রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উছিলায় ক্ষমা লাভ

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উছিলায় ক্ষমা লাভ


সাইয়্যিদিনা হযরত ওমর ফারুক (রা.) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান: হযরত আদম (عليه السلام ) কর্তৃক একটি ক্রটি প্রকাশ পাওয়া তিনি সুদীর্ঘ তিন শত বছর ক্রন্দন করে একদা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর উসিলা নিয়ে এ বলে প্রার্থনা জানালেন: -



يا رب اسألك بحق محمد الا غفرت لي فقال الله تعالى يا آدم وكيف عرفت محمداً ولم أخلقه ? قال لأنك يارب لما خلقتني بيدك ونفخت في من روحك رفعت رأسي فرأيت على قوائم العرش -لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنك لم تضف إلى إسمك إلا أحب الخلق إليك فقال الله تعالى صدقت يا آدم إنه لأحب الخلق إليّ -وإذ سألتني يحقه فقد غفرت لك ولولا محمد ما خلقتك- رواه البيهقى في دلائله .



অর্থাৎ: হে রব! আমি আপনার দরগাহে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর উসিলা নিয়ে প্রার্থনা করছি অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন আল্লাহ পাক বললেন: ওহে আদম! কিভাবে তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে পরিচয় করলে অথচ আমি তো তাঁকে এখন ও সৃষ্টি করিনি। তিনি বললেন: হে রব! যেহেতু আপনি আমাকে স্বীয় কুদরতী হাতে সৃষ্টি করে আমার ভেতরে রূহ প্রবেশ করানোর পর আমি আমার মাথা মোবারক আকাশের দিকে উত্তলন করে দেখি আরশের প্রতিটি পায়াতে লিখিত রয়েছে لا اله الا الله محمد رسول الله এ পবিত্র কালেমা টুকু। তা দর্শনে আমি জানতে পারি যে, আপনি স্বীয় নামের সঙ্গে যে নাম মোবারক সংযুক্ত করে রেখেছেন তিনি হচ্ছেন আপনার নিকট সৃষ্টির শ্রেষ্ট ও প্রিয় মানব। এবার মহান আল্লাহ পাক তাঁকে বললেন: ওহে আদম! তুমি যা বললে সবই সত্য। কেননা বাস্তবিকই তিনি আমার নিকট সর্বশ্রেষ্ট ও মহাপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তাই তুমি যখন আমার দরবারে তাঁর উসিলা নিয়ে প্রার্থনা করেছ, তখন আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। জেনে রাখ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর বিকাশ সাধন করার ইচ্ছা না হলে তবে আমি তোমাকেও সৃষ্টি করতামনা।



ইমাম বায়হাক্বী (رضي الله عنه ) উক্ত হাদীসটি স্বীয় দালায়েলুন নুবুওয়তে হযরত আব্দুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম (رضي الله عنه ) এর হাদীস হতে বর্ণনা করেন। ইমাম আবু আব্দুল্লাহ হাকীম নিশাপুরী (রা.) উক্ত হাদীসকে বর্ণনা করত: তাকে সহীহ বলে অভিমত পেশ করেছেন। ইমাম তাবারানী (رضي الله عنه ) ও এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে তিনি হাদীসে وهو اخر الانبياء من ذريتك (তিনি আপনার বংশধরদের মধ্যকার সর্বশেষ নবী) কথাটি বর্ধিত করেন।


ইবনে আসাকীরের মতে সালমান ফারসী (রা.) এর হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন: হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে নিবেদন করেন হে আল্লাহর রাসূল ! আপনার প্রতিপালক বলেছেন- وان كنت اتحذت ابرا هيم خليلا فقد اتخذتك حبيبا অর্থাৎ: যদিও আমি ইব্রাহীমকে খলীল হিসেবে গ্রহন করেছি, তবুও আপনাকে হাবীব হিসেবে গ্রহন করেছি। আর আমার নিকট আপনার চেয়ে অত্যধিক সম্মানীত ও শ্রেষ্ট জীব আর কাউকেও আমি সৃষ্টি করিনি। আমি এ ভূমন্ডল ও নবমন্ডল সৃষ্টি করেছি এ উদ্দেশ্যে যে, যাতে করে তারা চিন্তে ও বুঝতে পারে, আমার নিকট আপনার সম্মান ও মর্যাদা যে কতটুকু! আর যদি আপনি এ ধরাধামে না আসতেন তবে এ জগতের কিছুই সৃষ্টি করা হতোনা।



যেমন: এ প্রসঙ্গে আমার সাইয়্যিদ আলী আল ওয়াফেদী চমৎকার একটি কবিতাবৃত্তি করেছেন।




سكن افؤاد فمش هنيئا ياجسد  - هذا النعيم هو النعيم الى الأبد-


روح الوجود خيال من هو واحد  -  لولاه ماتم الوجود لمن وجد-


عيسى وآدم والصدور جميعهم  -  هم أعين هو نورها لما ورد-


لو ابصر الشيطان طلعة نوره -         فى وجه آدم كان اول من سيد-


أو لو رأى النمرود نور جماله  - عبد الجليل مع الخليل ولا عند-


لكن جمال الله جل    -   فلا يرى ألا يتخصيص من الله الصمد



১। হে মহাতন্ন! সৃষ্টি লগ্ন থেকেই আপনি হৃদয় সিক্ত অবয়বে সাচ্ছন্দে চলাচল করতেছিলেন বলেই তো এ আগমন, কেয়ামত অবধি সকল জাতির জন্য বিশাল নেয়ামত।


২। আপনার আত্বার অন্থিত্ব যুগে যুগে কল্পনা প্রবনতা বোধগম্যতা ও ধ্যান মগ্নতায় বিরাজমান ছিল। এমতাবস্থায় তাঁর বিকাশ সাধন না হলে কেউই অস্তিত্বের র্পূণতায় পৌছতনা।


৩। ঈসা আদম (عليه السلام ) সহ সমগ্র মহাত্নাগন তাঁর নয়ন বিশেষ এবং তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ই বর্ণনানুযায়ি তাঁদের নয়ন জ্যোতি।


 ৪। অর্থাৎ: যদি ইবলিশ শয়তান আদমের চেহারায় তাঁর নূরের আভা উদিত দেখতে পেতো, তবে সে হতো প্রথম সেজদাহকারীর অন্তর্ভুক্ত।


৫। অথবা যদি পাষান্ড নমরুদ তাঁর সৌন্দর্যের নূর দেখতে পেতো, তবে খলীলের সঙ্গে জলীলের উপাসনা করতো, না হতো অবাধ্য।


৬। কিন্তু আল্লাহর সৌন্দর্য্য উম্মোচিত, তা দেখা যায় না। কেবল মাত্র তাঁর বিশেষ ব্যক্তিবর্গ ব্যতিত।



উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক বিবি হাওয়াকে (عليه السلام ) সৃষ্টি করেছেন কেবল আদম (عليه السلام ) এর সঙ্গে বসবাসের জন্য এবং আদম বিবি হাওয়ার নিকট গমনাগমনের জন্য। সুতরাং তিনি যখন হাওয়া (عليه السلام ) এর সাথে মিশ্রিত হলেন ক্রমান্বয়ে তাঁর সমস্ত ফয়েজ ও বরকত বিবি হাওয়ার ভেতরে এসে স্থীর হলো। ফলে গর্ভে বিশজোড়ায় মোট চল্লিশ জন নারী পুরুষ জন্ম লাভ করে।


তন্মধ্যে তাঁর সন্তানদের মধ্যকার হযরত শীষ (عليه السلام ) কে নবুওয়াতী আলো দিয়ে সম্মানীত করেন। আদম (عليه السلام ) এর সন্তানদের মধ্যকার শীষ (عليه السلام ) থেকে প্রথম নবুওয়তের সূর্য উদিত হয় এবং নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্রমান্বয়ে আগমন শুরু হয়। সুতরাং হযরত আদম (عليه السلام ) এর ইন্তেকাল মুহুর্তে স্বীয় সন্তান হযরত শীষকে (عليه السلام ) নূরে মুহাম্মাদী সংরক্ষণের অসীয়ত প্রদান করেন এবং শীষ (عليه السلام ) ও স্বীয় পিতার অসীয়ত পুরন করেন। তাঁর তীরোধানের পূর্ব মুহুর্তে তিনি ও পিতার মতো পরবর্তী বংশধরকে নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হেফাজত করত: উক্ত নূর মোবারককে পবিত্রা রমনীদের গর্ভে ধারনের অসীয়ত করে যান।

_______________

আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)

মূলঃ ইমাম নূরুদ্দীন মুল্লা আলী কারী আল হারুবী (رحمة الله)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন