চার বছর পরে কুফাবাসী শী’আহ চক্র হযরত রাসূলুল্লাহ (صلى اللّٰه عليه وسلم)


চার বছর পরে কুফাবাসী শী’আহ চক্র হযরত রাসূলুল্লাহ (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর পরিবার-সদস্যদের পক্ষত্যাগে নিজেদের পাপ মোচনের এক চেষ্টা চালায়। কুফাবাসীদের মধ্য হতে এমন একটি দল আবির্ভূত হয়, যারা নিজেদের ’তাওওয়া’বূন’ (তওবাকারী) নামে অভিহিত করে; এই লোকেরা ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’এর হত্যাকারীদের ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ করাকে নিজেদের কর্তব্য হিসেবে নেয়। ইবনে যিয়াদের পিছু ধাওয়া করে সিরিয়া যাওয়ার পথে তারা কারবালা অতিক্রম করে, যেখানে ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’এর পবিত্র মাযার শরীফ অবস্থিত। এখানেই তারা উচ্চস্বরে (মেকি) কান্না জুড়ে দেয় এবং সারা রাত ওই বিয়োগান্ত ঘটনার আহাজারিতে অতিবাহিত করে, যে ঘটনা তারাই চার বছর আগে ঘটতে দিয়েছিলো (নিষ্ক্রিয়তা দ্বারা)। তারা যদি ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’এর সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তে তাঁর জন্যে ওই একই দরদ দেখাতে পারতো, তাহলে ইসলামের ইতিহাস অন্যভাবে রচিত হতো।



কতিপয় নির্দিষ্ট লেখক ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’কে পরিত্যাগের (মানে গাদ্দারির) অপরাধ হতে শী’আহ চক্রকে মুক্তিদানের অপচেষ্টা চালিয়েছেন। কেউ কেউ আবার প্রাদেশিক শাসক ইবনে যিয়াদের কুফা শহর অবরোধ বা ঘেরাওয়ের অজুহাত দেখিয়েছেন। এস,এইচ,এম, জা’ফরী নিজ ‘Origins and Early Developments of Shi’ah Islam’ পুস্তকে লেখেন:



….এটা আবারো লক্ষণীয় যে, কুফা ও তার আশপাশ এলাকায় আসার রাস্তাগুলোতে অবরোধ আরোপের ফলে কুফার শী’আহ যারা লুকিয়ে ছিলো, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের এবং বসরা’র মতো শহরগুলোতে বসবাসকারী শী’আহ লোকদের জন্যে (শহরে প্রবেশ) প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। [১৯৮ পৃষ্ঠা, আনসারিয়ান পাবলিকেশনস্, ক্বুম, এন.ডি.]



কুফাবাসী শী’আহ গোষ্ঠীর দলত্যাগের এই ব্যাখ্যাটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না, যখনই কেউ বিবেচনায় নেন হযরত মুসলিম বিন আক্বীল (رضي اللّٰه عنه)’এর হাতে বায়’আহ গ্রহণে তাদের বিশাল সংখ্যাটিকে (১৮০০০ লোক)। পক্ষান্তরে, আমরা দেখেছি ইবনে যিয়াদ মাত্র ১৭ জন সেনা নিয়ে কুফায় প্রবেশ করেছিলো। এমন কী সাইয়্যেদুনা হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’এর বিরুদ্ধে লড়তে সে যে বাহিনী পাঠিয়েছিলো, তাদের সংখ্যাও ছিলো মাত্র ৪০০০ সৈন্য [নোট: কিছু শিয়া সূত্রে প্রদত্ত এবং সম্প্রতি স্থানীয় রেডিওতে উদ্ধৃত ৮০,০০০ সেনার সংখ্যাটি স্পষ্টতঃ কাল্পনিক। নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক সূত্রগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া ছাড়াও এ দাবির উৎস যে আবেগময় শিয়া অতিশয়োক্তি তা স্বতঃপ্রমাণিত]। অধিকন্তু, ওই বাহিনী সুনির্দিষ্টভাবে কারবালার জন্যে প্রস্তুত করা হয়নি; সেটা কুফা অতিক্রম করছিলো স্রেফ পারসিক দে’লামিয়্যা’ন সেনাদের সাথে লড়বার উদ্দেশ্যে। ইবনে যিয়াদ কুফাবাসীদেরকে এ রকম বাহিনী দ্বারা বশ্যতা স্বীকার করাতে পারবে বলে ধারণা করা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। কেননা তারা সংখ্যায় ওই বাহিনীর চেয়ে ঢের বেশি ছিলো। না, তাদের নিজেদের বিশ্বাসঘাতকতা ও চপলতা-ই (মানে গাদ্দারি-ই) ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’এর পক্ষত্যাগে তাদেরকে পরিচালিত করেছিলো। তারা হযরত মুসলিম বিন আক্বীল (رضي اللّٰه عنه)’কে যেভাবে ফেলে পালিয়েছিলো, তা থেকে এই বিষয়টি স্পষ্ট পরিদৃষ্ট হয়।



শিয়াপন্থী লেখকদের এমনও দাবি করার প্রবণতা রয়েছে যে, সাইয়্যেদুনা ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’এর পক্ষ যারা ত্যাগ করেছিলো, তারা শী’আহ নয়। জা’ফরী লেখেন:



….ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’কে যারা কুফায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো এবং তাঁর প্রতিনিধি হযরত মুসলিম বিন আক্বীল (رضي اللّٰه عنه)’এর কাছে যে ১৮,০০০ লোক আনুগত্যের অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করেছিলো, তাদের সবাই শী’আহ শব্দটির ধর্মীয় পরিভাষাগত অর্থে শী’আহ ছিলো না, বরঞ্চ তারা ছিলো হযরত আলী (كرم اللّٰه وجهه)’এর ঘরের মানুষদের (মানে বংশধরদের) রাজনৈতিক আদর্শগত সমর্থক - এই পার্থক্যটুকু মাথায় অবশ্যই রাখতে হবে, যাতে শিয়াবাদী ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাস (সহজে) বোঝা যায়। [জা’ফরী, ‘Origins and Early Developments of Shi’ah Islam’, ১৯৫ পৃষ্ঠা]।

_______________

কারবালার অন্যান্য দুর্বৃত্তদের মুখোশ উন্মোচন

মূল: মাহাজ্জা-ডট-কম

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন