পবিত্র হাদিস শরীফ থেকে কালিমার বর্ণনা

 

পবিত্র হাদিস শরীফ থেকে কালিমার বর্ণনা


সুপ্রিয় পাঠক!  কালিমার মর্ম কথা হচ্ছে তাওহিদ ও রিসালত তথা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। সেই ঈমানী কালিমার বাক্য হাদিস শরীফের মধ্যে কখনো শাহাদত শব্দ সহকারে আবার কখনো শাহাদত শব্দ ব্যতীত বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু উভয় বর্ণনারই মূল প্রতিপাদ্য বিষয় অভিন্ন। নিম্নে এ ব্যাপারে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল।



হাদিস: ১



عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بنى الاسلام على خمس- شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله واقام الصلوة وايتاء الزكوة- والحج وصوم رمضان-


অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: ইসলামের স্তম্ভ ৫টি।


১.এই স্বাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল।


২. নামায প্রতিষ্ঠা করা।


৩. যাকাত প্রদান করা।


৪. হাজ্জ্ব করা।


৫. রামাদ্বান মাসে রোযা রাখা। (বুখারি হাদিস নং: ৮)



হাদিস: ২



عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال امرت ان اقاتل الناس حتى يشهدوا ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله


অর্থ: হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন: আমি আদিষ্ট হয়েছি মানুষের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করতে যতক্ষণ না তারা স্বাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল। (সংক্ষেপিত: বুখারি হাদিস নং: ২৫)



হাদিস: ৩



ইমাম মুসলিম সহিহ মুসলিমশরীফে কিতাবুল ঈমান অধ্যায়ে ৮ নং বাবের মধ্যে বর্ণনা করেছেন এভাবে:


باب الامر بقتال الناس حتى يقولوا لا اله الا الله محمد رسول الله


অর্থ: অধ্যায়: লোকদের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করার নির্দেশ যতক্ষণ না তারা বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।’



হাদিস: ৪.



ইমাম বায়হাকি (رحمة الله) আল আসমা ওয়াস সিফাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন:


عن سعيد بن المسيب  قال ان ابا هريرة اخبره ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال انى امرت ان اقاتل الناس حتى يقولوا لا اله الا الله- فمن قال لا اله الا الله فقد عصم منى نفسه وماله حتى يلقى الله تعالى- وانزل الله عز وجل يذكر قوما استكبروا- انهم كانوا اذا قيل لهم لا اله الا الله يستكبرون (الصفات ۳۵) وانزل الله- اذ جعل الذين كفروا فى قلوبهم الحمية حمية الجاهلية- فانزل الله سكينته على رسوله وعلى المؤمنين والزمهم كلمة التقوى وكانوا احق بها واهلها- (الفتح ۲٦) وهى لا اله الا الله محمد رسول الله استكبر عنها المشركون يوم الحديبية حين دعاهم رسول الله صلى الله عليه وسلم على طول المدة



অর্থ: হযরত সাইদ বিন আল মুসাইয়িব বলেছেন হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন যে, আমি আদিষ্ট হয়েছি মানুষের সাথে ততক্ষন পর্যন্ত যুদ্ধ করতে যতক্ষণ না তারা বলবে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ সে আমার পক্ষ থেকে তার আত্মা ও সম্পদকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ পর্যন্ত হিফাযত করে নিল।


অতঃপর আল্লাহ তা’য়ালা একটি অহংকারী সম্প্রদায়ের বর্ণনাপূর্বক অবতীর্ণ করেছেন। ‘যখন তাদের বলা হত: ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই’ তখন তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত। (সাফফাত ৩৫)



অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন: ‘কাফেররা তাদের অন্তরে জাহেলি যুগের জেদ পোষণ করত। অতঃপর আল্লাহ তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করলেন। এবং তাদের জন্য তাকওয়ার কালিমা অপরিহার্য করে দিলেন। বস্তুত তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। (ফাতাহ ২৬)



উক্ত আয়াতে তাকওয়ার কালিমা হল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’।এ কালিমা সম্বন্ধেই মুশরিকগণ হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন অহংকার প্রদর্শন করেছিল। যা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরকে দীর্ঘ দিন আহŸান করেছিলেন। (এই হাদিসটিকে আলবানী সাহেব التعليقات الحسان গ্রন্থে সহিহ বলেছেন)



হাদিস: ৫



হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি আল ইসাবাহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন:


واخرجه الحاكم من طريق يونس عن يوسف بن صهيب عن عبد الله بن بريدة عن ابيه- قال انطلق ابو ذرونعيم ابن عم ابى ذر وانا معهم يطلب رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو مستتر بالجبل- فقال له ابو ذر يا محمد اتيناك لنسمع ما تقول قال اقول لا اله الا الله محمد رسول الله فامن به ابو ذر وصاحبه-


অর্থ: ইমাম হাকিম এ হাদিসটি ইউনুসের সুত্রে বর্ণনা করেছেন তিনি ইউসুফ বিন সুহাইব থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদা থেকে, তিনি পিতা বুরাইদা থেকে বর্ণনা করেছেন। বুরাইদা বলেন: একবার আবু যর  ও তার চাচাত ভাই নুয়াইম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে সাক্ষাতের জন্য বের হলেন। আমিও তাদের সাথে ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পাহাড়ের মধ্যে অবস্থান করছিলেন। তখন আবু যর বললেন: হে মুহাম্মদ (ﷺ) আপনি কি বলেন তা শুনার জন্য আমরা আপনার কাছে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: আমি বলছি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’। তখন আবু যরও তার সাথী ঈমান আনয়ন করলেন। (হা. ন. ৮৮০৯)



হাদিস: ৬



ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি الخصائص الكبرى গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন:


اخرج الحاكم والبيهقى والطبرانى فى الصغير وابونعيم وابن عساكر عن عمر ابن الخطاب رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما اقترف ادم الخطيئة قال يا رب بحق محمد لما غفرت لى- قال وكيف عرفت محمدا قال لانك لما خلقتنى بيدك ونفخت فى من روحك رفعت رأسى فرأيت قوائم العرش مكتوبا لا اله الا الله محمد رسول الله- فعلمت انك لم تضف الى اسمك الا احب الخلق اليك- قال صدقت يا ادم ولولا محمد ما خلقتك-


অর্থ: হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: যখন আদম আলাইহিস সালাম এর নিকট তাঁর ইজতেহাদী ত্রুটিটি ধরা পড়ল তখন তিনি বললেন: হে প্রভূ মুহাম্মদ (ﷺ) এর উসিলায় আমাকে ক্ষমা কর। আল্লাহ তা’য়ালা বললেন: তুমি মুহাম্মদ (ﷺ)কে কিভাবে চিনলে? তিনি বললেন: যখন আপনি আমাকে স্বীয় কুদরতে সৃষ্টি করে আমার মধ্যে রূহ প্রদান করলেন তখন আমি আমার মাথা উত্তোলন করলাম। অতঃপর দেখতে পেলাম আরশের প্রতিটি খুটিতে লিখা আছে: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’। তখন আমি বুঝতে পারলাম সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় না হলে আপনি সে নাম আপনার নামের সাথে যুক্ত করতেন না। অতঃপর আল্লাহ বললেন: হে আদম তুমি ঠিকই বলেছ। মুহাম্মদ (ﷺ)কে সৃষ্টি না করলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না। (এই হাদিসটি ইমাম হাকিম, ইমাম বায়হাকি, ইমাম তাবরানী, ইমাম আবু নাঈম এবং ইবনে আসাকির প্রত্যেকে স্ব-স্ব কিতাবে বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকিম এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)। (খাসাইসে কুবরা পৃষ্ঠা ২৭)।


এ প্রসঙ্গে আরো অনেক হাদিস রয়েছে, এখানে সংক্ষিপ্ত করা হল। উক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হল যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ ইহাই হল ঈমানী কালিমা। ইহা অস্বীকার করা ষড়যন্ত্র বৈ কিছু নয়।

_________________

কিতাবঃ হাদিস নিয়ে সালাফিদের জালিয়াত

লেখকঃ হাফিজ মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ ইকরাম উদ্দিন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন