কবরকে মসজিদে পরিণত করো নাঃ আপত্তি ও নিষ্পত্তি

 

কবরকে মসজিদে পরিণত করো নাঃ আপত্তি ও নিষ্পত্তি


কবরকে মসজিদ বানানোর অর্থ হচ্ছে এর ইবাদত করা অথবা, একে কিবলা সাব্যস্ত করে সেদিকে সিজদা করা।

বিশ্ব বরেণ্য হাদিস বিশারদ, যুগশ্রেষ্ঠ অদ্বিতীয় হাফিযে হাদিস আল্লামা আবুল ফযল শিহাবুদ্দীন ইবনে হাজার আল-আসকালানি শাফেয়ি (رحمة الله)' বুখারি শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন:

وقال البيضاوي لما كانت اليهود والنصارى يسجدون لقبور الأنبياء تعظيما لشأنهم ويجعلونها قبلة يتوجهون في الصلاة نحوها واتخذوها أوثانا لعنهم ومنع المسلمين عن مثل ذلك فأما من أتخذ مسجدا في جوار صالح وقصد التبرك بالقرب منه لا التعظيم له ولا التوجه نحوه فلا يدخل في ذلك الوعيد



-“ইমাম বায়যাভি (رحمة الله)' বলেন: যখন ইহুদি ও খৃষ্টানগণ স্বীয় নবীদের কবরসমূহের সম্মানার্থে সিজদা করতো, তাঁদের কবরসমূহের দিকে কিবলামুখী হয়ে নামায পড়তে লাগলো এবং এ কবরসমূহকে মূর্তির ন্যায় পূজা করতে লাগলো, তখন আল্লাহ তা‘আলা ও তদ্বীয় রাসুল তাদের প্রতি অভিশাপ প্রদান করেন এবং মুসলমানদেরকে এরূপ কাজ থেকে বারণ করেন। কিন্তু কেউ যদি বরকত লাভের উদ্দেশ্যে নেককার বুযর্গগণের মাযার সংলগ্ন কোন মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁদের সম্মানার্থে মাযারের দিকে নামায না পড়েন, তবে এ ধরনের মাযার হাদিসের বর্ণিত শাস্তির (বা নিষেধাজ্ঞার) অন্তর্ভুক্ত থাকবে না।” ৩৯


৩৯ - ইবনু হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারী শারহু সাহিহিল্ বুখারী: ১/৫২৫, দারুল মা‘রেফাহ্, বৈরুত, ১৩৭৯ হিজরি



তিনি আরও বলেন:



فوجه التعليل إن الوعيد على ذلك يتناول من أتخذ قبورهم مساجد تعظيما ومغالاة كما صنع أهل الجاهلية وجرهم ذلك إلى عبادتهم ويتناول من أتخذ أمكنة قبورهم مساجد بان تنبش وترمى عظامهم فهذا يختص بالأنبياء ويلتحق بهم أتباعهم وأما الكفرة فإنه لا حرج في نبش قبورهم إذ لا حرج في إهانتهم



-“ইল্লত বা কারণ প্রদর্শনের প্রক্রিয়া হলো- এই হাদিসে বর্ণিত শাস্তি বা নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্য প্রযোজ্য, যারা স্বীয় নবী ও বুযর্গগণের মাযারসমূহকে অতিশয় সম্মানার্থে মসজিদ বানিয়েছেন, যেমনটি জাহিলি যুগের অধিবাসীদের আমল ছিল। পরবর্তীতে তারা ধাপে ধাপে এ গুলোর পূজা-অর্চনা শুরু করতে দিত। আর এ নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্যেই প্রযোজ্য, যারা নেককার বুযর্গগণের কবরসমূহ নির্মাণ করে তদস্থলে মসজিদ নির্মাণ করে। কবর নিশ্চিহ্ন করার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাটি একমাত্র নবীগণ ও তাদের অনুসারীদের জন্য খাছ। কাফিরদের কবর উচ্ছেদ করার ব্যাপারে কোন অসুবিধা নেই। কারণ, তাদের প্রতি অপমান প্রদর্শনের ব্যাপারে কোন বাঁধা নেই। ৪০


৪০ - ইবনু হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারী শারহু সাহিহিল্ বুখারী: ১/৫২৪, দারুল মা‘রেফাহ্, বৈরুত, ১৩৭৯ হিজরি।



এ দ্বারা বুঝা যায় যে, বরকত লাভের উদ্দেশ্যে বুযর্গানে দ্বীনের মাযার সংলগ্ন মসজিদ নির্মাণ করা বৈধ। হাদিসে এর কোন মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয় নি। এতে গম্বুজ ও ছাদ নির্মাণের বৈধতারও প্রমাণ মেলে। কারণ বিরুদ্ধবাদীগণের মতে মসজিদ ও গম্বুজ নির্মাণের হুকুম এক ও অভিন্ন। যেহেতু তারা মসজিদ নির্মাণের অবৈধতার উপর ভিত্তি করে গম্বুজ ও ছাদ নির্মাণের অবৈধতার দলিল পেশ করেছেন। তাই এখানেও মসজিদের বৈধতার উপর ভিত্তি করে গম্বুজ ও ছাদ নির্মাণের বৈধতা প্রমাণিত হলো।



উক্ত গ্রন্থে ইমাম ইবনু হাজার আসকালানি আরও বলেন:



وما يكره من الصلاة في القبور يتناول ما إذا وقعت الصلاة على القبر أو إلى القبر أو بين القبرين وفي ذلك حديث رواه مسلم من طريق أبي مرثد الغنوي مرفوعا لا تجلسوا على القبور ولا تصلوا إليها أو عليها قلت وليس هو على شرط البخاري فأشار إليه في الترجمة وأورد معه اثر عمر الدال على أن النهي عن ذلك لا يقتضي فساد الصلاة



-“কবরে নামায পড়া তখন মাকরূহ হবে, যখন কবরকে কিবলা বানিয়ে বা কবরের উপর বা কবরদ্বয়ের মাঝখানে নামায আদায় করা হয়। এ প্রসঙ্গে ইমাম মুসলিম হযরত আবু মারছাদ গানাভিয়্যা সূত্রে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। হুযুর আকরম (ﷺ) ইরশাদ করেন- তোমরা কবরের উপর বসিও না। কবরের দিকে কিবলা করিও না। কবরের উপর নামায পড়িও না। আমার (ইমাম ইবনু হাজার আসকালানি) অভিমত, এ হাদিসটি ইমাম বুখারির আরোপিত শর্তানুসারে বর্ণিত হয় নি। তাই তিনি স্বীয় অধ্যায়ের শিরোনামে এ সম্পর্কে ইঙ্গিত দেন এবং তিনি তৎসঙ্গে হযরত উমর কর্তৃক বর্ণিত এমন একটি হাদিস উল্লেখ করেন, যাতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, এ নিষেধাজ্ঞাটি দ্বারা নামায ভঙ্গ হবে না।” ৪১


৪১ - ইবনু হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারী শারহু সাহিহিল্ বুখারী: ১/৫২৪, দারুল মা‘রেফাহ্, বৈরুত, ১৩৭৯ হিজরি।



প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইমাম বদরুদ্দিন আবু মুহাম্মদ মাহমুদ বিন আহমদ আইনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘উমদাতুল ক্বারী শারহু সাহীহিল্ বুখারী’তে এবং সুপ্রসিদ্ধ হাদিস বিশারদ হযরত মুল্লা আলি ক্বারি তাঁর ‘মিরক্বাতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাসাবীহ’ গ্রন্থেও অনুরূপ আলোচনা করেছেন। পাক-ভারত উপমহাদেশের আলেমকুল শিরোমনি শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভি-ও বলেন:



والمتخذين عليها المساجد والسرج لعنت کرده ست رسول خدا صلى الله عليه وسلم کانے راکه میگیرند بر قبور مسجدها یعنی سجده برندگاں بجانب قبر بقصد تعظیم



-“যারা কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করে, হুযুর আকরাম (ﷺ) তাদের উপর লা‘নত করেছেন এবং যারা মাযারের সম্মানার্থে সিজদা করে, এখানে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে।” ৪২


৪২ - শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভি, আশি‘আতুল লুম‘আত শরহে মিশকাত: ১/২৬৬

________________

কিতাবঃ মাযারে ইমারত ও গম্বুজ নির্মাণের ফায়সালা

গ্রন্থনা ও সংকলন: মুফতি মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন আন-নাজিরী

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন