ইয়াযিদকে জান্নাতি সাজাতে আমানুল্লাহ সালাফির হাদিস রচনা

ইয়াযিদকে জান্নাতি সাজাতে আমানুল্লাহ সালাফির হাদিস রচনা


আমানুল্লাহ সাহেব একজন সালাফি শায়খ। তিনি এজিদকে ক্ষমাপ্রাপ্ত ও জান্নাতি সাজাতে গিয়ে বুখারি শরীফের হাদিসকে পরিবর্তন করে নিজস্ব মনগড়া হাদিস তৈরি করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। একথা শুনে হয়তো অনেকেই চমকে উঠতে পারেন। কিন্তু তাদের কাছে ইহা আশ্চর্যের বিষয় নয়। তাহলে প্রস্তুত হোন এখনই আমরা আমানুল্লাহ সাহেবের বক্তব্যটি দেখব। তিনি বলেছেন:

‘ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) এজিদ বিন মুয়াবিয়া রাহিমাহুল্লাহকে ভাল চোখে দেখতেন। এজিদ হলেন প্রখ্যাত তাবেয়ি। ইউরোপের কনষ্টান্টিনোপলের যুদ্ধে সৈনিক হিসেবে তিনি সেখানে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন।



নবীজির ভবিষ্যত বাণী, আল্লাহর নবী বলেন:


من اشترك فى غزوة قستنطنية كلهم مغفور


অর্থ: যারা কনষ্টান্টিনোপলের যুদ্ধে অংশ নিবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত।


এজিদ বিন মুয়াবিয়া রাহিমাহুল্লাহ মুসলিম রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তার করার জন্য তার বিশেষ অবদান ছিল। এবং কনষ্টান্টিনোপলের যুদ্ধে বাপ বেটা দু’জনেই সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। (ইউটিউব থেকে সংগৃহীত)


সম্মানিত পাঠক!  এজিদের ইতিহাস আপনারা প্রত্যেকেই অবগত আছেন। তাই আমি এখানে এ প্রসঙ্গে বক্তব্য দীর্ঘায়িত করতে চাই না।



(এ ব্যাপারে আমার দুটি গ্রন্থ রয়েছে:


১. ইয়াজিদের হাকিকত, ২. কুস্তুনতুনিয়ার যুদ্ধে ইয়াজিদের অন্তর্ভুক্তি, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পাঠ করার অনুরোধ রইল।)



এখানে আমি শুধুমাত্র আমানুল্লাহ সাহেব কর্তৃক রচিত হাদিসটি সম্বন্ধে আলোচনা করতে চাই।


সুপ্রিয় পাঠক, আমানুল্লাহ সাহেব যে এবারত পাঠ করেছেন ইহা তার সম্পূর্ণ স্বরচিত। এ রকম শব্দে কোন হাদিস কোন ইমামই বর্ণনা করেননি। ইহা হাদিসের নামে ষড়যন্ত্র। তাই আসুন, বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাবার পূর্বে মূল হাদিসটি দেখি:


قال النبى صلى الله عليه وسلم اول جيش من امتى


يغزون مدينة قيصر مغفورلهم


অর্থ: নবী করিম (ﷺ) বলেছেন: ‘আমার উম্মতের প্রথম বাহিনী যারা কায়সারের শহরে অভিযান করবে তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত। (বুখারি হাদিস নং ২৯২৪)



বুখারি শরীফের মূল হাদিস ও আমানুল্লাহ সাহেবের বনানো হাদসি দুটি নিয়ে একটু খেয়াল করুন দেখবেন এখানে আকাশ পাতাল ব্যবধান।


প্রথমত : হাদিসের শাব্দিক বর্ণনা পরিবর্তন করার কোন অধিকার কোন মানুষের নাই।



দ্বিতীয়ত : হাদিসের মধ্যে কুস্তুনতুনিয়া শব্দটি বিদ্যমান নাই। অথচ আমানুল্লাহ সাহেব সেটা সংযুক্ত করেছেন।


তৃতীয়ত : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন শুধুমাত্র কায়সারের শহরে প্রথম অভিযানকারী ব্যক্তি ক্ষমাপ্রাপ্ত। এখানে কোন কোন মুহাদ্দিসগণ বলেছেন কায়সারের বলতে কুস্তুনতুনিয়ার শহরকে বুঝানো হয়েছে। আচ্ছা ধরে নিলাম কুস্তুনতুনিয়া শহরকেই বুঝানো হয়েছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: اول جيش অর্থাৎ সর্বপ্রথম বাহিনীর কথা। শুধুমাত্র প্রথম অভিযানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। অথচ আমানুল্লাহ সাহেব বললেন: নবীজি (ﷺ) নাকি বলেছেন من اشترك অর্থাৎ যে ব্যক্তিই যে কোন সময় অংশগ্রহণ করবে সেই ক্ষমাপ্রাপ্ত। এখানে যে কোন ব্যক্তিকে ক্ষমার অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে হাদিসের ইবারতকে পরিবর্তন করেছেন।


এখন প্রশ্ন হতে পারে, এভাবে হাদিস পরিবর্তন করে তাদের লাভ কি ? উত্তরে বলব, ইহাই তো মূল বিষয়। এই পরিবর্তন না হলে যে তাদের প্রেমিক এজিদকে ভেজা বেড়াল সাজানো যায় না। তাকে যে ক্ষমাপ্রাপ্ত বলা যায় না। ধিক তোমাদের প্রেম ভালবাসাকে। সমস্ত উলামায়ে কিরামগণ যেখানে একমত যে এজিদ ছিল একজন ফাসিক, ফাজির, মদ্যপায়ী। আবার কারো মতে সে ছিল কাফির। সে ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে জাল হাদিস রচনা ইহা সুষ্পষ্ট ষড়যন্ত্রের শামিল।

_________________

কিতাবঃ হাদিস নিয়ে সালাফিদের জালিয়াত

লেখকঃ হাফিজ মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ ইকরাম উদ্দিন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন