আদম (عليه السلام ) সৃষ্টির চৌদ্ধ হাজার বছর পূর্বে আমি নূর হিসাবে ছিলাম


আদম (عليه السلام ) সৃষ্টির চৌদ্ধ হাজার বছর পূর্বে আমি নূর হিসাবে ছিলাম


ঐতিহাসিক হযরত ইবনে সাদ কাতাদা (رضي الله عنه) হতে একখানা হাদীস বর্ণনা করেন হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান : মহান আল্লাহ পাকের যখন ইচ্ছা হলো নবী সৃষ্টি করতে; তখন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ কাবীলাহ বা গোত্রের প্রতি তিনি দৃষ্টি দেন এবং উক্ত শ্রেষ্ঠ গোত্র হতে একজন লোককে নির্বাচন করে প্রেরণ করেন। হযরত যয়নুল আবেদীন আলী ইবনে হুসাইন رضي الله عنه  হতে বর্ণিত : তিনি স্বীয় দাদা হযরত আলী ইবনে আবী তালেব (رضي الله عنه) হতে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন : হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান :



كنت نورا بين يدى الله تعالى عز و جل قبل ان يخلق ادم باربعة عشر الف عام-



অর্থাৎ : হযরত আদম (عليه السلام ) কে সৃষ্টির চৌদ্ধ হাজার বছর পূর্বে আমি মহান আল্লাহ পাকের সম্মুখে নূর হিসেবে বিদ্যমান ছিলাম। এরপর আদম (عليه السلام ) কে সৃষ্টির পর উক্ত নূরে মোহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর পৃষ্ট মোবারকে আমান্নত রাখেন। এভাবে এক পৃষ্ট হতে আরেক পবিত্র পৃষ্টে ধারাবাহিকভাবে স্থানান্তরীত হয়ে এক পর্যায়ে উক্ত নূরে মোহাম্মাদী হযরত খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) এর পৃষ্ট মোবারক পর্যন্ত এসে স্থির হয়।



ইমাম কাজী আয়াজ رضي الله عنه  প্রণীত, শিফা, গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত সনদবিহীন একখানা হাদীস অনূরুপ এসেছে। হাদীসটি হচ্ছে:



ان قريشا كانت نورا بين يدي الله تعالى قبل ان يخلق آدم بألفي عام يسبح ذلك النور وتسبح الملائكة بتسبيحه فلما خلق الله آدم ألقى ذلك النور في صلبه .



অর্থাৎ : নিশ্চয়ই হযরত আদম (عليه السلام ) কে সৃষ্টির দু হাজার বছর পূর্বে কুরাইশ বংশীয় (পবিত্রজনেরা) আল্লাহর সম্মুখে নূর হিসেবে বিরাজমান ছিল।



ঐ অবস্থায় উক্ত নূর আল্লাহর তাসবীহ পাঠে রত থাকে এবং উক্ত নূরের সঙ্গে ফেরেস্তাকুলও তাসবীহ পাঠ করতে থাকে। সুতরাং হযরত আদম (عليه السلام ) কে সৃষ্টির পর উক্ত মোবারক নূর তাঁর পৃষ্টে রাখা হয়।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান :



فأهبطني الله إلى الأرض في صلب آدم وجعلني في صلب نوح وقذف بي في صلب إبراهيم ثم لم يزل الله ينقلني من الأصلاب الكريمة والأرحام الطاهرة حتى أخرجني من بين أبوي لم يلتقيا على سفاح قط.



অর্থাৎ : এরপর মহান আল্লাহ পাক হযরত আদম (عليه السلام ) এর পৃষ্টে ধারণ করে আমাকে জমীনে অবতরণ করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে আমাকে হযরত নুহ (عليه السلام ) এর পৃষ্টে আমানত রাখেন, তারপর হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর পৃষ্টে। এরপর হতে অবিরাম ধারায় আমাকে পুত: পবিত্র পৃষ্ট মোবারক ও পুত : পবিত্রা রমনীদের রেহেম শরীফে স্থানান্তরীত করে এনে এক পর্যায়ে আমাকে আমার মাতা-পিতার পবিত্র পৃষ্টে ও পবিত্রা রেহেমে বের করে আনেন। এতে আমার মাতা-পিতা কখনো অবৈধ পন্থায় মিলিত হননি। (টিকা ৪)





(টিকা ৪)____________________



১নং হাশিয়া : তা স্বয়ং হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখ নিশ্রিত বাণী। এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (رضي الله عنه) এর স্বীয় মসনদে, ইমাম ইবনুল জাওযী رضي الله عنه  স্বীয় ওয়াফাউল ওয়াফা গ্রন্থে ১/৩৫ পৃ: ইমাম সুয়ুতী প্রণীত আল- লাআলীউল মাসনুআহ গ্রন্থে ১/২৬৫ পৃ: কাজী আয়াজ প্রণীত শিফা গ্রন্থের ১/৭৮ পৃষ্টায় বর্ণনা রয়েছে। কাজী আয়াজ رضي الله عنه  বলেন উপরোক্ত বর্ণনার সত্যতা পাওয়া যায় হযরত আব্বাস رضي الله عنه  এর প্রসিদ্ধ নিন্মোক্ত কবিতার মাধ্যমে। তিনি হুযূরে পাকের প্রশংসায় নিন্মোক্ত কবিতা আবৃত্তি করেন-



من قبلها طبت فى الظلال وفى مستودع حيث يخصف الورق


ثم هبطت البلاد لا بشر أنت ولا مضغة ولا علق


بل نطفة تركب السفين وقد الجم نسرا واهله الغراق


تنقل من صالب الى رحم اذا مضى عالم بدا طبق


ووردت نارا لخليل مستترا فى صلبه انت كيف يحترق


حتى احتوى بيتك المهيمن من خندق علياء تحتها النطق


وانت لما ولدت اشرقت الـرض وضاءت بنورك الافق


فنحن فى ذالك الضياء وفى والنور وسبل الرشاد تخترق



অর্থাৎ:



(১) এর আগে আপনি ছায়ায় দিনাতিপাত করতেন এবং এমন স্থানে (জান্নাতে) থাকতেন, যেখানে পাতা মিলিত হয়। (আদমের প্রতি ইঙ্গিত)।


(২) অত:পর আপনি দুনিয়াতে (আদমের উরসে) এলেন। তখন আপনি না মানুষ্য ছিলেন না মাংসপিন্ড না জমাট রক্ত।


(৩) বরং আপনি সে বীর্য যা নৌকায় সওয়ার হয়েছে এবং নসর (প্রতিমা ও নসর পুজারীদেরকে পানি গ্রাস করেছে। (নুহ (عليه السلام ) এর ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত)


(৪) আপনি এমনিভাবে ঔরস থেকে স্থানান্তরিত হতে থাকেন এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হয়েছে। যখন ইব্রাহীম (عليه السلام ) অগ্নিতে ঝঁাপ দেন, তখন আপনি তাঁর ঔরসে ছিলেন। এমতাবস্থায় অগ্নির কি সাধ্য ছিল যে, ইব্রাহীমকে স্পর্শ করে?


(৫) অবশেষে আপনার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ আপনার মাহাত্ম খন্দকের উচ্চস্থানকে ঘিরে নিল, যার নীচে অন্যান্য পাহাড়ের মধ্যবর্তী অংশ রয়েছে।


(৬) আপনি যখন ভূমিষ্ট হলেন তখন জগতবাসী আলোকময় হয়ে গেল। এবং আপনার নূরালোকে দিগন্ত উদ্ভাসিত হয়ে গেল।


(৭) এখন আমরা এ নূর ও নুরালোতে বিদ্যমান আছি আমাদের সম্মোখে হেদায়াতের পত উম্মুক্ত।


তথ্য : ( সুয়ূতী রচিত খাছায়েছুল কুবরা-১/৯৭নং)



ইমাম ইবনে আব্দুল বার رضي الله عنه  উক্ত কবিতাটি খারীয ইবনে আওস رضي الله عنه  এর জীবনী আলোচনায় উল্লেখ করেন। হযরত খারীয رضي الله عنه  বলেন : আমি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে হিজরত করি। তাবুক হতে প্রাপ্ত তাঁর মানছারিফ তথা তাঁর সম্মুখে উপস্থাপন করি। এ সময় আমি স্বীয় চাচা হযরত আব্বাস رضي الله عنه  কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন : হে আল্লাহর রাসূল ! আমি আপনার প্রশংসা করতে চাই। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, প্রশংসা কর! তাতে আল্লাহ পাক তোমার মুখের প্রশস্থতা বাড়িয়ে দিবেন। এর পর হতে তিনি কবিতাবৃত্তি করতে আরম্ভ করেন। হাফিজ ইবনে আব্দুল বার رضي الله عنه  বলেন, তাঁর ন্যায় স্বীয় ভাই জারীর ইবনে আওম ও উক্ত কবিতাবৃত্তি করেন।


সূত্র : আল ইস্তিয়াব ২/৪৪৭ পৃ:



আল্লামা মাক্বীদাহ বলেন : জারীর স্বীয় ভ্রাতা খারীযের সঙ্গে হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে আসেন। আল্লাম ইবনে আব্দুল বার বলেন : জারীর ইবনে আওস আততায়ী رضي الله عنه  কর্তৃক রাসূলে পাকের শানে লিখিত প্রশংসীত কবিতাটি আবৃত্তি করেন। এরপর উভয়ে একসাথে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে এসে উক্ত কবিতা আবৃত্তি করেন।


(আল-ইস্তিয়াব- ২/২৪০)



আল্লামা মাক্বীদাহ বলেন ইমাম হাফেজ ইবনে হাজার আসক্বালানী رضي الله عنه  স্বীয় এছাবা গ্রন্থে হযরত খারীয رضي الله عنه  এর জীবনী অধ্যায়ে উল্লেখ করেন।


তাঁর মতে উক্ত কবিতা ইবনে হায়াসামাহ, কায়যার এবং ইবনে শাহীন প্রমুখরাও উল্লেখ করেন।


ইমাম হাকীম নিশাপুরী رضي الله عنه  স্বীয় মুস্তাদরাকে উল্লেখ করেন এবং ইমামা যাহাবী رضي الله عنه  তাকে সমর্থন করেন।


(আল মুস্তাদরাক ৩/৩২৭ পৃ:)



ইমাম হাফেজ ইমাদ উদ্দিন ইবনে কাছীর رضي الله عنه  স্বীয় সীরাতে ইবনে কাছীরের ১/১৯৫ পৃ: নিন্মোক্ত সনদে উল্লেখ করেন। হযরত আবু সাকীন হতে বর্ণিত: তিনি যাখার বিন হাসীন হতে, তিনি স্বীয় দাদা সুমাইদ বিন মিতাব হতে। তিনি বলেন : আমার দাদা হযরত খারীয ইবনে আওস رضي الله عنه  বলেন : আমি রাসূলে পাকের সঙ্গে হিজরত কালে সাইয়্যিদিনা হযরত আব্বাস رضي الله عنه  কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আমি আপনার প্রশংসা করতে চাই। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, প্রশংসা করুন! মহান আল্লাহ পাক আপনার মুখের প্রসস্থতা ও সালামতি বৃদ্ধি করে দিবেন।


তিনি বলেন : উক্ত কবিতাটি হযরত হাসসান ইবনে ছাবিত رضي الله عنه  হতেও বর্ণিত আছে। তবে মুলত : কবিতাটি হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) এর তাতে সন্দেহ নেই। হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) উক্ত রেওয়ায়েতকে স্বীয় তাফসীরে সুরায়ে শুআরায় বর্ণনা করত: বলেন, মহান আল্লাহর বাণী : وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ অর্থাৎ : তিনি (মহান আল্লাহ পাক) আপনাকে সর্বদাই সিজদা কারীগনের মধ্যে স্থানান্তরীত করে আনেন।



হযরত আব্বাস رضي الله عنه  বলেন : আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তাঁকে নবীগণের পৃষ্টদেশে স্থানান্তরীত করে একপর্যায়ে তাঁর মা আমেনা رضي الله عنه  তাঁকে জন্মদান করেন। ইমাম ইবনে আবীহাতীম, ইবনে মারদুভীয়্যা এবং আবু নুআঈম স্বীয় দালায়েলে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেন।


(আদদুররুল মানছুর ৫/৯৮ পৃ: দ্رضي الله عنه )



ইমাম ইবনে কাছীর رضي الله عنه  স্বীয় তাফসীরে ইবনে কাছীরে, ইবনে আবী হাতীম, ইবনে জাওযী সহ প্রত্যেকই সুরা শুআরায় বর্ণিত وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ. আয়াত তা বর্ণনা করেছেন সুফিয়ান বিন উআয়না, ফিরআভী, হুমায়দী, সাইয়্যিদ ইবনে মনছুর, ইবনে মারদুভীয়্যা, বায়হাকী, প্রমুখগণ। তাদের মতে আয়াতে বর্ণিত وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ. দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে হুযূরে পাকের বাণী : অর্থাৎ আমাকে এক নবী হতে পর্যায়ক্রমে আরেক নবীর পৃষ্টদেশে স্থানান্তরীত করে আনা হয়। শেষ পর্যায়ে আমাকে নবী হিসেবে বের করে আনা হয়।


(দুররুল মানছুর)



পূর্বোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে হয়ে গেছে যে, যুগে যুগে পূর্ব পুরুষদের মাধ্যমে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্থানান্তরীত হয়ে আসাটা একটি প্রমাণিত বিষয়, যা সাব্যস্ত হয়েছে হযরত আব্বাস رضي الله عنه  কর্তৃক হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মুখে আবৃত্তি করা কবিতা দ্বারা এবং হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শতস্ফুত:ভাবে তার স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। এ আলোচনাকে আরও ষ্পষ্ট ও সুদৃঢ়ভাবে প্রতীয়মান করে ইবনে আব্বাস رضي الله عنه  কর্তৃক নিন্মোক্ত وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ. আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যা দ্বারা। আর বর্ণিত আয়াতে কারীমা দ্বারা হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্থানান্তরীত হওয়ার ব্যাপারটি আরেক যুক্তিগত ও প্রমাণিত বিষয়।


তবে কোন কোন সময় কোন কোন সংকীর্ণমনা ও মন্দাকৃতির লোকেরা এ ধারণা পোষণ করে থাকে যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্থানান্তরীত হওয়াটা মুলত: জাতীগত বা সত্ত্বাগত ব্যাপার বিধায় তা জাতে মুহাম্মদীর সাথে বিশেষিত। এজন্য তিনি এক পৃষ্ট হতে অন্য পৃষ্টে এবং এক রেহেম থেকে আরেক রেহেমে স্থানান্তরীত হয়ে এসেছেন। একথাগুলো মুলত : কোন মুর্খ ও পাগলের কথা বৈই আর কিছু নয়।



মূলত : রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্থানান্থরিত হওয়াটা সত্ত্বাগতও ছিলনা আবার কেবল মাত্র তাঁর জন্য খঁাছও ছিলনা বরং তা বংশধরদের জন্য ও ব্যাপক ছিল যা তামাম আম্বিয়ায়ে কেরামগণের পৃষ্টদেশ দিয়ে স্তানান্তরীত হয়ে এসেছিল। তবে যুগে যুগে রাসূলগণের পৃষ্ট মোবারক হয়ে হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্থানান্তর হওয়াটা ছিল সুস্থ্য বিবেক ও পরিপূর্ণ অস্থিত্ব সহকারে। সেখানে কোন অবস্থায়ই তাঁর মস্তিষ্কের অবনতি ঘটেনি বা জ্ঞান হারা হননি। আর ঐ সুস্থ্য বিবেক ও পরিপূর্ণ জ্ঞান পার্থিব জগতে আসার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত বিরাজমান ছিল।



যেহেতু আম্বিয়ায়ে কেরামগণের পৃষ্টদেশ হয়ে যুগে যুগে নবী পাকের স্থানান্তর হওয়ার দ্বারা তাই বুঝানো হয়েছে যে, হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুলত তাঁর বংশধরগনের জিম্মায় এসেছেন।


আর মহান আল্লাহ পাক তা কেবল মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য খাছ করে রেখেছেন।



তবে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মতো অন্যান্য বংশধরদের এভাবে অবগতি জ্ঞান ছিলনা বরং রূহ জগতে সকলের কাছ থেকে অঈীকার গ্রহনের সময়কার ব্যতীত।



মোট কথা হচ্ছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুগে যুগে আম্বিয়ায়ে কেরামগণ দ্বারা স্বীয় বংশগণের মাধ্যমে বিশাল নূর চমকিয়ে উঠেছিল।


যেমন : এ ব্যাপরে ইমাম হাফেজ মুহাদ্দেস শামসুদ্দিন ইবনে নাছির দিমাসাকী (رضي الله عنه ) কতই না চমৎকার কথা কাব্যাকারে বলেছেন-



تنقل أحمد نورا عظيما * تلألأ في جباه الساجدينا


تقلب فيهم قرنا فقرنا * إلى أن جاء خير المرسلينا



এলেন নবী এ ধরাতে বিশাল নূরী হয়ে


সেজদাকারীর কপাল দিয়ে এলেন চমকিয়ে


তাদের দ্বারা স্থানান্তর হলেন যুগে যুগে


অবশেষে এলেন তিনি শ্রেষ্ট রাসূল রূপে



সুতরাং ইমাম সুয়তী (رضي الله عنه ) প্রণীত মাসালিকুল হুনাফা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল স্বীয় সনদে সাইয়্যিদিনা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত একখানা হাদীস উল্ল্যেখ করত বলেন যে, হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় প্রশংসায় বলেন-



قَالَ أَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ الْخَلْقَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِ خَلْقِهِ وَجَعَلَهُمْ فِرْقَتَيْنِ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِ فِرْقَةٍ وَخَلَقَ الْقَبَائِلَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِ قَبِيلَةٍ وَجَعَلَهُمْ بُيُوتًا فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ بَيْتًا فَأَنَا خَيْرُكُمْ بَيْتًا وَخَيْرُكُمْ نَفْسًا



অর্থাৎ : হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান : আমি মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মোত্তালেব হিসেবে বলছি যে, মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম সৃষ্টি জীবকে সৃষ্টি করে আমাকে শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে নির্বাচন করেন। এরপর উক্ত সৃষ্ট জীবকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে আমাকে উত্তম ভাগে রাখেন। এপর বিভিন্ন ক্বাবীলাহ (গোত্র সমূহ) সৃষ্টি করে এরপর তাদেরকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করে তন্মধ্যে আমাকে শ্রেষ্ঠ পরিবারে তথা কুরাইশ পরিবারে নির্বাচন করেন।



অতএব, হে আরববাসী! জেনে রাখ যে, আমি পারিবারিক ক্ষেত্রেও যেমন তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তেমনি ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। ইমাম হাকীম, নিশাপুরী স্বীয় গ্রন্থে এবং বায়হাক্বী (رضي الله عنه ) স্বীয় বায়হাকীতে অনূরূপ বর্ণনা করেছন।



বহু নির্ভরযোগ্য সনদ মাধ্যমে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন



خرجت من نكاح خير سفح


 


 অর্থাৎ : আমি যুগে যুগে অবৈধ যৌন কর্ম ব্যতিরেকে বরং বিবাহ প্রথার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছি। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান :



ما ولدنى من سفح الجاهلية شى وما ولدنى الانكاح كنكاح الاسلام



অর্থাৎ : জাহিলী যুগের কোন অবৈধ যৌনকর্মে আমার জন্ম হয়নি বরং ইসলামী পন্থায় বৈধ বিবাহ প্রথার মাধ্যমে আমার জন্ম হয়েছে।



অন্য এক বর্ণনায় এসেছে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী-



لم اخرج الا من طهرة



অর্থাৎ : সর্বদাই পুত:পবিত্র পন্থায় আমার আগমন হয়েছে। এ হাদীসটি ঐতিহাসিক ইবনে সা’দ ইবনে আসাকীর, তাবারানী এবং ইবনে আবী শায়রা বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী رضي الله عنه  খাছায়েছুল কুবরাতে, ইমাম হাফিজ ইমাদ উদ্দিন ইবনে কাছীর رضي الله عنه  স্বীয় বেদায়া গ্রন্থে উক্ত হাদীসটি নকল করেন।



ইমাম আবু নুআঈম কর্তৃক বর্ণিত একখানা হাদীসে এসেছে



لم يلتق ابواي قط على سفاح لم يزل الله ينقلني من الأصلاب الطيبة إلى الأرحام الطاهرة مصفى مهذبا لا تتشعب شعبتان إلا كنت في خيرهما.



আমার পবিত্র মাতা পিতা কশ্নিনকালেও অবৈধ যৌন কর্মে লিপ্ত হননি। মহান আল্লাহ পাক সর্বদাই আমাকে পুত: পবিত্র পুরুষদের পৃষ্ঠদেশ হতে পুত : পবিত্র রমনীদের পবিত্র রেহেমে স্বচ্ছ নির্মল ও সুসভ্য-মার্জিত স্বভাব দিয়ে স্থানান্তরীত করে আনেন। এমন দুটি দল নেই যে, আমি তদোভয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নই।



ইমাম তাবারানী رضي الله عنه  স্বীয় আওসাতে এবং বায়হাক্বী رضي الله عنه  স্বীয় দালায়েলুন নবুওয়তে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা رضي الله عنه  হতে এক খানা হাদীস বর্ণনা করেন, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান :



قال لي جبرئيل قلبت الأرض مشارقها ومغاربها فلم أجد رجلا أفضل من محمد ولم اجد بني أب افضل من بني هاشم.



অর্থাৎ : আমাকে হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام ) সম্বোধন করে বললেন : আমি পৃথিবীর প্রাচ্য হতে পাশ্চাত্য পর্যন্ত ভ্রমণ করি কিন্তু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেয়ে অত্যাধিক মর্যাদাশীল কোন লোককে দেখতে পাইনি, এমনকি বনু হাশিম গোত্রের চেয়ে অত্যাধিক মর্যাদাশীল কোন পিতার সন্তানকে দেখতে পাইনি। অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই বংশগত ও মর্যাদাগত দিক বিবেচনায় সর্বশ্রেষ্ঠ।


(মাছালিকুল হুনাফা ৬৩পৃষ্টা)




উল্লেখ্য যে, রহমাতুল্লিল আলামীন হুযূর পুরনূর (ﷺ) বলেন আমার মান মর্যাদাকে যুগে যুগে মহান আল্লাহ পাক হেফাজত করেছেন এবং তাঁর নামের উসিলায় তাঁর পূর্ব পুরুষগণ বহু সংকট হতে রক্ষা পেয়েছেন এমনকি তাঁর পূর্ব পুরুষ তথা আদম (عليه السلام ) থেকে নিয়ে স্বীয় মাতা পিতা পর্যন্ত কেউই অবৈধ যৌন কর্মে লিপ্ত হননি। যেমন : এ প্রসঙ্গে একজন জনৈক কবি কাব্যাকারে বলেছেন :



حفظ الآله كرامة لمحمد * آباءه الأمجاد صونا لاسمه


تركوا السفاح فلم يصبهم عاره * من آدم وإلى أبيه وأمه



মহান আল্লাহ পাক মোহাম্মদ (ﷺ) এর সম্মানের উসিলায় তাঁর সম্মানীত পূর্ব পুরুষদেরকে হেফাজত করেন। সকলের ললাটে তাঁর মোবারক নাম অংকিত থাকায় তাঁরা ভয়াল সংকট হতে নিরাপত্তা লাভ করেন। তাদের সকলেই অবৈধ যৌনাচার পরিহার করে চলেছিল, তাতে কোন নগ্নতা, ও বিবস্ত্রতায় তাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি। তা হযরত আদম (عليه السلام) হতে শুরু করে পরিশেষে তাঁর সম্মানীত মাতা পিতা পর্যন্ত পবিত্র থেকে পবিত্রতায় এসে পৌছে।



সহীহ বোখারী শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে একখানা হাদীস বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমান :



قال بُعِثْتُ مِنْ خَيْرِ قُرُونِ بَنِي آدَمَ قَرْنٍ فَقَرْنٍ حَتَّى بُعِثْتُ مِنَ الْقَرْنِ الَّذِي كُنْتُ مِنْهُ.



মানব সমাজ যে যুগে যুগে ক্রমান্নয়ে ধাপে ধাপে মানবীয় প্রতিভা ও গুনাবলীর ক্ষেত্রে উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়েছে। যুগের পর যুগ অতিবাহিত হয়েছে অতপর যখন আমার আর্বিভাবের যুগ এসেছে তখনই আমার আর্বিভাব হয়েছে।



ইমাম ছাখাভী رحمة الله عليه বলেন : হুযূর পুর নূর (ﷺ) হচ্ছেন সৃষ্টির প্রথম মুক্বারাবীন ফেরেস্তাকুলের সরদার। তিনি সমস্ত সৃষ্টি জীবের মুক্তি সনদ, বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীব, যিনি শাফাআতে কুবরা দ্বারা বিশেষিত। বিশ্ববাসীর নিকট তিনি মাওলানা আবুল কাছিম মোহাম্মদ বিন আব্দুল মুত্তালিব হিসেবে পরিচিত ও সমাদৃত।

_______________

আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)

মূলঃ ইমাম নূরুদ্দীন মুল্লা আলী কারী আল হারুবী (رحمة الله)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন