সব নব প্রচলিত কাজ বর্জনীয় বা মাকরূহ নয়
নবী করিম (ﷺ) এর পরবর্তী যুগে যে কোন কাজ নব প্রচলিত হলেই কি তা মন্দ বা বর্জনীয় কিংবা মাকরূহ বলে গণ্য হবে? এ ক্ষেত্রে মন্তব্য যে, আসলে সব নব প্রচলিত কাজ বর্জনীয় বা মাকরূহ নয় যদি না তা সত্যের দিশারী পবিত্র সুন্নাহর পরিপন্থী হয়।
মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তদীয় প্রণীত কিতাব ‘মিরকাত শরহে মিশকাত’ এ উল্লেখ করেছেন-
انّ احداث مالا يتازع الكتاب والنة ليس بمذموم .
অর্থাৎ- যে সব নব প্রচলিত কার্যাদি কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী নয়, তা মন্দ বা বর্জনীয় নয়। তাছাড়া, ‘দস্তুরুল ওলামা’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে-
ومن الجهلة من يجعل كل امر لم يكن فى زمن الصحابة بدعة مذمومة وان لم يقم دليل على قبحه تمسكا بقوله صلى الله عليه وسلّم اياكم ومحدثات الامور ولا يعلمون المراد بذالك ان يجعل فى الدين بما هو ليس منه .
অর্থাৎ- কিছু এমন মূর্খ ব্যক্তি রয়েছে, যারা ছাহাবা কেরামের যুগে ছিলনা এমন সব কার্যাদিকে ‘বর্জনীয় বিদ্আত’ বলে অভিহিত করে; অথচ, তারা তাদের এ দাবীর সপক্ষে কোন সুস্পষ্ট ও যথার্থ প্রমাণ দাঁড় করাতে পারে না। যদিও তারা এ প্রসঙ্গে হুজুর (ﷺ) এর হাদিস-
ايَّـاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ
অর্থাৎ- তোমরা নব আবিষ্কৃত কার্যাদি থেকে বিরত থাক। এটিকে তাদের পক্ষে ‘দলীল’ হিসেবে পেশ করে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তারা এ ‘মহান বাণীর’ ভাবার্থ সম্পর্কে মোটেই অবগত নয়। তার প্রকৃত মাহাত্ম্য হল পবিত্র দ্বীন তার পরিপন্থী কার্যকলাপ থেকে বারণ করে। যদি কোন কাজ পথ নির্দেশক সুন্নাহর পরিপন্থী হয় তবেই তো সে কার্যটি মন্দ বা পরিহার্যের যোগ্য হয়। নতুবা সুন্নাহসম্মত নব প্রচলিত কার্যাদি সম্পর্কে হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র হাদিস-
مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً . الخ
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি ইসলামে প্রশংসনীয় সুন্নাহ বা কার্যাদির নব প্রচলন করে এটিই প্রযোজ্য। কাজেই উক্ত কাজটি যে ‘বিদ্য়াত-ই-হাছানাহ’ বা শরীয়তের একটা পূণ্যময় নব প্রচলিত কার্য এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। আর ‘বিদ্আত ই-হাছানাহ’ যে ‘মোস্তাহাব’ এতেও কারো দ্বিমত নেই। ফতোয়া শামীতে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়-
ان البدعة الـحسنة متفق على نـدبـها . (شامى)
অর্থাৎ-‘বিদ্য়াত-ই-হাছানাহ্’ ‘মোস্তাহাব’-এটা সর্বস্বীকৃত অভিমত। (শামী)
‘নুরুল আনোয়ার’ নামক কিতাবে উল্লেখ করা হয়- المثبت اولى من النافى অর্থাৎ- ‘কোন স্বীকৃতিসূচক কাজ অস্বীকৃতিসূচক কাজ থেকে উত্তম; যদি তার অবৈধতা সম্পর্কে কোন প্রমাণ না থাকে। কেননা প্রত্যেক কিছু মূলতঃ ‘মোবাহ্’। যেমন ‘উছুল-ই-ফিক্হর’ কিতাবাদিতে বর্ণিত হয়েছে-
اصل الاشياء الاباحة
মূলতঃ প্রত্যেক কিছু ‘মোবাহ’; যতক্ষণ না তা হারাম বা মাকরূহ তাহরীমী বলে دليل ظنى বা دليل قطعى দ্বারা প্রমাণিত হয়। হাদিস শরীফে হুজুর (ﷺ) এরশাদ করেছেন-
الْحَلَالُ مَا أَحَلَّ اللهُ فِي كِتَابِهِ وَالْحَرَامُ مَا حَرَّمَ اللهُ فِي كِتَابِهِ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ مِمَّا عَفَا عَنْهُ . (مشكوة سريف)
অর্থাৎ- সে সব বস্তু হালাল; যা আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কোরআনে হালাল বলে বর্ণনা করেছেন। আর সে সব বস্তু হারাম; যা আল্লাহ্ তায়ালা কোরআন মজিদে হারাম বলে বর্ণনা করেছেন এবং যে সব বস্তু সম্পর্কে হালাল বা হারাম কিছুই বর্ণনা করেননি তা মার্জনীয় অর্থাৎ ‘মোবাহ’। আবার কোন মোবাহ বস্তু স্থান ও কাল বিশেষে মোস্তাহাবের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। যেমন- উছূল বেত্তাগণ মন্তব্য করেছেন-
مرتفع عن درجة الاباحة الى رتبة المستحب كما صرح به غير واحد من المحققين .
অর্থাৎ- ‘মোবাহ’ কখনো ‘মোস্তাহাব’ এর পর্যায়ে উন্নীত হয়। বহু সংখ্যক বিজ্ঞ আলেম (ফকীহ) এ অভিমত প্রকাশ করেছেন।
_____________
আল্-ক্বাওলুল হক্ব
(জানাজায় উচ্চরবে যিকির জায়েয প্রসঙ্গে)
রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল-কাদেরী (رحمة الله)
অনুবাদঃ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মন্নান (এম.এম.এম.এফ)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন