হাদিস শরিফের আলোকে কুরবানির ফযিলত


 হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত:

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ‏ مَا عَمِلَ ابْنُ آدَمَ يَوْمَ النَّحْرِ عَمَلاً أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ هِرَاقَةِ دَمٍ وَإِنَّهُ لَيَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُونِهَا وَأَظْلاَفِهَا وَأَشْعَارِهَا وَإِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ عَلَى الأَرْضِ فَطِيبُوا بِهَا نَفْسًا

-“হুযুর নবী করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন: কুরবানির দিন আদম সন্তান এমন কোন কাজ করতে পারে না, যা মহামহিম আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত (কুরবানি) করার তুলনায় অধিক পছন্দনীয় হতে পারে। কুরবানির পশুগুলো কিয়ামতের দিন এদের শিং, খুর ও পশমসহ উপস্থিত হবে। কুরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই (কুরবানি) মহান আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌঁছে যায়। অতএব, তোমরা আনন্দ সহকারে কুরবানি করো।”৩৫


৩৫ - ইবনু মাজাহ, আস-সুনান, হাদিস: ৩১২৬;


     ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, হাদিস: ১৪৯৩।



হাদিস শরিফে এসেছে:



عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ قَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا هَذِهِ الأَضَاحِيُّ قَالَ‏ سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ قَالُوا فَمَا لَنَا فِيهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ بِكُلِّ شَعَرَةٍ حَسَنَةٌ قَالُوا فَالصُّوفُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ بِكُلِّ شَعَرَةٍ مِنَ الصُّوفِ حَسَنَةٌ



-“হযরত যায়দ বিন আরকাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাহাবাগণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! এই কুরবানি কী (কুরবানির এ পদ্ধতি কার থেকে আসল)? হুযুর পাক (ﷺ) ইরশাদ করলেন- এটি তোমাদের পিতা ইবরাহিম আলাইহিস্ সালাম-এর সুন্নাত। তাঁরা আবার আরয করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমাদের জন্য এতে কী ছাওয়াব রয়েছে? ইরশাদ করলেন, এতে (কুরবানির পশুটির) প্রত্যেক পশমের সমান নেকি রয়েছে। আবার জিজ্ঞেস করলেন, দুম্বা বা ভেড়ার পশমের হুকুম কী? ফরমালেন, দুম্বা বা ভেড়ার প্রত্যেক পশমের পরিবর্তেও নেকি রয়েছে।” ৩৬


৩৬ - সুনানু ইবনি মাজাহ, হাদিস নং- ৩১২৭;


     সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী, হাদিস নং- ১৮৭৯৫;


     আল-মু‘জামুল কাবীর লিত্-তাবারানী, হাদিস নং- ৫০৭৫।



ইমাম মুসলিম উম্মুল মু’মিনিন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন:



عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِكَبْشٍ أَقْرَنَ يَطَأُ فِي سَوَادٍ وَيَنْظُرُ فِي سَوَادٍ وَيَبْرُكُ فِي سَوَادٍ فَأُتِيَ بِهِ فَضَحَّى بِهِ فَقَالَ‏ يَا عَائِشَةُ هَلُمِّي الْمُدْيَةَ  ثُمَّ قَالَ اشْحَذِيهَا بِحَجَرٍ‏ فَفَعَلَتْ فَأَخَذَهَا وَأَخَذَ الْكَبْشَ فَأَضْجَعَهُ وَذَبَحَهُ وَقَالَ‏ بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ‏ ثُمَّ ضَحَّى بِهِ صلى الله عليه وسلم



-“রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এমন দুম্বা কুরবানি করতে নির্দেশ করেন, যার শিং নিখুঁত, হাঁটা কালো, দেখতে কালো এবং শোয়াও কালো (অর্থাৎ পা, চোখ, পেট সবই কালো রঙের)। তিনি বললেন: হে আয়েশা! ছুরি দাও। এরপর বললেন: এটা পাথরে ঘষে ধারালো করো। আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, আমি তাই করলাম। তিনি ছুরি নিলেন, দুম্বাকে ধরে কাৎ করে শোয়ান এবং জবাই করার সময় বললেন: ‘বিসমিল্লাহ; হে আল্লাহ! আপনি এ কুরবানি মুহাম্মাদ (ﷺ), মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর পরিবার ও তাঁর উম্মতের পক্ষ হতে কবুল করুন।’ অতঃপর তিনি দুম্বাটি কুরবানি করলেন।”৩৭


৩৭ - আবু দাউদ,আস-সুনান, হাদিস নং- ২৭৯২।



ইমাম আবু দাউদ বর্ণনা করেন:



عَنِ الْبَرَاءِ قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ النَّحْرِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَقَالَ مَنْ صَلَّى صَلاَتَنَا وَنَسَكَ نُسُكَنَا فَقَدْ أَصَابَ النُّسُكَ وَمَنْ نَسَكَ قَبْلَ الصَّلاَةِ فَتِلْكَ شَاةُ لَحْمٍ‏ فَقَامَ أَبُو بُرْدَةَ بْنُ نِيَارٍ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَاللَّهِ لَقَدْ نَسَكْتُ قَبْلَ أَنْ أَخْرُجَ إِلَى الصَّلاَةِ وَعَرَفْتُ أَنَّ الْيَوْمَ يَوْمُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ فَتَعَجَّلْتُ فَأَكَلْتُ وَأَطْعَمْتُ أَهْلِي وَجِيرَانِي فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم‏ تِلْكَ شَاةُ لَحْمٍ‏ فَقَالَ إِنَّ عِنْدِي عَنَاقًا جَذَعَةً وَهِيَ خَيْرٌ مِنْ شَاتَىْ لَحْمٍ فَهَلْ تُجْزِئُ عَنِّي قَالَ نَعَمْ وَلَنْ تُجْزِئَ عَنْ أَحَدٍ بَعْدَكَ



-“হযরত বারাআ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কুরবানির দিন ঈদের নামাযের পর আমাদের সম্মুখে ভাষণ দিলেন এবং বললেন: যে ব্যক্তি আমাদের মত সলাত আদায় করলো, আমাদের মত কুরবানি করলো, তার কুরবানি সঠিক হলো। আর যে ঈদের সলাতের পূর্বে কুরবানি করলো, তা (কুরবানি না হয়ে) গোশত খাওয়ার বকরি হলো। আবু বুরদাহ ইবনু নিয়ার (رضي الله عنه) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর শপথ! আমি তো সলাতের জন্য বের হওয়ার আগেই কুরবানি করে ফেলেছি। আমি ভেবেছিলাম, আজ পানাহারের দিন। তাই তাড়াহুড়া করে কুরবানির গোশত নিজে খেয়েছি, পরিবার-পরিজন এবং প্রতিবেশীদেরও খেতে দিয়েছি। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: এটা গোশত খাওয়ার বকরি হলো। আবু বুরদাহ বলেন, আমার কাছে ছয় মাস পূর্ণ বয়সের একটি ছাগল আছে, যা আমার গোশত খাওয়ার বকরির চেয়েও উত্তম। এটা কি আমার কুরবানির স্থান পূর্ণ করবে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, কিন্তু তোমার পরে আর কারো জন্য এরূপ করা জায়িয হবে না।” ৩৮

৩৮ - আবু দাউদ,আস-সুনান, হাদিস নং- ২৮০০।

_________________

কুরবানি (ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও আহকাম)

গ্রন্থনা ও সংকলন:

মুফতি মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন আন-নাজিরী

অধ্যক্ষ, জামি‘আ-এ-‘ইলমে মদীনা, নেত্রকোণা

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন