মাযার নির্মাণ বিষয়ে আপত্তি : কুরআন শরিফ থেকে দলিল

 

মাযার নির্মাণ বিষয়ে আপত্তি : কুরআন শরিফ থেকে দলিল 


প্রশ্ন: ওলি-আউলিয়াগণের মাযার ও গম্বুজ নির্মাণ করা কি জায়িয? প্রশ্নকারী: শাফিউল আলম রানা।



কেউ কেউ বলেন যে, তা জায়িয নয়। এ প্রসঙ্গে তারা নিম্নের হাদিসগুলো পেশ করে থাকে:


১.        হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ)’র অসুস্থতাকালে তাঁর এক সহধর্মিণী হাবশা দেশে তাঁর দেখা ‘মারিয়া’ নামক একটি গীর্জার কথা আলোচনা করলেন। (উম্মাহাতুল মু’মিনীনের মধ্যে) উম্মে সালমা এবং উম্মে হাবিবা (رضي الله عنه) হাবশায় গিয়েছিলেন। তাঁরা ঐ গীর্জাটির সৌন্দর্য এবং তাতে রক্ষিত চিত্রসমূহের বিবরণ দিলেন। তখন নবী (ﷺ) তাঁর মাথা তুলে বললেন- সে-সব দেশের লোকেরা তাদের কোন পূন্যবান ব্যক্তি মারা গেলে তার সমাধিতে মসজিদ নির্মাণ করত এবং তাতে এসব চিত্র অঙ্কন করত। তারা হলো আল্লাহর দরবারে নিকৃষ্ট মাখলুক। (বুখারি)



২.        হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুল (ﷺ) অন্তিম রোগ শয্যায় বলেন ইয়াহুদি ও নাসারাদের প্রতি লা‘নত হোক। কারণ, তারা নিজেদের নবীগণের কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করেছে। (বর্ণনাকারী উরওয়া বলেন) এরূপ আশঙ্কা না থাকলে রাসুল (ﷺ)-এর কবরকে (ঘরের বেষ্টনীতে সংরক্ষিত না রেখে) খোলা রাখা হতো। (বুখারি)



৩.        হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাস‘উদ (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) বলেন, আমি হাউযে কাউছারে তোমাদের অগ্রগামী প্রতিনিধি হব। তোমাদের কিছু লোককে আমার নিকট উপস্থাপন করা হবে। আমি যখন তাদেরকে পানি পান করাতে উদ্যত হব, তখন তাদেরকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। তখন আমি বলব, হে পরওয়ারদেগার, এরা তো আমার উম্মত। তিনি বলবেন, আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে নতুন কি করেছে (বিদ‘আত)। (বুখারি)



৪.        হযরত আসিম থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবী করিম (ﷺ) কি মদিনাকে হারাম (সংরক্ষিত এলাকা) হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। উত্তরে তিনি বললেন: হ্যাঁ, অমুক স্থান থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত। এ এলাকার কোন গাছ কাটা যাবে না, আর যে ব্যক্তি এখানে বিদ‘আত সৃষ্টি করবে। (কিংবা বিদ‘আত সৃষ্টিকারীকে আশ্রয় দেয়) তার উপর আল্লাহ্, ফেরেশতা ও সকল মানব স¤প্রদায়ের লা‘নত। (বুখারি)।



মাযার নির্মাণ বিষয়ে জবাব:



প্রারম্ভিকা



نحمده ونصلي ونسلم علٰي حبيبه الكريم وعلٰي اٰله وصحبه اجمعين- وبعد!


اعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم وبسم اللّٰه الرحمٰن الرحيم



মাযার মানে হলো যিয়ারতের স্থান। তবে সাধারণ পরিভাষায়, মাযার নির্মাণ বলতে- আমরা কোন বুযর্গ-ওলির কবর শরিফে গম্বুজবিশিষ্ট ঘর তৈরী করাকে বুঝে থাকি। হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমাদ ইয়ার খান নঈমি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন: “মুসলমানকে দু’ শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:



✦        সাধারণ মুসলমানগণ এক শ্রেণীভূক্ত এবং



✦        উলামা, মাশায়েখ ও আউলিয়া কিরাম- যাদের তা‘যিম আসলে ইসলামেরই তা‘যিম- অন্য শ্রেণীভুক্ত।



১. সাধারণ মুসলমানদের কবরকে পাকা করা বা এর উপর গম্বুজ তৈরী করা যেহেতু অনর্থক, সেহেতু তা নিষেধ। তবে তাঁদের কবরের নিশানা ঠিক রাখার অভিপ্রায়ে মাটি ইত্যাদি দেয়া ও ফাতিহা ইত্যাদি পাঠ করা জায়িয।



২. উলামা, মাশায়িখ ও আউলিয়া কিরামের মধ্যে যাদের মাযারসমূহে জনগণের ভিড় থাকে এবং লোকেরা ওখানে বসে কুরআনখানি, ফাতিহা ইত্যাদি পাঠ করে, আগতদের আরামের জন্য এবং সাহিবে কবরের শানমান প্রকাশ করার জন্য এবং আশ-পাশে ছায়ার জন্য গম্বুজ বিশিষ্ট ঘর ইত্যাদি তৈরী শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়িয বরং সুন্নাতে সাহাবা দ্বারা প্রমাণিত।



৩. যেসব সাধারণ মুসলমানদের কবরসমূহ পাকা করা বা এর উপর গম্বুজ বিশিষ্ট ঘর তৈরী করা নিষেধ, তাদের কবরসমূহ যদি পাকা করে ফেলা হয়, তাহলে এগুলোকে ভেঙ্গে ফেলা হারাম।” ১


১- হাকিমুল উম্মত, জা’আল হক্ব, ১ম খন্ড



মাযারে ইমারত ও গম্বুজ নির্মাণের দলিল



ওলি-আউলিয়ার মাযার ও গম্বুজ নির্মাণ করা জায়িয। এটা তাঁদের সম্মান ও মর্যাদার প্রতিক এবং যিয়ারতকারীদের জন্য প্রশান্তিদায়ক। তা হারাম হওয়ার স্পষ্ট কোন দলিল নেই। আর ফিক্বহের মূলনীতি হলো- ‘প্রত্যেক বস্তুর মূল বৈধ’, যদি হারাম বা নাজায়িয হওয়ার সুস্পষ্ট কোন দলিল না থাকে। তদুপরি কবর বা মাযারে ইমারত নির্মাণ ও গম্বুজ তৈরী করাটা কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা‘ ও ক্বিয়াস তথা শরিয়তের দলিল দ্বারা প্রমাণিত। যেমন-



কুরআন শরিফ থেকে দলিল:



১. মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআন কারিমে ‘আসহাবে কাহাফ’র ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:



وَكَذَلِكَ أَعْثَرْنَا عَلَيْهِمْ لِيَعْلَمُوا أَنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَأَنَّ السَّاعَةَ لَا رَيْبَ فِيهَا إِذْ يَتَنَازَعُونَ بَيْنَهُمْ أَمْرَهُمْ فَقَالُوا ابْنُوا عَلَيْهِمْ بُنْيَانًا رَبُّهُمْ أَعْلَمُ بِهِمْ قَالَ الَّذِينَ غَلَبُوا عَلَى أَمْرِهِمْ لَنَتَّخِذَنَّ عَلَيْهِمْ مَسْجِدًا



-“এবং এভাবে আমি তাঁদের (আসহাবে কাহাফ) বিষয় জানিয়ে দিলাম, যাতে লোকেরা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতে কোনো সন্দেহ নেই; যখন এইসব লোক তাঁদের (আসহাবে কাহাফ) ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করতে লাগলো, অতঃপর তাঁরা বললো, ‘তাঁদের গুহার ওপর কোনো ইমারত নির্মাণ করো! তাঁদের রব-ই তাঁদের বিষয়ে ভাল জানেন।’ ওই লোকদের মধ্যে যারা (এ বিষয়ে) ক্ষমতাধর ছিল তাঁরা বললো, ‘শপথ রইলো, আমরা তাঁদের (আসহাবে কাহাফের পূণ্যময় স্থানের) উপর মসজিদ নির্মাণ করবো’।” ২


২- সুরা কাহাফ: ২১



❏ ইমাম ফখরুদ্দিন আর-রাযি এই আয়াতের তাফসিরে লিখেন:



أن بعضهم قال : الأولى أن يسد باب الكهف لئلا يدخل عليهم أحد ولا يقف على أحوالهم إنسان وقال آخرون : بل الأولى أن يبنى على باب الكهف مسجد وهذا القول يدل على أن أولئك الأقوام كانوا عارفين بالله معترفين بالعبادة والصلاة



-“কেউ কেউ (ওদের মধ্যে) বলেন যে, গুহার দরজা বন্ধ করে দেয়া হোক, যাতে আসহাবে কাহাফ আড়ালে গোপন থাকতে পারেন। আরও কিছু মানুষ বলেন, গুহার দরজায় একটি মসজিদ নির্মাণ করা হোক। তাঁদের এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে, এই মানুষগুলো ছিলেন আল্লাহর আরেফিন (ওলিউল্লাহ), যাঁরা এক আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে বিশ্বাস করতেন এবং নামাযও পড়তেন।” ৩


৩- ইমাম রাযি, আত-তাফসীর আল-কাবীর: ১০/১৮৬-১৮৭



❏ ইমাম নাসাফি তাঁর তাফসির গ্রন্থে লিখেন:



{قَالَ الذين غَلَبُواْ على أَمْرِهِمْ} من المسلمين وملكهم وكانوا أولى بهم وبالبناء عليهم {لَنَتَّخِذَنَّ عَلَيْهِمْ} على باب الكهف {مَّسْجِدًا} يصلي فيه المسلمون ويتبركون بمكانهم



-“যারা (আসহাবে কাহাফের বিষয়ে) প্রভাবশালী ছিলেন, তারা মুসলমান এবং শাসকবর্গ; এরা বলেন যে, গুহার প্রবেশপথে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেবেন, যাতে ‘মুসলমানবৃন্দ সেখানে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারেন এবং তা (স্মৃতিচিহ্ন) থেকে বরকত আদায় করতে সক্ষম হন’।”৪


৪ - ইমাম আন-নাসাফি, মাদারিকুত তানযীল: ২/২৩১



❏ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী তাঁর বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থে এ আয়াতে بُنْيَانًا -এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন:



لَايَعْلَمُ اَحَدٌ تُرْبَتَهُمْ وَتَكُوْنُ مَحْفُوْظَةً مِنْ تَطَرُّقِ النَّاسِ كَمَا حُفِظَتْ تُرْبَتُ رَسُوْلِ اللهِ بِالْحَظِيْرَةِ



-“তাঁরা প্রস্তাব দিলেন, আসহাবে কাহাফের জন্য এমন একটি প্রাচির তৈরী করুন, যা তাদের কবরকে পরিবেষ্টিত করবে এবং তাদের মাযারসমূহ জনগণের আনাগোনা থেকে হিফাজতে থাকবে, যেমন হুযুর আলাইহিস সালামের রওযা পাককে চার দেয়ালের দ্বারা পরিবেষ্টিত করা হয়েছে।” ৫


৫ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান: ৭/৩৩৯



কিন্তু তাদের এ প্রস্তাব আগ্রাহ্য হলো, মসজিদই নির্মাণ করা হলো। উক্ত রূহুল বয়ানে مَسْجِدًا -এর তাফসির এভাবে করা হয়েছে-



يُصَلِّىْ فِيْهِ الْمُسْلِمُوْنَ وَيَتَبَرَّ كُوْنَ بِمَكَانِهِمْ



-“মুসলিমগণ সেখানে নামায আদায় করবে এবং তাঁদের স্থান থেকে বরকত হাসিল করবে।” ৬


৬ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান: ৭/৩৩৯



❏ ইমাম শিহাবুদ্দিন খাফফাযি লিখেন:



وكونه مسجداً يدل على جواز البناء على قبور الصلحاء ونحوهم كما أشار إليه في الكشاف وجواز الصلاة في ذلك البناء



-“আসহাবে কাহাফের গুহামুখে মসজিদ নির্মাণ করার দ্বারা এ কথার দলিল বহন করে যে, সালেহিন তথা ওলি-আউলিয়ার মাযারের পার্শ্বে মসজিদ নির্মাণ করা জায়িয, যেমনটি উল্লেখিত হয়েছে ‘তাফসিরে কাশশাফ’ গ্রন্থে; আর এই দালানের ভিতরে ইবাদত-বন্দেগি করাও জায়িয।” ৭


৭ - ইমাম খাফফাযি, ইনায়াতুল কাদী: ৬/৮৬, দারুস্ সাদির, বৈরুত, লেবানন



কুরআন কারিম-এর উল্লেখিত এ আয়াত ও এর নির্ভরযোগ্য তাফসিরের আলোকে প্রমাণিত হলো যে, আসহাবে কাহাফ ছিলেন আল্লাহর ওলি-আউলিয়া এবং তাঁদের সমাধি তথা কবর-মাযারে সে সময়ের নেককারগণ দু’টি প্রস্তাবনা উল্লেখ করেছেন:



এক,আসহাবে কাহাফের আস্তানার পাশে গম্বুজ ও সমাধি তৈরী করার পরামর্শ।



দুই, ওদের সন্নিকটে মসজিদ তৈরী করার সিদ্ধান্ত।



কুরআন কারিম দু’টি প্রস্তাবনার কোনটাকেই অস্বীকার করে নি। যার ফলে প্রতীয়মাণ হলো যে, উভয় কাজটা তখনও জায়িয ছিল এবং এখনও জায়িয আছে। যেমন উসুলের কিতাবসমূহ দ্বারা প্রমাণিত আছে-


 شَرَائِع قَبْلِنَا يَلْزِمُنَا


(আগের যুগের শরিয়ত আমাদের জন্য পালনীয়)। আর এ বৈধতার পক্ষেই মতামত ব্যক্ত করেছেন গ্রহণযোগ্য সকল মুফাসসির, যার ইবারত উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।



সুতরাং কুরআন কারিমের স্পষ্ট নস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, নবী-ওলি-বুযর্গগণের মাযার নির্মাণ বা এর পাশে মসজিদ নির্মাণ করা, তাঁদের স্মৃতি রক্ষা করা এবং মাযারের ইমারতে নামায পড়া জায়িয। অতএব, কুরআনের বিপরীতে যদি কোন হাদিস তথা ‘খবরে ওয়াহিদ’ বর্ণিত হয়েও থাকে, তাহলে এ সকল হাদিসকে কুরআনের সাথে সামঞ্জস্য করতে হবে, অন্যথায় হাদিসের আমল বাদ দিয়ে কুরআনের হুকুমের উপর আমল করতে হবে।



২. পবিত্র কুরআনে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস্ সালাম’র স্মৃতিচিহ্ন মাক্বামে ইবরাহিমকে নামাযের স্থান বানানোর ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে:



وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ



-“এবং স্মরণ করুন, যখন আমি এ ঘরকে (কা’বা শরিফকে) মানবজাতির জন্যে আশ্রয়স্থল ও নিরাপদ স্থান করেছি; আর (বললাম), ‘ইবরাহিমের দাঁড়াবার স্থানকে (মাকামে ইবরাহিম নামের পাথরকে যার ওপর দাঁড়িয়ে তিনি কা’বা ঘর নির্মাণ করেন) নামাযের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো’; এবং ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে তাকিদ দিয়েছি, ‘আমার ঘরকে পুতঃপবিত্র করো, তাওয়াফকারী, ই‘তিকাফকারী এবং রুকু‘ ও সাজদাকারীদের জন্যে।” ৮


৮ - সুরা বাকারাহ: ১২৫



জ্ঞাতব্য: তাওয়াফের পরে দু’ রাক‘আত নামায ওখানে পড়তে হয়।



আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর প্রিয় বন্ধুগণকে এতো ভালোবাসেন যে ‘এই ধরনের নির্দিষ্ট বা চিহ্নিত করা স্থানে’ প্রার্থনা করাকে তিনি হজ্জের প্রথা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এতে যদি বিন্দু পরিমাণ শিরকের (অংশীবাদের বা মূর্তিপূজার) সম্ভাবনা থাকতো, অর্থাৎ- মানুষেরা নবীগণের মাযার-রওযা ও পদচিহ্নকে ‘আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য উপাস্য দেবতা’ হিসেবে যদি গ্রহণ করা আরম্ভ করতো, তাহলে আল্লাহ্ তা‘আলা নিজ কুরআন মাজিদে তাঁর অবারিত রাজসিক সম্মান তাঁরই প্রিয় বন্ধুদের প্রতি দেখাতেন না।



বস্তুতঃ পবিত্র কুরআন মাজিদ এই সব স্থানকে ‘শা‘আয়িরুল্লাহ্’ (আল্লাহকে স্মরণ হয় এমন সম্মান প্রদর্শনযোগ্য চিহ্ন) হিসেবে সম্বোধন করেন; আর আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও আউলিয়া (رضي الله عنه)-বৃন্দের মাযার-রওযা (নবীদের কারো কারো রওযা মসজিদে হারামের মধ্যেও বর্তমান) অবশ্য-অবশ্য শা‘আয়িরুল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত। যে কেউ এই মাযার-রওযার ক্ষতি করলে প্রকৃত প্রস্তাবে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথেই যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে, যেমনটি সহিহ্ বুখারি শরিফে বর্ণিত একটি হাদিসে কুদসিতে ঘোষিত হয়েছে: “যে ব্যক্তি আমার ওলি (বন্ধু)’র প্রতি বৈরীভাবাপন্ন হয়, তাকে আমি আমার সাথে যুদ্ধ করার জন্যে আহবান জানাই।” ৯


৯ -  ইমাম বুখারি, আস-সহিহ, ৮/১৩১



৩. কুরআন কারিমের অন্য আয়াতে এসেছে:



إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّهَ فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ



-“আল্লাহর মসজিদসমূহ তাঁরাই আবাদ করে, যারা আল্লাহ্ ও কিয়ামতের উপর ঈমান আনে, নামায কায়েম রাখে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করে না; সুতরাং এটাই সন্নিকটে যে, এসব লোক সৎপথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” ১০


১০ - সুরা তাওবাহ: ১৮



এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইসমাইল হাক্কি বলেন:



فبناء القباب على قبور العلماء والاولياء والصلحاء ووضع الستور والعمائم والثياب على قبورهم امر جائز اذا كان القصد بذلك التعظيم فى اعين العامة حتى لا يحتقروا صاحب هذا القبر

-“অতএব, উলামা, আওলিয়া ও বুযুর্গানে কিরামের কবর তথা মাযারের উপর ইমারত-গম্বুজ তৈরী করা এবং তাঁদের মাযারে গিলাফ, পাগড়ি ও কাপড় চড়ানো জায়িয কাজ; যদি তা সাধারণ মানুষের মনে তাঁদের প্রতি সম্মানের ধারণা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, যাতে লোকেরা ঐ কবরবাসীকে নগণ্য মনে না করে।” ১১

১১ - আল্লামা হাক্কি, রুহুল বায়ান: ৫/৬, শামেলা)

________________

কিতাবঃ মাযারে ইমারত ও গম্বুজ নির্মাণের ফায়সালা

গ্রন্থনা ও সংকলন: মুফতি মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন আন-নাজিরী

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন