মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালনকারীর মুক্তি
ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ
❏ মদীনায়ে মুনাওয়ারায় ইবরাহীম নামে একজন ব্যক্তি মাদানী আক্বা, হুযুর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর আশিক ছিলেন। তিনি সর্বদা হালাল রুজি আয় করতেন এবং ঐ হালাল আয়ের অর্ধেক টাকা মিলাদে মুস্তফার জশনে জুলুছ উদযাপনের জন্য পৃথক করে জমা করতেন*। রবিউন্ নূর শরীফ (রবিউল আউয়াল) এর আগমনের সাথে সাথে শরীয়াতের সীমার ভিতর থেকে জাক জমকের সাথে জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ উদযাপন করতেন। আল্লাহ্ তাআলার মাহবুব ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর ইছালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে গরীবদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতেন। ভাল কাজের মধ্যে নিজের টাকা পয়সা ব্যয় করতেন। তার সম্মানিতা বিবি সাহেবানও প্রিয় আক্বা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর দিওয়ানী ছিলেন। স্বামীর সমস্ত কাজে সার্বিক সহযোগিতা করতেন। স্ত্রী ইন্তিকাল করার পরও তার কাজে কোন বিঘ্ন ঘটলনা। একদা ইবরাহীম তার যুবক সন্তানকে ডেকে উপদেশ দিলেন, “হে প্রিয় সন্তান! আজ রাতে আমার ইন্তিকাল হবে। আমার সারা জীবনের পুঁজি বলতে ৫০টি দিরহাম ও উনিশ গজ কাপড় রয়েছে। কাপড় গুলি কাফনের কাজে ব্যবহার করবে আর বাকী রইল দিরহাম। তা যদি সম্ভব হয় ভাল কাজে ব্যয় করিও। এরপর কালিমায়ে তৈয়্যবা পাঠ করেন এবং এ অবস্থায় তাঁর আত্মা দেহ থেকে বের হয়ে গেল। ছেলে অসিয়তমত বাবাকে সমাধিত করলেন। এখন ৫০ টি দিরহাম কোন্ ভালকাজে ব্যয় করবে, তা তাঁর বুঝে আসছে না। এই চিন্তা নিয়ে যখন রাত্রে ঘুমালেন তখন স্বপ্নে দেখলেন যে, কিয়ামত সংঘঠিত হয়ে গেছে এবং চারিদিকে সবাই নফসী নফসী শব্দে চিৎকার করছে। সৌভাগ্যবান ব্যক্তিরা জান্নাতের দিকে রওয়ানা দিচ্ছে। যখন দেখলেন পাপীদের টেনে হিচড়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন এই যুবক এ ভেবে দাঁড়িয়ে থর থর করে কাঁপছিল যে, তার ব্যাপারে কি ফয়সালা হচ্ছে? ইতোমধ্যে অদৃশ্য থেকে আওয়াজ আসলো।, “এই যুবককে জান্নাতে যেতে দাও।” অতঃপর তিনি খুশি মনে জান্নাতে প্রবেশ করলেন এবং আনন্দচিত্তে ভ্রমণ করতে লাগলেন। সাত জান্নাত ভ্রমণ করার পর যখন ৮ম জান্নাতে যেতে চাইলেন তখন জান্নাতের দারোগা হযরত রিদওয়ান বললেন: “এই জান্নাতে কেবল তারাই প্রবেশ করতে পারবে যারা মাহে রবিউন নূরে (রবিউল আউয়ালে) বিলাদতে মুস্তফা ﷺ এর দিনে আনন্দ উদযাপন করেছে।” এই কথা শুনে ঐ যুবক বুঝতে পারলেন আমার সম্মানিত মরহুম পিতা মাতা এই জান্নাতেই হবে। এমতাবস্থায় আওয়াজ আসলো, “এই যুবককে ভিতরে আসতে দাও। তাঁর পিতামাতা তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে চান।” তখন তিনি ভিতরে প্রবেশের অনুমতি লাভ করলেন। ভিতরে প্রবেশ করে তিনি দেখতে পেলেন, তাঁর মাতা মরহুমা হাওজে কাউছারের নিকট বসা আছেন। পাশে একটি সিংহাসন রয়েছে যার উপর একজন বুজুর্গ মহিলা বসা রয়েছেন। তাঁর চারিদিকে চেয়ার বিছানো রয়েছে যার উপর কিছু সম্মানিতা মহিলাগণ বসা রয়েছেন। ঐ যুবক এক ফিরিস্তাকে প্রশ্ন করলেন। এই মহিলারা কারা? তিনি (ফিরিস্তা) বললেন: “সিংহাসনের উপর রয়েছেন প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর শাহজাদী হযরত সায়্যিদাতুনা ফাতেমা যাহরা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ এবং চেয়ারগুলোতে রয়েছেন; হযরত খদিজাতুল কোবরা, আয়েশা ছিদ্দিকা, সায়্যিদাতুনা মরিয়ম, সায়্যিদাতুনা আছিয়া, হযরত সায়্যিদাতুনা সারা, সায়্যিদাতুনা হাজেরা, সায়্যিদাতুনা রাবেয়া, হযরত জুবায়দা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ । তিনি এ দৃশ্য দেখে খুব আনন্দিত হলেন। আরো সামনে অগ্রসর হয়ে দেখলেন, এক বিশাল সিংহাসন বসানো হয়েছে এবং তার উপর আল্লাহর মাহবুব, দানায়ে গুয়ুব, হুযুর পুরনূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ চাঁদের চেয়েও উজ্জল নূরানী আপন চেহারা মোবারক নিয়ে বসা আছেন। চারপাশে চারটি চেয়ার বসানো আছে, যেগুলোর উপর খোলাফায়ে রাশেদীন ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ বসা আছেন। ডানদিকে স্বর্ণের চেয়ারে নবীগণ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺍﻟﺴﻼﻡ বসা রয়েছেন। বাম দিকে শোহাদায়ে কেরাম বসা রয়েছেন। ইতোমধ্যে তাঁর মরহুম পিতা ইবরাহীমকেও ছরকারে মদীনা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর নিকট বসা সমাবেশে দেখতে পেলেন। তাঁর পিতা তাঁকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন। তিনি তাঁর আব্বাকে পেয়ে অনেক খুশি হলেন এবং প্রশ্ন করলেন: হে আব্বাজান! আপনার এই মহান মর্যাদা কিভাবে অর্জন হলো? উত্তর দিলেন: ﺍﻟﺤﻤﺪﻟﻠﻪ ﻋﺰﻭﺟﻞ এটা হলো জশনে মিলাদুন্নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ উদযাপনের প্রতিদান। এরপর ঐ যুবকের চোখ খুলে গেল। সকাল হওয়ার সাথে সাথে ঐ যুবক তাঁর ঘর বিক্রি করে দিলেন এবং মরহুম পিতার অবশিষ্ট ৫০ দিরহামের সাথে নিজের সমস্ত টাকা একত্রিত করে খাবারের আয়োজন করলেন এবং আলিম-ওলামা ও নেক্কার বান্দাদের দাওয়াত দিলেন। তাঁর অন্তর দুনিয়ার মোহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সারাক্ষণ মসজিদে ইবাদত ও মসজিদের খেদমত করতে লাগলেন এবং তাঁর জীবনের অবশিষ্ট ৩০ বছর ইবাদত বান্দেগীতে কাটিয়ে দিলেন। ইন্তিকালে পর কেউ তাঁকে স্বপ্নে জিজ্ঞাসা করলেন: “আপনার এখন কি অবস্থা?” উত্তরে বললেন: “জশনে বিলাদত”উদযাপনের বরকতে আমাকে জান্নাতে আমার মরহুম আব্বাজানের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। (সংক্ষেপ-তাযকিরাতুল ওয়ায়েজীন, ৫৫৮ উর্দূ পৃষ্ঠা)
(*হায়! আমাদের উপার্জনের অর্ধেক না হলেও ১২ শতাংশ বরং এক ভাগও যদি জশনে বিলাদতের জন্য বের করে এটাকে ধর্মীয় কাজে খরচ করার উৎসাহ রাখতাম।)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক, আর তাঁদের সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।
ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ
❏ বখশ দেয় মুজকো ইলাহী বেহরে মিলাদুন্নবী,
নামায়ে আমাল ইছয়া ছে মেরা ভরপুর হে।
(ওয়াসায়িলে বখশিশ, ৪৭৭ পৃষ্ঠা)।
________________
কিতাবঃ বসন্তের প্রভাত : ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)
লেখকঃ হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন