ছামার তালে তালে জিকির বা ইসলামী সংগীত বৈধ

 

ছামার তালে তালে জিকির বা ইসলামী সংগীত বৈধঃ


ইহা কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। পাশাপাশি আল্লাহর জিকির করাও সুপ্রসিদ্ধ বৈধ জিনিস। তাই শরিয়ত সম্মত ছামা ও জিকির একসাথে করাও বৈধ হবে। যেহেতু দুটি কাজই বৈধ জিনিস এবং যা শরিয়তে নিষিদ্ধ নয়। কেননা শরিয়তে নিষিদ্ধ বস্তু ছাড়া বাকী সবই মুবাহ বা বৈধ। যেমন একটি কায়দা উল্লেখযােগ্য,

قاعدة : الأصل في الأشياء الإباحة حتى يث الليل على الخريم

- "কায়দা : প্রত্যেক জিনিসের মূল হচ্ছে বৈধ, যতক্ষন পর্যন্ত এক নিষিদ্ধতার দলিল ছাবিত না হয়।" (আল আশবাহু ওয়ান নাইর, মুফতী আমিমুল ইহসান : কাওয়াইদুল ফিকহ)

অন্যত্র কায়দাটি আরাে সুন্দর উল্লেখ রয়েছে,

الأصل في الأشياء الإباحة حتى يدل الدليل على التحريم عند الجمهور ،



"প্রত্যেক জিনিসের মূল হচ্ছে বৈধ, যতক্ষন পর্যন্ত এক নিষিদ্ধতার দলিল ছাবিত না হয়। আর এটা জমহুর তথা অধিকাংশ উলামাদের অভিমত।"কাওয়াইদুল ফিকহিয়্যা)



সেখানে আরাে উল্লেখ আছে,



وقال كثير من علماء الحنفية : الأصل في الأشياء الحل



- "হানাফী অধিকাংশ উলামাদের মতে, প্রত্যেক বস্তুর মূল হল বৈধতা।" (কাওয়াইদুল ফিকহিয়্যা)



কায়দাটির ভিত্তি পবিত্র কোরআনেও রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ তা'লা বলেন,



هو الذي خلق لكم ما في الأرض جميعا



- "তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তােমাদের জন্য যা কিছু জমীনে। রয়েছে সে সমন্থ।" (সূরা বাকারা, ২৯ নং আয়াত)



এই আয়াতে নিষিদ্ধ বস্তু সমূহ ছাড়া বাকী সব কিছু বান্দার জন্য বৈধ প্রমাণিত হয়। কেননা সবই মানুষের প্রয়ােজনে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বিষয়ে হাদিস শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه), সালমান ফারসী (رضي الله عنه), আবু দারদা (رضي الله عنه) থেকে মারফূভাবে বর্ণিত আছে,



قوله صلى الله عليه وسلم ما أحل الله فهو حلال وما م فهو حرام وما سكت عنه فهو عفو ،



- "আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর বাণী : যা আল্লাহ হালাল করেছেন তা হালাল। আর যা আল্লাহ হারাম করেছেন তা হারাম। আর যার ব্যাপারে চুপ থেকে তা আল্লাহর কাছে ক্ষমার্থ।" (ইমাম তাহাবী : শারহু মুশকীলিল আছার, আবু দাউদ, মুস্তাদরাক, বায়হাকী : সুনানুল কুবরা, বাজ্জার, মসনদে শামিইন)



অতএব, নিষিদ্ধ জিনিস গুলাে ছাড়া বাকী সবই বৈধ। তাই আল্লাহর জিকির ও শরিয়ত সম্মত ইসলামী সংগীত বা ছামা একত্রে করা বৈধ বা জায়েয। যেহতুে আল্লাহর জিকির ও শরিয়ত সম্মত ইসলামী সংগীত বা ছামা দুটিই কোরআন সুন্নাহর দলিল দ্বারা প্রমাণিত বৈধ। সেহেতু সু - স্পষ্ট দলিল ব্যতীত এটাকে নাজায়েয বলার সুযােগ নেই। কেউ কেউ এটাকে বিদয়াত আখ্যা দিতে পারেন, তবে সকল বিদয়াত পরিত্যাজ্য নয়। যেমন হাফিজুল হাদিস শারিহে বুখারী ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) (ওফাত ৮৫২ হিজরী) তদীয় কিতাবে বলেন,



والمراد بقوله كل بدعة ضلالة ما أحدث ولا دليل له من الشرع بطريق خاص ولا عام



- "প্রত্যেক বিদয়াতই গােমরাহী এর অর্থ হল : এমন কিছু আবিস্কার করা যার কোন দলিল খাছ ও আম তরিকায় শরিয়াতে বিদ্যমান নেই।" (ইমাম। আসকালানী : ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ১৩ তম খন্ড, ২৫৪ পৃঃ)



আর ছামা ও জিকিরের দলিল স্পষ্টই রয়েছে, তাই এটা শারয়ী বিদয়াত হবেনা। এ সম্পর্কে ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস আশ শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন :



قال الشافعي رحمه الله : ما أحدث ما يخالف الكتاب أو السنة أو الأمم أو الإجماع فهو ضلالة ، وما أخبيث من الخير مما لا يخالف شا من ذلك فليس بمذموم ،



- "যা আবিস্কার হয়েছে কিন্তু কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও আছার বিরুধী তাকে গােমরাহী বিদয়াত বলা হয়। আর যে সকল ভাল কাজ আবিস্কার হয়েছে। কিন্তু কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও আছারের বিরুধী নয় তাকে প্রশংসিত বিদয়াত বলা হয়। (আল্লামা নুরুদ্দিন হালভী : সিরাতে হলভিয়া, ১ ম খন্ড, ১২৩ পৃঃ ; ইমাম মােল্লা আলী : মেরকাত শরহে মেসকাত, ১ ম খন্ড, ৩৩৮ পৃঃ ; ইমাম ইবনে ছালেহী শামী : সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১ ম খন্ড, ৩৬৪ পৃ .)



অতএব, আল্লাহর জিকির ও শরিয়ত সম্মত ছামা দুটিই কোরআন সুন্নাহর দলিল দ্বারা প্রমাণিত সেহেতু ইহা প্রশংশিত আমল ও অবশ্যই জায়েয। শরয়ীভাবে যার আছল বা ভিত্তি রয়েছে তাকে শারয়ী বিদয়াত বলা যায়না।



যেমন হিজরী ৮ ম শতাব্দি মুজাদ্দিদ হাফিজুল হাদিস শরিহে বুখারী ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) { ওফাত ৮৫২ হিজরী } তদীয় কিতাবে আরাে বলেন :



والمحدثات والمراد بها ما أخبيث وليس له أصل في الشرع ويﺅى في غزف الشرع بذعة وما كان له أصل يدل عليه الشرغ فليس ببذعة


- "সেই মুহদাছাকে'শরিয়তে বিদয়াত বলা হয় যার শরিয়তে কোন ভিত্তি নেই। অপরদিকে যার কোন আছল নেই কিন্তু শরিয়তে দলিল বিদ্যমান। রয়েছে তাকে বিদয়াত বলা যাবেনা।" (ইমাম আসকালানী : ফাতহুল বারী ১৩ তম খন্ড, ২৫৩ পৃ .)।


অতএব, ছামা ও আল্লাহর জিকির একত্রে করলে ইহা শারয়ী বিদয়াত বলা মূর্খতা। কেননা ইহা কোরআন সুন্নাহর দলিল দ্বারা প্রমাণিত বৈধ বা জায়েয।

_________________

শরীয়তের দৃষ্টিতে ক্বালবী জিকির ও ছামার বৈধ্যতা

রচনা ও সংকলনেঃ মুফতি মাওলানা আলাউদ্দিন জেহাদী

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন