ করার মাধ্যমে “মাদানী ইনআমাতের রিসালা” পূরণ করে প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে জমা করানোর নিয়্যত করে নিন। হাত উঠিয়ে বলুন ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ



❏ বদলীয়া রহমত কি চায়ে বুন্দিয়া রহমত কি আয়ে,


আব মুরাদি দিল কি পায়ে আমদে শাহে আরব হে।


(ক্বিবলায়ে বখশিশ, ১৮৪ পৃষ্ঠা)



﴾ ৪ ﴿ সকল আশিকানে রাসূল নিগরান ও যিম্মাদারগণসহ বিশেষভাবে রবিউন্ নূর শরীফে কমপক্ষে ৩ দিনের মাদানী কাফিলায় সফর করার সৌভাগ্য অর্জন করুন। আর ইসলামী বোনেরা ৩০ দিন পর্যন্ত নিজ ঘরে (শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যের নিকট) প্রতিদিন “ফয়যানে সুন্নাতের” দরস চালু করুন এবং আগামীতেও নিয়মিত চালু রাখার নিয়্যত করে নিন।



❏ লুটনে রহমাতে কাফেলে মে চলো,


শিখনে সুন্নাতে কাফেলে মে চলো।


(ওয়াসায়িলে বখশিশ, ৬১১ পৃষ্ঠা)



﴾ ৫ ﴿ নিজ মসজিদ, ঘর, দোকান, কারখানা ইত্যাদিতে ১২টি বা কমপক্ষে ১টি করে সবুজ পতাকা রবিউন্ নূর শরীফের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ মাস উড়াতে থাকুন। বাস, জীপ, ট্রেন, লঞ্চ, স্ট্রীমার, জাহাজ, মালগাড়ী, ট্রাক, ট্রলী, টেক্সি, রিক্সা, ঘোড়ার গাড়ী ইত্যাদিতে নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী পতাকা কিনে বেঁধে দিন। নিজ সাইকেল, স্কুটার এবং কারের সাথেও লাগিয়ে দিন। ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ চারিদিকে সবুজ পতাকার সুদৃশ্য বাহার সকলের দৃষ্টিগোচর হবে। সাধারণতঃ ট্রাকের পিছনে বিভিন্ন প্রাণীর বড় বড় ছবি এবং অযথা কবিতা লেখা থাকে। আমার আবেদন হচ্ছে ট্রাক, বাস মালগাড়ী, রিক্সা, টেক্সি, সুজুকী ও কার ইত্যাদির পেছনে তৎপরিবর্তে নিম্নলিখিত শব্দ সমূহ্ স্পষ্ট অক্ষরে লিপিবদ্ধ করা যায় যে, “ আমি দা’ওয়াতে ইসলামীকে ভালবাসি ।” বাস ও ট্রান্সপোর্টের মালিকেরা মিলে এ বিষয়গুলোর “মাদানী তরকিব” করুন এবং সগে মদীনা ﻋُﻔِﻰَ ﻋَﻨْﻪُ এর আন্তরিক দোআ অর্জন করুন।


বিশেষ সতর্কতা :- যদি পতাকার মধ্যে না’লাইন শরীফের নক্শা কিংবা অন্য কোন লিখা থাকে, তাহলে এ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে যে, উহা যেন টুকরা টুকরা হয়ে মাটিতে পড়ে না যায়। যখন রবিউন্ নূর শরীফ চলে যাবে, সাথে সাথে পতাকাগুলি খুলে নিন। যদি সতর্কতা অবলম্বন করতে না পারেন, আর অসম্মানী হয়ে যায়, তবে নক্শা মোবারক ও লিখা ছাড়া খালি সবুজ পতাকা উড়ান। (সগে মদীনা ﻋُﻔِﻰَ ﻋَﻨْﻪُ ও যথাসম্ভব নিজ ঘরের মধ্যেও খালি সবুজ পতাকা উড়ান।)



নবী কা ঝান্ডা লেকর নিকলো দুনিয়া পর ছা জাও,


নবী কা ঝান্ডা আমন কা ঝান্ডা ঘর ঘর মে লেহরাও।



﴾ ৬ ﴿ নিজ ঘরে ১২টি লরী বাতি বা কমপক্ষে ১২টি বাল্ব দ্বারা আলোকিত করুন, এমনকি মসজিদ ও মহল্লায় ১২ দিন পর্যন্ত আলোকসজ্জা জারী রাখুন। (কিন্তু এ কাজগুলোর জন্য বিদ্যুৎ চুরি করা হারাম। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সঞ্চয়কারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে বৈধ পন্থায় বিদ্যুৎ লাভের ব্যবস্থা করুন।) সম্পূর্ণ এলাকাকে সবুজ সবুজ পতাকা ও বিভিন্ন রঙের বাতি দ্বারা সজ্জিত করে দুলহানের ন্যায় বানিয়ে ফেলুন। মসজিদ এবং ঘরের ছাদে, চৌরাস্তা ইত্যাদিতে, পথচারী এবং আরোহীদের কষ্ট না হয় মত সর্বসাধারণের অধিকার খর্ব না করে রাস্তার খালি অংশে ১২ মিটার সাইজ বা প্রয়োজন অনুসারে সাইজ করে বড় বড় পতাকা ঝুলিয়ে দিন। রাস্তার মধ্যখানে পতাকা লাগাবেন না। কেননা এতে ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ হবে। এমনকি গলির ভিতর কোথাও এ ধরণের সাজ-সজ্জা করবেন না, যা দ্বারা মুসলমানদের চলাচলের রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যায়, আর তাতে তাদের অধিকার খর্ব হয় ও তারা মনক্ষুন্ন হয়।



❏ বাইতে আকছা বামে কা’বা বর মকানে আমেনা,


নসব পরচম হো গেয়া আহলান ওয়া সাহলান মারহাবা।


(ওয়াসায়িলে বখশিশ, ৪৫৫ পৃষ্ঠা)



﴾ ৭ ﴿ প্রত্যেক ইসলামী ভাই সাধ্যমত বেশি বেশি করে কিংবা কমপক্ষে ১২ টাকা দিয়ে “মাকতাবাতুল মদীনা” থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন রিসালা ও বিভিন্ন লিফলেট বন্টন করুন। ইসলামী বোনেরাও নিজ ইসলামী বোনদের মাঝে বিতরণ করুন। এভাবে সারা বছর ইজতিমায় রিসালার স্টলের ব্যবস্থা করে নেকীর দা’ওয়াতের সাড়া জাগিয়ে দিন। আনন্দ কিংবা শোকের অনুষ্ঠানে এবং মৃত ব্যক্তিদের ইছালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে রিসালার ষ্টল খুলে দিন এবং অপরাপর মুসলমানদেরও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করুন।



❏ বাট কর মাদানী রসায়েল দ্বীন কো পেলায়ে,


করকে রাজি হক কো হকদার জিনা বন জায়ে।



﴾ ৮ ﴿ সগে মদীনার ﻋُﻔِﻰَ ﻋَﻨْﻪُ লিফলেট “জশনে বিলাদতের ১২ মাদানী ফুল” সম্ভব হলে ১১২ অন্যথায় কমপক্ষে ১২টি আর পারলে “বসন্তের প্রভাত” রিসালাটির ১২ কপি “মাকতাবাতুল মদীনা” থেকে হাদিয়া দিয়ে সংগ্রহ করে বন্টন করে দিন। বিশেষ করে “তানযিমের” ঐ সকল ভাই পর্যন্ত পৌঁছে দিন যারা জশনে বিলাদতের সাড়া জাগাচ্ছে। রবিউন্ নূর শরীফে ১২০০ টাকা, যদি সম্ভব না হয় ১১২ টাকা যদি তাও সম্ভব না হয়, তবে শুধু ১২ টাকা (প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে বা মেয়েরা) কোন সুন্নী আলেমের নিকট পেশ করবেন। যদি নিজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদিমের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয় তাও ঠিক হবে। বরং এই খিদমত প্রতিমাসে চালু রাখার নিয়্যত করুন। তাহলে মদীনা মদীনা হয়ে যাবে। জুমার দিন দিলে খুব ভাল। কেননা জুমার দিন প্রতি নেকীর ৭০ গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়।


ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ

সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট শুনে লোকের সংশোধনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আপনাদের মধ্যেও কোন না কোন এমন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি হবেন যিনি বয়ানের ক্যাসেট শুনে মাদানী মহলের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। তাই এ ধরণের ক্যাসেট লোকদের কাছে পৌঁছানো দ্বীনের বড় খিদমত এবং অপরিসীম সাওয়াবের মাধ্যম হয়ে যাবে। যার পক্ষে সম্ভব হয় তিনি সপ্তাহে, আর না হয় মাসে কমপক্ষে ১২টি বয়ানের ক্যাসেট কিনে নিন। দাতা ইসলামী ভাইয়েরা যদি ফ্রি বন্টন করেন, তবে মদীনা মদীনা হয়ে যাবে। জশনে বিলাদতের খুশি উদযাপনে বয়ানের ক্যাসেট বেশী করে বন্টন করুন এবং দ্বীনের প্রচার কার্যে অংশ নিন। বিয়ের সময় কার্ডের সাথে রিসালা, আর সম্ভব হলে বয়ানের ক্যাসেটও একত্রে দিয়ে দিন। ঈদ কার্ডের রেওয়াজ বন্ধ করে তার স্থানে রিসালা, ক্যাসেট বন্টনের প্রথা চালু করুন, যাতে করে যে টাকা খরচ হবে তা দ্বীনের কাজে আসে। আমাকে লোকেরা অনেক দামী দামী কার্ড পাঠিয়ে থাকেন। এতে আমার দিল খুশি হওয়ার পরিবর্তে জ্বলতে থাকে। আফসোস! উক্ত কার্ড ক্রয়ে খরচকৃত টাকা যদি দ্বীনের কাজে ব্যয় হত, তাহলে কতই না ভাল হত। এমনকি এর উপর লাগানো চমৎকার কারুকার্য দ্বারা অযথা খরচের বাহার দেখে খুবই কষ্ট হয়।



উনকে দরপে পলনে ওয়ালা আপনা আপ জওয়াব,


কুয়ি গরীব নাওয়াজ তো কুয়ী দাতা লাগতা হে।



﴾ ৯ ﴿ বড় শহরের মধ্যে প্রত্যেক এলাকায়ী মুশাওয়ারাত এর নিগরান (উপ শহরের জিম্মাদারগণ উপশহরে) ১২ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন মসজিদে আজিমুশশান সুন্নাতে ভরা ইজতিমার আয়োজন করবেন। (যিম্মাদার ইসলামী বোনেরা ঘরের মধ্যে ইজতিমার আয়োজন করবেন।) রবিউন্ নূর শরীফের মধ্যে সংগঠিত সকল ইজতিমায় যার নিকট থাকে সে যেন সবুজ পতাকা নিয়ে আসে।


লব পর না’তে রসুলে আকরাম হাতো মে পরচম,


দিওয়ানা ছরকার কা কিতনা পেয়ারা লাগতা হে।



﴾ ১০ ﴿ ১১ তারিখ সন্ধ্যায় বা ১২ তারিখ রাতে গোসল করে নিন। যদি সম্ভব হয় ঈদসমূহের ঈদের সম্মানার্থে সাদা পোশাক, পাগড়ী, মাথাবন্ধ, টুপি, মাদানী চাদর, মিসওয়াক, পকেট রুমাল, জুতা, তাসবীহ, আতরের শিশি, হাতের ঘড়ি, কলম, কাফেলার প্যাড, ইত্যাদি নিজের ব্যবহারের প্রত্যেক জিনিস নতুন কিনে নিন। (ইসলামী বোনেরাও নিজ ব্যবহার সামগ্রী সম্ভব হলে নতুন কিনুন।)



❏ আয়ি নয়ি হুকুমত সিক্কা নয়া চলে গা,


আলম মে রংগ বদলা সুবহে শবে বিলাদত।


(যওকে না’ত, ৬৭ পৃষ্ঠা)



﴾ ১১ ﴿ ১২ তারিখ রাত সম্মিলিতভাবে মিলাদের মাধ্যমে অতিবাহিত করে সুবহে সাদিকের সময় নিজ নিজ হাতে সবুজ পতাকা তুলে নিয়ে দরূদ সালামের শ্লোগান তুলে অশ্রুসিক্ত নয়নে বসন্তের সকালের অভ্যর্থনা জানান। ফযরের নামাযের পর সালাম ও ঈদ মোবারক বলে একে অপরের সাথে খুশি মনে সাক্ষাত করুন, আর সারাদিন ঈদের মোবারকবাদ পেশ করে ঈদ উদযাপন করুন।



❏ ঈদে মিলাদুন্নবী তো ঈদ কি বি ঈদ হে,


বিল ইয়াকিন হে ঈদে ঈদা ঈদে মিলাদুন্নবী।


(ওয়াসায়িলে বখশিশ, ৪৬৫ পৃষ্ঠা)




﴾ ১২ ﴿ আমার প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, মক্কী মাদানী মুস্তফা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ প্রতি সোমবার রোযা রেখে নিজ জন্ম দিন পালন করতেন, আপনিও প্রিয় নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর স্মরণে ১২ই রবিউন্ নূর শরীফে রোযা রেখে সবুজ পতাকা হাতে নিয়ে মিলাদুন্নবীর জুলুসে যোগ দিন। যতটুকু সম্ভব হয়, অযু অবস্থায় থাকুন। মুখে দরূদ সালাম ও না’তে মুস্তফার আওয়াজ তুলুন, না’ত ও দুরূদ সালামের ফুল বর্ষণ করুন। দৃষ্টিকে নত রেখে পূর্ণ গাম্ভীর্য বজায় রেখে পথ চলুন। লম্প ঝম্প ও অহংকার করে চলে কাউকে সমালোচনা করার সুযোগ দিবেন না।



❏ রবিউল আওয়াল তুজ পর আহলে সুন্নাত কিউ ন হো কুরবা,


কে তেরী বারভি তারিখ ওহ জানে কমর আয়া।


(ক্বিবালায়ে বখশিশ, ৩৭ পৃষ্ঠা)



❏ বুখারী শরীফের সর্বপ্রথম হাদীস শরীফ হলো: ﺇﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﺄَﻋْﻤَﺎﻝُ ﺑِﺎﻟﻨِّﻴَّﺎﺕِ অর্থাৎ- “প্রতিটি কাজের ফলাফল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল।” (সহীহ্ বুখারী, ১ম খন্ড, ৫ পৃষ্ঠা) 



প্রত্যেক ভালকাজে আখিরাতের সাওয়াবের নিয়্যত করাটা আবশ্যক। জশনে বিলাদত উদযাপনের ক্ষেত্রেও সাওয়াব অর্জনের নিয়্যত করাটা জরুরী। সাওয়াবের নিয়্যতের জন্য আমলটি শরীয়াত অনুযায়ী এবং ইখলাছ দ্বারা সজ্জিত হওয়া খুবই জরুরী। যদি কেউ লোক দেখানো বা বাহবা পাওয়ার জন্য, এর জন্য বিদ্যুৎ চুরি করে, জোর করে চাঁদা সংগ্রহ করে, শরীয়াতের গন্ডির বাইরে মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয় এবং সর্বসাধারণের হক নষ্ট করে এবং এমন সময় উচ্চস্বরে মাইক বাজায় যখন অসুস্থ, ঘুমন্ত ব্যক্তি এবং দুধপানকারী বাচ্চার কষ্ট হয়, তবে সেক্ষেত্রে সাওয়াবের নিয়্যত করা অনর্থক, বরং গুনাহগার হবে। ভাল নিয়্যত যত বেশী হবে সে ক্ষেত্রে সাওয়াব ও তত অধিক পাওয়া যাবে। এজন্য অনেক ভাল ভাল নিয়্যতের মধ্য থেকে এখানে মাত্র ১৮টি নিয়্যত পেশ করা হচ্ছে। যার নিকট নিয়্যতের ইলম রয়েছে, তিনি সাওয়াব বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এর চেয়েও বেশী নিয়্যতের সমৃদ্ধি ঘটাতে পারেন। যথাসম্ভব নিম্নে প্রদত্ত নিয়্যত গুলো করে নিন।

________________

কিতাবঃ বসন্তের প্রভাত : ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)

লেখকঃ হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন