সহিহ হাদিসের আলোকে কদমবুছি বা পদচুম্বন (২)

 

সহিহ হাদিসের আলোকে কদমবুছি বা পদচুম্বন (২)


হাদিস নং ৬

এ সম্পর্কে আরেকটি রেওয়াত লক্ষ্য করুন,

عن زيد بن ثابت قال: دخل سعد بن عبادة على رسول الله . صلى الله . عليه وسلم ومعه ابنه فسلم ، فقال رسول الله . صلی الله عليه وسلم: ههنا ههنا وأجلسه عن يمينه ، وقال: مرحبا بالأنصارا وأقام ابنه بين يدي رسول الله صلی الله عليه وسلم ، فقال رسول الله صلی الله عليه وسلم: "اجلس فجلس فقال: "ادن ، فدنا فقبل يدي رسول الله صلى الله عليه وسلم ورجله ،



-"হজরত জায়েদ ইবনে ছাবেত (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: হজরত সা'দ ইবনে উবাদা (رضي الله عنه) ও তাঁর সন্তান সহ রাসূল (ﷺ) এর কাছে গেলেন ও সালাম পেশ করলেন। রাসূল (ﷺ) বললেন: এখানে ডানদিকে বসুন। এবং আরাে বললেন: আনছারদেরকে স্বাগতম! অত: পর তার সন্তান রাসূল (ﷺ) এর সামনে দাঁড়ালেন ফলে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেন ; তুমি বস! ফলে সে বসল ও দয়াল নবীজির অনুমতিক্রমে কাছে গেল এবং রাসূল (ﷺ) এর হস্ত ও পদচুম্বন করল। (ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩৭৯৩৫ ; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ৩৭৮৩৪ ; তারিখে ইবনে আছাকির।



হাদিস নং ৭



عن صفوان بن غالي ، أين يهويريني قال أحدهما لصاحبه: اذهب بنا إلى هذا التي تسأله ، فقال: لا تقل له تئ فإنه إن معها قول تي كانت له أربعة أغني ، أيها النبي صلى الله عليه وسلم فسألاه عن قول الله ع وجل { ولقد آتينا موسى تسع آيات بينات} فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "شروا بالله شيئا ، ولا تﺅنوا ، ولا تقتلوا النفس التي حرم الله إلا بالحق ، ولا ترقوا ، ولا تشتروا ، ولا تمشوا بريء إلى شطاني يقتله ، ولا تأكلوا الربا ولا تقوا حضنة ، ولا تفتروا من الف ، شل شعبه ، وعليكم اليهود اللہ اللہ تعتدوا في البي فق يديه ورجلي قالا . تشهد أنك تي هذا حديث حسن صحيح



-"হজরত ছাফওয়ান ইবনে আছছাল (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নিশ্চয় দুইজন ইহুদী তারা একে অপরকে বলল: আমরা এই নবী পাক (ﷺ) এর কাছে যাব ও কিছু জিজ্ঞাসা করব। অতঃপর জিজ্ঞাসিত লােকটি বলল, আমি নবী (ﷺ) কে কিছুই বলব না, অতঃপর তারা নবী পাক (ﷺ) এর কাছে। আসল ..... তােমাদের ইহুদীরা শনিবারে মাছ শিকার করবেনা। অত: পর তারা রাসূল (ﷺ) হস্ত ও পদচুম্বন করলেন এবং বললেন: আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আল্লাহর নবী। এই হাদিস হাছান-সহিহ।"


(তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ৩১৪৪ ; মুসনাদে আবু দাউদ ভূয়ালুছী, হাদিস নং ১২৬০ ; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১৮০৯২ ; ইমাম বায়হাকী ; সুনানে কুবরা, হাদিস নং  ১৬৬৭৩ ; তাহাবী শরহে মাআনিল আছার, ৩ য় খন্ড, ২১৫ পৃঃ ; নাসাঈ শরীফ, হাদিস নং ৪০৭৮ ; ইমাম নাসাঈ: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ৩৫৪১ ; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৭০৫ ; ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৭৩৯৬ ; মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, ২৬২০৭ ; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ২০ ; ইমাম বায়হাকী: দালায়েলুন নবুয়াত, ৬ ষ্ঠ খন্ড, ২৬৯ পৃঃ ; হাফিজ ইবনে কাছির মুজিজাতুন্নবী, ১ ম খন্ড, ২১৯ পৃ:; ইমতাউল আসমা, ১৪ তম খন্ড, ৮২ পৃঃ ; ইমাম ইবনে ছালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৩ য় খন্ড, ৪০৩ পৃ:; ছিরাতে হলভিয়া, ২ য় খন্ড, ১৫১ পৃ:)



ইমাম তিরমিজি (رحمة الله), ইমাম হাকেম নিছাপুরী, (رحمة الله), ইমাম ছিয়তী (رحمة الله) প্রমূখ হাদিসটিকে  ' সহিহ ' বলেছেন।



সুতরাং সহিহ হাদিস দ্বারা আবারাে প্রমাণ হল, রাসূল পাক (ﷺ) কদমবুছী গ্রহণ করেছেন। আর স্বয়ং দ্বীনের নবী রাসূলে পাক (ﷺ) যা গ্রহণ করেছেন তার বিরুদ্ধে কথা বলা মূলত রাসূল (ﷺ) এর বিরুদ্ধে কথা বলা রই নামান্তর। এ বিষয়ে আরেক রেওয়াতে আছে,



হাদিস নং ৮



حدثنا محمد بن الحسين ، قال: ثنا أحمد بن مفضل ، قال: ثنا أشباط ، عن الشدي قال: غضب رسول الله صلى الله عليه وسلم يوما من الأيام قام خطيبا ، فقال: سوني فإنكم لا تسألوني عن شيء إلا أنتم به ، قام إليه رجل من قريش من بني سهم قال له عبد اللب ځقة ، وكان يطعن فيه ، قال: فقال يا رشول الله من أبي ؟ قال: أبوك فلا ، فدعاه لأبيه ، فقام إليه غمر فقبل رجله وقال: يا رسول الله رضينا بالليرا ، وبك تبيها ، وبالإسلام دينا ، وبالقرآن إماما ، قاله مما مما اللعنك ،



"হজরত সুদ্দী (رحمة الله) বলন: আল্লাহর রাসূল (ﷺ) একদিন রাগাম্বিত অবস্থায় খুতবায় দাঁড়িয়ে বললেন: আমাকে জিজ্ঞাসা কর, তােমরা যা যা প্রশ্ন করবে আমি সব কিছুই বলে দিব। অত: পর কুরাইশদের বনী ছাহম গােত্রের একজন লােক যাকে ‘ আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাইফা ' বলা হয়, তিনি দাঁড়ালেন এবং বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা কে? দয়াল নবীজি (ﷺ) বললেন: তােমার পিতা ‘ অমুক ' অত: পর সে তার পিতাকে ডাকলেন। অত: পর হজরত উমর (رضي الله عنه) (ভয়ে) প্রিয় নবীজির প্রতি দাঁড়ালেন এবং প্রিয়  নবীজি (ﷺ) এর কদম মােবারকে চুম্বন করলেন, এবং বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আল্লাহকে রব হিসেবে, আপনাকে নবী হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে, কোরআনকে ইমাম হিসেবে পেয়ে খুশি। আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহর তরফ থেকে আমাদেরকে ক্ষমা করবেন।"


(তাফছিরে তাবারী শরীফ, ৭ ম খন্ড, ৮৯ পৃ: হাদিস নং ১২৮০১ ; তাফছিরে ইবনে আবী হাতেম, হাদিস নং ৬৮৮২ ; তাফছিরে দুর্রে মানছুর, ৩ য় খন্ড, ২০৫ পৃঃ ; তাফছিরে ইবনে কাছির, ৩ য় খন্ড, ২০৫ পৃ: সূরা মায়েদার ১০১ নং আয়াতের তাফছিরে ; ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ২৫ তম খন্ড, ৩৪ পৃ:; ইমাম কাস্তালানী: এরশাদুছ ছারী শরহে বুখারী, ১০ ম খন্ড, ৩১১ পৃ:; ইমাম আসকালানী: ফাতহুল বারী, ১৩ তম খন্ড, ২৭০ পৃ: ৭২৯২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়।



হাদিসটি মুরছালি সহিহ।  ছিব্বাহ রাবীর মুরছাল রেওয়াত হুজ্জত বা দলিল হিসেবে স্বীকৃত। (তাদরবির রাবী। সুতরাং জানা গেল, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (رضي الله عنه) হজরত রাসূলে পাক (ﷺ) এর কদমবুছী করেছেন। এ সম্পর্কে আরেকটি রেওয়াত লক্ষ্য করুন,



হাদিস নং ৯



حدثنا إبراهيم بن عبد الله بن الجنيد ، ومحمد بن يزيد ، قالا: حدثنا عبد العزيز بن الخطاب ، قال: حدثنا حبان بن علي ، قال: حدثنا صالح بن حيان ، عن عبد الله بين بريدة ، عن بريدة سأل أغراب النبي صلى الله عليه وسلم آيه فقال له: قل تلك الشجرة شول الله صلى الله عليه وسم يغولي قال: قال الشجرة عن يمينها ومالها وبين يديها وخلفها فتقطعت غوها ثم جاء ځد الأرض تج غروقها مغبرة حتى وقف بين يدي رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: السلام عليك يا شول الله . فقال الأعرابي ان لي أجد الك .. قال: لو أمرت أحدا أن يسجد لأي أمين المرأة أن تسجد لزوجها .. قال فأذن لي أن أقبل يديك ورجليك .. فأذن له .



-"হজরত বুরাইদা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, একদা এক আরাবী লােক রাসূলে পাক (ﷺ) এর কাছে একটি নিদর্শন চাইলেন। দয়াল নবীজি (ﷺ) বললেন ; ঐ গাছটিকে বল, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাকে ডেকেছে। অত: পর সে তাই করল এবং ঐ গাছটি ডানে-বামে সামনে-পিছনে ঝুকে পরলেন ও শিকর ভেঙ্গে উড়ে এসে নবী করিম (ﷺ) এর সামনে দাঁড়ালেন। অত: পর গাছটি বলতে লাগল ; আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ! ... তখন আরাবী লোকটি বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন যেন আপনাকে সেজদা করি। প্রিয় নবীজি বললেন: যদি আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সেজদা করার অনুমতি থাকত তবে প্রত্যেক স্ত্রীকে তার স্বামীর প্রতি সেজদা করার অনুমতি দিতাম। আরাবী লােকটি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে আপনাকে কদমবুছী করার অনুমতি দিন। অতঃপর প্রিয় নবীজি (ﷺ) তাকে অনুমতি দিলেন।"


(কাজী আয়্যায: শিফা শরীফ, ১ ম খন্ড, ৫৭৪ পৃঃ ; মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস নং ৪৪৫০ ; মাদারেজুন নবুয়াত ; ইমাম মােল্লা আলী: শরহে শিফা, ১ ম খন্ড, ৬১৯ পৃঃ ; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৭৩২৬)



ইমাম হাকেম (রাহঃ) হাদিসটিকে সহিহ ' বলেছেন বলেছেন। এর সনদটি হচ্ছে,



حدثنا إراهيم بن عبد الله بن الجيد ، ومحمد بن يزيد ، قالا: حدثنا عبد الخطاب ، قال: حدثنا حبان بن علي ، قال: حدثنا صالح بن حيان ، عن عبد الله بن بريدة ، عن أبيه ، رضي الله عنه ، قال جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم .....



অতএব, উল্লেখিত হাদিস গুলাে দ্বারা প্রমাণ হয়, স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কদমবুছীর পক্ষে ছিলেন। তাই যারা কদমবুছীর পক্ষে তারা মূলত রাসূলে পাক (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে এবং যারা কদমবুছীর বিপক্ষে তারা মূলত রাসূলে পাক (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের বিপক্ষে এবং চরম পথভ্রষ্ট। উল্লেখ্য যে, কদমবুছীর বিষয়ে মােট ৭ জন সাহাবী ও একজন তাবেঈর বর্ণিত হাদিস পাওয়া যায় এবং এর অধিকাংশই সহিহ্ রেওয়াত। সুতরাং কদমবুছীর বিষয়টি মশহুর ' পর্যায়ের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আফছুছের বিষয় হল, মশহুর ’ পর্যায়ের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পরেও ওহাবীরা এই আমলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে (নাউজুবিল্লাহ। আল্লাহ পাক তাদেরকে হেদায়েত দান করুন।

_______________

সহিহ হাদিসের আলােকে মাজার যিয়ারত পূজা নয় ও কদমবুছির সমাধান

গ্রন্থনায়ঃ  মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দিন জিহাদী 

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন