মাটি থেকে খুঁজে খুঁজে পতিত টুকরা খাওয়া


ছরকারে বাগদাদ হুযূরে গউসে পাক (رحمة الله) বলেন: “আমি যখন শহরে খাওয়ার জন্য পতিত টুকরা কিংবা জঙ্গলের কোন ঘাস বা ফুলের পাপড়ী তুলতে চাইতাম আর এমন সময় যদি দেখতাম, অন্য ফকিরও এটা খুঁজছেন, তখন নিজের ইসলামী ভাইকে ঈসার (তথা অপরকে নিজের উপর প্রাধান্য দান করে তা তুলতাম না বরং ওভাবেই রেখে দিতাম যাতে তারা তুলে নিয়ে যায় আর নিজে ক্ষুধার্ত থাকতাম।  যখন ক্ষুধার কারণে দুর্বলতা সীমার বাইরে চলে গেল আর আমি মৃত্যুর নিকটবর্তী হয়ে গেলাম তখন “ফুলের বাজার থেকে একটি খানার বস্তু যা মাটিতে পতিত অবস্থায় ছিল তা আমি উঠালাম আর এক কোনায় গিয়ে সেটা খাওয়ার জন্য বসলাম। এরই মধ্যে একজন অনারবী যুবক সেখানে আসল যার কাছে টাটকা রুটি ও ভুনা মাংস ছিল। সে সেখানে বসে তা খেতে লাগল। এটা দেখে আমার খাওয়ার আগ্রহ প্রচন্ডভাবে বেড়ে গেল। যখন সে তার খাবার খাওয়ার জন্য লােকমা উঠাত তখন ক্ষুধার অস্থিরতার কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মন চাইত যেন মুখ হা করে দিই যাতে সে আমার মুখে লােকমা ঢেলে দেয়। এ সময়ও আমি অত্যন্ত ধৈর্যধারণ করলাম, আর আমার নফসকে ধমক দিয়ে বললাম, “ধৈর্যহারা হবিনা, আল্লাহ আমার সাথে আছেন। আমি আমার এ নীতির উপর অটল রইলাম আর প্রতিজ্ঞা করলাম অবস্থা যা-ই হােক না কেন আমি কিন্তু এ যুবক থেকে চেয়ে কখনাে খাব না। হঠাৎ ঐ যুবক আমার দিকে মনােনিবেশ করল, আর বলতে লাগল, “ভাই! আসুন, আপনিও (رحمة الله) খাবারে অংশ গ্রহণ করুন।" আমি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলাম। সে বারংবার অনুরােধ করতে  লাগল। আমার নফস আমাকে খাওয়ার জন্য খুবই উৎসাহ দিল কিন্তু আমি  তারপরও অস্বীকৃতি জানালাম। কিন্তু ঐ যুবকের বারংবার বলার কারণে আমি সামান্য পরিমাণ খাবার খেয়ে নিলাম। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কোথাকার বাসিন্দা? আমি বললাম: “জীলানের” সে বলল: আমিও জীলানের অধিবাসী। আচ্ছা, “আপনি সুপ্রসিদ্ধ আবিদ ও যাহিদ, আল্লাহর ওলী হযরত সায়্যিদ আবদুল্লাহ্ সূমাঈ (رحمة الله) এর নাতি আবদুল কাদির (رحمة الله) কে চেনেন?” আমি বললাম: “সেতাে আমিই।” একথা শুনে সে অস্থির হয়ে উঠল আর বলতে লাগল, “আমি যখন বাগদাদ আসছিলাম তখন আপনার আম্মাজান (رحمة الله) আপনাকে  দেয়ার জন্য আমাকে সােনার আটটি দিনার দিয়েছিলেন। আমি এখানে বাগদাদে এসে আপনাকে (رحمة الله) খুঁজতে থাকি কিন্তু কেউ আপনার (رحمة الله) সন্ধান দিতে পারে নি।শেষ পর্যন্ত আমার সব টাকা-পয়সা খরচ হয়ে যায়। আজ তিনদিন থেকে আমি উপবাস। আমি যখন ক্ষুধায় দুর্বল হয়ে গেলাম এবং প্রাণ যাওয়ার : উপক্রম হল তখন আমি আপনার (رحمة الله) আমানত থেকে এ রুটি ও ভুনাকৃত মাংস ক্রয় করলাম। হুযূর! আপনি (رحمة الله) আনন্দচিত্তে এটা আহার করুন। কারণ এগুলাে আপনারই (رحمة الله) সম্পদ। প্রথমে আপনি (رحمة الله) আমার মেহমান ছিলেন আর এখন আমি আপনার (رحمة الله) মেহমান।" অবশিষ্ট টাকা-পয়সা ফেরত দিয়ে বলল: “আমি ক্ষমা প্রার্থী। উপায়হীন অবস্থায় আমি আপনার (رحمة الله) টাকা থেকে খাবার কিনেছি।” আমি তার কথায় খুবই খুশী হলাম। আমি অবশিষ্ট খাবার ও আরাে কিছু মূল্যবান জিনিস তাকে দান করলাম, সে তা গ্রহণ করল এবং বিদায় নিল। (আব্দুজাইল আলা বাতিল হানা-বিলা, ৩য় খন্ড, ২৫০ পৃষ্ঠা)  


আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।


তলব কা মুহ তাে কিস কাবিল হে ইয়া গউছ,


মগর তেরা করম কামেল হে ইয়া গউছ। (হাদায়িখে বখশিশ)।



প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা। এ ধরণের ক্ষুধা সহ্য করা ও কঠিন মুসিবতে আক্রান্ত হওয়ার পর নিজেরই সম্পদ ফিরে পাওয়ার পরও সেটা দান করে দেয়া সত্যিই অনেক বড় ধরনের ত্যাগের কথা, আর এটা আওলিয়ায়ে কিরামগণের رَحِمَہُمُ الله تَعَالٰی অংশ আমাদের গউসে আযম (رحمة الله) এর উপবাসকে শত মারহাবা ও তাঁরদানকেও শত কোটি মারহাবা! হায়! এমন যদি হত!আমাদের মাঝেও দানের আগ্রহ সৃষ্টি হয়ে যেত।হায়! হায়! আমাদেরতাে পেট ভর্তি করে নেয়ার পর অবশিষ্ট খানাটুকুও দান করার উদ্দীপনা থাকেনা বরং আগামীতে খাওয়ার জন্য সেগুলাে ফ্রিজের মধ্যে রেখে দেই। হায়! এমন যদি হত, দানের মহান সাওয়াব অর্জনের জন্য আমাদেরও মন-মানসিকতা সৃষ্টি হয়ে যেত।

_______________

কিতাব : ফয়যানে সুন্নাত

লেখক : আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)

সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন