ওই দিন, ৯ই যিলহজ্জ্ব আরাফাত দিবসের পরের বেলায়

 

ওই দিন, ৯ই যিলহজ্জ্ব আরাফাত দিবসের পরের বেলায়, হযরত মুসলিম বিন আক্বীল (رضي اللّٰه عنه)’কে দুর্গের সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠানো হয়। তাঁকে সেখানে নেয়ার মুহূর্তে তিনি তসবীহ, তাহলীল, তাকবীর ও ইস্তিগফার পাঠ করেন। তাঁর শেষ কথাগুলো কুফাবাসীদের প্রতি নিজের চরম হতাশা প্রতিফলন করে: “হে আল্লাহ, আমাদের ও আমাদের লোকদের মাঝে আপনি-ই হোন বিচারক। তারা আমাদের প্রতারিত করেছে এবং আমাদের পক্ষত্যাগ করেছে।” কেল্লার সর্বোচ্চ চূড়া থেকে তাঁর শির মোবারক নিচে ধুলোয় পতিত হয় - তাদেরই জাজ্বল্যমান দৃষ্টির সম্মুখে, যাদের আমন্ত্রণ ও আনুগত্যের শপথ তাঁকে এতো আশান্বিত করেছিলো, অথচ যাদের কাপুরুষতা ও বিশ্বাসঘাতকতা তাঁকে হতাশা ছাড়া কিছু এনে দেয় নি। আর ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه) তখন পথে….।


উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ স্রেফ সতেরো জন সৈন্যসহ কুফা শহরে প্রবেশ করেছিলো। তাদের প্রতিজনের মাথায় হযরত মুসলিম বিন আক্বীল (رضي اللّٰه عنه)’এর হাতে আনুগত্যের অঙ্গীকারকারী সহস্রাধিক কুফাবাসী ছিলো। অথচ তাঁকে রক্ষা করার জন্যে একটি তরবারিও ওঠানো হয়নি। তাঁর হত্যার প্রতিবাদে একটি কণ্ঠস্বরেরও সোচ্চার হওয়ার সৎসাহস হয়নি। আর এরা ওই একই লোক, যারা ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’কে বলেছিলো, “আসুন, আমরা আপনার সাথে আছি।”



ইতিপূর্বে হযরত মুসলিম (رضي اللّٰه عنه)’এর চিঠি পেয়ে ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه) কুফা অভিমুখে যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি কুফাবাসীদেরকে তাঁর আসন্ন আগমন সম্পর্কে জানাতে সহসা বার্তাবাহক ক্বায়স্ ইবনে মুস-হির’কে সেখানে প্রেরণ করেন। ওই বার্তাবাহককে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ আটক করে তাঁকে কেল্লার সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠিয়ে জনসমক্ষে ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه) ও তাঁর বাবাকে অভিসম্পাত দানের জন্যে আদেশ করে। কিন্তু তিনি এর পরিবর্তে সাইয়্যেদুনা আলী (كرم اللّٰه وجهه) ও সাইয়্যেদুনা ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’এর ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং কুফাবাসীদেরকে হযরত ইমামের এ অভিমুখী যাত্রার কথা জানিয়ে তাদেরকে নিজেদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁকে সাহায্য করার জন্যে পরামর্শ দেন। বার্তাবাহক তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণ ইবনে যিয়াদের প্রতি অভিসম্পাতের দ্বারা সমাপ্ত করেন। এমতাবস্থায় ইবনে যিয়াদের আদেশে তাঁকে দুর্গের ওপর থেকে ফেলে দেয়া হয় এবং তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন। এই আবেগময় আবেদন সত্ত্বেও কুফাবাসী লোকেরা নির্বিকার ছিলো।



মক্কা নগরীর কিছু সংখ্যক গণ্যমান্য সাহাবা (رضي اللّٰه عنهم) ও তাঁদের সন্তানেরা ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’কে কুফায় গমন করা হতে নিবৃত্ত করতে চেষ্টা করেছিলেন; আর তাঁরা তাঁকে আপন পিতা (ইমামে আলী-ক:) ও ভ্রাতা (ইমাম হাসান-রা:)’এর প্রতি কুফাবাসীদের চপলতা সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেন। সর্ব-হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে উমর, জাবের ইবনে আবদিল্লাহ, আবূ সাঈদ আল-খুদরী, তাঁর আপন ভাই মুহাম্মদ, এবং তাঁর ভায়রা ও কাজিন আবদুল্লাহ ইবনে জা’ফর (رضي اللّٰه عنهم) সবাই তাঁকে ইরাক্বে যেতে বারণ করেন। কিন্তু তিনি তাঁর মনস্থির করে ফেলেছিলেন। অতঃপর যিলহ্জ্জ্ব মাসের ৮ তারিখ তিনি হযরত মুসলিম বিন আক্বীল (رضي اللّٰه عنه)’এর করুণ পরিণতি সম্পর্কে না জেনেই মক্কা হতে (ইরাক্বের উদ্দেশ্যে) যাত্রা আরম্ভ করেন।



প্রায় এক মাসব্যাপী কষ্টকর এক সফরশেষে ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’এর দল ইরাক্বে পৌঁছেন। সেখানেই তিনি কুফাবাসীদের বিশ্বাসঘাতকতা ও হযরত মুসলিম বিন আক্বীল (رضي اللّٰه عنه)’এর শাহাদাতের খবর প্রথম জানতে পারেন। পরবর্তী সময়ে তিনি (বার্তাবাহক) ক্বায়স ইবনে মুস-হিরের শাহাদতের খবরও শুনতে পান। বেশ কিছু সংখ্যক মরুভূমির আরবীয় লোক ইত্যবসরে তাঁর দলে যোগ দিয়েছিলো এই ভেবে যে, কুফা বুঝি বাস্তবিকই তাঁর অধীনে চলে এসেছে (এতোদিনে)। ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه) তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমাদের শী’আহ (সাহায্যকারী) আমাদেরকে ত্যাগ করেছে। অতএব, যার এখান থেকে চলে যাওয়ার ইচ্ছা হয়, সে এ ব্যাপারে স্বাধীন।” সহসা তাঁকে ছেড়ে সবাই চলে যায়, স্রেফ তাঁর সাথে যারা মক্কা হতে যাত্রা করেছিলেন তাঁরা ছাড়া।

_______________

কারবালার অন্যান্য দুর্বৃত্তদের মুখোশ উন্মোচন

মূল: মাহাজ্জা-ডট-কম

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন