বালা - মুসিবত,সাহায্য ও নিরাপত্তা
** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া।সাল্লাম বলেছেন,যে ব্যক্তি কোন মু'মিনের দুনিয়ার কষ্টসমূহ হতে কোন ( সামান্য) একটি কষ্টও দূর করে দিবে,আল্লাহ তায়ালা তার কিয়ামতের দিনের কষ্টসমূহের মধ্য হতে একটি (ভীষণ) কষ্ট দূর করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্থ লোকের অভাব ( সাহায্যের দ্বারা) সহজ করে দিবে,আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তার অভাব সহজ করে দিবেন এবং যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে (তার দোষ বা দেহ) ঢেকে রাখবে,আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তাকে ( অর্থাৎ তার দোষ বা
দেহকে) ঢেকে রাখবেন।আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষন সে তার (মুসলীম) ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষন করার উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করে,আল্লাহ তায়ালা তার দ্বারা তার বেহেশতের পথ সহজ করে দিবেন।
এবং যখনই কোন একটি দল আল্লাহর ঘরসমূহের মধ্যে কোন একটি ঘরে ( যেমন - মসজিদ ও মাদরাসায়) একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ।করতে থাকে এবং পরস্পর তার আলোচনা করতে থাকে,তখনই ( আল্লাহর পক্ষ হতে) তার উপর স্বস্তি ও শান্তি অবতীর্ণ হতে আরম্ভ করে এবং ( আল্লাহর) রহমত তাদের ঢেকে।ফেলে।ফেরেশতাগণ তাদের ঘিরে নেয় এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিকট যারা (ফেরেশতাগণ) আছেন তাঁদের নিকট তাদের উল্লেখ করেন।আর যার আমল তাকে পিছিয়ে দেয়,তার বংশ তাকে এগিয়ে দিতে পারে না।( মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ,
হাদীস নং- ১৯৪,পৃ:- ৭২)।
** ছদরুশ শরী'আ,বদরুত তরীক্বা, আল্লামা মাওলানা আমজাদ আলী আজমী
রহমাতুল্লাহি আলাইইহি বলেন,হাদীসে বর্ণিত
আছে,যে ব্যক্তি জুমার দিন নখ কাটবে
আল্লাহ তায়ালা তাকে দ্বিতীয় জুমা ও
তৎপরবর্তী আরো তিনদিনসহ সর্বমোট দশ দিন পর্যন্ত যাবতীয় বালা - মুসিবত থেকে রক্ষা
করবেন।( ইবনুল কায়সারানী রচিত
তাজকিরাতুল মওজু'আত,হাদিস নং - ৮৬৫)
অপর এক বর্ণনায় আছে যে,যে ব্যক্তি জুুমার
দিন নখ কাটবে, তাঁর নিকট রহমতের আগমন ঘটবে এবং তার পাপরাশি দূরীভূত হবে।
(তানযিয়াতুস শরী'আতিল মারফু'আ, খন্ড -
০২,পৃ:- ২৬৯,বাহারে শরীআত,খন্ড - ১৬ম,পৃ:-
১৯৫,নামাযের আহকাম ( হানাফী), পৃ:- ২৯৭
২৯৮)।
** বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলী
ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মিরকাতুল
মাফাতীহ" গ্রন্থে লিখেছেন যে,যে কোন
বিপদের সময় সহীহ বুখারী শরীফের খতম পড়া হলে ওই বিপদ দূর হয়ে যায়।যে নৌযানে সহীহ বুখারী শরীফ থাকবে ওই নৌযান নবীবক্ষে কখনো ডুববে না।হাফিয ইবনে কাসীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,অনাবৃষ্টি
কালে সহীহ বুখারী শরীফ পাঠের ব্যবস্থা
করা হলে বৃষ্টি বর্ষিত হয়। ( মিরকাতুল
মাফাতীহ,খন্ড -১ম,পৃ:-:১৪,যুগ জিজ্ঞাসা,
পৃ:- ৪০)।
** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। কেউ
জঙ্গলে বিপদে পতিত হলে সে যেন উক্ত
বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বলে :-"
'আয়িনুনি ইয়া 'ইবাদাল্লাহি ইয়ার হামুকুমুল্লাহ।"
(হে আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ! আপনারা আমাকে সাহায্য করুন,আল্লাহ আপনাদেরকে দয়া করুন।(এরপর আল্লাহর ঐ অলীগণ ( যাঁদেরকে রিজালুল গায়ব) বলা হয়,যাঁরা সাধারন মানুষের বাহ্যিক দৃষ্টি হতে।গোপন থাকেন।) তাকে ঐ বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।(তাবরানী শরীফ ও তাফসীরে কবীর,কৃত: আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।সূরা বাক্বারায় " ও ইয ক্বলা রব্বুকা লিল মালাঈকা" এর ব্যখ্যায় উল্লেখ করেছেন।যুগ জিজ্ঞাসা, পৃ:- ৭২)।
** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি কোন ইয়াতিমকে নিজের খানা - পিনাতে শামিল করে,আশ্রয় দেয়; আল্লাহ তায়ালা তার জন্য বেহেশত ওয়াজিব করে দিবেন যে পর্যন্ত না সে এমন কোন গুনাহ করে যা মার্জনাযোগ্য নয়।আর যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা বা এ পরিমান বোনের প্রতিপালন করবে অর্থাৎ, তাদেরকে আদব - কায়দা শিক্ষা দিবে এবং স্নেহ করবে যে পর্যন্ত না তাদেরকে আল্লাহ পাক
পরমুখাপেক্ষিতা থেকে মুক্ত করেন।তার জন্য
আল্লাহ পাক বেহেশত অবধারিত করবেন।তখন জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল,ইয়া
রসূলাল্লাহ! দু'টির বেলাও কি অনুরুপ সাওয়াব হবে? তিঁনি বললেন; দু'জনের ব্যাপারেও সে সওয়াব পাবে।রাবী বলেন,এমন কি যদি তাঁরা (সাহাবীগণ) একজনের ব্যাপারেও জিজ্ঞেস করতেন,তবে একজন সম্পর্কেও তিনি তাই বলতেন।( বর্ণনাকারী বলেন) তিঁনি আরও বলেছেন,আল্লাহ তায়ালা যার দু'টি মূল্যবান প্রিয় বস্তু নিয়ে গেছেন - তার জন্য বেহেস্ত অবধারিত,কেউ জিজ্ঞেস করল; সে প্রিয় বস্তু দুটি কি? তিঁনি বললেন," তার
চক্ষুদ্বয়।"( শরহে সুন্নাহ,মিশকাত শরীফ,হাদীস
নং- ৪৭৫৮,পৃ:- ৬৯৭)।
** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি কোন মাযলুমের ফরিয়াদে সাহায্য করবে,আল্লাহ তায়ালা তার জন্য তিহাত্তরটি (৭৩) মাগফিরাত লিপিবদ্ধ করবেন।তন্মধ্যে একটি মাগফিরাত হলো তার সমুদয় বিষয়ের সংশোধন, আর বাহাত্তরটি হল কিয়ামতের দিন তার মর্যাদা বৃদ্ধির উপকরণ।( বায়হাকী শুআবুল ঈমান;মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৪৭৮০,পৃ:- ৬৯৯)।
** বায়হাকী ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন,রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়াত
শরীফ," ক্বুলিদ 'উল্লহা আ উইদ 'উর রহমান।"
সম্পর্কে বললেন," এ আয়াত শরীফ চুরি থেকে নিরাপদ রাখে।" রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এক সাহাবী রাতে
ঘুমানোর সময় এ আয়াত শরীফ পড়ে নিলেন।ওই রাতে তাঁর ঘরে চোর ঢুকল এবং ঘরের সমস্ত সামগ্রী জড়ো করে নিয়ে যেতে লাগলো।ওই সাহাবীর তখনো ঘুম আসেনি।( তিনি চোরের কান্ড দেখছিলেন।) শেষতক চোর মালগুলো নিয়ে দরজা পর্যন্ত পৌঁছলো।কিন্তু সে দরজা বন্ধ পেলো।তারপর সে মালের পুঁটলি রেখে দিলো। এবার দেখতে পেলো দরজা খোলা আছে। সে আবার পুঁটলি তুলে নিলো। কিন্তু আবার দরজা বন্ধ পেলো। এভাবে চোর তিনবার বেরুনোর চেষ্টা করলো। এ অবস্থা দেখে ওই সাহাবী হেসে বললেন,
আমি আমারঘরকে নিরাপদ করে নিয়েছি।"
(খাসাইসে কুবরা,খন্ড - ২য়,মাসিক তরজুমান,মাহে রমজান -১৪৩০হি:,পৃ:- ১৩)।
** হযরত আবান ইবনে উসমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা উসমান হতে উদ্ধৃত করেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন," যে লোক সকালে তিন বার এই দো'আ পড়বে :- " বিছমিল্লা হিল্লাযী লা ইয়া দুররু মা'আ ইছমিহী শাইউং ফিল আরদ্বি ওলা ফিছ ছামা --য়ি ও হু ওছ ছামি'উল 'আলিম।"
সন্ধ্যা পর্যন্ত সে কোন বিপদে পড়বেনা।আর
যদি সন্ধ্যায় পড়ে তাহলে সকাল পর্যন্ত বিপদে পড়বেনা।(তিরমিযী, আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ,মুসনাদে আহমদ ও তাম্বিহুল গাফিলীন,পৃ:- ৪৫২ - ৪৫৩)।
__________________
ফয়যানে শরিয়ত ও মারফত (আমলের ভান্ডার)
লেখক : মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন