নবী করিম ﷺ'র সম্মান ক্ষমার মাধ্যম হয়ে গেল


▶হযরত সায়্যিদুনা ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, বনী ইসরাঈলে এমন এক ব্যক্তি ছিলো, যে তাঁর জীবনের দুইশত (২০০) বছর আল্লাহ্ তা'আলার নাফরমানিতে অতিবাহিত করেছে। আর এ নাফরমানি করা অবস্থায় তাঁর মৃতু হলো, বনী ইসরাঈলেরা তার মৃত দেহকে পা ধরে টেনে নোংড়া আবর্জনার  স্তুপে ফেলে দিলো। আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর নবী হযরত সায়্যিদুনা মুসা কলিমুল্লাহ عليه السلام এর নিকট ওহী প্রেরণ করলেন যে, ঐ ব্যক্তি সেখান আবর্জনার স্তুপ) থেকে তুলো এবং তাঁর কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করে নামাযে জানাযা পড়ুন। হযরত সায়্যিদুনা মুসা عليه السلام লোকদের কাছে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে লোকেরা তার খারাপ চরিত্রের সাক্ষী দিল। হযরত মুসা عليه السلام আল্লাহ্ তা'আলার নিকট আরয করলেন: হে আমার প্রতিপালক! বনী ইসরাঈলেরা তো তাঁর খারাপ চরিত্রের সাক্ষী দিচ্ছে যে, সে তার জীবনের দুইশত (২০০) বছর তোমার নাফরমানী করে কাটিয়েছে? আল্লাহ্ তা'আলা হযরত সায়্যিদুনা মুসা عليه السلام এর নিকট ওহী প্রেরণ করলেন যে, হ্যাঁ সে এই ধরণের বদকার লোক ছিলো, কিন্তু তার এ অভ্যাস ছিলো যে, সে যখনি তাওরাত শরীফ পাঠ করার জন্য খুলতো এবং মুহম্মদ ﷺ এর মোবারক নাম দেখতো তখন সে এটাকে চুমু খেয়ে নিজের চোখে লাগাতো। আর তাঁর উপর দরূদ পড়তো, আমি তার এই আমলের জন্য মূল্যায়ন করলাম এবং তার  গুনাহ  সমূহ ক্ষমা করে দিয়ে তার বিবাহ সত্তর (৭০) জন হুরের সাথে করিয়ে দিলাম।


🔺[হিলইয়াতুল আউলিয়া,হাদিস নং-৪৬৯৫]



কিন্তু শুধুমাত্র নামে মুস্তাফা ﷺ এর সম্মান করার কারণে এই নেয়ামত অর্জিত হয়েছে যে, হযরত মুসা কলিমুল্লাহ عليه السلام আল্লাহ্ তা'আলার আদেশে তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করলেন। তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিলেন এবং আল্লাহ্ তা'আলার রহমতের হকদার হলেন। একটু ভেবে দেখুন ! যখন হযরত সায়্যিদুনা মুসা عليه السلام এর উম্মত নামে মুস্তাফা ﷺ'র সম্মান করার কারণে ক্ষমার অধিকারী হতে পারে তবে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ঐ ব্যক্তি যে আপন প্রিয় হাবীব ﷺ এর না শুধু নাম মোবারকের সম্মান করে বরং তাঁর সত্ত্বা এবং তাঁর সাথে সম্পর্ককীত সকল বস্তুর সম্মানকে অত্যাবশক মনে করে তার উপর আল্লাহ্ তাআলার রহমতের বর্ষন কীরূপ হতে পারে? তাছাড়া এই বর্ণনা দ্বারা এটাও জানা গেল যে, হুযুর ﷺ এর নাম মোবারককে সম্মানের নিয়তে চুমু খাওয়া শুধু জায়িয নয়, বরং তা আল্লাহ্ তা'আলার সন্তুটি অর্জনের মাধ্যম ও বটে। মনে রাখবেন, ঈমান আনয়নের পর তাজীমে মুস্তাফা ﷺ হলো  কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ̈ ও উদ্দেশ্য। হুযুর ﷺ এর মহত্ব ও ভালবাসার উপরই ঈমান নির্ভরশীল।


 ঈমানের দাবীর জন্য ̈ মুস্তাফা ﷺ'র মযার্দার গুরূত্ব এবং প্রয়োজনীয়তার উপর অনেক আয়াতে মোবারাকা প্রমান বহন করে।


যেমন-


▶আল্লাহ্ তাআলা পারা ২৬, সুরাতুল ফাতাহ, আয়াত নং  ৮ এবং ৯ ইরশাদ করেন: ۙ


▪কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরণ করছি উপস্থিত প্রত্যক্ষকারী (হাযির- নাযির) করে এবং সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী করে যাতে হে লোকেরা, তোমরা আল্লাহ্ ও তার রাসূল ﷺ উপর ঈমান আনো এবং রাসূলের মহত্ব বর্ণনা  ও (তাঁর প্রতি) সম্মান প্রদর্শন করে আর সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষনা করো।


🔺(পারা- ২৬, সুরা- আল ফাতাহ, আয়াত- ৮,৯)



▶আলা হযরত ইমাম আহলে সুন্নাত, ইমাম আহমদ রেযা  رضي الله عنه এই আয়াতে করীমার প্রসঙ্গে যা বলেছেন তার সারমর্ম হলো,"মুসলমানেরা দেখো আল্লাহ তা'আলা দ্বীনে ইসলাম প্রেরণ করেছেন কোরআন মজীদ নাজিলের উদ্দেশ্য স্বরূপ তিনটি কথা ইরশাদ করেন,



▶প্রথমত: আল্লাহ্ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করা। ▶দ্বিতীয়ত: রাসূল ﷺএর সম্মান করা।


▶তৃতীয়ত আল্লাহ্ তাআলার ইবাদত করা।



এই তিনটি কথার সুন্দর ধারাবাহিকতা তো দেখুন, সর্বপ্রথম ঈমানের আলোচনা করলেন এবং সর্বশেষে তাঁর ইবাদতের কথা আর মাঝখানে তাঁর প্রিয় হাবীব ﷺ এর সম্মান করার আদেশ ইরশাদ করলেন। কেননা ঈমান ছাড়া হুযুর ﷺ'র সম্মান কোন উপকারে আসবে না। অনেক অমুসলিম এমনও রয়েছে যে, তারা নবী করিম ﷺ এর ইজ্জত ও সম্মান এবং হুযুর ﷺ সম্পর্কে অমুসলিমদের সমালোচনার উত্তর ও দিয়ে কিতাব লিখেন এবং বক্তৃতা দেন কিন্তু যেহেতু ঈমান নাই সেহেতু এই সমালোচনার উত্তর দেয়ার কোন উপকারীতা অর্জিত হবে না। কেননা এটা প্রকাশ্য সম্মান করা হলো যদি অন্তরে হুযুর ﷺ এর সত্যিকার মুহাব্বত থাকতো তবে অবশ্যই ঈমান আনয়ন করতো। কেননা যতক্ষন পর্যন্ত নবী করিম ﷺ এর সত্যিকার সম্মান করা হবে না, তবে যদিও সারা জীবন ইবাদত বান্দেগীতে কাটিয়ে দেননা কেন, সব নিস্ফল হবে এবং আল্লাহর দরবারে তা প্রকৃতপক্ষে  কবুলের উপযুক্ত নয়



▶ আল্লাহ্ তাআলা এদের সম্পর্কে ইরশাদ করেন:



▪কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং যা কিছু তারা কাজ করেছিলো আমি ইচ্ছা করে সেগুলোকে ক্ষুদ্রক্ষুদ্র ধুলিকণার বিক্ষিপ্ত অনুপরমানু করে দিয়েছি যা দিনের তীব্র রোদের মধ্যে ̈ দৃষ্টি গোছর হয়।



▶পারা- ১৯, সরা- ফোরকান, আয়াত-২৩ আরো ইরশাদ করেন:


▪কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: "কাজ করো, কঠোর পরিশ্রম সহ্য করো, আর গমন করো প্রজ্জলিত আগুনে"


🔺 (পারা- ৩০, সূরা গাশিয়া আয়াত- ৩,৪)



▶অর্থাৎ আমল করো, কঠোর কষ্ট সহ ̈ করো এবং বিনিময় কি হবে? এটাই যে, প্রজ্জলিত আগুনে যেতে হবে। 🔺(ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৩০/৩০৭)



বর্ণনাকৃত আয়াতে মোবারাকা এবং আলা হযরত  رضي الله عنه এর বাণী সমূহ দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, মাদানী আক্বা, প্রিয় মুস্তাফা ﷺ'র সম্মান করাই হলো ঈমানের মুল। যদি কোন ব্যক্তি মুস্তাফা ﷺ'র মযার্দা করা ছেড়ে অন্যান্য ̈ নেক আমলের চেষ্টা করতে থাকে, তবে তার কোন আমল কবুল করার উপযুক্ত হবে না।

____________

কিতাব : তাজীমে মুস্তাফা ﷺ

লেখক : আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন