নবী করীম (ﷺ) এর শুভাগমণের রাতে আনন্দ উদযাপনকারীদের প্রতিদান

 

নবী করীম (ﷺ) এর শুভাগমণের রাতে আনন্দ উদযাপনকারীদের প্রতিদান


❏ শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বর্ণনা করেছেন: “নবী করীম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর শুভাগমণের রাতে আনন্দ উদযাপনকারীদের প্রতিদান এই যে, আল্লাহ্ তাআলা তাঁর দয়া আর মেহেরবানীতে তাদেরকে “জান্নাতুন নাঈম” দান করবেন। মুসলমানগণ সর্বদা মিলাদে মুস্তফা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ উদযাপন করে আসছেন। বিলাদতে মুস্তফায় আনন্দিত হয়ে মানুষকে দাওয়াত দিচ্ছেন। খাবারের আয়োজন করছেন, বেশি পরিমাণে দান খয়রাত করে আসছেন, আনন্দ প্রকাশ করছেন। তাছাড়া হুযুর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর বিলাদতে বা-সাআদাতের আলোচনার ব্যবস্থা করেন এবং নিজেদের ঘর-বাড়ী সজ্জিত করে থাকেন, আর এই সমস্ত ভাল কাজের বরকতে তাদের উপর আল্লাহ্ তাআলার রহমত বর্ষিত হয়। (মা-ছাবাতা বিসসুন্নাহ্, ১০২ পৃষ্ঠা)



ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ


❏ হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল ওয়াহিদ বিন ইসমাঈল (ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ) বলেন: “মিশরে এক আশিকে রাসূল বসবাস করতেন, যিনি রবিউন্ নূর শরীফে আল্লাহর প্রিয় মাহবুব ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর জশনে বিলাদত উদযাপন করতেন। একবার রবিউন্ নূর মাসে তার প্রতিবেশী ইহুদী মহিলা তার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলেন: “আমাদের মুসলিম প্রতিবেশী বিশেষ করে এই মাসে প্রতিবছর কিছু নির্দিষ্ট দাওয়াতের আয়োজন কেন করে থাকেন? ইহুদী উত্তরে বলেন: “এই মাসে তাদের নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ দুনিয়াতে তাশরীফ এনেছেন, এজন্য তাঁরা ‘জশনে বিলাদত’ উদযাপন করে থাকেন। আর মুসলমানগণ এই মাসকে খুবই সম্মান করেন। এই কথা শুনে ইহুদী মহিলা বলল: “বাহ্! মুসলমানদের এই রীতি কতই না প্রিয় ও সুন্দর। এই সকল লোকেরা তাদের রাসূলের প্রতি প্রেম ও ভালবাসায় উদ্বেলিত হয়ে প্রতি বছর ‘জশনে বিলাদত’ উদযাপন করে থাকেন।” ঐ মহিলা রাত্রে যখন ঘুমালেন, তখন তার ঘুমন্ত ভাগ্য জেগে উঠল। তিনি স্বপ্নে দেখতে পেলেন যে, খুবই সুন্দর একজন বুজুর্গ তাশরীফ এনেছেন। তাঁর ডানে ও বামে চারিদিকে মানুষের ভীড়। ঐ মহিলা সামনে অগ্রসর হয়ে এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন: “এই বুজুর্গ ব্যক্তিটি কে?” তিনি বললেন: “ইনি হচ্ছেন শেষ নবী, মুহাম্মাদুর রাসুলুলাল্লাহ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ । তিনি তোমাদের মুসলিম প্রতিবেশী কর্তৃক ‘জশনে বিলাদতে মুস্তফা’ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ উদযাপনের কারণে তাকে খায়র ও বরকত দান করতে, তার সাথে সাক্ষাত করতে এবং তার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করার জন্য তাশরীফ এনেছেন।” ইহুদী মহিলা পূনরায় বলল: “আপনাদের নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ কি আমার কথার উত্তর দিবেন?” ঐ ব্যক্তি বললেন: “জ্বী হ্যাঁ!” এরপর ঐ মহিলা ছরকারে মদীনা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ কে আহ্বান করলেন: নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ উত্তরে “লাব্বায়িক” বললেন। এতে ঐ মহিলা খুবই প্রভাবিত হলেন এবং বলতে লাগলেন: “আমিতো মুসলিম নই তবু আপনি আমার আহ্বানে কেন উত্তর দিলেন?” ছরকারে মদীনা, হুযুর পুরনূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করলেন: “আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তুমি মুসলিম হতে যাচ্ছো। এতেই ঐ মহিলা অতর্কিতভাবে বলে উঠলেন: “নিঃসন্দেহে আপনি সম্মানিত নবী ও উত্তম আদর্শের অধিকারী। যে আপনার অবাধ্য হয়েছে সে ধ্বংস হয়েছে। যে আপনার সম্মান বুঝে না, সে অকৃতকার্য ও ক্ষতিগ্রস্থ।” এই বলে সে কলেমা পাঠ করে মুসলিম হয়ে গেল।


এরপর তাঁর চোখ খুলে গেল এবং তিনি আন্তরিকভাবে সত্যিকারের একজন মুসলমান হয়ে গেলেন। আর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন যে, “সকালে উঠে আমি আমার সমস্ত সম্পদ আল্লাহর প্রিয় মাহবুব ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর জশনে বিলাদতের আনন্দ উদযাপনে কুরবান করে দিব এবং খাবারের আয়োজন করব।” যখন সকালে উঠলেন, দেখতে পেলেন তাঁর স্বামী খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত। এতে তিনি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন: “আপনি ইহা কি জন্য করছেন?” তিনি (স্বামী) বললেন: “এই জন্য খাবারের আয়োজন করছি যে, তুমি মুসলিম হয়ে গেছ।” বিবি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন: “আপনি কিভাবে জানেন?” তিনি (স্বামী) বললেন: “আমিও রাত্রে হুজুরে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর হাত মোবারকে হাত রেখে ঈমান এনেছি।” 


(তাজকিরাতুল ওয়ায়েজীন, ৫৯৮ পৃষ্ঠা, কুয়েটা)



আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক, আর তাঁদের সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।


ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ


আমদে ছরকার ছে জুলমাত হুয়ী কাফুর হে,


কিয়া জমি কিয়া আসমা হার সাম্ত ছায়া নূর হে।


(ওয়াসায়িলে বখশিশ, ৪৭৬ পৃষ্ঠা)



কুরআন ও সুন্নাত প্রচারের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন “দা’ওয়াতে ইসলামী”র জশনে বিলাদতে মুস্তফা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ


এর উদযাপনে নিজেদের একটি নিজস্ব পন্থা রয়েছে। পৃথিবীর অগণিত দেশে দা’ওয়াতে ইসলামীর ব্যবস্থাপনায় ঈদে মিলাদুন্নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ রাতে আজিমুশ্শান ইজতিমায়ে মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল ইজতিমায়ে মিলাদ এর মাহফিল বাবুল মদীনা করাচীতে অনুষ্ঠিত হয়। তার বরকতের কথা কি বলব! এখানে অংশগ্রহণকারীরা জানি না কত সৌভাগ্যবানদের জীবনে মাদানী ইনকিলাব (পরিবর্তন) হয়েছে। এতদপ্রসঙ্গে চারটি মাদানী বাহার আপনাদের সামনে পেশ করছি।



একজন নবী প্রেমিকের কিছুটা এরূপ বর্ণনা যে: “ঈদে মিলাদুন্নবী” ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর রাতে বাবুল মদীনা করাচী ‘কাকরী গ্রাউন্ডে’ অনুষ্ঠিত ইজতিমায়ে মিলাদ (১৪২৬ হিঃ) এ আমার পরিচিত একজন প্রসিদ্ধ বেনামাযী মডার্ণ যুবক অংশগ্রহণ করে। বসন্তের সকালের (১২ই রবিউল আউয়াল) আগমণের সময় দুরূদ সালামের আওয়াজ এবং মারহাবা ইয়া মুস্তফা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর সুললিত চিৎকারে তার অন্তরের জগতে পরিবর্তন এসে গেল। সৎকাজের প্রতি মুহাব্বত এবং অসৎ কাজে ঘৃণা চলে আসল। তিনি সাথে সাথেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পাবন্দী ও দাঁড়ি রাখার নিয়্যত করলেন, আর বাস্তবিকই শেষ পর্যন্ত তিনি নামাযী ও দাঁড়িওয়ালা হয়ে গেলেন। এছাড়াও তার ভিতর এমন এক মন্দ স্বভাব ছিল, যা এখানে আলোচনা করা আমি ভাল মনে করছি না। ইজতিমায়ে মিলাদের বরকতে ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ তার ঐ মন্দ অভ্যাসও দূর হয়ে গেল। অন্যভাবে যদি বলতে চান তাহলে এভাবে বলতে হয়, ইজতিমায়ে মিলাদে অংশগ্রহণের বদৌলতে পাপীদের গুণাহের চিকিৎসা মিলে যায়।



❏ মাংলো মাংলো উনকা গম মাংলো, চশমে রহমত নিগাহে করম মাংলো।


মাসিয়ত কি দাওয়া লা জারাম মাংলো, মাংনে কা মজা আজ কি রাত হে।



উত্তর করাচীর এক ইসলামী ভাইয়ের লিখিত বয়ানকে নিজস্ব ভঙ্গিতে আপনাদের নিকট পেশ করছি; তার প্রদত্ত বয়ান নিম্নরূপ: “মাহে রবিউন্ নূর শরীফের প্রথম দিকে কিছু আশিকানে রাসূল আমি পাপী বেআমলকে ইনফিরাদী কৌশিশ করে ‘কাকরী গ্রাউন্ড’ বাবুল মদীনা করাচীতে অনুষ্ঠিতব্য দা’ওয়াতে ইসলামীর ইজতিমায়ে মিলাদে অংশগ্রহণ করার জন্য দাওয়াত দেন। আমার সৌভাগ্য যে, আমি তাতে অংশগ্রহণ করার ওয়াদা করলাম। যখন ১২ই রবিউল আউয়ালের রাত আসল তখন আমি ওয়াদা মোতাবেক ইজতিমায়ে মিলাদে যাওয়ার জন্য মাদানী কাফেলার সাথে বাসে আরোহণ করলাম। এক আশিকে রাসূল ঐ বাসের মধ্যে চম্ চম্ নামী মিষ্ঠান্ন থেকে প্রায় ৩০ জন ইসলামী ভাইদের মধ্যে ছিড়ে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ভাগ করে দিলেন। বন্টনকারীর মুহাব্বত ভরা ধরণ দেখে আমার অন্তরে রেখাপাত করল। শেষ পর্যন্ত আমি ইজতিমায়ে মিলাদে পৌঁছে গেলাম। আমি জীবনে এই প্রথমবার এমন একটি আন্তরিক চমৎকার দৃশ্য দেখলাম। না’ত, সালাম ও মারহাবা ইয়া মুস্তফা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর মুহুর্মুহু আওয়াজ আমার অন্তরের সমস্ত ময়লা ধুয়ে পরিস্কার করে দিতে লাগল। ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ আমি সাথে সাথে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে সম্পৃক্ত হয়ে গেলাম। ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ এখন মুখে দাড়ির জ্যোতি ছড়াচ্ছে এবং মাথায় সবুজ আমামার (পাগড়ী) বাহার শোভা পাচ্ছে। তাছাড়া “আলাকায়ে মুশাওয়ারাতের” নিগরান হয়ে এখন সুন্নাতের সাড়া জাগানোর সৌভাগ্য অর্জন করছি।



❏ আতায়ে হাবিবে খোদা মাদানী মাহল,


হে ফয়যানে গাউস ও রযা মাদানী মাহল।


ইহা সুন্নাতে সিখনে কো মিলেগি,


দিলায়ে গা খওফে খোদা মাদানী মাহল।


ইয়াকিনান মুকাদ্দার কা ওহ হে সিকান্দর,


জিছে খাইর ছে মিল গেয়া মাদানী মাহল।


(ওয়াসায়িলে বখশিশ, পৃষ্ঠা-৬০৪)



ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ


১৪১৭ হিজরীর ঈদে মিলাদুন্নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর দিন দুপুরের সময় প্রতি বছরের মত যোহর নামাযের পর দা’ওয়াতে ইসলামীর “হালকা” নাজেমাবাদ, বাবুল মদীনা করাচীর মাদানী জুলুস “ছরকার কী আমদ মারহাবা” এর ধ্বনি তুলে তুলে এবং “মারহাবা ইয়া মুস্তফা” এর শ্লোগান দিতে দিতে রাস্তা অতিক্রম করছিল। স্থানে স্থানে জুলুস থামিয়ে উপস্থিত শুরাকাদের বসিয়ে বসিয়ে নেকীর দাওয়াত দেয়া হচ্ছিল। ইত্যবসরে একটি জায়গায় ১০ বছরের একজন মাদানী মুন্না (বাচ্চা) উঠে নেকীর দাওয়াত পেশ করতে লাগলেন। তখন জুলুছের মধ্যে নিরবতা বিরাজ করছিল। বয়ান শেষে এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালেন এবং কিছু জিজ্ঞাসা করতে করতে হালকা নিগরানের নিকট পৌঁছলেন। তার মধ্যে যথেষ্ট ভাবাবেগ বিরাজ করছিল। সে বলতে লাগল: “আমি আমার খোলা চোখে দেখলাম, বয়ানের সময় আপনাদের এই ছোট বাচ্চা ও মুবাল্লিগসহ জুলুছের সকল অংশগ্রহণকারীদের উপর নূরের বৃষ্টি বর্ষণ হচ্ছিল। ক্ষমা করবেন, আমি একজন অমুসলিম। আমাকে তাড়াতাড়ি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করুন।” এ ঘটনায় “মারহাবা” ধ্বনিতে সমগ্র ময়দান আন্দোলিত ও মুখরিত হয়ে উঠল।


ঈদে মিলাদুন্নবীর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ মাদানী জুলুছের মহত্ব এবং দা’ওয়াতে ইসলামীর এ বরকতময় বাহার দেখে শয়তান তার কালো মুখ নিয়ে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল। ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর ঐ ব্যক্তি এই বলতে বলতে চলে গেল যে, ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ “আমি আমার বংশে গিয়ে ইসলামের দাওয়াত পেশ করব।”


এমনকি তিনি বাস্তবেও সে কাজে মনোনিবেশ করলেন এবং তাঁর দ্বারা ইসলামের দাওয়াতে তাঁর স্ত্রী এবং তিন সন্তান ও তাঁর বাবা সহ সকলে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করলেন।



❏ ঈদে মিলাদুন্নবী হে দিল বড়া মাসরুর হে,


ঈদে দিওয়ানো কি তো বারাহ রবিউন নূর হে।


হার মালাক হে শাদে মা খোশ আজ এক হুর হে,


হা মগর শয়তান মাআ রুপাকা বড়া রনজুর হে।



ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ


এক আশিকে রাসূল এর বয়ান কিছুটা এরকম, “কাকরী গ্রাউন্ড” বাবুল মদীনা করাচিতে দা’ওয়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ঈদে মিলাদুন্নবীর মহান রাতে অনুষ্ঠিত প্রায় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ইজতিমায়ী মিলাদে আমরা কিছু ইসলামী ভাই উপস্থিত হলাম। আলোচনা চলাকালে এক ইসলামী ভাই বলতে লাগল যে, দা’ওয়াতে ইসলামীর ইজতিমায়ী মিলাদের আগে অনেক ভাবাবেগ সৃষ্টি হতো, এখন আগের মত আর কিছুই নেই। এটা শুনে অপরজন বলল: “বন্ধু আমার মনে হয় আপনার এখানে কিছু ভুল হচ্ছে। ইজতিমায়ী মিলাদের ধরন তো একই আছে কিন্তু আমার মনে হয়, আমাদের অন্তরের অবস্থা আগের মত নেই। আল্লাহর রাসূলের যিকির কিভাবে পরিবর্তন হবে? আসলে আমাদের মন মানসিকতারই পরিবর্তন হয়েছে। আজো যদি আমরা সমালোচনাতে ঘুরাফেরা না করে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে তাজদারে রিসালাত ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর মনোরম ধ্যানে ডুবে গিয়ে না’ত শরীফ শ্রবণ করি, তবে ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ আসা করি দয়ার উপরই দয়া হবে।”


প্রথম ইসলামী ভাইয়ের দৃঢ় শয়তানী প্রতারণা একনিষ্ঠ যিম্মাদার নয় এমন লোকের মত। তার ভাবনাটি যদিও মনে সন্দেহের উদ্রেক ঘটিয়ে ইজতিমায়ী মিলাদ থেকে বঞ্চিত করে পুনরায় ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার মত ছিল, কিন্তু অপর ইসলামী ভাইয়ের অসাধারণ যুক্তিপূর্ণ উত্তরকে শতকোটি মারহাবা! কেননা সেটি প্রথম ইসলামী ভাইয়ের নফসে লাওয়ামাকে জাগ্রতকারী শয়তানকে তাড়িয়ে দেয়ার মত ছিল। সুতরাং তাঁর এ সঠিক ও হৃদয়গ্রাহী উত্তরটি প্রভাবের তীর হয়ে আমার হৃদয়ে গেঁথে গেল। আমি সাহস করে পা বাড়ালাম এবং মিলাদুন্নবীর ইজতিমার মধ্যস্থলে পৌঁছে গেলাম এবং আশিকানে রাসূলদের সাথে চুপচাপ বসে গেলাম। আর না’তের ছন্দময় মাধুর্যে বিভোর হয়ে পড়লাম। এমনি অবস্থায় ‘সুবহে সাদিক’ এর সময় নিকটবর্তী হল। সব ইসলামী ভাইয়েরা! “বসন্তের সকালের” সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইজতিমার মধ্যে প্রেমের এক বহিঃপ্রকাশ উদ্ভাসিত ছিল। চারিদিকে ‘মারহাবা’ এর সাড়া পড়ে গেল। শাহ্ খাইরুল আনাম, প্রিয় নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর দরবারে দুরূদ সালামের তোহফা পেশ করা হচ্ছিল, আশিকানে রাসূলদের চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু বইতে লাগল। সবদিক থেকে কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। আমার মাঝেও আশ্চর্য ধরনের ভাবাবেগ লক্ষ্য করলাম। আমার গুনাহে পরিপূর্ণ দুই চোখে দেখলাম চারিদিক থেকে রহমতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বৃষ্টি বর্ষণ হচ্ছে। মনে হল যেন পুরো ইজতিমাটাই রহমতের বৃষ্টি বর্ষণে ধৌত হচ্ছিল। আমি আমার দেহের চামড়ার চক্ষু বন্ধ করে প্রিয় প্রিয় আক্বা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর সৌন্দর্যময় ধ্যানে নিমজ্জিত হয়ে দুরূদ ও সালাম পড়তে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। এই অবস্থায় হঠাৎ আমার অন্তরের চোখ খুলে গেল এবং সত্যই বলছি, যার জশনে বিলাদত উদযাপন করা হচ্ছিল, ঐ মহান প্রিয় আক্বা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ আমি গুনাহগারের উপর অশেষ দয়া করলেন এবং তাঁর দূর্লভ দীদার দানে ধন্য করলেন। ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ


দীদারে মুস্তফা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর দ্বারা আমার কলিজা একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেল। বাস্তবেই ঐ ইসলামী ভাই সত্যই বলেছিলেন যে, দা’ওয়াতে ইসলামীর মিলাদুন্নবীর ইজতিমায়ে মিলাদ আগের মতই ভাবাবেগে ভরপুরই আছে। কিন্তু আমাদের অবস্থারই পরিবর্তন হয়ে গেছে। যদি আমরা একনিষ্টভাবে মনোনিবেশ করি তাহলে আজো যে তাঁর জলওয়া সর্বব্যাপী তা অনুভব করতে পারব।



❏ আখ ওয়ালা তেরে যৌবন কা তামাশা দেখে,


দিদায়ে কোর কো কিয়া আয়ে নজর কিয়া দেখে।


কুয়ি আয়া পাকে চলা গেয়া, কুয়ী ওমর ভর ভি না পা সকা,


ইয়ে বড়ে করম কে হে ফয়সেলে ইয়ে বড়ী নসীব কি বাত হে।

________________

কিতাবঃ বসন্তের প্রভাত : ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)

লেখকঃ হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন