রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পূর্ব পুরুষগণের পরিচয় ও বিশেষণ

 

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পূর্ব পুরুষগণের পরিচয় ও বিশেষণ


খাজা আব্দুল মুত্তালেবের পরিচয় খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) কে এ নামে আখ্যায়িত করার একটি হেকমত আছে। তাঁর আসল নাম হচ্ছে শায়বাতুল হামদ। তাঁকে এ নামে নামকরণ করার কয়েকটি অভিমত পাওয়া যায়।



কেউ কেউ বলেন, আব্দুল মোত্তালেব পিতা খাজা আব্দুল হাশিম رضي الله عنه এর মৃত্যুর সময় তাঁর চাচা মুত্তালেবকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন ادك عبدك بيثرب. অর্থাৎ : ইয়াসরিবে তোমার দাসের সন্ধান মিলেছে। এ থেকেই তাঁকে আব্দুল মুত্তালিব বলা হতো। কেউ কেউ বলেন : একবার তাঁর চাচা মুত্তালিব তাঁকে সঙ্গে নিয়ে মক্কায় আসেন, এ সময় তিনি জরাজীর্ণ আকৃতিতে ছিলেন অর্থাৎ : ময়লা কাপড় পরিহিত ছিলেন। তাই কেউ তাকে এ ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে লজ্জাবশত: নিজের ভাতিজা পরিচয় না দিয়ে বরং আমার দাস বলে সম্বোধন করতেন। আবার ঘরের ভেতর ডুকিয়ে বা ভাল কাপড় পরিধান করলেও নিজের ভাতিজা বলে পরিচয় দিতেন। খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) সম্পর্কে আরেকটি কথা আছে যে, সমগ্র আরববাসীর মধ্যে সর্বপ্রথম তিনি কালো হেজাব ব্যবহৃত করেন। তিনি মোট ১৪০ বছর জীবিত ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল আব্দুল হাশিম। আব্দুল হাশিমের আসল নাম ছিল আমর। তাঁকে হাশিম বলা হত এজন্য যে, তিনি স্বীয় সম্প্রদায়কে দুর্ভিক্ষের বছর শুষ্ক রুটি চুর্ণ করে ঝুলে মিশ্রিত করে খাওয়ান। তার পিতার নাম ছিল আব্দে মনাফ ইবনে কুছাই। কুছাই শব্দটি ক্বাছা শব্দে তাছগীর। যার অর্থ হচ্ছে (বায়ীদ) তথা দুরে থাকা। তিনি স্বীয় মাতা ফাতেমার গর্ভে থাকাবস্থায় তাঁর পিতা কুছাই দীর্ঘদিন পরিবার পরিবর্গ থেকে সূদূর মুদ্বাআ শহরে যেয়ে বসবাস করেন। কুছাইর পিতার নাম ছিল কিলাব। কিলাব শব্দটি হয়তো মুকা-লাহাব হতে গৃহীত। যেমন : আরবীয় ভাষায় كالبت العدو مشادة ومضائقة অর্থাৎ : শত্রুরা গিরীসংকটে গৃহীত তা কালবুন শব্দে বহুবচন। তাকে কিলাব বলে ডাকা হতো এজন্যে যে, কিলাব বংশের লোকেরা কোন কোন বিষয়ে বার বার ব্যবহার করতো অথবা কোন বিষয় একাধিকবার ব্যবহার করতো। যেমন : একবারে সাত শব্দে উচ্চরণ করা। তা তোমরা কেন তোমাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে নিকৃষ্ট নামে ডাকো? যেমন كلب (কালবুন) ذئب (জিবুন) عبيدكم (আবীদুকুম) ইত্যাদি। অথচ এর পরিবর্তে مرزوق (মারযুক) مرباح (মিরবাহ) ইত্যাদি সুন্দর নাম সমূহ রয়েছে। সে বলল, আমরা সন্তানদের এ নামে ডাকি কেবল শত্রুদের কারণে এবং দাসদেরকে ডাকি কেবল নিজেদের স্বার্থে। তারা ছেলেদেরকে শত্রুদের মোকাবেলায় প্রস্তুত করতো এবং তাদের কুরবাণীর তীর হিসেবে ইচ্ছা করতো বিধায় তারা এ সব নাম সমূহ নির্বাচন করতো। কিলাবের নাম ইবনে মুররা। মীম হরফে পেশ এবং رضي الله عنه হরফে তাশদীদ যোগে ইবনে মুররার পিতার নাম ইবনে কা’ব। তিনি এমনই এক ব্যক্তি যিনি সর্বপ্রথম ইয়াউমূল জুমআকে ইয়াউমূল উরুবা তথা আরবীয় দিন বলে নামকরণ করেন।



তিনি প্রতি জুমআর দিন আসলে খুতবা প্রদান করতেন এবং তা শ্রবণের নিমিত্তে কুরাইশদেরকে জড়ো করতেন এবং এমনই এক ব্যক্তি যিনি সর্বপ্রথম اما بعد (আম্মা বাদ) শব্দের প্রচলন করেন।


তিনি খুতবার প্রাক্ষালে امابعد বলে প্রথমে স্বীয় কওমকে হুযূরে পাক (ﷺ) এর আগমনের বার্তা বাণী শুনিয়ে তাদের জানিয়ে দিতেন যে, মোহাম্মদ (ﷺ) তাঁরই সন্তানদের অন্তর্ভূক্ত হবেন। এ হিসাবে তিনি তাদেরকে তাঁর (নবীর) অনুস্মরণের নির্দেশ দিতেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমনের আকাংক্ষায় নিন্মোক্ত কবিতাবৃত্তি করেন।



يا ليتنى شاهد فحواء دعوته * حين العشيرة تنفى الحق خذلانا



অর্থাৎ- কাবের পিতার নাম হচ্ছে ইবনে লুআই। লু“ই শব্দটি (আল-লা, ইউন) শব্দে তাছগীর। তাঁর পিতার নাম গালেব। ফিহরের ছেলে। ফা হরফে যের। তার পিতার নাম গালেব। তিনি ফিহরের উপনাম হচ্ছে কুরাইশ এবং ফিহর হচেছ মূল নাম। ফিহর পর্যন্ত কুরাইশ বংশ সমাপ্ত হয়। তারপর থেকে কেনানী বংশ শুরু। তা ই নির্ভরযোগ্য কথা। ফিহরের পিতা হচ্ছেন মালেক। তার পিতার নাম নদ্বর। তাঁকে নদ্বর বলা হতো এজন্যে যে, তাঁর চেহারার ঔজ্জল্যতা ছিল অত্যন্ত বেশী। তার মূল নাম ক্বায়েস। অধিকাংশের নিকট নজর ইবনে কেনানাহ ছিলেন সমগ্র কুরাইশদের সংমিশ্রন স্থল। কেনানাহ শব্দে, ক্বাফ, হরফ যের যোগে। তিনি আবু কাবলা নামে প্রসিদ্ধ। তিনি ইবনে খুযায়মা এর পুত্র। খুযায়মা শব্দটি তাছগীর। خزمة (খাযমাহ) শব্দ থেকে গৃহীত। খুযায়মা শব্দটি ছেলে مدركة (মুদরিকা) শব্দটি ইসমে ফায়েল তথা কর্তা কারক বিশেষ্য অর্থে ব্যবহৃত। তাঁর পিতার নাম হচ্ছে ইলিয়াস। ইমাম আম্বারীর মতেالياس শব্দের হামযা যের যোগে এসেছে। কেউ কেউ যবর যোগে তথা الياس (আলয়াস) পড়েছেন। তা কাছিম বিন ছাবিতের অভিমত। হযরত মুদরেকা বিন ইলিয়াস (رضي الله عنه ) বলেন আমি হজ্জ করা কালীন সময়ে আমার মেরুদন্ড হতে মোহাম্মদ (ﷺ) এর তালবীয়া পাঠের আওয়াজ শুনতাম। তিনি আরো উল্লেখ করেন হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) আমার মেরুদন্ডে অবস্থানকালে তাকে স্পষ্টভাবে একথা বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন : لاتسبوا الياس فانه كان مؤمنا অর্থাৎ : ওহে আরববাসী! তোমরা কখনো ইলিয়াসকে গালি দিওনা। যেহেতু তিনি একজন খাঁটি মুমিন ।



ঐতিহাসিক ইমাম সুহাইলী (رحمة الله عليه ) স্বীয় রাওদ্বা গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে, হযরত জাবের رضي الله عنه বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদিনা হযরত ইলিয়াস (رضي الله عنه ) বনু ইসমাঈলী গোত্রের আকীদাহ অস্বীকার করতেন। কেননা তারা তাদের পূর্ব পুরুষদের রীতি নীতি পরিবর্তন করে ফেলেছিল। তিনি তাদের বোধগম্যতার জন্য দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে তাদের যুক্তিসম্মত তত্ত্ব উপাত্ব্য দ্বারা নসীহত করত স্বীয় রায়ের প্রতি তাদেরকে জড়ো করতেন, ফলে তাঁর সুন্দর ও চমৎকার যুক্তি শ্রবণে যার পর নেই সকলেই সন্তুষ্ট হতো।



তিনি এমনই এক মহান ব্যক্তিত্ব, যিনি সর্বপ্রথম খানায়ে কা’বার উদ্দেশ্যে স্বীয় দেহকে উৎসর্গ করেছিলেন। ফলে অব্যাহত ধারায় আরবীয়গণ তৎকালীন সকল জ্ঞানী-গুণী ও পন্ডিতদের উর্ধ্বে তাঁকে সম্মান দান করতো।



ইবনে মুদ্বার : মুদ্বার শব্দটি عمر (উমার) শব্দের ওযনে এসছে। তাঁকে মুদ্বার বলা হতো এজন্য যে, তৎকালীন যুগে যারা সুন্দর ও উত্তম দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকাতো তিনি তাদের হৃদয়ের অবস্থার গতি পরিবর্তন করে দিতেন অর্থাৎ : তাঁর নেক দৃষ্টিতে জনগণের অন্তরের অবস্থার পরিবর্তন এসে যেতো। তিনি ছিলেন উত্তম, মাধুর্য্যপূর্ণ ও সুললীত কণ্ঠের অধিকারী। সাইয়্যিদিনা হযরত ইবনে আব্বাস رضي الله عنه হতে একখানা হাদীস বর্ণিত আছে, হুযূর (ﷺ) বনী মুদ্বার ও বনী রাবীআ গোত্র সম্পর্কে বলেছেন



 لاتسبوا مضروربيعة - فانهما كانا مسلمين على ملة ابراهيم



অর্থাৎ : হে আরবেরা! তোমরা কখনো মুদ্বার ও স্বীয় ভ্রাতা রাবীয়াকে গালি দিওনা। কেননা তাঁরা উভয়ই হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর ধর্মের উপর মুসলমান ছিলেন। শুধু তাই নয় বরং হযরত ইবনে আব্বাস رضي الله عنه তদুভয়ের সঙ্গে বনী খুযায়মা, মা’আদ, আদনান, আদাদ, ক্বায়েস, তামীম, আসাদ ও সন্বাহ গোত্রকে ও শামিল করতে বলেন যে, তাঁদের সকলেই মিল্লাতে ইব্রাহীমী ধর্মের উপর মুসলমান হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।



এজন্য তাঁদের সমালোচনা না করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিন্মোক্ত বাণী ফরমায়েছেন : فلا تذكرو هم الابما يذكربه المسلمون অর্থাৎ : মুসলমানগণ যে উত্তম সমালোচনা করে থাকেন তা ব্যতীরেকে কোন অবস্থায়ই তাঁদের মন্দালোচনা তোমরা করোনা।



ইবনে নযর:- প্রকাশ থাকে যে, নযর শব্দটি (নুন) যের যোগে এবং زا হরফটি তাশদীদ বিহীন এসেছে। অর্থাৎ- نزار (নিযার) শব্দটি نزر নযর হতে এসেছে। যার অর্থ হচ্ছে ক্বালীল তথা অল্প। অর্থাৎ- তিনি ছিলেন সে যুগের একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যার নামে অন্য কার ও নাম পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ বলেছেন, তাঁকে নযর এজন্য বলা হয় যে, তিনি যখন জন্ম গ্রহণ করেন, তখন তাঁর সম্মানীত পিতা মা’আদ رضي الله عنه তাঁর উভয় চোখের মধ্যখানে নূরে মোহাম্মাদী (ﷺ) দেখতে পান এবং তাতে তিনি সীমাহীন আনন্দ প্রকাশ করত: কৃতজ্ঞতা স্বরূপ লোকের সমাগম করে বিশাল আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন এবং দীর্ঘ দিন যাবত এ মহা ব্যবস্থা অব্যাহত রাখেন।



আপ্যায়নের প্রাক্ষালে বলতেন আমার এ যথসামান্য আপ্যায়ন কেবল মাত্র এ নবজাতক সন্তানের আগমনের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ব্যবস্থা করেছি, যেহেতু তাঁর পেশানী মোবারকে নূরের স্পষ্টত রুহে মোহাম্মাদী (ﷺ) বিদ্যমান রয়েছে।



ইবনে মা, আদ:- মীম ও আইন হরফদ্বয়ে যবর যোগে এবং দাল হরফে তাশদীদ যোগে এসেছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পুর্বপুরুষ হযরত মা’আদ ইবনে আদনান (رضي الله عنه ) যখন আরব প্রদেশে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন, তখন মহান আল্লাহ পাক সুদূর আরমেনিয়া শহরের অধিবাসী বনী ইস্রাইলের একজন নবীর প্রতি এমর্মে প্রত্যাদেশ জারী করেন যে, হে নবী তুমি মা’আদের কাছে যাও এবং তাঁকে স্বীয় শহর থেকে বের করে, সুদূর শাম তথা সিরিয়া প্রদেশে নিয়ে যাও এবং সর্বদাই তাঁর নির্দেশের অনুস্মরণ কর কেননা তাঁর সন্তানদের মধ্য হতে আমার প্রিয় আখেরী নবী হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) সর্বশ্রেষ্ট ও সর্বশেষ নবী হিসেবে আবির্ভূত হবেন।



সাইয়্যিদিনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) বলেন : মহান আল্লাহ পাক যদি চাইতেন, তাহলে অবশ্যই তাঁর নবীকে উর্ধ্বতম পূর্ব পুরুষ সম্পর্কে জ্ঞাত করতেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অবশ্যই এ জ্ঞান রাখতেন।



ইমাম ইবনে দাহিয়্যা (رضي الله عنه ) বলেন: সমস্ত উলামায়ে কেরামগণ এ ব্যাপারে একমত পোষন করেছেন এমনকি এ ব্যাপারে স্বয়ং ইজমা ও দলীল হিসেবে সাব্যস্থ হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উর্ধ্বতন পুর্ব পুরুষের তথা মা’আদ ইবনে আদনান পর্যন্ত পৌছে এ পর্যন্ত নিরব থাকতেন।



মুসনাদে ফেরদৌসে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) হতে আরেক খানা হাদীস বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় পূর্ব পুরুষগনের নছব নামা বর্ণনা করতে যেয়ে মা’আদ ইবনে আদনান পর্যন্ত পৌছে নিরব হয়ে যেতেন। এরূপ বলতেন: كذب النسابون অর্থাৎ এর অতিরিক্ত নছব বর্ণনাকারী বা বংশ মিথ্যায় জর্জরীত।



ঐতিহাসিক সুহাইলী (رضي الله عنه ) বলেন বর্ণিত হাদীস বিষয়ে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه ) এর কথা। কেউ কেউ বলেন: হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه ) যখন মহান আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণী পাঠ করেন:



أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَبَأُ الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ قَوْمِ نُوحٍ وَعَادٍ وَثَمُودَ وَالَّذِينَ مِن بَعْدِهِمْ لاَ يَعْلَمُهُمْ إِلاَّ اللّهُ .



 অর্থ:- তোমাদের নিকট কি তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায় তথা কওমে নুহ, কওমে আদ, কওমে সামুদ সহ পরবর্তী সম্প্রদায়ের সংবাদ আসেনি তবে তা কেবল মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্য কেউই জানেনা।



তখন ইবনে মাসউদ বলেন যে, এরপর যারা বংশীয় জ্ঞানের দাবী তুলে তাদেরকে তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) كذب النسابون বলে প্রত্যাখ্যান করতেন। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক স্বীয় গ্রন্থে তাঁর বান্দাহগণকে এর উর্ধ্বতম পুর্ব পুরুষ তথা মা, আদ ইবনে আদনানের উর্ধ্বে জানার প্রচেষ্টা কে নিষেধ করেছেন।



সাইয়্যিদিনা হযরত ওমর ফারুক (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন স্বীয় নছব নামা বর্ণনা করতেন, তখন মা, আদ ইবনে আদনান পর্যন্ত পৌছে এর উর্ধ্ব পুরুষ সম্পর্কে “আমি অবহিত নই” বলে মন্তব্য করতেন।



সাইয়্যিদিনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) বলেন:



بين عدنان واسماعيل ثلاثون ابا لايعرفون



অর্থ:- হুযূর (ﷺ) এর পূর্ব পুরুষ হযরত আদনান (رضي الله عنه ) হযরত ইসমাঈল (عليه السلام ) এর মধ্যখানে প্রায় ৩০ (ত্রিশ) জন পুর্ব পুরুষ রয়েছেন, যাদের পুরোপুরী তথ্য কেবল আল্লাহ পাক ছাড়া অন্য কেউই জ্ঞাত নয়।



সাইয়্যিদিনা হযরত উরওয়া ইবনে যুবায়ের (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:



ما وجد نا احدا يعرف بعد معدبن عدنان



অর্থ:- মা, আদ ইবনে আদনান (رضي الله عنه ) উর্ধ্বতন পুর্ব পুরুষ সম্বন্ধে জ্ঞান রাখে এমন কোন ব্যক্তি আছে বলে আমরা পাইনি। তাঁর কাছে কোন এক ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হলো যে, হযরত আদম (عليه السلام ) পর্যন্ত তাঁর বংশ পরিচয় দিয়েছে, তা কি সঠিক? তিনি (যুবায়ের) তা অস্বীকার করত: এমন সংবাদ প্রদানকারী ব্যক্তির কঠোর সমালোচনা করেন।



খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) এর কৃতিত্বের মধ্যকার প্রথম একটি হচ্ছে যে, যখন হাবশা অধিবাসী আবরাহা আল আছরাম এর বাহিনী আসহাবে ফীলরা পবিত্র কাবা ঘর ধ্বংসের পায়তারা করে, তখন সমস্ত কুরাইশগন নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে হেরেম শরীফ হতে বের হয়ে অন্যাত্র চলে গিয়েছিল কিন্তু তিনি বহাল থাকেন এবং বলেছিলেন, আল্লাহর ক্বসম, আমি কখনো হারাম শরীফের ভেতর থেকে বের হবোনা বরং এক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা ব্যতীত বিকল্প উদ্দেশ্য আমার নেই। এ বলে তিনি পবিত্র হেরেমে আবস্থান করেন।



আল্লাহ পাকের অপার কৃপা যে, তিনি আবরাহা বাহিনীকে মুহুর্তের্ই ধ্বংস করেন এবং তাঁদেরকে স্বীয় ঘর হতে তাড়িয়ে দেন। খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) স্বীয় চাচা মুত্তালিবের তীরোধানের পর হতে হজ্জ মৌসুমে হজ্জ পালনকারী গনের জন্য পানীয় সামগ্রী ও সাহায্য সহযোগীতার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি এ কাজে স্বীয় সম্প্রদায়কে নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবত প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর মতো কেউই একাজে দীর্ঘ দিন নিয়োজিত ছিলেন না। বিধায় একমাত্র তিনিই উচ্ছ মর্যাদার অধিকারী হন। তাঁর এ স্তরে কেউই পৌছতে সক্ষম হননি। তিনি স্বীয় সম্প্রদায়ের নিকট অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালবাসার পাত্র ছিলেন। এমনকি তাদের নিকট যথেষ্ট খা্যতি বিধায় তাদের পথ নির্দেশনা ও সর্তকবাণীর ক্ষেত্রে একমাত্র তাঁর উপরই তাঁরা নির্ভর করতো।


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেই নিজের প্রশংসা করতে যেয়ে বলেন: انا ابن الذبيحين অর্থাৎ- আমি দু যবেহকৃত ব্যক্তিদ্বয় তথা দাদা ইসমাঈল (عليه السلام ) ও পিতা খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) দ্বয়ের সন্তান।

_______________

আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)

মূলঃ ইমাম নূরুদ্দীন মুল্লা আলী কারী আল হারুবী (رحمة الله)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন