ফোকাহাদের দৃষ্টিতে কবর উচু ও পাকা করা
কাবা শরীফের অন্যতম ইমাম ও বিশ্ববিখ্যাত ফকিহ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী হানাফী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে বলেন,
فبناء القباب على قبور العلماء والأولياء والصلحاء ووضع الستور والعمائم والثياب على قبورهم امر جائز إذا كان القصد بذلك التعظيم في أعين العامة حتى لا يحتقروا صاحب هذا القبر
-"উলামা, আউলিয়া ও বুজুর্গানেদ্বীনের কবরের উপর ইমারত তৈরী করা ও কাপড় দ্বারা কবরে গিলাফ দেওয়া জায়েয। যদি মানুষের মনে শ্রেষ্ঠতম ধারনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হয়, যাতে লােকেরা ঐ কবরবাসীকে নগন্য মনে না করে।"(তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৩ য় খন্ড, ৪৮২ পৃ: সূরা তাওবার ১৮ নং আয়াতের তাফসীরে)
আল্লামা শায়েখ আব্দুল হক মােহাদ্দেছ দেহলভী (رحمة الله) বলেন: শেষ জামানায় মানুষ বাহ্যিক বেশ-বুষার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাবে। তাই মাসাইখ ও বুজুর্গানেদ্বীনের কবরের উপর ইমারত তৈরীর বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হয়। যেন মুসলমানদের আউলিয়াকেরাম গণের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি প্রকাশ পায়।"(শরহে শফরুস সাদৎ।
হিজরী ১১ শ শতাব্দির মােজাদ্দেদ, বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা ইমাম মােল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে বলেন:
وقد أباح الله البناء على قبر المشايخ والعلماء والمشهورين ليژورهم الاش ، ويشتريحوا بالجوي فيه
-"পূর্বসুরী আলিমগণ মাসাইখ ও উলামায়ে কেরামের কবরের উপর ইমারত। তৈরী করা জায়েয বলেছেন, যাতে লােকেরা যেয়ারত করে সেখানে বসে আরাম পায়।"(ইমাম মােল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৪ র্থ খন্ড, ১৫৬ পৃ: জানাযা অধ্যায়, দাফনিল মায়্যেত পরিচ্ছেদ ১৬৯৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়।
হানাফী মাজহাবের বিখ্যাত ফকিহ্ আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) তদীয় ফাতওয়ার গ্রন্থে বলেন,
لا يكره البناء إذا كان الميت من المشايخ والعلماء والسادات
-"যদি মাইয়্যেত উলামা, মাসাইখ বা সৈয়দ বংশের কেউ হয় তবে তার কবরের উপর ইমারত তৈরী করা মাকরুহ নয়।"(ফাতওয়ায়ে শামী, ৩ য় খন্ড, ১৪৪ পৃ:)
হানাফী মাজহাবের অন্যতম ফকিহ্ আল্লামা হাছকাফী (رحمة الله) বলেন,
ولا يقع عليه بتاء . وقيل: لا بأس به ، وهو المختار
-"কবরের উপর ইমারত তৈরী করবেনা, কেউ কেউ বলেছেন এতে অসুবিধা নেই বরং ইহাই উত্তম।"(দূরুল মুখতার, দাফন অধ্যায়)
এখানে কবরে ইমারত তৈরী করার অভিমত পেশ করার পর (অহুয়াল মুখতার) ইহা উত্তম বলেছেন। সুতরাং মাসাইখ বা উলামাগণের কবরের উপর ইমারত তৈরী করা উত্তম।
এ সম্পর্কে আল্লামা তাহতাবী (رحمة الله) বলেন,
وقد اعتاد أهل مصر وضع الأحجار حفظا للقبور عن الإدارس والنبش ولا بأس به وفي الدر ولا يحصص ولا يطين ولا يقع عليه بيناء . وقيل: لا بأس به ، وهو المختار
-"মিশর বাসীরা কবরের উপর পাথর স্থাপন করেন যেন কবরটি বিলীন বা উচ্ছেদ না হয় এবং কবরের উপর যেন কেউ চলাফেরা বা ঘর-বাড়ি তৈরী না। হক্কানী উলামা, ফোজালা, ফোকাহা, ও আউলিয়ায়ে কেরামের কবর পাকা করে। কেউ কেউ এগুলাে জায়েয বলেছেন আর এটাই উত্তম।"(তাহতাবী আলা মারকিউল ফালাহ। এখানেও কবর পাকা করা উত্তম বলেছেন।
এ সম্পর্কে আল্লামা ইমাম শারানী (رحمة الله) তদীয় গ্রন্থে বলেনঃ
ومن ذلك قول الأئمة أن القبر لايبني ولا يجصص مع قول أبي حنيفة يجوز ذالك قال الاول مشدد والثاني مخفف
(ওয়া মিন জালিকা কাওলুল আইম্মা আন্নাল কাবরা লা ইয়াবনা ওয়ালা ইয়া জাচ্চাছ মায়া কাওলী আবি হানিফাতা ইয়াজুযু জালিকা ক্বালাল আওয়ালু মুসাদ্দাদা ওয়াছ ছানী মুখাফফাফ)
-"অন্যান্য ইমামগণের মতামত হল কবরের উপর ইমারত তৈরী করা এবং চুনকাম করা যাবেনা। তা সত্ত্বেও ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর বক্তব্য হচ্ছে কবর পাকা করা জায়েয। সুতরাং প্রথম উক্তিতে কঠোরতা ও দ্বিতীয় উক্তিতে নমনীয়তা প্রকাশ পায়।"(ইমাম শারানী: মিযানেল কুবরা, ১ ম খন্ড, ১৫৩ পৃ:)
সুতরাং হানাফী মাজহাবের ইমাম, ইমামে আজম আবু হানিফা হক্কানী ব্যক্তির কবর পাকা করার পক্ষে ফাতওয়া দিয়েছেন।
ছদরুশ শরীয়ত আল্লামা আমজাদ আলী আজমী (رحمة الله) বলেন: মৃত ব্যক্তির চার পাশ, না হলে উপরের অংশ পাকা করে দিলে অসুবিধা নেই। (বাহারে শরিয়ত, ১ ম খন্ড।
উপরে উল্লিখিত দলিল-আদিল্লাহ দ্বারা প্রমাণ হয়, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গে তথা হক্কানী উলামা, ফোজালা, ফোকাহা ও আউলিয়ায়ে কেরামের কবর পাকা করাতে দোষের কিছুই নেই, বরং ইহা হানাফী মাজহাব মােতাবেক মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে ইমামে আজম সহ হানাফী মাজহাবের সর্বসম্মতিক্রমে ফকিহগণ একমত।
_______________
সহিহ হাদিসের আলােকে মাজার যিয়ারত পূজা নয় ও কদমবুছির সমাধান
গ্রন্থনায়ঃ মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দিন জিহাদী
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন