হাদিসের আলোকে মহিলাদের কবর যিয়ারত
ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে মুসলীম মহিলাদের কবর যিয়ারত করার বিষয়ে অনুমতি রয়েছে কিন্তু কিছু কঠোর শর্ত সাপেক্ষে। রাসূলে পাক (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে অনেক মহিলারা কবর যিয়ারত করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। মহিলাদের কবর যিয়ারতের বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য নিচের রেওয়াত গুলাে লক্ষ্য করুন, এ সম্পর্কে সহিহ হাদিসে আছে,
حدثنا حماد بن أسامة ، قالঃ أخبرنا هشام ، عن أبيه عن عاﺉشة رضي الله عنها قالঃ كنت أذځل بيتي الذي فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وإني واضع ثوبي وأقولঃ إنما هو زوجي وأبي ، فلما دون غم مهم فوالل ما دخلت إلا وأنا مشدود ع ثيابي حياء من عمر رضي الله عنه
-”হজরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, ইতিপূর্বে আমি রাসূল (ﷺ) এর ঘরে (রওজায়) প্রবেশ করতাম সাধারণ কাপড় পরিধান করে এবং বলতামঃ ইনি আমার স্বামী ও ইনি আমার পিতা। আর যখন হজরত উমর (رضي الله عنه) কে সেখানে দাফন করা হল, আল্লাহর কসম! আমি আমার কাপড় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পরিধান করে সেখানে প্রবেশ করতাম, যেমনটি হজরত উমর (رضي الله عنه) জীবিতকালে করতাম।”
(মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২৫৬৬০ ; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৪৪০২ ; ইমাম আবু বকর খিলালঃ আস সুন্নাহ, হাদিস নং ৩৬৪ ; মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ১৭৭১ ; ইমাম হায়ছামীঃ মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ হাদিস নং ১২৭০৪ ; জামেউল হাওয়াইদ, হাদিস নং ৭৮৬)।
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হাকেম (رحمة الله) বলেন,
هذا حديث صحيح على شرط الشيخين
-”এই হাদিস বুখারী ও মুসলীম رحمة الله এর শর্ত অনুযায়ী সহিহ। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৪৪০২)
ইমাম হায়ছামী (رحمة الله) বলেনঃ “ইমাম আহমদ (একা) ইহা বর্ণনা করেছেন, সকল রাবীগণ বিশুদ্ধ।”(ইমাম হায়ছামীঃ মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১২৭০৪)
স্বয়ং নাছিরুদ্দিন আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, উম্মুল মু'মেনীন হজরত আয়েশা (رضي الله عنه) স্বয়ং রাসূল (ﷺ), হজরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) ও হজরত উমর (رضي الله عنه) এর কবরের কাছে যাইতেন এবং যিয়ারত করতেন। এ সম্পর্কে আরেক হাদিসে আছে,
حدثنا أبو محمد أحمد بن محمد بن حامد العدل بالطابران ، ثنا تميم بن محمد ، ثنا أبو مصعب الهري ، حدثني محمد بن إسماعيل بن أبي فديك ، أبني سليمان بن داؤد ، عن جعفر بن محمد ، عن أبيه ، عن علي بن الحسين ، . أبيه ، أين فاطمة بنت النبي صلى الله عليه وسلم ، كانت تور قبر عممها كم كل جمعۃ فضل وتبكي عنده
-”আলী ইবনে হুছাইন তার পিতা হজরত হুছাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় প্রত্যেক জুময়ার দিনে ফাতেমা বিনতে রাসূলিল্লাহ (ﷺ) নবীর চাচা আমীর হামজা (رضي الله عنه) এর মাজার যিয়ারত করতেন। তার উপর সালাত আদায় করতেন ও তার কাছে কান্নাকাটি করতেন।”
(মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ১৩৯৬ ; ইমাম বায়হাকীঃ সুনান কুবরা, হাদিস নং ৭২০৮)
ইমাম হাকেম (رحمة الله) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এই হাদিস উল্লেখ করে লিখেছেনঃ -এর সনদ সহিহ।”
(হাফিজ ইবনে হাজাرحمة الله ইত্তেহাফুল মিহরাত, ২৩৩১৩ নং হাদিস)
এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়াত রয়েছে,
عبد الرتزاق عن البجي ، عن الكلي ، عن الأصبغ بن نباتة أن فاطمة بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم كانت تأتي قبر مرة
-”আছবাগি ইবনে নাবাতা (رحمة الله) বলেনঃ নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) এর কন্যা ফাতেমা (رضي الله عنه) হজরত আমীর হামজা (رضي الله عنه) এর মাজারে যিয়ারতে আসতেন। (মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং ৬৭১৭ ; ইমাম আইনীঃ উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ৩৮২১ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়) সনদ সহিহ।
ইমাম উমর ইবনে শিবাহ বাছরী (رحمة الله) ওফাত ২৬২ হিজরী তদীয় কিতাবে ইহার আরেকটি সনদ উল্লেখ করেছেন,
حدثنا محمد بن بكار قالঃ حدثنا حبان بن علي ، عن سعد بن طريف ، عن أبي جعفر ، أن فاطمة بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم كانت تزور قبر حمزة رضي الله عنه ،
-”আবী জাফর বলেন, নিশ্চয় ফাতেমা বিনতে রাসূলিল্লাহ (ﷺ) আমীর হামজা (رضي الله عنه) এর মাজার যিয়ারত করতেন।”
(ইমাম ইবনে শিবাহ, তারিখে মাদিনা, ১ ম খন্ড, ১৩২ পৃ:)
যেমন আরেকটি রেওয়াত লক্ষ্য করুন,
عبد الرزاق ، عن ابن عيينة ، عن جعفر بن محمد ، عن أبيه قالঃ كانت فاطمة بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم تور قبر حمزة كل جمعة
-”জাফর ইবনে মুহাম্মদ তার পিতা ইমাম বাকের (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ ফাতেমা বিনতে রাসূলিল্লাহ (ﷺ) প্রত্যেক জুময়ার দিন আমীর হামজা (رضي الله عنه) এর মাজার যিয়ারত করতেন।”(মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং ৬৭১৩)
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয়, স্বয়ং রাসূল (ﷺ) এর কন্যা এবং জান্নাতের মহিলাদের সর্দারনী হজরত ফাতেমা (رضي الله عنه) নিজেই হজরত আমীর হামজা (رضي الله عنه) এর মাজার নির্দিষ্ট করেই প্রতি জুমার দিনে যিয়ারত করেছেন। উল্লেখ্য যে, হজরত আমীর হামজা (رضي الله عنه) এর মাজার হল উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে। এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস উল্লেখযােগ্য,
حدثنا الحسين ب ځي ، قالঃ حدنا عيسى بن يوس ، عن ابن جريج ، عن عبد الله بن أبي مليكة ، قالঃ ثني عبد المني بن أبي بكر يخبي قالঃ تميل إلى مكة فنيين فيها ، كما قدم عاﺉشة أن قير عبد المن بن أبي بغر ، فقالঃ وا گندمان جذيمة حقبة ... من الدهر حتى قيل أن يتصدعا
-”আব্দুল্লাহ ইবনে আবী মুলাইকা (رضي الله عنه) বলেন, আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (رضي الله عنه) হাবশায় ইন্তেকাল করেন। তিনি বলেনঃ তাকে মক্কায় বহন করে আনা হল এবং সেখানেই দাফন করা হল। যখন হজরত আয়েশা (رضي الله عنه) মক্কায় আসলেন তখন আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (رضي الله عنه) মাজারে আসলেন, এবং বললেনঃ ......।”
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ১০৫৫ ; মুয়াত্তা মালেক হাদিস নং ১৪ ; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৬০১৩ ; ইমাম বাগভীঃ শরহে। সুন্নাহ, ৫ ম খন্ড, ৪৬৫ পৃঃ ; মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং ৬৫৩৯ ; মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, ৩ য় খন্ড, ২২৪ পৃঃ হাদিস নং ১১৮১১ ; ইমাম আইনী ; উমদাতুল ক্বারী, ৩৮২১ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)।
কুখ্যাত পথভ্রষ্ট লা-মাজহাবী নাছিরুদ্দিন আলবানী স্বয়ং হাদিসটিকে মেসকাতের তাহকিকে ' সহিহ ' বলেছেন। সর্বোপরি ইহা ' মুয়াত্তা মালেক ' এর হাদিস। আর সকলেই অবগত আছেন, মুয়াত্তা মালেক এর মধ্যে কোন জয়ীফ হাদিস নেই।
পাশাপাশি প্রমাণিত হল, হজরত আয়েশা (رضي الله عنه) স্বীয় ভাই আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (رضي الله عنه) এর মাজার যিয়ারত করার জন্য মদিনা থেকে মক্কায় সফর এবং যিয়ারত করেছেন। এ সম্পর্কে আরেকটি হাদিস উল্লেখ করা যায়,
حدثنا آدم ، حدثنا شعبة ، تا ایث ، عن أنس رضي الله عنه أتي النبي صلى الله عليه وسلم يعني متر بامرأة تبكي عند قبر ، فقالঃ اتقي الله واصبري
-”হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর নবী (ﷺ) এক মহিলার কাছে দিয়ে যাচ্ছিলেন যিনি কবরের কাছে কাঁদতে ছিলেন। রাসূল (ﷺ) বললেনঃ আল্লাহকে ভয় কর ও ধৈর্য ধারণ কর।”(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১২৫২ ও ১২৮৩ ; মুসনাদে ইবনে জাদ ; হাদিস নং১৩৬৮)।
এই হাদিসে স্পষ্ট যে, আল্লাহর নবী (ﷺ) ঐ মহিলাকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেননি এমনকি করর যিয়ারতের জন্য ধিক্কারও দেননি, বরং ধৈর্য ধারণ করার জন্য বলছেন। অতএব, প্রমাণিত হয়, মহিলাদের কবর যিয়ারত করা রাসুল (ﷺ) মৌন-সম্মতিক্রমে জায়েয। তবে হানাফী ফোকাহর কিতাবে যে সকল শর্তাবলী রয়েছে ঐ সকল শর্তাবলী অবশ্যই মহিলাদের জন্য পালনীয়।
_______________
সহিহ হাদিসের আলােকে মাজার যিয়ারত পূজা নয় ও কদমবুছির সমাধান
গ্রন্থনায়ঃ মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দিন জিহাদী
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন