নামায আদায়ের নিয়ম


নামাযির উচিত প্রথমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্রতা অর্জন করে নিয়মানুযায়ি অযু করে প্রথমে কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াবে, অতঃপর যে ওয়াক্তের নামায পড়বে, কিংবা ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল ইত্যাদি যে নামাযই হোক না কেন সে নামাযের নিয়্যত করে উভয় হাত উভয় কানের লতি পর্যন্ত উঠায়ে আল্লাহু আকবর বলে নাভির নিচে বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে হাত বাঁধবে এবং ছানা পাঠ করবে। অতঃপর তাআ‘উয ও তাসমিয়া পাঠ করে সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে এবং সূরায়ে ফাতিহার সাথে সূরায়ে ইখলাস কিংবা অন্যকোন সূরা বা ছোট তিন আয়াত অথবা বড় এক আয়াত পাঠ করে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে রুকু করবে, রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ ৩ বার, ৫ বার কিংবা ৭ বার পড়ে তাসমি তথা সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তাহমিদ তথা ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। তারপর ‘আল্লাহু আকব’র বলে সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ ‘সুবহানা রাব্বিল আ’লা’ ৩ বার, ৫ বার কিংবা ৭ বার পাঠ করবে। অতঃপর আল্লাহু আকবর বলে বসে যাবে। ১ তাসবিহ সময় পরিমাণ বসে আল্লাহু আকবর বলে দ্বিতীয় সিজদা করে প্রথম সিজদার ন্যায় তাসবিহ পাঠ শেষে আল্লাহু আকবর বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে এবং প্রথম রাকাতের ন্যায় সূরা ফাতিহা ও অন্য কোন সূরা পাঠ করবে তবে তাআ‘উয পড়তে হবে না। কিরাত শেষে রুকু, সিজদা প্রথম রাকাতের ন্যায় সমাপ্ত করে দু-জানু হয়ে বসে পড়বে এবং তাশাহুদ তথা আত্তাহিয়্যাতু দরূদ শরীফ এবং দু‘আ পাঠ করে ডানে-বামে সালাম দিয়ে নামায শেষ করবে। আর যদি ৩ রাকাত কিংবা ৪ রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায হয় তাহলে দু’রাকাতে বসে আত্ত্যাহিয়্যাতু তথা তাশাহুদ পাঠ করে আল্লাহু আকবর বলে দাঁড়িয়ে বাকী রাকাত পূর্বের ন্যায় আদায় করবে তবে সূরায়ে ফাতেহার পর অন্য সূরা পড়তে হবে না। তবে ৪ রাকাত বিশিষ্ট সুন্নাত হলে শেষের ২ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা পাঠ করতে হবে। সর্বশেষ রাকাতে তাশাহুদ পাঠ করে এর সাথে দরূদ এবং দু‘আ আদায় করে প্রথমে ডানে তারপর বামে সালাম ফিরায়ে নামায শেষ করবে। প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরছি ১ বার, সুবহানাল্লাহ-৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ-৩৩ বার, আল্লাহু আকবর-৩৪ বার পাঠ শেষে কালেমায়ে তাওহীদ ১ বার পাঠ করে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করবে।


আর যদি জামাতে নামায পড়তে হয়, তাহলে নামাযের নিয়্যত করে ইমামের পিছনে ইকতিদা করে প্রথম রাকাতে চুপে চুপে ছানা পাঠ করে নিরব থাকবে এবং বাকী রাকাতেও কিছু পড়বে না। তবে যখন ইমাম ছাহেব তাকবীর বলবে তখন মুক্তাদীগণ চুপে চুপে তাকবীর বলবে। রুকু, সিজদার তাসবীহ পাঠ করবে। আর যখন ইমাম ছাহেব তাসমি বলবে তখন মুক্তাদি তাহমিদ বলবে। ২ রাকাত বিশিষ্ট নামায হলে যথানিয়মে ২ রাকাত পর তাশাহুদ, দরূদ শরীফ ও দোয়া পাঠ করবে। আর যদি ৪ রাকাত কিংবা ৩ রাকাত বিশিষ্ট হয় তাহলে প্রথম বৈঠকে শুধুমাত্র তাশাহুদ পড়বে এবং শেষ রাকাতে তাশাহুদ, দরূদ ও দু‘আ পড়ে ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে।



আর যদি জামাত আরম্ভ হওয়ার পর কোন ব্যক্তি এমন অবস্থায় আসে যখন ইমাম ছাহেব প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করছে অথবা ফাতিহার পর অন্য সূরা পাঠ করছে, এমতাবস্থায় দ্রুত গিয়ে ইমামের সাথে ইকতিদা করে নিবে অর্থাৎ নামাযে শরীক হয়ে যাবে এবং নিরব থেকে ইমামের কিরাত শ্রবণ করবে। যখন ইমাম রুকুতে যাবে মুক্তাদিও চুপে চুপে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে রুকুতে যাবে, এভাবে ইমামের অনুসরণ করে নামায শেষ করবে। আর যদি ইমামের সাথে ইকতিদা করার পূর্বে কোন রাকাত নামায ছুটে যায় সেক্ষেত্রে ইমাম ছাহেব সালাম ফিরানোর পর ছুটে যাওয়া নামায পুরো করবে এবং যে রাকাত নিজে শুরু করবে তা ছানা পড়ে শুরু করতে হবে।


জানা আবশ্যক যে, যদি মুক্তাদির কিছু নামায বাকী থাকে তাহলে ইমামের সাথে শেষ রাকাতে শুধুমাত্র তাশাহুদ পাঠ করবে, দরূদ শরীফ এবং দু‘আ পাঠ করবে না। বরং ছুটে যাওয়া নামায আদায় করে শেষ রাকাতে তাশাহুদ, দরূদ শরীফ ও দু‘আ পাঠ করে সালাম ফিরাবে।



নোট: বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মাসায়ালা-মাসায়েল ও বিশেষত নামায সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আমার লিখিত র্কুরাতুল উয়ুন লিমানিল মু’মিনুনাল মুখলিসুন, তরিকুস সালাত ‘আলা ছাবিলিল ইজাজ বিল-মাযহাবিল হানাফী, মুনিয়াতুল মোছলেমীন ১ম, ২য় খণ্ড, ফতোয়া আজিজিয়া ১ম, ২য় খন্ড ইত্যাদি কিতাবগুলো দেখুন।



সমাপ্ত


___________________

গাউছিয়া আজিজিয়া নামায শিক্ষা

রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী (রহ)

সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন