নবীজির মুহাব্বত ঈমানের মূল- এটা নিয়ে বিভ্রান্তি

 

নবীজির মুহাব্বত ঈমানের মূল- এটা নিয়ে বিভ্রান্তি


আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের সাথে সাথে তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহর ভালবাসা লাভ করার একমাত্র উপায় হল তার রাসূলকে মুহাব্বত করা। তাঁর অনুস্মরণ, অনুকরণ করা। এ ব্যাপারে সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল প্রেমই ঈমান। রাসূলের মুহাব্বতই নাজাতের উপায়। রাসূলের ইত্তেবাই মুক্তির গ্যারান্টি। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশের একজন বক্তা আমির হামযা চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন আল্লাহর নবীকে কেউ যদি ভালবাসে আল্লাহ তাকে মাফ করে জান্নাত দান করবেন ইহা একটি বানানো কথা। তাই আমি এ ব্যাপারে কিছু আলোচনা করতে চাই। তাহলে আসুন প্রথমে আমরা তার বক্তব্যটি দেখি:

আমির হামযার বক্তব্য

আমির হামযা বলেছেন: আল্লাহর নবীকে কেউ যদি ভালবাসে, মুহাব্বত করে আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জান্নাতে দিয়ে দিবেন এই কথা কোন জায়গায় নেই। অথচ বাংলার জমিনে অনেক বক্তা ওয়াজ করেন নবীকে যদি ভালবাস আল্লাহর ভালবাসা পাওয়া যাবে। মানুষ মনে করে সবই মনে হয় কুরআন-হাদিসে আছে। অথচ এগুলো সব বানিয়ে বানিয়ে বলে।

কোন আলিম নিয়ে আসবেন নিয়ে আসেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি: আল্লাহর নবীকে কেউ যদি ভালবাসে আল্লাহ তাকে মাফ করে জান্নাতে দিবেন এ রকম কথা কুরআনে নেই।


(ইউটিউব থেকে সংগৃহীত)



পর্যালোচনা



সম্মানিত পাঠক! আমির হামযা সাহেবের বক্তব্যটি সুস্পষ্ট। সুতরাং ইহা আর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন আল্লাহর নবীকে মহব্বত করলে আল্লাহর মহব্বত পাওয়া যাবে কিংবা আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন ইহা কুরআন-হাদিসে কোথাও নাই। বরং এগুলো সম্পূর্ণ বানানো কথা।


তাহলে আসুন আমরা কুরআন ও হাদিস থেকে এ ব্যাপারে কিছু প্রামাণিক আলোচনা করি।



আল্লাহ তা’য়ালা সূরা আলে ইমরানে ইরশাদ করেন:


قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله


ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور رحيم


অর্থ: হে নবী আপনি বলুন: যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তাহলে আমাকে অনুস্মরণ কর। যাতে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু। (আয়াত: ৩১)



উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছেন, যারা রাসূল (ﷺ)কে অনুস্মরণ করবে আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসবেন। এখানে তারা প্রশ্ন তোলেন: উক্ত আয়াতে তো আল্লাহ তা’য়ালা রাসূল (ﷺ)কে মুহাব্বত করার কথা বলেননি। বরং বলেছেন অনুস্মরণ করার কথা।


আমি বলব, এতে কোন দ›দ্ব নেই। অনুস্মরণ তো তাকেই করা হয় যাকে মুহাব্বত করা হয়। ভালবাসা ছাড়া অনুকরণ হয় না। যখন আপনি রাসূল (ﷺ)কে প্রাণের চেয়ে বেশি মুহাব্বত করবেন তখনই দেখবেন তার সুন্নাত, তাঁর আমল, তাঁর চাল-চলন কথা-বার্তা সবকিছু অনুস্মরণ করতে আপনি প্রস্তুত, এর নামই ভালবাসা।



এবার আসুন আমরা এ ব্যাপারে কয়েকটি হাদিস দেখি। ইমাম বুখারি রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় সহিহ বুখারিশরীফে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন:


باب حب الرسول من الايمان


অর্থ: রাসূল (ﷺ) এর মুহাব্বতই ঈমান। (কিতাবুল ঈমান)



এই অধ্যায়ে ইমাম বুখারি (رحمة الله) ২টি হাদিস বর্ণনা করেছেন:  



প্রথম হাদিস:


عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم- قال فوالذى نفسى بيده لا يؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده


অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, সেই আল্লাহর কসম যার নিকট আমার প্রাণ তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি মু’মিন হতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সে আমাকে তার পিতা ও সন্তানের চেয়ে অধিক ভাল না বাসবে। (বুখারি হাদিস নং ১৪)



দ্বিতীয় হাদিস:


عن انس قال قال النبى صلى الله عليه وسلم- لا يؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده والناس اجمعين-


অর্থ: হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ সে আমাকে তার পিতা, সন্তানাদি ও সকল মানুষের চেয়ে অধিক ভাল না বাসবে। (বুখারি: হাদিস ১৫, মুসলিম, হাদিস নং ৪৪)



দেখুন আরো একটি হাদিস:


عن انس رضى الله تعالى عنه ان رجلا سأل النبى صلى الله عليه وسلم عن الساعة- فقال متى الساعة؟ قال وماذا اعددت لها؟ قال لا شئ الا انى احب الله ورسوله صلى الله عليه وسلم فقال انت مع من احببت- قال انس فمافرحنا بشئ فرحنا بقول النبى صلى الله عليه وسلم انت مع من احببت- قال انس فانا احب النبى صلى الله عليه وسلم وابا بكر وعمر- وارجو ان اكون معهم بحبى اياهم- وان لم اعمل بمثل اعمالهم-


অর্থ: হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী করিম (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসূল!  কিয়ামত কবে হবে? রাসূল (ﷺ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কিয়ামতের জন্য কি প্রস্তুত করে রেখেছ? তখন সে ব্যক্তি বললেন: আমার কোন কিছুই নেই শুধুমাত্র আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)কে ভালবাসি। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন: তুমি যাকে মহব্বত কর তার সাথেই থাকবে। আনাস বলেন: রাসূলেপাক (ﷺ) এর জবান মোবারক থেকে একথা শুনে (তুমি যাকে মুহাব্বত করবা তার সাথে থাকবে) যত খুশি হয়েছি, ইতোপূর্বে কোন বিষয়ে এত খুশি হইনি।



অতঃপর আনাস বলেন: আমিও নবী করিম (ﷺ) আবু বকর (رضي الله عنه) ও উমর (رضي الله عنه)কে মুহাব্বত করি। এবং আশা রাখি এই মুহাব্বতের কারণেই কিয়ামতের দিন আমি তাদের সাথে থাকব। যদিও তাদের আমলের মত আমার কোন আমল নাই। (বুখারি ৩৬৮৮, মুসলিম: ২৬৩৯)।


উক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, রাসূল (ﷺ) এর ভালবাসাই হল আল্লাহর ভালবাসা। রাসূল প্রেমেই রয়েছে মুক্তি। এতেই মিলবে জান্নাত।

_________________

কিতাবঃ হাদিস নিয়ে সালাফিদের জালিয়াত

লেখকঃ হাফিজ মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ ইকরাম উদ্দিন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন