নামাযের ফযীলত (১ম পর্ব)
** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত,কিয়ামত দিবসে সর্ব প্রথম আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে নামাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন। যদি তার ফরয নামায যথাযথভাবে পাওয়া যায়,তবে সে সফলকাম হল। আর তার ফরয নামায সঠিক না হয়। তবে সে অকৃতকার্য হবে। তবে যদি তার ফরয নামাযে কিছু ত্রুটি থাকে, তখন আল্লাহ রব্বুল
আলামীন বলবেন,আমার বান্দার কোন নফল
নামায আছে কিনা দেখ, যদি থাকে তবে তা
তার ফরয নামাযের ত্রুটির পরিপূরক হিসাবে
গন্য কর। অত:পর সকল ইবাদতের ক্ষেত্রে এ
হিসাব প্রযোজ্য হবে।( মাফাতিহুল জেনান
শরহু শির - আতিল ইসলাম,মাসিক তরজুমান,
মাহে রজব -১৪২৬হি:, পৃ:- ৬)।
** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন," পাঁচ ওয়াক্তের নামায,এক
জুমুআ হতে অপর জুমুআ পর্যন্ত ও এক রমযান থেকে অন্য রমযান পর্যন্ত কাফফারা হয় সে গুনাহর জন্য,যা তার মধ্যবর্তী সময়ে হয়।যখন কবিরা গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। (মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৫১৮,পৃ:- ১১৯)
** হযরত বিবি উম্মে হাবীবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,"যে এক দিন - রাত্রে (ফরয ব্যতীত) বার রাকআত নামায পড়বে,তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর নির্মান করা হবে।চার রাকআত যোহরের ( ফরযের) পূর্বে,দু রাকআত তার পরে,দু রাকআত মাগরিবের (ফরযের) পরে,দু রাকআত ইশার (ফরযের) পরে এবং দুরাকআত ফজরের (ফরযের) পূর্বে। (তিরমিযী শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ১০৯১,পৃ:- ১৯৩)।
** হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,চিন্তা - ভাবনা সহকারে মাঝারি
ধরনের দু রাকআত নামায অলসতা সহকারে
সারা রাত জেগে নফল পড়ার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
(ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৩৯)।
** হযরত আনাছ ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," কারও এক নামায আপন ঘরে এক নামাযের সমান।আর পাঞ্জেগানা মসজিদের তার এক নামায পঁচিশ নামাযের সমান এবং তার এক নামায সেই মসজিদে,যাতে জুমুআ পড়া হয় - পাঁচশত নামাযের সমান। আর তার এক নামায (বায়তুল মাকদিসে) মসজিদে আকসায় ৫০ হাজার নামাযের সমান,আর তার এক নামায আমার এ মসজিদে ৫০ হাজার নামাযের সমান,আর তার এক নামায মসজিদুল
হারামে এক লক্ষ নামাযের সমান।( ইবনে
মাজাহ শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং-
৬৯৬,পৃ:- ১৪২)।
** হযরত আনাছ ইবনে মালেক
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
তিঁনি বলেছেন," যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন জামায়াতের সাথে নামায পড়বে এবং
তার কোন রাকআতও ছুটবেনা,আল্লাহ
তায়ালা তাকে দুটি বিষয় থেকে মুক্তি ঘোষণা লিখে দেন,* জাহান্নাম থেকে এবং * মুনাফেক্বী থেকে।( তিরমিযী,মুসনাদে আহমাদ,তাম্বিহুল গাফিলীন,পৃ:- ২১৬)।
** উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত,তিনি
বলেন;রসূলে খোদা হাবীবে কিবরিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ
করেছেন,"ফযরের দু রাকআত সুন্নাত সমগ্র
দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে বিদ্যমান সকল
বস্তু - সামগ্রী হতে অধিকতর উত্তম।
(সুবহানাল্লাহ)।( সহীহ মুসলীম ও তিরমিযী
শরীফ,মাসিক তরজুমান,মাহে শাবান - ১৪৩২
হি:,পৃ:-৬)।
** হযরত উম্মে হাবীবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন,আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,যে ব্যক্তি যোহরের (ফরযের) পূর্বের চার রাকআত এবং যোহরের পরের চার (দুই রাকআত সুন্নাত ও দুই রাকআত নফল) রাকআত (নামাযের) হিফাযত করল(পড়বে)।আল্লাহ তায়ালা তার উপর (জাহান্নামের) আগুন হারাম করে দেবেন।(সুনানে নাসাঈ,হাদীস নং- ১৮১৭,
পৃ২২০৭,মুসনাদে আহমদ,তিরমিযী,আবু
দাউদ ও ইবনে মাযাহ শরীফ,মিশকাত
শরীফ,হাদীস নং- ১০৯৯,পৃ:- ১৯৪)।
____
আল্লামা সৈয়্যদ তাহতাবী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি ফরমান যে," প্রকৃতপক্ষে তিনি
জাহান্নামে প্রবেশই করবেন না।এবং তার
গুনাহ সমূহ মিটিয়ে দেয়া হবে ও তার উপর
(বান্দার হক্ব নষ্ট করার) যে সমস্ত দাবী দাওয়া রয়েছে আল্লাহ তায়ালা তার ঐ হকদার ব্যক্তিদেরকে নিজ ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট করে দিবেন। অথবা এটাই উদ্দেশ্য যে,তাকে এমন কাজের সামর্থ দান করবেন যার বদৌলতে তাকে শাস্তি প্রদান করা হবে না। আর আল্লামা শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফরমান যে,"তার জন্য সুসংবাদ হচ্ছে এই যে, সৌভাগ্যের ( অর্থাৎ ঈমানের উপর) তার মৃত্যু হবে,এবং সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।( শামী,খন্ড - ২য়,পৃ:- ৪৫২,নামাযের আহকাম (হানাফী),পৃ:- ১৯৫)।
** সায়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন; রসূলে পাক সাহেবে লাওলাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের এক মজলিশে এরশাদ করেছেন," যে ব্যক্তি আসরের নামাযের পূর্বে চার রাকআত ( অর্থাৎ সুন্নাত) নামায আদায় করবে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।(সুবহানাল্লাহ)। ( তবরানী শরীফ,মাসিক তরজুমান, মাহে শাবান -১৪৩২ হি:, পৃ:-৬)।
** হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা
বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি মাগরিবের পর
বিশ রাকআত নামায পড়েছে,আল্লাহ তায়ালা তার জন্য বেহেশতে একখানা ঘর তৈরি করবেন।( তিরমিযী,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ১১০৬,পৃ:-১৯৪)।
** হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে
বর্ণিত,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন," আল্লাহ তায়ালার নিকট
সর্বোত্তম নামায হচ্ছে মাগরিবের নামায।
মুছাফির ও বাড়ীতে অবস্থানকারী কারও
জন্য এ নামায কমানো হয়নি,এর দ্বারা রাতের নামায শুরু করা এবং দিনের নামায শেষ করা হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাযের পর দু 'রাকআত নামায পড়বে,আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে দুটি প্রাসাদ নির্মান করবেন।বর্ণনাকারী বলেন,আমি জানিনা স্বর্নের প্রাসাদ
বলেছেন না রৌপ্যের প্রাসাদ। আর যে ব্যক্তি এরপর চার রাকআত নামায পড়বে,তার
৩০ বছরের বা চল্লিশ বছরের ছগীরাহ গুনাহ
মাফ করা হবে। ( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,
পৃ:- ৩০১)।
** হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন,যে এশার নামায জামা'আতে পড়েছে,সে যেন অর্ধ রাত নামায পড়েছে,আর যে ফযরের নামায জামা'আতে পড়েছে - সে যেন পূর্ণ রাত নামায পড়েছে। (মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৫৮১,
পৃ:- ১২৮)।
নামায সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ফযীলত
__________________
** হযরত রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,আমি যে
জায়গায় ফযরের নামায আদায় করি সেখানে
বসে থাকা এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত যিকর করাকে চারটি গোলাম আযাদ করার চেয়ে অধিক প্রিয় মনে করি।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,
পৃ:- ২৯৯)।
** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন,যে ব্যক্তি ফযরের নামায
জামাআতের সাথে পড়েছে,তারপর সূর্যোদয়
পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকির করেছে,এরপর
দুই রাকআত নফল নামায পড়েছে।তার জন্য
হজ্ব ও ওমরার সাওয়াবের মত সাওয়াব
রয়েছে।হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এটাও বলেছেন,পূর্ণ,পূর্ণ,পূর্ণ।
(অর্থাৎ,পূর্ণ হজ্ব ও ওমরার)।(তিরমিযী
শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং-৯০৯,
পৃ:-১৬৮)।
** হযরত রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেন,যদি কেহ
আছরের নামায পড়িয়া মাগরিব পর্যন্ত কোন বাজে কথা না বলিয়া আল্লাহর যিকির বা মোরাকাবায় বসিয়া থাকিয়া মাগরিবের
নামায পড়ে,তবে সে যেন - আটটি গোলাম
আযাদ করার সাওয়াব পাইল।(মবছুত,তরীকুল ইসলাম-প্রথম ভাগ,
পৃ:-১৬৮)
** আনীসুল ওয়ায়েজীন কিতাবে
আছে,একদা আবু উমামা বাহেলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হইয়াছিলেন। আঁ - হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন,হে বাহেলী! তোমাকে চিন্তাযুক্ত ও দু:খিত দেখিতেছি কেন? হযরত বাহেলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উত্তর
করিলেন,ইয়া রসূলাল্লাহ ডাকাতেরা আমার
দশটি উটের বোঝাই করা মাল সম্পূর্ণ লুটিয়া
লইয়া গিয়াছে।ইহা শুনিয়া আঁ হযরত
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন,হে আবু উমামা! আমি মনে করিয়াছিম,তুমি বুঝি জামাআতের তাকবীরে তাহরিমা পাও নাই,তাই এত পেরেশান হইয়াছ। তখন আবু উমামা জিজ্ঞাসা করিলেন,হুযুর! তাকবীরে
তাহরীমা না পাইলে কি দশটি উটের মাল নষ্ট
হওয়ার মত ক্ষতি হয়। হযরত নবীয়ে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর
করিলেন,তাকবীরে তাহরীমা না পাইলে তার
চেয়েও বেশী ক্ষতি হয়। হুযুর আকরাম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও
বলিয়াছেন,যাহার হাতে আমার জীবন, সেই
আল্লাহ তায়ালার কসম করিয়া বলিতেছি -
আল্লাহ তায়ালার নিকট এই দুনিয়া ও দুনিয়ার
যাবতীয় মাল হইতে তাকবীরে তাহরীমার
ছওয়াব অনেক বেশী।(তরীকুল ইসলাম -
দ্বিতীয় ভাগ,পৃ:-১৪ - ১৫)।
** পবিত্র হাদীস শরীফে হযরত আনাছ
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে,নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামায সম্পন্ন করতেন,তখন ডান হাত শির
মোবারকের উপর ফিরাতেন এবং বলতেন "
বিছমিল্লাহিল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুয়ার রহমানির রহিম,আল্লহুন্মাযহাব 'আন্নিল হাম্মা ওল হুজনা।"
ইমাম বাযযার তাঁর মুসনাদে, ইমাম তাবরানী
মু'জামে আওসাতে,ইমাম ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওম ও লায়লাহ ও ইমাম খতীব
বাগদাদী,তারীখে বাগদাদে হযরত আনাছ
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে এ হাদীস বর্ণনা
করেছেন। সুতরাং নামাযের সালাম ফেরানোর পর মাথায় ডান হাত রেখে এ দু'আ পাঠ করা সুন্নাত ও বরকতময়। অনেক ইমাম ও ফক্বীহ বলেছেন যে,ফরয নামাযের সালাম ফেরানোর পর মাথায় হাত রেখে এ দু'আ পাঠ।করলে এ আমলের বরকতে ওই ব্যক্তি পার্থিব দুশ্চিন্তা ও মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকবে। এটা পরীক্ষিত আমল।( বাযযার ও।তাবরানীর সূত্রে ফাতাওয়ায়ে রেজভিয়া (তৃতীয় খন্ড),কৃত: ইমাম আলা হযরত শাহ আহমদ।রেযা খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি,যুগ।জিজ্ঞাসা,পৃ:-১৬৮)।
অন্যান্য নামাযের ফযীলত
তাহিয়্যাতুল অযু ( নামাযের ফযীলত)
---------------------------------------------------
** হযরত বুরায়দা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম সকালে উঠে বেলালকে ডাকলেন
এবং বললেন:( বেলাল) কী কাজের ধরুন তুমি।আমার পূর্বে বেহেশতে পৌঁছলে? আমি যখনই বেহেশতে পৌঁছেছি আমার সম্মুখে তোমার জুতার আওয়াজ শুনেছি।তখন বেলাল বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি যখনই আযান দিয়েছি তখনই দুই রাকআত নফল নামায পড়েছি এবং যখনই আমার অযু ছুটে গেছে তখনই আমি অযু করেছি এবং মনে করছি, আল্লাহর উদ্দেশ্যে আমার দুই রাকআত নামায পড়তে হবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,এই দুই কাজের দরুনই। (তিরমিযীশরীফ,
মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ১২৫০,পৃ:- ২১৩)।
দুখুলুল মাসজিদ
___________
** হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন," যখন তোমাদের কেউ
মসজিদে প্রবেশ করে, তখন সে যেন বসার
আগে দু রাকআত নামায পড়ে।( বুখারী ও
মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং-
৬৫২,পৃ:- ১৩৬)।
ইশরাক্ব ও চাশতের নামা
______________
** ফযরের নামাযের পর কিছুক্ষন দো'আ
দুরুদ যিকির ইত্যাদিতে লিপ্ত থাকিয়া (২০ -
২৩মিনিট ) পর ২ রাকআত নামায পড়িলে
তাহার আমলনামায় এক হজ্ব ও ওমরার পূর্ণ
ছওয়াব লেখা হইবে। আরও…লিখিয়াছেন,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,চার/রাকআত ইশরাক্ব পড়িলে সমস্ত দিন আমি তাহার মদদগার থাকিব।( মালাবুদ্দা মিনহু,তরীকুল ইসলাম - দ্বিতীয় ভাগ,পৃ:- ১০৪)।
** দুররুল মুখতার কিতাবে আছে - ছহীহ
রেওয়ায়েত মতে জানা যায়,যখন সূর্য এক
প্রহরের উপরে উঠবে, তখন চাশত নামায
পড়িবে।মুনিয়া কিতাবে আছে,নিম্নে ২
রাকআত,মধ্যম ৮ রাকআত ও উর্দ্ধে ১২ রাকআত পড়িতে পারে। মারাকিল ফালাহ কিতাবে আছে - ২০ রাকআত চাশত পড়িলে তাহাকে আলস্যহীন ব্যক্তির মধ্যে গন্য করা হইবে।৪ রাকআত পড়িলে আবেদীনের মধ্যে গন্য হইবে, যে ৬ রাকআত পড়িবে,সে যেন সমস্ত দিন ভরিয়া ইবাদত করিল। ৮ রাকআত পড়িলে আল্লাহ তায়ালার আদেশ পালনকারীর মধ্যে গন্য হইবে। ১২ রাকআত পড়িলে আল্লাহ তায়ালা তাহার জন্য বেহেশতের মধ্যে একখানা পৃথক ঘর বা খাছ কামরা তৈয়ার করাইয়া দিবেন। মালাবুদ্দা মিনহু কিতাবের হাশিয়াতে আছে,তাহার জন্য সোনার ঘর তৈয়ার করা হইবে।( তরীকুল ইসলাম - দ্বিতীয় ভাগ,পৃ:- ১০৪)।
** আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন," যে কেহ
চাশতের নামায পড়িবে, প্রতি মাসে তিনটি
রোযা রাখবে এবং কখনও বিতির নামায
ছাড়বেনা। মুকিম অবস্থায় হোক অথবা
মুছাফির অবস্থায় হোক, তার জন্য শাহাদের
সওয়াব লিখা হবে।( আবু নোয়াইম,হায়াত -
মউত,কবর - হাশর,পৃ:- ৯৮ - ৯৯)।
** হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন,প্রভাত হওয়া মাত্র
তোমাদের প্রত্যেকের প্রত্যেক গ্রন্থির জন্যই একটি সদকা ( দান) করা আবশ্যক হয়।
তবে ( জানবে) তোমাদের প্রত্যেক ' তাসবীহ'
ই একটি সদকা,প্রত্যেক ' তাহমিদ'ই একটি
সদকা,প্রত্যেক ' তাহলীল' ই একটি সদকা,
প্রত্যেক ' তাকবীর' ই একটি সদকা এবং
সৎ কাজের আদেশ ও একটি সদকা এবং অসৎ কাজের নিষেধও সদকা বিশেষ। অবশ্য যোহার সময়ে দুই রাকআত নামায পড়া সমস্তের পরিবর্তে যথেষ্ট।( মুসলীম শরীফ,
মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ১২৩৬,পৃ:- ২১০ - ২১১)।
** হযরত বুরায়দা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে বলতে শুনেছি,মানুষের মধ্যে
তিনশত ষাটটি ( প্রধান) গ্রন্থি রয়েছে।
সুতরাং তার পক্ষে প্রত্যেক গ্রন্থির পরিবর্তে একটি খয়রাত আবশ্যক। সাহাবীগন
বললেন হে আল্লাহর নবী! এ সাধ্য কার আছে?।হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উত্তরে বললেন,থু থু ইত্যাদি যা মসজিদে
দেখবে তাকে দাফন করে দিবে( অর্থাৎ দূর
করবে) এবং কষ্টদায়ক বস্তু যা রাস্তায় দেখবে তা সরায়ে দিবে ( এটা তোমার পক্ষে খয়রাত হবে) যদি এটা করবার সুযোগ না পাও, তবে যোহার ( চাশতের) সময় দুই রাকআত নামায
তোমার পক্ষে যথেষ্ট হবে। ( আবু দাউদ
শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ১২৩৯,পৃ:-
২১১)।
** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন,যে ব্যক্তি যোহার।(চাশতের) দু রাকআত নামায পড়ার প্রতি।লক্ষ্য রাখবে,তার ( সগীরা) গুনাহসমূহ মাফ।করা হবে,যদিও তা সমূদ্রের ফেনার সমান হয়।
( আহমদ,তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ শরীফ,
মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ১২৪২,পৃ:-২১১)
আউয়াবীন নামায
____________
** নুরুল ইজাহ কিতাবে আছে,মাগরিবের
বাদে ৬ রাকআত নফল পড়িতে হয়। উহাই
আউয়াবীন নামায। জামেউর রমুজ কিতাবে
আছে - যদি তিন সালামে ঐ ৬ রাকআত
নামায পড়ে এবং তাহার মধ্যে দুনিয়াদারীর
কোন বাজে কথা না বলে, তবে তাহার ১২
বৎসর নফল ইবাদতের ছওয়াব হইবে।মারাকিল ফালাহ কিতাবে আছে,মাগরিবের পর ২০ রাকআত নফল পড়িলে তাহার জন্য বেহেশতের মধ্যে একখানা খাছ কামরা বা পৃথক ঘর তৈয়ার করা হইবে।( তরীকুল ইসলাম - দ্বিতীয় ভাগ,পৃ:-১০৫)।
তাহাজ্জুদের নামায
___________
** হযরত আবু উমামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন,তোমরা রাতে নামায পড়বে। এটা হচ্ছে তোমাদের পূর্বেকার নেক লোকদের নিয়ম।তোমাদের জন্য তোমাদের পরওয়ারদেগারের নৈকট্য লাভের পন্থা,গুনাহ
মাফের উপায় এবং অপরাধ - অশ্লীলতা হতে
বাধাদানকারী।( তিরমিযী শরীফ,মিশকাত
শরীফ,হাদীস নং- ১১৫৯,পৃ:-২০২)।
** হযরত আবু উমামা বাহেলী রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু বলেন,একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা
হল,ইয়া রসূলাল্লাহ! কোন দো'আ তারাতারি
কবুল হয়? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন,রাত্রির শেষার্ধের মধ্য ভাগের দো'আ এবং ফরয নামাযের পরের দো'আ। ( তিরমিযী শরীফ,মিশকাত শরীফ,
হাদীস নং- ১১৬৩,পৃ:- ২০২)।
** হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," আমার উম্মতের মধ্যে
শ্রেষ্ঠ লোক তারাই,যারা কুরআনের বাহক
(হাফেজ) এবং রাত্রি জাগরণকারী।(তাহা
জ্জুদ পরনেওয়ালা)। ( বায়হাকী,মিশকাত
শরীফ,হাদীস নং- ১১৭০,পৃ:-২০৩)।
** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন,আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি
অনুগ্রহ করুন যে ব্যক্তি রাতে উঠে নামায
পড়ে এবং আপন স্ত্রীকেও জাগিয়ে দেয় এবং সেও নামায পড়ে,আর যদি সে উঠতে না
চায়,তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।এভাবে
আল্লাহ অনুগ্রহ বর্ষণ করুন সেই স্ত্রীলোকের
প্রতি যে রাতে উঠে নামায পড়ে এবং আপন
স্বামীকেও জাগিয়ে দেয় এবং সেও নামায
পড়ে।আর যদি সে না উঠতে না চায়,তার মুখ -
মন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়।( আবু দাউদ ও
নাসায়ী শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং-
১১৬২,পৃ:-২০২ ও ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন,
পৃ:- ৩০৩)।
** হযরত হাসান বসরী রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুকে কেউ জিজ্ঞাসা করল,যারাতাহাজ্জুদ পড়ে তাদের চেহারা অন্যদের তুলনায় সুন্দর কেন? তিঁনি বললেন,এর কারন হচ্ছে;তারা আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে একান্তে থাকে। তাই আল্লাহ পাক তাদেরকে নিজের নূরের কিছু অংশ পরিয়ে দেন।(ইহইয়াউল উলুমুদ্দিন,
পৃ:-৩০৩)।
** ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন কিতাবে আছে,
মানুষের পক্ষে শেষ রাত্রে নিদ্রা হইতে উঠা কষ্টকর বটে,কিন্তু যাহাকে আল্লাহ তায়ালা নিম্নলিখিত জাহেরী ও বাতেনী ইলমের শক্তি দান করেন; তাহার পক্ষে সহজ। নিদ্রা হইতে উঠিবার চারটি প্রকাশ্য তদবীর আছে -
১/ কম আহার করিবে,
২/ দিবসে অতিরিক্ত পরিশ্রম করিবে না,
৩/ রাত্রে উঠিবার নিয়তে দিবাভাগেকিছু নিদ্রা যাইবে ( সুন্নাত), এবং
৪/ দিনেকোন গুনাহর কাজ করিবে না।করিলে দিল শক্ত হইয়া যাইবে ও গুনাহর দরুন আল্লাহর রহমত নাযিল হইবে না।শেষ রাত্রে নিদ্রা হইতে উঠিবার চারটি বাতেনী তদবীর আছে।
যথা - ১/ঈর্ষা, বিদায়াত ও দুনিয়ার চিন্তা
হইতে মনকে পাক রাখিতে হইবে।কেননা, ঐ
সকল কাজ মানুষকে আল্লাহর চিন্তা হইতে
গাফেল রাখে।যদিও নিদ্রা হইতে জাগে
কিন্তু ঐ সকল লাভের চিন্তায় ব্যস্ত থাকে।
২/ আল্লাহ তায়ালার ভয় মনে জাগরুক
রাখিবে এবং মৃত্যুকে অতি নিকটবর্তী মনে করিবে। আখেরাতের ভয় ও দোযখের চিন্তা মনে থাকিলে ঘুম কম হইবে।
৩/ কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে রাত্রি জাগরণের ফযীলত সমন্ধে যে সকল আয়াত আছে, তৎপ্রতি বিশেষ খেয়াল রাখিবে।
৪/বিশেষভাবে আল্লাহ তায়ালার সহিত
মহব্বত দিলে রাখিবে। নামাযে যত কালাম
বলা হয়,উহা যেন আল্লাহ তায়ালার সহিত কথোপকথন করা হয় এবং তাহার নিকট প্রার্থনা করা হয়।আল্লাহ।তায়ালা আমার অবস্থা।বিশেষভাবে জ্ঞাত আছেন, এ সকল বিষয়ের।প্রতি।সজাগ দৃষ্টি রাখিতে হয়। ৫/ ১৬ পারায় সুরা কাহাফের শেষ আয়াত অর্থাৎ ইন্নাল্লাযীনা আমানু হইতে শেষ পর্যন্ত পড়িয়া শেষ রাত্রে উঠিবার নিয়তে শুইয়া থাকিবে। আল্লাহর ফযলে নির্দিষ্ট সময়ে জাগরিত হইবে।( তরীকুল ইসলাম - দ্বিতীয় ভাগ,পৃ:-১০২ - ১০৩)।
-----------------------
সূরা কাহফের শেষ চার আয়াত:-
+++++++++++
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻭَﻋَﻤِﻠُﻮﺍ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤَﺎﺕِ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻟَﻬُﻢْ ﺟَﻨَّﺎﺕُ
ﺍﻟْﻔِﺮْﺩَﻭْﺱِ ﻧُﺰُﻟًﺎ
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করছে,
ফিরদাউসের বাগানই তাদের আতিথেয়তা।
ﺧَﺎﻟِﺪِﻳﻦَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻟَﺎ ﻳَﺒْﻐُﻮﻥَ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﺣِﻮَﻟًﺎ
তারা সর্বদা তাতে থাকবে, তা থেকে
স্থানান্তর কামনা করবে না।
ﻗُﻞ ﻟَّﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﺒَﺤْﺮُ ﻣِﺪَﺍﺩًﺍ ﻟِّﻜَﻠِﻤَﺎﺕِ ﺭَﺑِّﻲ ﻟَﻨَﻔِﺪَ ﺍﻟْﺒَﺤْﺮُ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥ
ﺗَﻨﻔَﺪَ ﻛَﻠِﻤَﺎﺕُ ﺭَﺑِّﻲ ﻭَﻟَﻮْ ﺟِﺌْﻨَﺎ ﺑِﻤِﺜْﻠِﻪِ ﻣَﺪَﺩًﺍ
আপনি বলে দিন, ‘যদি সমুদ্র আমার রবের
বাণীসমূহ লেখার জন্য কালি হয়, তবে অবশ্যই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে আর আমার রবের বাণীসমূহ শেষ হবে না, যদিও আমি অনুরূপ আরো (সমুদ্র) এর সাহায্যার্থে নিয়ে আসি।
ﻗُﻞْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻣِّﺜْﻠُﻜُﻢْ ﻳُﻮﺣَﻰٰ ﺇِﻟَﻲَّ ﺃَﻧَّﻤَﺎ ﺇِﻟَٰﻬُﻜُﻢْ ﺇِﻟَٰﻪٌ ﻭَﺍﺣِﺪٌ
ﻓَﻤَﻦ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺮْﺟُﻮ ﻟِﻘَﺎﺀَ ﺭَﺑِّﻪِ ﻓَﻠْﻴَﻌْﻤَﻞْ ﻋَﻤَﻠًﺎ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺸْﺮِﻙْ
ﺑِﻌِﺒَﺎﺩَﺓِ ﺭَﺑِّﻪِ ﺃَﺣَﺪًﺍ
আপনি বলুন, ‘প্রকাশ্য মানবীয়ত আকৃতিতে
আমি তোমাদের মতো আমার নিকট ওহী আসে যে, তোমাদের মা’বূদই। সুতরাং যার আপন রবের সাথে সাক্ষাৎ করার আশা আছে তার উচিত যেন সে সৎকর্ম করে এবং সে যেন আপন রবের ইবাদতে অন্য কাউকেও শরীক না করে। (কানযুল ঈমান থেকে)।
** শামী,আলমগীরী,দুররুল মোখতার প্রভৃতি।কিতাবে উর্দ্ধ সংখ্যা ৮রাকআত, মধ্যম ৪ রাকআত ও নিম্ন সংখ্যা ২ রাকআত উল্লেখ করিয়াছেন।মালাবুদ্দা মিনহু কিতাবে আছে,দু রাকআত করিয়া পড়িবে।
প্রত্যেক রাকআতে যে কোন আয়াত বা সূরা
পড়িবে অথবা সূরা ইখলাছ পড়িবে। কবীরী
কিতাবের মর্মানুযায়ী প্রত্যেক রাকআতে
সমান কিরাত পড়িবে। প্রত্যেক রাকআতে ৩/৫/৭ বার সূরা ইখলাছ পড়িবে। কিন্তু সমান বেজোড় হওয়া চাই। ইহাই সাধারনের জন্য উত্তম। কোন কারনে তাহাজ্জুদ ফওত হইলে হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিবসে কাজা আদায় করিতেন। অতএব,তাহাই আমল করিতে হইবে।
ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন কিতাবে আছে,যদি কেহ
৪ রাকআত বা ২ রাকআত পড়ে কিংবা বিশেষ
কোন আশংকায় অযু করিতে না পারে, তাহা
হইলে কিবলা দিক হইয়া কিছু সময় যিকির ও দোয়া দুরুদ পাঠ করিলেও আল্লাহ তায়ালা তাহাকে তাহাজ্জুদ পাঠকদের মধ্যে গন্য করিয়া লইবেন।( তরীকুল ইসলাম - দ্বিতীয় ভাগ,পৃ:- ১০৩)।
** বিতর এর পর দু'রাকআত নফল ( যা
আমাদের নিকট শফিউল বিতর হিসেবে পরিচিত) প্রথম রাকআতে ফাতেহার পর " সূরা যিলযাল" আর দ্বিতীয় রাকআতে "
সূরা কাফিরুন" সহকারে আদায় করা উত্তম।
হাদীসে।নববী শরীফে উল্লেখ রয়েছে যে,যারা
গভীর রাতে জাগ্রত হতে পারবে না তাহাজ্জুদ
আদায়ের জন্য, এ দু'রাকআত নফল তাদের জন্য তাহাজ্জুদের স্থালাভিষিক্ত হবে।
(মিশকাত শরীফ,মাসিক তরজুমান - মাহে শাবান,১৪৩২ হি:,পৃ:-৬)।
মাহে রজব ও শা'বানে নফল নামাযের ফযীলত
__________________
** নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন,যে লোক রজব মাসের প্রথম
বৃহস্পতিবারে রোযা রাখে,এরপর মাগরিব ও
এশার মাঝখানে দু'দু' রাকআত করে ১২
রাকআত নামায পড়ে,প্রত্যেক রাকআতে
আলহামদু একবার, সূরা ক্বদর ৩ বার, সূরা
ইখলাছ ১২ বার এবং শেষে ৭৫ বার এই দুরুদ
পড়ে - " আল্লহুম্মা চল্লি 'আলা মুহাম্মাদানিন
নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ও'আলা আলিহী"। এরপর
সিজদায় সত্তর বার বলে - " ছুব্বুহুং কুদ্দুছং
রব্বুল মালাঈকাতি ওররুহী"। এরপর মাথা তুলে ৭০ বার বলে -" রব্বিগফির ওরহাম ওতাজা ওয 'আম্মা তা'লামু ইন্নাকা
আংতাল আলিয়্যুল 'আযিম।"
এরপর দ্বিতীয় সিজদা করে এবং প্রথম
সিজদায় যা পড়েছিলো তাই পড়ে,এরপর
সিজদার মধ্যেই নিজের প্রয়োজন কামনা
করে দোয়া করে,তার সকল প্রয়োজন পূর্ণ করা হবে। তার সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা,বালুকার সংখ্যা,
পাহাড়ের ওজন এবং গাছের পাতাগুলোর সমানও হয়।
কিয়ামতের দিন সে তার পরিবারের ৭০০
মানুষের শাফায়াত করবে,যারা জাহান্নামের উপযোগী হবে।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৭)।
** হাদীস শরীফে রয়েছে যে,হুজুর করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ
করেছেন,"যে ব্যক্তি শা'বান মাসের প্রথম
তারিখে রাতে বার রাকআত নফল নামায
আদায় করবে এ নিয়মে - প্রত্যেক রাকআতে
সূরা ফাতিহার পর ৫ বার করে সূরা ইখলাছ
পাঠ করবেন। আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তিকে
বার হাজার শহীদের সওয়াব প্রদান করবেন
এবং বার বছর ইবাদতের সওয়াব তার জন্য
লিপিবদ্ধ করা হবে।গুনাহ থেকে এভাবে পবিত্র করা হবে,যেন সবেমাত্র স্বীয় মাতার গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছে এবং ৮০ দিন পর্যন্ত তার আমলনামায় কোন গুনাহ লিপিবদ্ধ হবে না।( ফাদাইলু শুহুর, মাসিক তরজুমান - মাহে শা'বান,১৪৩২ হি:,পৃ:- ৯)।
** শা'বানের ১৫ তারিখ রাতে দু'দু'
রাকাআত করে ১০০ রাকাআত নামায পড়বে।
প্রতি রাকআতে আল - হামদুর পর ১১ বার সূরা ইখলাছ পড়বে। ১০০ রাকাআত সম্ভব না হলে ১০ রাকাআত এবং প্রত্যেক রাকাআতে
আল - হামদুর পরে ১০০ বার সূরা ইখলাছ পড়বে।
সালফে সালেহীনগণ এ নামায পড়তেন এবং
একে " ছলাতুল খাইরি" বলতেন।মাঝে মধ্যে
তারা এ নামায জামা'আতেও পড়তেন।হযরত
হাসান বসরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,৩০ জন
সাহাবী আমার নিকট এ হাদীস বর্ণনা
করেছেন যে,যে লোক রাতে এ নামায পড়বে,
আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি ৭০ বার রহমতের দৃষ্টি দেবেন এবং প্রত্যেকবারের দৃষ্টিতে তার ৭০টি প্রয়োজন পূরণ করবেন।
তার মধ্যে সর্বনিম্ন প্রয়োজন হচ্ছে
মাগফিরাত।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৬৭,
গুনিয়াতুত্তালিবীন,মাসিক তরজুমান - মাহে শা'বান,১৪৩২ হি:, পৃ:-১১)।
** এক রেওয়ায়েতে রয়েছে যে,হুজুর
আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ফরমান," আমার সৌভাগ্যবান উম্মতের মধ্যে
যেই দশ রাকআত নফল নামায এ নিয়মে আদায় করবে,প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার পর এগার বার করে সূরা ইখলাছ পাঠের মাধ্যেমে, তাহলে তার গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং তার হায়াতে অসংখ্য বরকত নসীব হবে।( নুযহাতুল মাজালিছ,মাসিক তরজুমান - মাহে শা'বান,১৪৩২ হি:,পৃ:- ১২)।
ছলাতুত তাসবীহ নামায ও এর ফযীলত
__________________
** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে,একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমার পিতা) আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে বললেন: হে আব্বাস,হে আমার চাচা! আমি কি আপনাকে দিবনা,আমি কি আপনাকে দান করব না,আমি আপনাকে বলবোনা,আমি কি করবো না আপনার সাথে দশটি কাজ ( অর্থাৎ, শিক্ষা দিব না দশটি তাসবীহ), যখন আপনি তা করবেন,আল্লাহ আপনার গুনাহ মাফ করে দিবেন - প্রথমের গুনাহ, শেষের গুনাহ,পুরান গুনাহ,নতুন গুনাহ; অনিচ্ছাকৃত গুনাহ, ইচ্ছাকৃত গুনাহ,
ছোট গুনাহ ও বড় গুনাহ এবং গুপ্ত গুনাহ ও
প্রকাশ্য গুনাহ। আপনি চার রাকআত নামায
পড়বেন,যার প্রত্যেক রাকাআতে কেরাআত
শেষ করবেন,দাঁড়ান অববস্থায় বলবেন,"
ছোবহানাল্লহি ওল হামদু লিল্লাহি - ওলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওল্লাহু আকবার" ১৫ বার, অত:পর রুকু করবেন এবং রুকু অবস্থায় তা বলবেন ১০ বার,তারপর রুকু হতে মাথা উঠাবেন
এবং ( ছামিয়াল্লাহু....... বলার পর) বলবেন
উহা ১০ বার,তারপর সেজদায় যাবেন এবং
( সেজদার তাছবীহর পর) সিজদাবস্থায়
বলবেন উহা ১০ বার, তারপর সিজদা হতে
মাথা উঠাবেন এবং বলবেন তা ( বসাবস্থায়)
১০ বার,অত:পর সিজদায় যাবেন (২য় সিজদা) এবং ( পূর্বের মত সেখানে তাছবীহ পাঠের পর) বলবেন তা ১০ বার,অত:পর মাথা উঠাবেন এবং বলবেন তা ১০ বার। সুতরাং প্রত্যেক রাকাআতে এটা হল ৭৫ বার। এভাবে আপনি চার রাকাআতে তা করবেন। যদি আপনি প্রত্যেক দিন একবার এরকম নামায পড়তে পারেন পড়বেন,যদি তা করতে না পারেন তা হলে প্রত্যেক সপ্তাহে একবার করবেন,যদি তাও না পারেন তা হলে বৎসরে একবার, আর যদি তাও না পারেন - তবে অন্তত নিজের জীবনে একবার পড়বেন।( আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ শরীফ।আর বায়হাকী দা'ওয়াতে কবীরে এবং তিরমিযী আবু রাফে' থেকে এটার অনুরুপ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ১২৫২,পৃ:-২১৩)।
** এ নামায পড়ার আরেকটি নিয়ম - তা
হলো :- চার রাকাআত বিশিষ্ট উক্ত নামাযের
তারতীব যা তিরমিযী শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু র
সূত্রে বর্ণিত তা নিম্নরুপ:-
আল্লাহু আকবার বলে নিয়্যত করে সানা পাঠ
করবে তারপর কলেমায়ে তামজীদ
(সুবুহানাল্লাহি ওল হামদু লিল্লাহি.......)
পনের বার,তারপর আউযু - বিছমিল্লাহ,সূরা
ফাতিহা ও অন্য সূরা পাঠ করে দশবার উক্ত
তাছবীহ পাঠ করবে,রুকুর তাছবীহ পড়ার পর
দশবার,রুকু থেকে উঠে রব্বানা লাকাল হামদ
বলার পর দাঁড়ানো অবস্থায় দশবার,সাজদাতে
যাওয়ার পর সাজদার তাছবীহ পাঠের পর তা
দশবার পাঠ করবে,সাজদা থেকে উঠে বসে
দশবার,আবার সাজদায় সাজদার তাছবীহ
পাঠের পর দশবার। অতএব,১ম রাকাআতে
পঁচাত্তর বার পূর্ণ হলো। তারপর দ্বিতীয়
রাকাআতে ক্বিরআতের পরে রুকুতে যাওয়ার
পূর্বে দশবার এভাবে পূর্ব নিয়মে পঁচাত্তরবার
পাঠ করবে। অনুরুপভাবে প্রতি রাকাআতে
পঁচাত্তর বার করে তিনশত বার উক্ত তাছবীহ
পাঠ করবে।( তিরমিযী শরীফ ও গুনিয়া, যুগ
জিজ্ঞাসা - পৃ:- ২০৮)।
সালাতুল আসরার
____________
** ইমাম আবুল হাসান নূরুদ্দীন আলী বিন জারীর লাখশী শাতনুফী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বাহজাতুল আসরার কিতাবের মাঝে এবং মোল্লা আলী কারী ও শায়খ আবদুল হক্ব
মুহাদ্দেছে দেহলভী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা,
হুজুর ছায়্যিদুনা গাউছে আযম রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণনা করেন,মাগরীবের নামাযের
পর ( সুন্নাতের পর) দুই রাকাআত নফল নামায এইভাবে পড়বে যে,প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতেহার পর ১১ বার সূরা ইখলাছ পড়বে।
সালাম ফিরানোর পর আল্লাহু তায়ালার
প্রশংসা করবে এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরুদ ও সালাম
পড়বেন এবং এগার বার বলবে " ইয়া
রসূলাল্লাহি ইয়া নবী আল্লাহি আগিছনী
ওয়ামদুদনী ফী ক্বযায়ে হা জাতি ইয়া ক্বদিয়াল হাজাত। তারপর ইরাক অর্থাৎ,বাগদাদ শরীফের দিকে ১১ কদম চলবে এবং প্রতি কদমে এই বলবে " ইয়া গাউছাছ ছাক্বা
লাইনি ইয়া কারিমাত তারফাইনী আগিছনী
ওয়ামদুদনী ফী ক্বাযায়ে হা - জাতি,তৎপর
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
উছিলায় আল্লাহর কাছে দোয়া করবে।এমন
করলে তার মনের বাসনা পূরণ হবে।( বাহারে
শরীয়ত,কাদেরিয়া তরিকার শাজরাহ শরীফ,
পৃ:-৬০ - ৬১)।
__________________
ফয়যানে শরিয়ত ও মারফত (আমলের ভান্ডার)
লেখক : মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন