আরশে অবতরণ

 

আরশে অবতরণ


হাবিবে খোদা এরশাদ করেন, এরপর আমার জন্যে সবুজ রঙের রফরফ বিছানা নির্ধারণ করা হয়। যার জ্যোতি সূর্যের জ্যোতির চেয়েও প্রখর ছিল। উহা হতে আমার চক্ষুদ্বয়ের জ্যোতি বিচ্ছুরিত হতে লাগল। আমাকে উক্ত রফরফের উপর উপবেশন করা হল। অতঃপর রফরফ আমাকে নিয়ে রওয়ানা হল। অবশেষে আরশ পর্যন্ত এসে পৌঁছলাম। এরপর এমন এক বিরাট বস্তু দেখতে পেলাম, যা বর্ণনা করার শক্তি কোন ভাষায় সম্ভবপর নয়। তারপর আরশ হতে এক ফোঁটা এসে আমার জিহ্বার উপর পতিত হল। আমি উহার স্বাধ আস্বাধন করলাম। যা কোন ব্যক্তি কখনও উহার চেয়ে অধিক স্বাধ আস্বাধন করে দেখে নাই। এতে আমার আওয়াল ও আখের এর সকল বিষয়ের ইলিম বা জ্ঞান অর্জিত হলো এবং আমার অন্তর জ্যোতির্ময় হয়ে গেল। আর আরশের নূর দ্বারা আমার চক্ষুকে ঢেকে দেয়া হলো, ঐ সময় আমি সকল বস্তুকে নিজ অন্তর দ্বারা অবলোকন করি এবং নিজের পশ্চাতেও এরূপ দেখতে থাকি যেরূপ সম্মুখে দেখতাম। উল্লেখ্য যে, ‘রফরফ’ নরম বিছানাকে বলা হয়ে থাকে। যা মূল্যবান রেশম ইত্যাদি দ্বারা তৈরি করা হয়। (মাদারিজুন নবুয়াত) স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন-


ما زاغ البصر وما طغى 


মি’রাজ রজনীতে হাবিবে খোদার না চক্ষু মোবারক বিভ্রম হয়েছিল। আর না চক্ষু মোবারক লক্ষভ্রষ্ট হয়েছিল।’ এ আয়াতে কারিমার তাফসিরে আশ শায়খ মুহাক্বিক আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত তদীয় ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ নামক কিতাবের প্রথম জিলদের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-


چنانچہ فرمودوی سبحانہ ما زاغ البصر وما طغی چنانچہ بندگان خاص در حضرت ملوک میکنند واین کمال است کہ جزء اکمل بشر وسید رسل را صلوات اللہ وسلامہ میسر نیست ۔۔۔ لھذا رسانیدہ شد بتمامۂ مرادات مراتب ودرجات کہ اقصی واعلا آن رویت حق است تعالی وتقدس فیما اقام اللہ اعلا مقامات اہل صحووا ارباب تمکین است الخ- 


ভাবার্থ: আল্লাহর কালাম ما زاغ البصر وما طغى (মা জাগাল বাছারু ওয়ামা তাগা) না চক্ষু বিভ্রম হয়েছিল আর না চক্ষু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল) যেরূপভাবে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ব্যক্তিগণ বাদশাহর দরবারে উপস্থিত হয়ে থাকেন। ইহা এমন كمال বা পূর্ণত্ব যা اكمل بشر বা পূর্ণত্ব ও পরিপূর্ণ মানুষ যিনি সকল রাসূলের সরদার সায়্যিদে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত আর কেউই লাভ করতে পারেনি। মানুষের সাধারণ স্বভাব হলো এই যে, যখন সে কোন উচ্চস্তরে আরোহন করে এবং ঐ উচ্চস্তর সম্পর্কে জ্ঞানাহরণ করে থাকে, তখন আরো মর্যাদা লাভের আকাঙ্খা করে থাকে। বস্তুত যখন মুসা আলাইহিস সালাম মুনাজাত ও কথা বলার স্তরে উন্নীত হন, তখন তিনি বারি তা’য়ালার দিদারের আকাঙ্খা প্রকাশ করেন। এটা তাঁর এক প্রকার ইচ্ছে ছিল। কারণ নৈকট্যতার স্তরে পৌঁছলে শরাফতের খেয়াল বিদুরিত হয়ে যায়। কিন্তু মাহবুবে মতলক সকল নবীদের সরদার সৈয়দে আলাম যখন নৈকট্যতার স্তরে উপনীত হন, তখন তার সকল প্রাপ্য পূর্ণ করে দেয়া হয় এবং শুধু ঐ স্থান ছাড়া যে স্থানে তিনি উপনীত হয়েছিলেন, অন্য কোন বস্তুর প্রতি নিজ চক্ষু মোবারক ও অন্তরচক্ষু দ্বারা লক্ষ্য করে কিছুর আশা আকাঙ্খাও করেননি। তিনি সকল স্তর ও শ্রেণির সকল মনজিল অতিক্রম করেছিলেন। তন্মধ্য হতে সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ স্তর হল দিদারে এলাহি। আর উহা সেই মাকাম, যাতে আল্লাহতা’য়ালা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অধিষ্ঠিত করেন।’ উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চক্ষু মোবারক দ্বারা আল্লাহর দিদার লাভে ধন্য হয়েছেন।

__________

কিতাব : মি’রাজুন নাবী ﷺ

লেখকঃ  হযরতুল আল্লামা অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী (মা.জি.আ.)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন