উদারতা/মহত্ত্ব, হিতাকাঙ্ক্ষা, মহানুভবতা ও বদান্যতা, এসবেরও আলাদা আলাদা অর্থ বিদ্যমান। কিছু মানুষ এগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন শাখায় বিভক্ত করে থাকেন। তারা বলেন যে, কারাম তথা উদারতা/মহত্ত্ব হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী কোনো কাজে খুশি মনে দান করা। তাঁরা এটাকে সাহস-ও বলেছেন, যা নিচুতার বিপরীত। বদান্যতা হচ্ছে অন্যদের কাছ থেকে কারো যা প্রাপ্য সেটার প্রতি ইচ্ছাকৃত নিস্পৃহতা। এটা মন্দ স্বভাবের বিপরীত। মহানুভবতা হচ্ছে সহজে ব্যয় করা এবং প্রশংসিত নয় এমন কিছু অর্জনকে এড়িয়ে চলা। এটা কৃপণতার বিপরীত।
এসব মহৎ গুণের ক্ষেত্রে মহানবী (ﷺ)-এর কোনো সমকক্ষ ছিল না এবং কেউই তাঁকে এতে ডিঙ্গিয়ে যেতে পারেননি। তাঁকে যাঁরা চিনতেন, তাঁরা সবাই তাঁর সম্পর্কে এভাবেই বর্ণনা করেছেন।
❏ ইবনে আল-মুনকাদির (رحمة الله) হযরত জাবের ইবনে আবদিল্লাহ (رضي الله عنه)-কে বলতে শুনেছেন, “মহানবী (ﷺ)-কে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কখনোই উত্তরে ‘না’ বলতেন না” [আল-বুখারী]। সর্ব-হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) ও সাহল ইবনে সা’আদ (رضي الله عنه) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
❏ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, “মহানবী (ﷺ) ছিলেন উপহারসামগ্রী দানের ক্ষেত্রে অন্যান্যদের মাঝে সবচেয়ে উদার এবং রমযান মাসেও তিনি ছিলেন সবার চেয়ে সহৃদয়বান। জিবরীল আমীন (عليه السلام)-এর সাথে যখন তাঁর সাক্ষাৎ হয়, তখন তিনি এমন কি প্রেরিত (বৃষ্টি বর্ষণকারী ও উপকারী) বায়ুর চেয়েও উদার ছিলেন।” [মুসলিম ও বুখারী শরীফ]
❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে কিছু একটা চেয়েছিলেন, তিনি তাকে দুই পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত সমস্ত ভেড়া দান করেন। ওই ব্যক্তি স্বগোত্রীয় লোকদের কাছে ফিরে গিয়ে বলেন, ‘ওহে মানুষেরা, তোমরা ইসলাম ধর্ম কবূল করো, কেননা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমনভাবে উপহার সামগ্রী দান করেন যে, তিনি দারিদ্র্যকে ভয়-ই পান না।’ “ [মুসলিম]
❏ মহানবী (ﷺ) একাধিক ব্যক্তিকে এক’শ উট দান করেন। সাফওয়ান‘কে তিনি এক’শটি উট, এরপর আরো এক’শটি, অতঃপর আরো এক’শটি উট দান করেন। ওহী নাযিল হওয়ার আগে থেকেই এটা তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল। ওয়ারাক্বা ইবনে নাওফাল একবার তাঁকে বলেন, “আপনি পরিশ্রমে ক্লান্তদের সমর্থন যোগান এবং দুঃস্থদের টিকিয়ে রাখেন।” [আল-বুখারী ও মুসলিম]
হাওয়াযিম গোত্রের ৬০০০ বন্দিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের হাতে প্রত্যার্পণ করেন। তিনি হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)-কে এতো সোনা দান করেছিলেন যে তিনি তা বহন করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। নব্বই হাজার দিরহাম তাঁর কাছে অানা হলে তিনি তা একটি (খড়ের তৈরি) ফরাশের ওপর স্থাপন করেন এবং এরপর উঠে দাঁড়িয়ে সেগুলো বণ্টন করেন। তিনি এর প্রার্থীদের কাউকেই ফিরিয়ে দেননি, যতোক্ষণ না সেগুলো ফুরিয়ে গিয়েছিল।
❏ একবার এক ব্যক্তি এসে তাঁর কাছে কিছু একটা চান। মহানবী (ﷺ) বলেন, “আমার কাছে কিছুই নেই, তবে তুমি যা চাও তা কিনতে পারো; পরে অর্থ জোগাড় হলে আমি তা তোমার হয়ে পরিশোধ করবো।” এমতাবস্থায় হযরত উমর ফারূক (رضي الله عنه) তাঁকে বলেন, “আল্লাহ পাক আপনার সামর্থ্যের বাইরে কোনো বোঝা আপনাকে বহন করতে বাধ্য করেননি।” এ কথায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) চিন্তিত হন। অতঃপর এক আনসার সাহাবী (رضي الله عنه) বলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! (অর্থ) ব্যয় করুন এবং আরশের অধিপতির (খোদাতা’লার) তরফ থেকে তা হ্রাস পাবার শঙ্কাবোধ না করুন।” এতে মহানবী (ﷺ) স্মিত হাসেন এবং তাঁর (অনুভূত) আনন্দ ও সুখ তাঁরই মোবারক চেহারায় ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, “আমি এই ব্যাপারেই আদিষ্ট হয়েছি।”[আত্ তিরমিযী (رحمة الله) কর্তৃক বর্ণিত]
বর্ণিত আছে যে, মু’ওয়াব্বেয ইবনে ‘আফরা (رضي الله عنه) বলেন, “আমি মহানবী (ﷺ)-এর খেদমতে কিছু খেজুর ও শশা পেশ করলে তিনি আমাকে এক হাত-ভর্তি রত্নখচিত অলঙ্কারাদি ও স্বর্ণ দান করেন।”
❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পরের দিনের জন্যে কোনো কিছু মওজূদ করতেন না।”
হুযূরে পাক (ﷺ)-এর উদারতা/মহত্ত্ব ও বদান্যতা সম্পর্কে এমন আরো অনেক বর্ণনা বিদ্যমান।
❏ হযরত আবূ হুরায়রাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, একবার এক লোক মহানবী (ﷺ)-এর দরবারে আসেন কোনো নির্দিষ্ট কিছু চাইতে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই লোকের কাছ থেকে (ইতিপূর্বে) অর্ধেক ওয়াসক্ব্ ধার করেছিলেন, আর লোকটি তা-ই ফেরত নিতে এসেছিলেন। হুযূর পূর নূর (ﷺ) তাকে এক ওয়াসক্ব্ (৬০ সা’ পরিমাণ, যা আনুমানিক ১৩৫ কেজি) দান করেন। তিনি বলেন, “এর অর্ধেক হচ্ছে কর্জ পরিশোধ, বাদবাকিটুকু উপহার।” [কে এটা বর্ণনা করেছেন, তা অজ্ঞাত]।
________________
কিতাবঃ আশ শিফা [অসম্পূর্ণ]
মূল: ইমাম কাজী আয়াজ (رحمة الله)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন