গাউছে পাকের মর্যাদা সম্পর্কে হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীর বর্ণনা
হযরত সাইয়্যেদেনা কুতুবল আকতাব খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকী (رحمة الله) যাকে প্রত্যেক মান শ্রদ্ধা করে থাকে। তিনি গাউছে পাকের মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন:
অনুবাদ: হযরত গাউছুস্ সাক্বালাইন (মানব-দানবের প্রার্থনা গ্রহণপূর্বক সাহায্যকারী) হলেন সকল আউলিয়া কেরামের কেবলা। আর তিনি নিজ মুরীদগণকে ইহকালে ও পরকালে সাহায্য করে থাকেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ‘গাউছুস্ সাক্বালাইন’ এর অর্থ হচ্ছে দু’জগতের গাউছ অথবা সকল মানব-দানবের গাউছ। অর্থাৎ সকল মানব ও দানবের ফরিয়াদ শ্রবণপূর্বক সাহায্যকারী।
অনুবাদ: হে গাউছে পাক! আপনার একটি শুভদৃষ্টি উভয় জগতে আমাদের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং আমাদের প্রতি একটু সুদৃষ্টি দান করুন।
অনুবাদ: আমি অস্থির ব্যক্তির সকল কাজ অনেক দূর পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। আপনি পুনরায় দয়া প্রদর্শনপূর্বক আমার মুশকিল আসান করে দিন।
অনুবাদ: হে গাউছুস্ সাক্বালাইন! হুজুরের পদধূলি, অন্তরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আলোক বর্তিকা। আপনার পদধূলি দ্বারা আমার চক্ষুকেও রৌশন করুন।
অনুবাদ: হে গাউছে পাক! আমি বেদনাকাতর বান্দা, এমন এক রোগী যা থেকে আরোগ্য লাভ করার কোন উপায় আমি দেখছিনা। শুধু আপনার করুণাই আমার রোগের মহৌষধ বলে আমি বিশ্বাস রাখি।
অনুবাদ: আপনার দরবার সকল সৃষ্টির যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের কা’বা স্বরূপ। মেহেরবানী পূর্বক আমার হাজতও পূরণ করুন।
অনুবাদ: হে দো’জাহানের সাহায্যকারী! আমার অন্তর মরে গেছে। হুজুর! আর আপনার পবিত্র নাম মুহীউদ্দিন। এ মৃত ব্যক্তির অন্তরে একটু প্রাণের সঞ্চার করুন।
অনুবাদ: হে গাউছ! মিস্কিন কুতুবুদ্দিনের ভাগ্যে আপনার গোলামীর সম্মান অর্জিত হয়েছে। তাঁর মুহাব্বাতকে আরো বৃদ্ধি করে দিন।
(কালামুল আউলিয়া ফি শানে ইমামিল আউলিয়া)
হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী (رحمة الله) এর মর্যাদা সম্পর্কে কে না জানে। হযরত উলামায়ে দেওবন্দ এবং শাহ্ আব্দুর রহীম মুহাদ্দিসে দেহলভী এর সুযোগ্য পুত্র হযরত শাহ্ অলিউল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) স্বয়ং এবং অন্যান্য সকল হযরাতগণ গাউছে পাকের প্রশংসায় তাঁদের যবান ছিল সিক্ত। হযরত অলিউল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) তাঁর রচিত انتباه এবং القول الجميل সহ অন্যান্য গ্রন্থে সরকারে গাউছে পাক (رحمة الله)কে غوث الثقلين উপাধি দ্বারা স্মরণ করেছেন এবং غوث الاعظم বলেছেন।
আল্লামা আব্দুর রহমান জামী নকশবন্দী (رحمة الله) গাউছে পাককে গাউছুস্ সাক্বালাইন (সকল মানব ও দানব অথবা দো’ জাহানের ফরিয়াদরস) উপাধি বলে সম্বোধন করেছেন। হযরত শাহ্ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী স্বরচিত ‘আখবারুল আখইয়ার’ নামক কিতাবে গাউছুল আজমকে কুতুবুল আকতাব অর্থ সমস্ত কুতুবগণের সর্দার, সুলতানুস্ সালাতীন অর্থ রাজাধিরাজ, গাউছুস্ সাক্বালাইন অর্থ দো’জাহানের ফরিয়াদরস অথবা মানব ও দানবের ফরিয়াদ শ্রবণপূর্বক সাহায্যকারী, মুহীউদ্দিন অর্থ দ্বীনকে পুনর্জীবন দানকারী, শায়খে দারাইন অর্থ দো’জাহানের পেশওয়া, হাদিউস সাক্বালাইন অর্থ জীন এবং ইন্সানের হেদায়েত দাতা ইত্যাদি উপাধি দ্বারা স্মরণ করেছেন।
হযরত খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকী (رحمة الله) নিজ গ্রন্থ তোহফায়ে হানাফিয়ায় এক দীর্ঘ প্রশংসা হযরত গাউছে পাক শায়খ মুহীউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর পবিত্র শানে লিখেছেন। ইনশাআল্লাহ্ আল্লাহ্ তায়ালা গাউছে পাকের তোফায়েলে আমাকে তৌফিক দান করলে ঐ সমস্ত কছিদা ও اشعار গুলো এক জায়গায় একত্রিত করে পাঠকবৃন্দের খেদমতে পেশ করবো। এ সংক্ষিপ্ত গ্রন্থে তা লেখার সুযোগ হলো না।
হযরত শায়খুল মাশায়েখ হযরত শায়খ খাজা বাহাউদ্দিন নক্শবন্দী (رحمة الله) গাউছে পাকের প্রতি তার ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে বলেন:
অনুবাদ: শায়খ আবদুল কাদের দো’ জাহানের বাদশাহ্। আর বাদশাহ্ আবদুল কাদের আদম সন্তানগণের সর্দার।
অনুবাদ: চন্দ্র, সূর্য, আরশ, কুরছি, লোওহ, কলম, কলবের নূর শাহেনশাহ বাগদাদ সাইয়্যেদেনা মুহীউদ্দিন মাহবুবে সোবহানী শায়খ সাইয়্যেদ আবদুল কাদের (رحمة الله) এর মহা নূর হতে প্রকাশিত হয়েছে।
(ফতহুল মুবীন ও কালামুল আউলিয়অ ইত্যাদি দ্রষ্টব্য)
এমনিভাবে কাদেরিয়া, চিশ্তিয়া, নক্শবন্দিয়া, মুজাদ্দেদিয়া তরিকার বুজুর্গগণ হযরত গাউছে পাকের দরবারে প্রার্থনা নিবেদন করেছেন।
হযরত খাজা কুত্বুদ্দিন বখতিয়ার কাকী (رحمة الله) বলেন:
অনুবাদ: হে গাউছে পাক! আপনি তো সকল বাদশাহর বাদশাহ্। আর সকল বাদশাহগণ আপনার করুণা ভিখারী। আপনার দান ও বদান্যতা এত বিশাল, দুনিয়ার ভিক্ষুকরাও আপনার বদান্যতায় বাদশাহী লাভ করে থাকে।
অনুবাদ: হে বাদশাহ্ সালামত! কুতবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী যে আপনার শাহী দরবারে একজন ক্ষুদ্র ভিখারীর মত, আপনার খেদমতে হাজির হয়েছে। আল্লাহ্ তায়ালাকে জানা-চেনার পদ্ধতি এবং তাঁর মা’রেফাতের সকল রহস্যগুলো অবহিতপূর্বক এ অধমকে ধন্য করুন। অর্থাৎ তাঁর মর্যাদা বুলন্দ করুন।
অনুবাদ: হে জিলানের বাদশাহ্! কুতুবে রব্বানী, মানব ও দানবের ফরিয়াদ গ্রহণকারী, আমাকে সাহায্য করুন। যেন আমি আপনার গুণকীর্তন আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে বর্ণনা করতে পারি।
হযরত শায়খ নূরুদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবনে ইউসুফ (رحمة الله) গাউছে পাকের শানে বলেন:
وَلَـه الْحَقَائِقُ وَالطَّرَائِقُ وَالطَّرَائِقُ فِى الْهُدٰى
وَلَـه الْمَعَارِفُ كَالْكَوَاكِبِ تَـزْهَرُ
অনুবাদ: তিনি হাক্বীক্বত এবং তরীকতের পথপ্রদর্শক। আল্লাহ্ তায়ালার মা’রেফতের ইলম তাঁর নিকট আকাশের তারকারাজির মত উজ্জ্বল।
হযরত ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ ইবনে আহমদ ইবনে সাঈদ (رحمة الله) বলেন:
شَهِدَتْ بِرُتْبَتِه جَمِيْعُ مَشَائِخٍ
فِىْ عَصْرِه كَانُوْا بِغَيْرِ تَنَاكُرٍ
অনুবাদ: সমস্ত মাশায়েখগণ হুজুর গাউছে পাকের উঁচু মর্যাদার সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর এ সম্পর্কে কেউ অস্বীকার করেনি।
مَا مِنْ رَئِيْسٍ كَانَ صَـدْرُ زَمَانِـه
اِلَّا وَمُبَشِّرُهُمْ بِاكَرَمِ طَائِـرٍ
অনুবাদ: প্রত্যেক আউলিয়ার সরদারগণ অর্থাৎ কুতুবগণ নিজ নিজ যুগের লোকদের কাছে হুজুরে গাউছে পাকের শুভাগমনের শুভ সংবাদ দিয়ে গেছেন।
وَالْكُلُّ كَانُوْا قَبْلَـه حُـجَّابُـه
فَتَقَدَّمُوْه وَكَانُوْا كُلُّ عَسَاكِرٍ
অনুবাদ: শাহেনশাহের আগমনের সুসংবাদ দেয়ার জন্য সেনাবাহিনীর মত তাঁরা তাঁর পূর্বে আগমন করেছিলেন।
وَاَتٰى كَسُلْطَانٍ تَقَدَّمَ جَـيْشُـه
شَـمْسًا تَغِيْبُ كُلّ نَـجْمٍ زَاهِـرُ
অনুবাদ: তিনি এক মর্যাদাবান বাদশাহর মত শুভাগমন করেছেন। যার সম্মুখভাগে তাঁর সৈন্য সামন্তগণ গমন করে থাকে। অর্থাৎ আউলিয়া কেরাম যাঁরা হুজুর গাউছে পাকের বাহিনী। তাঁরা তাঁর পূর্বে আগমন করে মানুষকে সুসংবাদ দেন যে, বাদশাহ্ সালামত আসছেন। যেভাবে সূর্যের সম্মুখে সমস্ত উজ্জ্বল তারকারাজি অদৃশ্য হয়ে যায় তেমনিভাবে বেলায়েতের আকাশের সকল উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলো একদম অদৃশ্য হয়ে গেল।
এমন অনেক اشعار ও কছীদা রয়েছে তার মধ্য হতে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু কছীদা ও شعر এ গ্রন্থে পেশ করলাম।
_____________
কালামুল আউলিয়া ফি শানে ইমামিল আউলিয়া
রহমাতুল্লাহে তায়ালা আলাইহিম আজমাঈন
রচনায়:মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী
অনুবাদ: অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ নুরুল আলম খাঁন
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন