শরীয়তের দৃষ্টিতে ছামার বৈধতা
ইমামে আজম আবু হানিফা (رحمة الله) এর দৃষ্টিতে ছামা
তাজকিরা নামক গ্রন্থে একটি কাহিনী বর্ণিত আছে, জনগণ ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) ও সূফিয়ান ছাওরী (رحمة الله) কে ছামার মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করলে তারা উভয়েই বললেন : ইহা ছগীরা কিংবা কবীরা গােনাহ কোনটাই নহে। বর্ণিত আছে যে, ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর এক প্রতিবেশী প্রতিদিন গভীর রাতে ঘুম হতে উঠে ছামা করত। ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) মনযােগ সহকারে ইহা শ্রবণ করতেন। এক রাতে ছামার'শব্দ না পেয়ে খবর নিয়ে জানতে পারলেন পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছেন। ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) মাথায় পাগড়ি বাধলেন এবং শহরের শাসনকর্তার নিকট গিয়ে তার প্রতিবেশীকে মুক্ত করে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করলেন। শাসনকর্তা বন্দির নাম জিজ্ঞাসা করলে ইমাম সাহেব বললেন : তার নাম উমর'। শাসনকর্তা তখন এই নামের সকল বন্দীদের মুক্তি করে দেওয়ার আদেশ দেন। অতঃপর ইমাম সাহেব লােকটিকে বললেন : রাতে তুমি যা করতে তা তুমি করাে।" (মাদারেজুন নবুয়াত, ২ য় খন্ড, ২৪৫ পৃঃ)।
ইমাম মালেক (رحمة الله) এর দৃষ্টিতে ছামা
ইমাম মালেক ( রঃ ) কে ছামা সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বলেন : আমার শহরে (মদিনায়) উলামায়ে কেরামকে এর বিরুধিতা করতে দেখিনি, তারা ছামার আসরে অংশগ্রহণ করতেন। ছামাকে তারাই অঙ্গীকার করে যারা অজ্ঞ, অন্ধ, যাদের স্বভাব মৃত। ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) এরূপ লিখেছেন। (মাদারেজুন নবুয়াত , ২ য় খন্ড , ২৪৫ পৃঃ)।
ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর মাজহাবে ছামা
শাফেয়ী মাযহাবে হারাম নয় বলে ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন। আমিও ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর কিতাব সমূহ খুজেছি, তিনি ছামা নিষিদ্ধ করেছেন এরূপ কোথাও দেখিনি। উস্তাদ আবুল মনছুর বাগদাদী শাফেয়ী (رحمة الله) বলেছেন : ইমাম শাফেয়ীর মাজহাবে ছামা মুবাহ বলে উল্লেখ রয়েছে। (ইমাম গাজ্জালী : এহইয়াউল উলুমুদ্দিন ; মারারেজুন নবুয়াত, ২ য় খন্ড, ২৪৫ পৃঃ)।
হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা ইমাম গাজ্জালী শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন :
وأما الشافعي رضي الله عنه فليس تحريم الغناء من مذهبه أصلا
- "মূলত শাফেয়ী মাজহাবে মধ্যে ছামা মূলত নিষিদ্ধ নয়।" (এহইয়াই উলুমুদ্দিন, ২ য় খন্ড, ৩৫৮ পৃ .)।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) এর দৃষ্টিতে ছামা
আবুল আব্বাস ফারগানী (رحمة الله) বলেন : ইমাম আহমদ (رحمة الله) এর পুত্র'ছালিহ'এর নিকট আমি শুনেছি যে, তিনি বলেন : আমি ছামা পছন্দ করতাম কিন্তু আমার পিতা ছামা পছন্দ করতেন না। সুকণ্ঠী গায়ক ইবনে হানাদার নিকট থেকে কথা আদায় করলাম যে, এক রাতে সে আমার কাছে এসে আমাকে ছামা শুনাইবে। পিতার ঘুমিয়ে পরা নিশ্চিত হয়ে আমি ইবনে হানাদারকে ছামা শুরু করতে বললাম। ছাদের উপর পায়চারির শব্দ শুনে উকি দিয়ে দেখি আমার পিতা চাদর গায়ে জড়িয়ে পায়চারি করতেছেন এবং ছামা শুনছেন। তাকে আবেগাপ্লুত মনে হয়েছিল। (মাদারেজুন নবুয়াত, ২ য় খন্ড, ২৪৬ পৃঃ)।
হযরত জুনাইদ বােগদাদী (رحمة الله) এর বক্তব্য
জুনাইদ বােগদাদী (رحمة الله) বলেন ; সূফিদের উপর ৩ সময় আল্লাহর খাছ রহমত নাজিল হয়। প্রথমতঃ আহারের সময় তাঁরা আহার করেনা, এজন্যে তাদের ক্ষুধার্থ থাকার সময়। দ্বিতীয়তঃ পারস্পরিক আলােচনার সময়, কেননা তারা আলাপে নবী ও সিদ্দিকগণের প্রতিনিধিত্ব করেন। তৃতীয় : ছামার সময়ে। কেননা তারা আবেগাপ্লুত তথা ওয়াজদ এর মধ্যে থেকে আল্লাহর প্রেমে বিভাের থাকেন। (মাদারেজুন নবুয়াত, ২ য় খন্ড, ২৪৭ পৃঃ)।
হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله)
হিজরী ৫ম শতাব্দির মুজাদ্দিদ, হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে লিখেন :
ونقل أبو طالب المكي إباحة السماع من جماعة فقال سمع من الصحابة عبد الله بن جعفر وعبد الله بن الزبير والمغيرة بن شعبة ومعاوية وغيرهم وقال قد فعل ذلك كثير من السلف الصالح صحابي وتابعي باحسان
- "আবু তালেব মক্কী (رحمة الله) এক বিশাল জামাত থেকে ছামা জায়েয হওয়ার ব্যাপারে নকল করেছেন। তারা বলেছেন : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর। (رضي الله عنه), আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه), মুগিরা ইবনে শুবা (رضي الله عنه), মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) প্রমূখ থেকে ছামা শুনেছেন। তিনি আরাে বলেন : অধিক সংখ্যক ছালফে - ছালেহীন সাহাবী ও তাবেঈগণ ছামাকে উত্তম জানতেন " (ইমাম গাজ্জালী : এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন, ২ য় খন্ড, ৩৩৯ পৃঃ)।
সংক্ষেপে যেসকল ইমামগণ ছামা'মুবাহ জানতেন তাদের তালিকা দেওয়া হল :
*ইমামে আজম আবু হানিফা (رحمة الله),
*ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله),
*ইমাম মালেক রব্বানী (رحمة الله)
*ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله),
*ইমাম দাউদ তাঈ (رحمة الله),
*ইমাম আবু ইউছুফ (رحمة الله),
*ইমাম সূফিয়ান ছাওরী (رحمة الله),
*আল্লামা নাছিরুদ্দিন আবুল মুনীর ইস্কান্দরী (رحمة الله),
*ইমাম ইবনে কুতাইবা (رحمة الله),
*ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله),
*হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله),
*আল্লামা কাজী ছানাউল্লাহ পানিপাথি (رحمة الله),
*আল্লামা আব্দুল হক মােহাদ্দেছ দেহলভী (رحمة الله) প্রমূখ।
_________________
শরীয়তের দৃষ্টিতে ক্বালবী জিকির ও ছামার বৈধ্যতা
রচনা ও সংকলনেঃ মুফতি মাওলানা আলাউদ্দিন জেহাদী
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন