নামাযের ফযীলত (২য় পর্ব)
এস্তেখারা নামায
** মারাকিল ফালাহ কিতাবে আছে, এস্তেখারার নামায সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ। উক্ত কিতাবে এক হাদীস অবলম্বনে লিখিয়াছেন যে,হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলিয়াছেন, হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদিগকে যেরুপ যত্নের সহিত কুরআন শরীফ শিক্ষা দিতেন, তদ্রুপ আমাদের যাবতীয় জটিল কার্যে এস্তেখারা নামাযের রীতিনীতি শিক্ষা দিতেন। উক্ত কিতাবে হাদীস শরীফ হইতে লিখিত আছে,হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেন,এস্তেখারার নিয়তে দুই রাকআত নামায পড়িয়া নিম্ন লিখিত দোয়া পড়িবে:-
" আল্লহুম্মা ইন্নি আছতাখিরুকা বি ইলমিকা
ওছতাক্বদারুকা বি ক্বুদরতিকা ওছআলুকা
মিন ফাদ্বলিকাল 'আযিম।ফা ইন্নাকা তাক্বদিরু ওলা আক্বদিরু ওতা'লামু আলা আ'লামু ও আংতা 'আল্লামুল গুয়ুব।আল্লহুম্মা ইং কুংতু তা'লামু আন্না হাযাল আমরু খইরুল্লি ফি দিনি ও মা'আশি ও 'আক্বিবাতু আমরি,ফাইক্বদিরহু ও ইয়াচ্ছিরহুলি ছুম্মা বারিকলি ফিহি,ও ইং কুংতা তা'লামু আন্না হাযাল আমরা,শাররল লি ফি দিনি ও মা'আশি ও আক্বিবাতু আমরি,
ফাচ্বরিফহু 'আন্নি ও আচ্বরিফনী 'আনহু ও আক্বদিরলিল খাইরা হাইছু কানা ছুম্মা আরদ্বিনি বিহি।" তন্মধ্যে " হাযাল আমরা" বলিবার সময় নিজের মকছুদের প্রতি খেয়াল করিবে। মারাকিল ফালাহ কিতাবে আছে,যাবতীয় কাজের জন্য ইস্তেখারা করা উত্তম।যথা :- হজ্ব ও জিহাদ। কিন্তু ঐরুপ নেক করিব কিনা, এরুপ নিয়তে ইস্তেখারা করিবে না। কোন সময় ঐকাজ করিলে ভাল হইবে, শুধু এই নিয়তে ইস্তেখারা করিবে।
ইস্তেখারার অন্য নিয়ম
____________
হযরত মাওলানা শাহ ওয়ালি উল্লাহ
মুহাদ্দেছে দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি "
আল ক্বওলুল জামীল" কিতাবে লিখিয়াছেন,
কোন কাজের ভাল - মন্দ অনুভব করিবার জন্য ভাল মত অযু করত: পাক কাপড়
পরিধান করিয়া ডান কাতে শয়ন করিবে এবং
সূরা ওয়াশ শামছি ৭ বার,ওয়াল্লাইলি সূরা ৭
ও সূরা ইখলাছ পড়িবে।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে,সূরা ইখলাছের
পরিবর্তে সূরা ওয়াত্তীন ৭ বার পড়িবে।তৎপর
বলিবে,হে আল্লাহ! আমাকে খাবের মধ্যে
( স্বপ্নে) ঐ জিনিস দেখাইয়া দাও,যাহাতে
আমার উদ্দেশ্য সহজে বুঝিতে পারি। এইরুপে
১ দিন,২দিন,৩ দিন করিবে। যদি কিছু বুঝিতে
না পারে, তবে ৭ দিন পর্যন্ত করিবে।
ইনশাআল্লাহ, ইহার মধ্যেই ভাল - মন্দ ভেদ
বুঝিতে পারিবে। মুহাদ্দেছ সাহেব বলিয়াছেন - আমার সঙ্গীয় লোকেরা ইহা পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছেন।( তরীকুল ইসলাম - দ্বিতীয় ভাগ,
পৃ:- ১০৬ -১০৭)।
সপ্তাহের প্রতিদিনের নামায
_____________
** রবিবার:- হযরত আবু হুরায়রা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণনাতে রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,"যে ব্যক্তি রবিবার দিন ৪ রাকআত (নামায) পড়ে এবং প্রত্যেক রাকাআতে আলহামদু ও আমানার রসূলু একবার পাঠ করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য খৃষ্টান পুরুষ ও খৃষ্টান নারীর সমসংখ্যক সওয়াব লিখবেন।
তাকে একজন নবীর সওয়াব দিবেন এবং এক
হজ্ব ও ওমরা তার জন্য লিপিবদ্ধ করবেন।
প্রত্যেক রাকাআতের বদলে হাজার নামাযের সওয়াব লিখবেন। প্রত্যেক অক্ষরের বিনিময়ে বেহেশতে একটি মেশকের শহর দেবেন।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৩)।
** হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর
রেওয়ায়েতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,রবিবার দিন অধিক নামায পড়ে আল্লাহ তায়ালার একত্ব ঘোষণা কর। তিনি এক,তার কোন শরীক নেই।
অতএব,যে ব্যক্তি রবিবার দিন যোহরের ফরয
ও সুন্নতের পর চার রাকাআত পড়ে,প্রথম
রাকাআতে আলহামদু ও আলিফ - লাম - সিজদা এবং দ্বিতীয় রাকাআতে আলহামদু ও সূরা মূলক পড়ে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করে সালাম ফেরায়,এরপর দাঁড়িয়ে আরও দু'রাকাআত পড়ে,প্রথম রাকাআত আলহামদু ও সূরা জুমুআ ও দ্বিতীয় রাকাআতেও এ সূরাই পড়ে,এরপর আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরে;আল্লাহ তায়ালার জন্যে তার প্রয়োজন মেটানো অপরিহার্য হয়ে যাবে।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬২)।
** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ইরশাদ করেন," যে ব্যক্তি রবিবার
রাতে ২০ রাকাআত নামায পড়ে এবং প্রত্যেক রাকাআতে আলহামদুর পর সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক্ব ও নাছ একবার পাঠ করে নিজের পিতা মাতার জন্যে ১০০ বার মাগফিরাতের দোআ করে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ১০০ বার দুরুদ প্রেরণ করে;নিজের শক্তি থেকে পৃথক হয়ে আল্লাহর শক্তির আশ্রয় প্রার্থনা করে,অত:পর বলে," আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ও আশহাদু আন্না আদামু চ্বফওয়াতিল্লাহি ও ফিতরাতাহু ইবরাহিমু খলিলুল্লাহ,ও মুছা কালিমুল্লাহি ও ঈসা রুহুল্লাহ, ও মুহাম্মাদুং চ্বল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়া সাল্লামা হাবিবুল্লাহ।" সে তাদের সংখ্যা পরিমানে সওয়াব পাবে, যারা আল্লাহ তায়ালার আওলাদ আছে বলে বিশ্বাস করে এবং যারা তা বিশ্বাস করে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে শান্তিপ্রাপ্তদের সাথে উঠাবেন এবং জান্নাতে পয়গাম্বরদের দলভূক্ত করবেন।
( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:-১৬৩ - ১৬৪)।
** সোমবার:- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,"যে ব্যক্তি
সোমবার দিন সূর্য উদিত হয়ে কিছু উপরে
উঠার পর দু'রাকাআত নামায পড়ে, প্রত্যেক
রাকাআতে একবার আলহামদু,আয়াতুল কুরছি একবার, ইখলাছ,ফালাক্ব ও নাছ একবার পাঠ করে এবং সালামের পর দশ বার ইস্তিগফার ও দশ বার দুরুদ পাঠ করে,আল্লাহ পাক তার সকল গুনাহ মাফ করে দেন।(ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৪)।
** হযরত আনাছ ইবনে মালেক
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণনাতে রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,যে ব্যক্তি সোমবার দিন ১২ রাকাআত নামায পড়ে,প্রত্যেক রাকাআতে আলহামদু ও
আয়াতুল কুরছি একবার করে এবং নামায
শেষে সূরা ইখলাছ ও ইস্তিগফার ১২ বার পড়ে, তাকে কিয়ামতের দিন অমুকের পুত্র অমুক কোথায়, উঠ এবং তোমার সওয়াব লও বলে আহবান করা হবে।এরপর প্রথম সওয়াব স্বরুপ তাকে এক হাজার বেহেশতী পোষাক দেয়া হবে। তার মাথায় মুকুট রাখা হবে। তাকে
বেহেশতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে।তখন
এক হাজার ফেরেস্তা তার অভ্যর্থনার জন্যে
পৃথক পৃথক হাদিয়া নিয়ে আসবে এবং তার
সাথে সাথে থাকবে।(ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,
পৃ:- ১৬৪)।
** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন," যে ব্যক্তি সোমবার রাতে চার রাকাআত নামায পড়ে,প্রথম রাকাআতে
আলহামদু ও সূরা ইখলাছ দশ বার, দ্বিতীয়
রাকাআতে আলহামদু ও সূরা ইখলাছ ২০
বার,তৃতীয় রাকাআতে আলহামদু ও সূরা ইখলাছ ৩০ বার এবং চতুর্থ রাকাআতে আলহামদু ও সূরা ইখলাছ ৪০ বার পাঠ করে।এরপর সালাম ফিরিয়ে ৭৫ বার সূরা ইখলাছ পড়ে নিজের ও পিতামাতার জন্যে মাগফিরাতের দু'আ করে এবং আল্লাহ তায়ালার নিকট নিজের প্রয়োজন ব্যক্ত করে; তার প্রার্থনা পূর্ণ করা আল্লাহ তায়ালা নিজের উপর অপরিহার্য করে নেন।এ নামাযকে সালাতুল হাজত বলা হয়।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৪)।
** মঙ্গল বার :- হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত,নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,যে ব্যক্তি মঙ্গল বার দিন দ্বিপ্রহরের কাছাকাছি সময়ে দশ রাকাআত নামায পড়ে,প্রত্যেক রাকাআতে আলহামদু, আয়াতুল কুরছি এক একবার এবং সূরা ইখলাছ তিনবার পাঠ করে,তার সত্তর দিনের গুনাহ লিখা হবে না।
সত্তর দিনের মধ্যে সে মারা গেলে শহীদের
মর্যাদা নিয়ে মারা যাবে এবং তার ৭০
বছরের গুনাহ ক্ষমা করা হবে।( ইহইয়াউল
উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৪)।
** মঙ্গল বার রাতে দু'রাকাআত নামায
পড়বে। প্রত্যেক রাকাআতে আলহামদু, সূরা
ইখলাছ,ফালাক্ব ও নাছ প্রতিটি ১৫ বার,
সালামের পর আয়াতুল কুরছি ১৫ বার এবং
ইস্তেগফার ১৫ বার পাঠ করবে।হযরত ওমর
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,যে ব্যক্তি মঙ্গলবার রাতে দু'রাকাআত নামায পড়ে - প্রত্যেক রাকাআতে একবার আলহামদু,সূরা ক্বদর এবং ইখলাছ সাত বার করে পাঠ করে,
আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং কিয়ামতের দিন এ নামায তাকে বেহেশতের দিকে পথ প্রদর্শন করবে।(ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৪)।
** বুধবার :- হযরত মু'আয ইবনে জাবাল
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন," যে লোক বুধবারে দ্বিপ্রহরের পূর্বে ১২ রাকা'আত নামায পড়ে এবং প্রত্যেক রাকা'আতে আলহামদু ও আয়াতুল কুরছি এক একবার, সূরা ইখলাছ তিন বার এবং সূরা ফালাক্ব ও নাছ তিন বার পাঠ করে,তাকে আরশের নিকট থেকে ফেরেশতারা ডেকে বলে, হে আল্লাহর বান্দা! আবার আমল কর। তোমার পূর্ব গুনাহ ক্ষমা করা হয়েছে।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,
পৃ:- ১৬৪)।
** হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা
হতে বর্ণিত,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন," যে লোক বুধবার রাতে
তিন সালাম সহকারে ছয় রাকা'আত নামায
পড়ে,প্রত্যেক রাকা'আতে আলহামদুর পর - "
ক্বুলিল্লাহুম্মা মালিকাল মূলকি"- থেকে দু'আয়াত পর্যন্ত পাঠ করে এবং নামায শেষে
বলে -" যালাল্লহু মুহাম্মাদান 'আন্না মা হুয়া
আহলুহু"। আল্লাহ তার সত্তর বছরের গুনাহ মাফ করবেন এবং তার জন্য জাহান্নাম থেকে
পরিত্রানপত্র লিখে দেবেন। ( ইহইয়াউল
উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৪)।
** বর্ণিত আছে, যে লোক বুধবার রাতে দু'
রাকা'আত নামায পড়ে - প্রথম রাকা'আতে
আলহামদু একবার,সূরা ফালাক্ব ১০ বার এবং
দ্বিতীয় রাকা'আতে সূরা আলহামদুর পর সূরা
নাছ ১০ বার, সালামের পর ১০ পর ইস্তিগফার
এবং ১০ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করে, তার সওয়াব লেখার জন্যে প্রত্যেক আকাশ থেকে ৭০ হাজার ফেরেশতা অবতরন করে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তার সওয়াব লিখতে থাকে। (ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ :- ১৬৪ - ১৬৫)।
** বৃহস্পতি বার:- হযরত ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,"
যে ব্যক্তি বৃহস্পতিবারে যোহর ও আছরের
মাঝে দু' রাকা'আত নামায পড়ে,প্রথম
রাকা'আতে আলহামদু একবার,আয়াতুল কুরছি ১০০ বার এবং দ্বিতীয় রাকা'আতে আলহামদু ১ বার,সূরা ইখলাছ ১০০ বার এবং দুরুদ শরীফ।১০০ বার পাঠ করে, তাকে আল্লাহ তায়ালা সেই লোকের সওয়াব দান করবেন,রজব, শা'বান ও রমযানের রোযা রাখে। তাকে।হজ্বের সমান সওয়াব প্রদান করা হবে। আল্লাহ তায়ালা তার জন্য মুমিন ও
তাওয়াক্কুলকারীদের সংখ্যা পরিমানে সওয়াব লিখবেন।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৫)।
** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণনা,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন," যে লোক বৃহস্পতিবার
রাতে মাগরিব ও এশার মধ্যখানে দু'রাকা'আতে নামায পড়ে,প্রত্যেক
রাকা'আতে আলহামদু ৫ বার,আয়াতুল কুরছি ৫ বার,ইখলাছ ৫ বার,৫ বার করে ফালাক্ব ও
নাছ এবং নামায শেষে ১৫ বার ইস্তিগফার
পাঠ করে,তার সওয়াব পিতা - মাতাকে বখ্শে
দেয়; পিতামাতের হক্ব তার পক্ষ হতে আদায়
হয়ে যায়।যদিও সে পিতামাতার অবাধ্যতা
করে।আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন বস্তু দেবেন,
যা সিদ্দীক ও শহীদগণকে দেবেন।
( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৫)।
** শুক্রবার :- হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত,নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন," জুমু'আর দিন
একটি নামায আছে। যে মুমিন বান্দা সূর্য
পূর্ণরুপে উদিত হওয়ার পর উত্তমরুপে অযু করে ঈমান ও সওয়াবের আশায় চাশতের দু'
রাকা'আত নামায পড়ে,তার জন্য আল্লাহ
তায়ালা ২০০ নেকী লিখেন এবং ২০০ গুনাহ
ক্ষমা করেন। যে চার রাকা'আর নামায পড়ে,
আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তার ৪০০ মর্যাদা উঁচু করে দেন।যে আট রাকা'আত নামায পড়ে,তার ৮০০ মর্যাদা উঁচু করেন এবং সকল গুনাহ মার্জনা করে দেন। আর যে ১২ রাকা'আত পড়ে,তার জন্য ১২০০ নেকী
লিপিবদ্ধ করেন,১২০০ মন্দকর্ম তার আমলনামা থেকে মুছে দেন এবং জান্নাতে ১২০০ মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৫)।
** হযরত ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন," যে লোক জুমু'আর দিন জামে
মসজিদে প্রবেশ করে এবং জুমু'আর আগে চার রাকা'আত নামাযের প্রত্যেক রাকা'আতে
আলহামদু একবার,সূরা ইখলাছ ৫০ বার পাঠ
করে,সে মৃত্যুর সময় বেহেশতে তার ঠিকানা
দেখে নেবে অথবা দেখিয়ে দেয়া হবে।
( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৫)।
** হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম হতে বলেন," যে শুক্রবার রাতে
মাগরিব ও ইশার মধ্যখানে ১২ রাকা'আত
নামায আদায় করে - প্রত্যেক রাকা'আতে
আলহামদু একবার ও ইখলাছ ১১ বার পাঠ
করে,সে যেন আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ১২
বছর পর্যন্ত এভাবে করল,দিনের বেলায়
রোযা রাখলো এবং রাতে নফল নামায পড়ল।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,উজ্জ্বল দিনে আমার প্রতি অধিক দুরুদ পাঠ কর অর্থাৎ, রাতে ও দিনে। ( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৫)।
** শনিবার :- হযরত আবু হুরায়রা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রসূলে করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,"
যে লোক শনিবার দিন চার রাকা'আত নামায
পড়ে,প্রত্যেক রাকা'আতে আলহামদু একবার ও সূরা কাফিরুন ৩ বার এবং নামায শেষে
আয়াতুল কুরছি পাঠ করে,আল্লাহ তাকে তার
জন্যে প্রত্যেক অক্ষরের পরিবর্তে এক হজ্ব
ও ওমরার সওয়াব লিখেন,এক বছরের দিনের
রোযা ও রাতের ইবাদতের সওয়াব দান করেন,
এক শহীদের সওয়াব দেন এবং কিয়ামতে নবী ও শহীদগণের সাথে আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৫)।
** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন," যে শনিবার রাতে মাগরিব ও
ইশার মধ্যখানে ১২ রাকা'আত নামায পড়ে,
তার জন্য জান্নাতে একটি বালাখানা তৈরি করা হবে। সে যেন প্রত্যেক মুমিন পুরুষ
ও নারীকে খয়রাত বন্টন করল। তাকে মাফ
করা আল্লাহ নিজের জন্যে অপরিহার্য করে
নেন।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৫)।
কাযায়ে উমরী
_________
** প্রসিদ্ধ মুফাচ্ছিরে কুর'আন, হাকীমুল
উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান রহমাতুল্লাহি
আলাইহি বর্ণনা করেন,জুমাতুল বিদার দিন
( রমযানের শেষ জুমু'আ) যোহর ও আছরের
নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে ১২ রাকা'আত নফল
নামায দুই দুই রাকা'আত এর নিয়তে পড়বে
এবং প্রত্যেক রাকা'আতে সূরা ফাতিহার পর
একবার আয়াতুল কুরছি ও তিনবার " ক্বুল হু
ওল্লাহ আহাদ" ও একবার সূরা ফালাক্ব ও
একবার সূরা নাছ পড়বে। তার উপকারীতা এই যে,যে পরিমান নামায সে জীবনে কাযা
করে পড়েছে তার কাযা করনের গুনাহ ইনশা
আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা ক্ষমা হয়ে যাবে।একথা নয় যে,কাযা নামায সমূহ তার জিম্মা থেকে রহিত কিংবা ক্ষমা হয়ে যাবে। বরং ঐ নামায সমূহ একমাত্র আদায় করার মাধ্যমেই তার যিম্মা থেকে রহিত হয়ে যাবে।( ইসলামী জিন্দেগী,পৃ:- ১০৫)।
------------
যে ব্যক্তি জীবনে কখনো নামায পড়েনি।
এখন তাওফিক হয়েছে সে " কাযায়ে উমরী"
পড়ে দেয়ার ইচ্ছা করছে। তাহলে সে বালিগ
হওয়ার সময় থেকে নামায সমূহ হিসাব করে
নিবে। আর যদি বালিগ হওয়ার দিন তারিখ
জানা না থাকে, তাহলে সাধারনত: মহিলারা
যেহেতু ০৯ বছরে আর পুরুষেরা ১২ বছরে
বালিগ হয়,সেহেতু ঐ সময় হতে হিসাব করে
কাযা নামায আদায় করবে।( ফাতাওয়ায়ে
রযভীয়্যাহ,খন্ড - ৮ম,পৃ:- ১৪৫)।
---------------------
কাযায়ে উমরী পড়ে দেয়ার সময় এই নিয়মও
পালন করা যায় যে,প্রথমে ফযরের সকল
নামায পড়ে নিবে। অত:পর যোহরের সকল
নামায পড়ে নিবে,অত:পর আছরের,তারপর
মাগরিবের, তারপর ইশার নামায পড়ে নিবে।
( আলমগীরী সম্বলিত ফাতাওয়ায়ে
কাজীখান, খন্ড - ০১,পৃ:- ১০৯)।
---------------------
প্রত্যেক দিনের কাযা হয় মাত্র ২০।রাকা'আত। ফযরের ০২ রাকা'আত,যোহরের ০৪।রাকা'আত,আছরের ০৪ রাকা'আত,মাগরিবের
০৩ রাকা'আত, ইশার ০৪ রাকা'আত এবং
বিতরের ০৩ রাকা'আত - ২০ রাকা'আত।আর
এভাবেই নিয়ত করবে যে,সর্ব প্রথম ফযরের
যে নামায আমার উপর কাযা রয়েছে তা আমি
আদায় করে দিচ্ছি।প্রত্যেক নামাযে এভাবেই নিয়্যত করবে। আর যার যিম্মায়।অধিক নামায কাযা রয়েছে সে সহজের জন্য এভাবে পড়লেও জায়েয হবে যে,প্রত্যেক রুকু ও সিজদাতে ০৩ + ০৩ বার " সুবহানা রব্বিয়াল
'আযিম, সুবহানা রব্বিয়াল আ'লা" পড়ার
পরিবর্তে মাত্র ০১ + ০১ বার পড়বে।কিন্তু
সর্বদা এবং সব রকমের নামাযে ইহা খেয়াল
রাখা বাঞ্চনীয় যে,রুকুতে পরিপূর্ণভাবে
পৌঁছার পরেই " সুবহান" এর চিন শুরু করবে (এর আগে নয়) এবং " 'আযিম " শব্দের মীম পড়া।শেষ করেই রুকু থেকে মাথা উঠাবে।এরুপ সিজদাতেও করতে হবে।সহজতার এক
পদ্ধতিতো ইহা হল।
আর "দ্বিতীয় পদ্ধতি " এই যে,ফরয নামায
সমূহের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকা'আতের মধ্যে "
আলহামদু" পড়ার পরিবর্তে শুধুমাত্র ০৩ তিন
বার সুবহানাল্লাহ পড়ে রুকুতে চলে যাবে।
কিন্তু বিতরের প্রত্যেক রাকা'আতেই " আলহামদু" এবং সূরা অবশ্যই পড়তে হবে। "
তৃতীয়" সহজতর পদ্ধতি এই যে, শেষ বৈঠকে
তাশাহুদ অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাত এর পরে উভয়
দুরুদ শরীফ এবং " দু'আয়ে মাছুরার পরিবর্তে
শুধু " আল্লহুম্মা চ্বল্লি 'আলা মুহাম্মাদিঁও ও
আলিহী " পরে সালাম ফিরিয়ে নিবে। "
চতুর্থ" সহজতর পদ্ধতি " এই যে,বিতরের তৃতীয় রাকা'আতের মধ্যে দু'আয়ে কুনুত এর পরিবর্তে।" আল্লাহু আকবার" বলে মাত্র একবার কিংবা তিনবার " রব্বিগফিরলী" পড়ে নিবে।(ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ হতে সংগৃহীত,খন্ড - ০৮,পৃ:- ১৫৭,রযা ফাউন্ডেশন,
লাহোর।নামাযের আহকাম ( হানাফী), পৃ:- ২৪৬ - ২৪৯ পর্যন্ত,প্রায় একই নিয়ম বর্নিত
হয়েছে,ইরশাদাত - ই আলা হযরত
রহমাতুল্লাহি আলাইহিতে,পৃ :- ২২)।
জুমু'আর দিনের ফযীলত ও আমল
______________
** হযরতে হুমাইদ ইবনে আব্দুর রহমান
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইরশাদ করেন; " যে ব্যক্তি জুমার দিন তার নখ কাটে, আল্লাহ তায়ালা তার শরীর থেকে রোগ ব্যাধি বের করে তাতে সুস্থতা প্রবিষ্ট করান।"( মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বা,খন্ড -০২,পৃ:- ৬৫,নামাযের আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ২৯৭)।
** হযরতে সায়্যিদুনা সালমান ফারসী
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,সুলতানে দু -
জাহান, শাহান শাহে কওনো মাকান, রহমতে
আলামিয়ান সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আলীশান ফরমান হচ্ছে," যে।ব্যক্তি জুমার দিন গোছল করে,যথাসাধ্য পবিত্রতা - পরিচ্ছন্নতা অর্জন করে,তৈল মালিশ করে, ঘরে খুশবু যা পায় তা লাগায়,অত:পর নামাযের জন্য ঘর থেকে বের।হয় এবং পাশাপাশি বসা দুইজন ব্যক্তিকে সরিয়ে তাদের মাঝখানে না বসে।তার উপর ফরযকৃত জুমার নামায আদায় করে এবং ইমাম।খুৎবা দেয়ার সময় চুপ হয়ে বসে থাকে, তাহলে
তার এই জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী
সময়ের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
( সহীহ বুখারী,খন্ড - ০১,পৃ:- ১২১,নামাযের
আহকাম ( হানাফী), পৃ:- ৩০৫)।
** হযরতে সায়্যিদুনা সিদ্দীকে আকবর,
হযরতে সায়্যিদুনা ইমরান বিন হাসীন
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম বর্ণনা করেন যে,
তাজেদারে মদিনায়ে মুনাওওয়ারা, সুলতানে মক্কায়ে মুকাররমা সাল্লাল্লাহু।আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন," যে।ব্যক্তি জুমার দিন গোছল করে তার পাপ ও।ত্রুটি সমূহ মুছে দেয়া হয় এবং যখন ( মসজিদ পানে) চলতে থাকে তখন প্রতিটি কদমে ২০টি নেকী লিখা হয়।
অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, প্রত্যেক কদমে ২০
বছরের আমলের ( সাওয়াব) লিখা হয়।( আল
মু'জামুল আওসাত লিত তাবরানী,খন্ড -
০২,হাদীস নং - ৩৩৯৭,পৃ:-৩১৪), আর যখন নামায শেষ করে তখন ২০০ বছরের ইবাদতের সওয়াব মিলবে।( আল মু'জামুল আওসাত লিত তাবরানী,খন্ড - ১৮,হাদীস নং-২৯২,পৃ:-১৩৯, নামাযের আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ৩০৬)।
** হযরতে সায়্যিদুনা আবু উমামা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, সুলতানে দু
জাহান, শাহান শাহে কওনো মাকান, রহমতে
আলামিয়ান সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আলিশান ফরমান," যে ব্যক্তি জুমার নামায পড়ে ঐ দিন রোযা রাখে,কোন অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করে,কোন জানাযায় উপস্থিত হয়, কারো বিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করে, তবে ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।( আল মু'জামুল কবীর,খন্ড - ৮ম,হাদীস নং- ৭৪৭৪, পৃ:- ১৯৭,নামাযের আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ৩০৯)।
** সারকারে আলা হযরত ইমাম আহমদ রযা খাঁন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন," বর্ণিত
আছে যে, জুমাবারের রোযার সাথে বৃহস্পতিবার অথবা শনিবার রোযা মিলিয়ে
রাখলে দশ হাজার বছরের রোযার সমান
সাওয়াব পাওয়া যায়।" ( ফাতাওয়ায়ে
রযবীয়্যাহ,নতুন সংস্করন,খন্ড - ১০, পৃ:- ৬৫৩,
নামাযের আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ৩১০)।
** ইমামুল আনসার ওয়াল মুহাজিরীন,
মুহিববুল ফোকারায়ে ওয়াল মাসাকীন,
রহমাতুল্লীল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর দিলন শীন ফরমান হচ্ছে, "
যে ব্যক্তি জুমার রাতে ' সূরা হা - মীম আদ
দুখান ' পাঠ করবে,তার জন্য সত্তর হাজার
ফিরিশতা ক্ষমা প্রার্থনা করবে।( জামে
তিরমিযী,খন্ড -০৪,হাদীস নং- ২৮৯৭,
পৃ:- ৪০৬,নামাযের আহকাম ( হানাফী),
পৃ:- ৩১৩)।
** সারকারে নামদার,উভয় জাহানের
মালিকো মুখতার,শাহান শাহে আবরার
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুগন্ধময় ফরমান হচ্ছে," যে ব্যক্তি নিজ পিতা - মাতা উভয়ের কিংবা একজনের কবরে প্রত্যেক জুমাবার দিন যিয়ারতের জন্য উপস্থিত হয়,আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং পিতা - মাতার সাথে সদ্ব্যবহারকারী হিসেবে লিখা হয়।
(ইমাম তিরমিযী রচিত নাওয়াদেরুল উসূল পৃ:- ২৪,নামাযের আহকাম (হানাফী),
পৃ:-৩১০)।
** হুজুরে আকরাম,নূরে মুজাচ্ছাম,শাহে
বনী আদম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,"যে ব্যক্তি জুমার দিন স্বীয় পিতা মাতা উভয়ের কিংবা একজনের কবর যিয়ারত করবে এবং কবরের পাশে সূরা
ইয়াসীন পাঠ করে করবে,তাকে ক্ষমা করে
দেয়া হবে।( ইবনে আদি রচিত আল কামিল,
খন্ড - ০৫,পৃ:- ১৮০১,নামাযের আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ৩১০)।
** সুলতানে হারামাঈন, রহমতে।কাওনাঈন,নানায়ে হাসানাইন সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা এর প্রশান্তিমূলক ফরমান হচ্ছে,"যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমার দিন স্বীয় পিতা - মাতা উভয়ের কিংবা একজনের কবর যিয়ারত করে তথায় সূরা ইয়াছিন পাঠ করবে,আল্লাহ তায়ালা তাকে সূরা ইয়াছিন শরীফে যতটি।অক্ষর আছে ততটি ক্ষমা প্রদর্শন করবেন।
(ইত্তেহাফুল সাদাতিল মুত্তাকিন,খন্ড - ১০,পৃ:- ৩৬৩,নামাযের আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ৩১০ - ৩১১)।
** হযরতে সায়্যিদুনা আনাছ বিন মালিক
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,সুলতানে দু
জাহান,শাহান শাহে কওনো মাকান,রহমতে
আলামিয়ান সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাগফিরাত নিশান ফরমান হচ্ছে," যে ব্যক্তি জুমার দিন ফযরের নামাযের পূর্বে তিনবার -" আছতাগ ফিরুল্লহাল্লাযী।লা ইলাহা ইল্লা হুয়া ও আতুবু ইলাইহি।" পাঠ করবে তার যাবতীয় গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের বিশালতার চেয়েও অধিক হয়।( মাজমাউয যাওয়ায়েদ,খন্ড - ০২,হাদীস নং- ৩০১৯,পৃ:- ৩৮০,নামাযের আহকাম (হানাফী),পৃ:- ৩১৩ - ৩১৪)।
** হযরতে সায়্যিদুনা সামুরা ইবনে জুনদূব
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,হুজুর সা - রা
পা নূর, ফয়যে গাঞ্জুর,শাহে গাইয়ুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন," তোমরা খুৎবা পাঠের সময় উপস্থিত থাকো এবং ইমামের সন্নিকটে থেকেই তা শ্রবণ কর। কেননা খুৎবা পাঠের সময় যে ইমাম থেকে যতটুকু পরিমানে দূরত্বে থাকবে, সে জান্নাতেও ততটুকু পরিমান পিছনে থাকবে। যদিও সে ( অর্থাৎ, মুসলমান) নিশ্চিত জান্নাতে প্রবেশ করে না কেন।( আবু দাউদ,খন্ড - ১ম,হাদীস নং- ১১০৮,পৃ:- ৪১০,নামাযের আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ৩১৭)
** বুজুর্গানে দ্বীন রহিমাহুমুল্লাহু তায়ালা বলেছেন,দু জানু হয়ে বসে খোৎবা শ্রবণ করুন। প্রথম খোৎবায় ( নামাযের মত)
হাত বেধেঁ এবং দ্বিতীয় খোৎবায় রানের উপর হাত রেখে খোৎবা শুনলে ইনশা আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা দুই রাকা'আত নামাযের
সাওয়াব পাওয়া যাবে।( মিরাত শরহে
মিশকাত,খন্ড - ২য়, পৃ:- ৩৩৮,নামাযের আহকাম( হানাফী),পৃ:- ৩২০)।
** তাফসীরে আযীযীতে বর্ণিত আছে
যে,হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেছেন,"যে ব্যক্তি প্রতি জুমু'আ এর
রাতে সূরা বকর বা বাক্বারা ও আল - ইমরান
পড়বে,সে এ জন্য এত বেশী সওয়াব পাবে
যে,তাতে" বা'য়িদাতা" ( এটা যমীনের সাত
স্তরের সর্বনিম্ন স্তর) হতে " আরুবা" " সপ্ত
আসমান) পর্যন্ত পূর্ণ হয়ে যাবে।( তাফাসীরে
নাঈমী,খন্ড - ১ম,পৃ:- ২১৫)।
** হযরত ইবনে আব্বাস ও আবু হুরায়রা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত আছে, যে
ব্যক্তি জুমু'আর দিনে বা রাতে সূরা কাহাফ
তিলাওয়াত করে,তাকে তার দুরুদ পড়ার স্থান
হতে মক্কা শরীফ পর্যন্ত নূর দান করা হয়
এবং দ্বিতীয় জুমু'আ সহ আরও অতিরিক্ত তিন দিনের মাগফিরাত করা হয়।সত্তর হাজার
ফেরেশতা পরদিন ভোর পর্যন্ত তার উপর রহমত প্রেরণ করে।সে পেটের ব্যথা,ফোঁড়া,
বাত,কুষ্ঠ ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে
নিরাপদ থাকে।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,
পৃ:-১৫৯)।
** (তাবেয়ী) হযরত মাকহুল রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু বলেছেন,যে ব্যক্তি জুমু'আর দিন সূরা
আলে ইমরান পড়বে,ফেরেশতাগণ তার জন্য
রাত পর্যন্ত দো'আ করতে থাকবেন।
(দারেমী শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং-
২০৬৮,পৃ:- ৩১৮)।
জানাযার নামায ও এর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের
ফযীলত
_______________
** হযরতে সায়্যিদুনা দাউদ আলাইহিস
সালাম আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা এর মহান
দরবারে আরয করলেন," হে আল্লাহ আযযা
ওয়া জাল্লা! যে ব্যক্তি শুধু তোমার সন্তুষ্টি
অর্জনের জন্য জানাযার সঙ্গে অবস্থান
করেছে তার প্রতিদান কি? আল্লাহ আযযা
ওয়া জাল্লা ইরশাদ ফরমান," যে দিন সে
মৃত্যুবরন করবে,সে দিন ফিরিশতাগণ তার
জানাযার সঙ্গে চলবেন এবং আমি তাকে
ক্ষমা করে দেব।( শরহুস সূদুর,পৃ:- ১০১,নামাযের আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ২৮০)।
** হাদীসে পাকে রয়েছে যে,যার
( জানাযার) নামায তিন কাতারে পড়েছে তার গুনাহ সমূহ ক্ষমা হয়ে যাবে।( জামে তিরমিযী,
খন্ড - ১ম,পৃ:- ২২,নামাযের আহকাম
( হানাফী),পৃ:-২৮৬)।
** হাদীসে পাকে রয়েছে, যে ব্যক্তি
জানাযাকে নিয়ে চল্লিশ কদম চলবে তার
চল্লিশটি কবিরা গুনাহ মুছে দেয়া হবে।( আত
- তাবরানী ফীল আওসাত,খন্ড - ৪র্থ,হাদীস
নং- ৫৯২০,পৃ:- ২৬০,নামাযের আহকাম
(হানাফী),পৃ:-২৮৮)।
**হাদীস শরীফে এটাও রয়েছে যে,যে ব্যক্তি
জানাযার চারটি পায়াকে কাঁধে নিবে, আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা তাকে একেবারে পরিপূর্ণ ক্ষমা করে দিবেন।( আল।জাওহারাতুন নাইয়ারাহ,খন্ড - ১ম,পৃ:- ১৩৯,নামাযের আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ২৮৮)।
** হযরতে সায়্যিদুনা মালিক বিন আনাছ
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ইন্তেকালের পর কেউ
তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করল " মা
ফা'আলাল্লাহ বিক" অর্থাৎ - আল্লাহ তায়ালা আপনার সাথে কিরুপ আচরন করেছেন? বললেন," একটি বাক্যের কারণে ক্ষমা করে দিয়েছেন,যা হযরতে সায়্যিদুনা ওসমান গনী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু জানাযাকে দেখে বলতেন,বাক্যটি হলো," ছুবহানাল হাইয়িল্লাযী লা ইয়ামুতু" ( অর্থাৎ, ঐ পুত: পবিত্র সত্তা যিনি জীবিত,যিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না।) সুতরাং আমিও জানাযা দেখে এরুপ বলতাম,
আর এ বাক্য বলার কারণে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।( ইহইয়াউল উলুম থেকে সংগৃহীত,খন্ড - ৫ম,পৃ:- ২৬৬,নামাযের আহকাম (হানাফী),
পৃ:-২৮২)।
** হযরতে মাওলায়ে কায়েনাত সায়্যিদুনা
আলী মুরতাজা,শেরে খোদা কাররমাল্লাহু
ওজহাহুল কারীম থেকে বর্ণিত আছে
যে,সুলতানে দু 'জাহান,শাহান শাহে কওনো
মাকান,রহমতে আলামিয়ান সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,যে
কোন মৃত ব্যক্তিকে গোছল দেয়, কাফন
পরায়,সুগন্ধি লাগায়,জানাযা কাঁধে উঠায়,
নামায আদায় করে এবং ( মৃত ব্যক্তির)
যে সব মন্দগুন দৃষ্টিগোচর হয় তা গোপন
রাখে,সে গুনাহ হতে এমনভাবে পবিত্র হয়ে
যায় যেভাবে যেদিন সে তার মাতৃগর্ভ থেকে
ভূমিষ্ট হয়েছিল।( সুনানে ইবনে মাজাহ,খন্ড -
২য়,হাদীস নং- ১৪৬২,পৃ:- ২০১,নামাযের আহকাম (হানাফী),পৃ:- ২৮১)।
** এক ব্যক্তি হযরতে সায়্যিদুনা সিররী
সাক্বতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ করলেন।রাতে ঐ ব্যক্তির স্বপ্নে হযরতে সায়্যিদুনা সিররী; সাক্বতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর যিয়ারত নসীব হল। তখন তিনি প্রশ্ন করলেন," মা ফা'আলাল্লাহু বিক"- অর্থাৎ, আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা আপনার সাথে কিরুপ আচরন করেছেন? উত্তর দিলেন,আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা আমাকে এবং আমার জানাযার নামাযে অংশগ্রহণকারী সবাইকে ক্ষমা করে।দিয়েছেন।ঐ ব্যক্তি আরয করলেন, ইয়া
সায়্যিদী! আলাইহি রহমাহ।আমিও তো
আপনার জানাযায় অংশগ্রহণ করে জানাযার
নামায পড়েছিলাম।তখন তিনি রহমাতুল্লাহি
আলাইহি, একটি লিষ্ট বের করলেন,কিন্তু
এতে ঐ ব্যক্তির নাম অন্তর্ভূক্ত ছিল না।যখন
গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করে দেখলেন,তখন
দেখা গেল তার নাম লিষ্টের পার্শ্বটিকাতে
ছিল।( শরহুস সূদুর,পৃ:- ২৭৯,নামাযের আহকাম (হানাফী),পৃ:-২৭৭)
** হযরতে সায়্যিদুনা বিশর হাফী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর ইন্তেকালের পর
ক্বাসিম বিন মুনাব্বিহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি স্বপ্নের মধ্যে তাঁকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন," মা ফা'আলাল্লাহু বিক"- অর্থাৎ,আল্লাহ আপনার সাথে কিরুপ আচরন করেছেন? উত্তরে বললেন,আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা আমাকে ক্ষমা করে নিয়েছেন এবং ইরশাদ করেছেন," হে বিশর! শুধু তোমাকে নয়
বরং তোমার জানাযাতে অংশগ্রহণকারী
সবাইকেও আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। " তখন
আমি আরয করলাম,ইয়া রব আযযা ওয়া
জাল্লা! আমাকে যারা ভালবাসে।তাদেরকেও ক্ষমা করে দিন। তখন আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা এর দয়ার সাগরে জোয়ার আসলো এবং বললেন,(শুধু বর্তমানে নয় বরং) কিয়ামত পর্যন্ত যারা তোমাকে ভালবাসবে
তাদের সবাইকে আমি ক্ষমা করে দিলাম।
( শরহুস সূদুর,পৃ:- ২৭৫,নামাযের আহকাম
( হানাফী),পৃ:-২৭৭)।
** ইমাম কুশায়রী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
এক বুযুর্গ ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেছেন,যিনি প্রথমে কাফন চোর ছিলেন।।তিনি বলেন,এক মহিলার ইন্তেকাল হল।মানুষেরা তার জানাযার নামায পড়েছে এবং ঐ কাফন চোরও পড়ল। দাফনের সময়ও সঙ্গে রইলো যাতে কবর চিনতে পারে।যখন রাতের অন্ধকার হয়,সে মেয়েটির কবর খনন করে,তখন মেয়েটি কবরের ভিতর থেকে বলল : - ছুবহানাল্লাহি রজুলুম মাগফুরুঁই ইয়াআ খুযু কাফনা মাগফুরাতিং ক্বলা ফাক্বুলতু হাব।আন্নাহু গফারালাকি ফাআনা মাগফুরুং ফাক্বলাত ইন্নাল্লাহা গাফারালি ওলি জামি'য়ি মাং চ্বল্লা 'আলাইয়্যা ও আংতা ক্বদ চ্বল্লাইতা 'আলাইয়্যা ফাতারাকাহা ও রদ্দাত তুরাবা ছুম্মা তাবা ও হাছুনাত তাওবাতুন - " সুবহানাল্লাহ! মাগফিরাত ( ক্ষমা) প্রাপ্ত একজন পুরুষ মাগফিরাত প্রাপ্ত একজন মহিলার কাফন নিচ্ছে? সে বলল,মানলাম আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন কিন্তু আমাকে কিভাবে ক্ষমা করা হল ( আমি তো একজন কাফন চোর)! তখন মহিলাটি বললো,আল্লাহ তায়ালা তোমাকে এবং সে সমুদয় লোককে ক্ষমা করে
দিয়েছেন,যারা আমার নামাযে জানাযা
পড়েছে এবং তুমিও আমার নামাযে জানাযা
পড়েছো।তখন সে তাকে ছেড়ে দিয়ে মাটি
সমান করে দিল।তারপর সে তাওবা করে নেয়।তার তাওবা খুবই সুন্দর হয়েছে।( শরহে সুদূর, পৃ:-৮৬,যিকর - ই জামিল,পৃ:-১১৯ - ১২০)।
__________________
ফয়যানে শরিয়ত ও মারফত (আমলের ভান্ডার)
লেখক : মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন