হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম খাওয়াস(رحمة الله) একবার জঙ্গলে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ এক ব্যক্তি কোথেকে বের হয়ে আসল আর বলতে লাগল, “আমি আপনার সংস্পর্শে থাকতে চাই।” তিনি (رحمة الله) যখন তার দিকে দৃষ্টি দিলেন তখন তাঁর অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হল। এরই মধ্যে সে বলতে লাগল, “আমি খ্রীষ্টান পাদ্রী। রােম থেকে আপনার (رحمة الله) সংস্পর্শে থাকার জন্য হাজির হয়েছি।” তাঁর (رحمة الله) অন্তরে সৃষ্ট ঘৃণার গােপন রহস্য প্রকাশ পেয়ে গেল। অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি কাফির হওয়ার কারণে এমনটা হয়েছিল। তিনি (رحمة الله) পাদ্রীকে বললেন: “আমার নিকট পানাহারের কোন কিছু নেই, আবার যেন এমন না হয়, তুমি ক্ষুধায় কষ্ট পাবে।" সে বলতে লাগল, ইয়া সায়্যিদী! দুনিয়াতে আপনার (رحمة الله) এরকম নামের ঢংকা বাজছে আর আপনি এখনাে পানাহারের চিন্তায় ব্যস্ত রয়েছেন। তার কথায় তিনি (رحمة الله) আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং তার মনােভাব জানতে পেরে তাকে তাঁর সংস্পর্শে থাকার অনুমতি দিয়ে দিলেন। ৭ দিন ৭ রাত পানাহার করা ব্যতীত কেটে গেল। এখন সে ভয় পেয়ে গেল, আর বলতে লাগল, “ইয়া সায়্যিদী! এখন এ ব্যাপারটা আমার সয্যের বাইরে চলে গেছে। পানাহারের কোন ব্যবস্থা করে দিন।" তিনি (رحمة الله) সিজদায় পড়ে গেলেন আর আল্লাহর দরবারে আরয করলেন: “ইয়া আল্লাহ! এ কাফির আমার ব্যাপারে সু-ধারণা পােষণ করেছে। আমার মান-সম্মান তােমার হাতে, আমাকে এ কাফিরের সামনে অপমান কর না।” দোয়া করে যখন সাজদা থেকে মাথা উঠালেন তখন দেখতে দেখতে একটি ছােট্ট খাবারের থালা সেখানে হাজির হয়ে গেল, যাতে দুইটি রুটি ও দুই গ্লাস পানি রাখা ছিল। পানাহার করে উভয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন। আবার ৭ দিন। অতিবাহিত হওয়ার পর তারা অন্য কোথাও অবস্থান নিলেন। তখন ঐ পাদ্রী সিজদায় পড়ে দোয়া করল। তৎক্ষণাৎ একটি থালা আত্মপ্রকাশ করল, যাতে ৪ টি রুটি ও ৪ গ্লাস পানি ছিল! তিনি (رحمة الله) আশ্চার্য হয়ে গেলেন আর এ সিদ্ধান্ত নিলেন যে, এসব থেকে কিছু তিনি খাবেন না, কারণ এ খানা একজন কাফিরের জন্য এসেছে। সে বলতে লাগল, “ইয়া সায়্যিদী! পানাহার করুন! আর দুইটি বিষয়ের সুসংবাদও শুনুন, একটি হচ্ছে আমি ইসলাম গ্রহণ করছি। এ কথা বলে সে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে নিল। অন্যটি হচ্ছে, আল্লাহর নিকট আপনার (رحمة الله) অনেক উঁচু মর্যাদা রয়েছে।” আমি সিজদায় গিয়ে এ দোয়া করেছিলাম, ইয়া আল্লাহ! প্রিয় মুস্তফা (ﷺ) যদি সত্য রাসূল হয়ে থাকেন তবে আমাকে দুইটি রুটি ও দুই গ্লাস পানি দান কর আর যদি ইবরাহীম খাওয়াস (رحمة الله) তােমার ওলী হয়ে থাকেন তবে আরাে দুইটি রুটি ও দুই গ্লাস পানি দান কর।" দোয়া শেষ করে যখনই আমি মাথা উঠালাম তখন খানার এ থালা বিদ্যমান দেখতে পেলাম।" হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম খাওয়াস (رحمة الله) এ কথা শুনার পর খাবার খেলেন আর اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ ঐ নওমুসলিম বেলায়াতের উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্টিত হল। (কাশফুল মাহজুব হতে সংকলিত, ৪৩৩-৪৫ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহর ওলীগণ رَحِمَہُمُ الله تَعَالٰی অনেক অনেক দিন ধরে উপবাসের কষ্ট সহ্য করে থাকেন। তাঁদেরকে সাহায্য করা হয় আর তাঁদের জন্য অদৃশ্য থেকে খাবার দেয়া হয়। সায়্যিদুনা ইবরাহীম খাওয়াস (رحمة الله) এর সংস্পর্শে থেকে কাফিরও আল্লাহর দয়া লাভে সৌভাগ্যবান হলেন আর মুসলমান হয়ে বেলায়াতের মর্যাদা পেয়ে গেলেন। প্রত্যেকের উচিত, মন্দ সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা এবং নেককারদের সংস্পর্শ অবলম্বন করা।
হাদীসে পাকে রয়েছে: “উত্তম সহচর সে-ই, যাকে দেখলে তােমাদের অন্তরে আল্লাহর স্মরণ আসে আর তাঁর কথা বার্তার মাধ্যমে তােমাদের (নেক) আমল বৃদ্ধি পায় এবং তাঁর আমল তােমাদেরকে আখিরাতের (কথা) স্মরণ করিয়ে দেয়।" (জামে সগীর, দ্বিতীয় অংশ, ২৪৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪০৬৩) :
ইয়াক যামানা ছুহবতে বা আউলিয়া,
বেহতর আযু ছদ সালা আত বেরিয়া।
_______________
কিতাব : ফয়যানে সুন্নাত
লেখক : আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন