আহলে বেদা’ত ও আহলে সুন্নাতের সংজ্ঞা

 

আহলে বেদা’ত ও আহলে সুন্নাতের সংজ্ঞা


❏ ইমাম আবদুল গণি নাবলুছি (رحمة الله) হাদীকাতুন্নদীয়া শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদীয়া কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন:

ويبصرون بنعلهم السنة الحسنة وان كان بدعة باهل السنة لا اهل البدعة لان النبى صلّى الله عليه وسلّم قال من سن سنة حسنة تسمى المبتدع للحسن مستا فادخله النبى صلّى الله عليه وسلّم فى السنة وقرن بذالك الابتداع وان لم يرد فى الفعل فقد ورد فى القول فالسان سنى مدخوله بتسمية النبى صلّى الله عليه وسلّم فيما فر من السنة .


অর্থাৎ: তোমরা কি দেখ না যে, ঐ ধরণের সুন্নতের অনুসরণ করার কারণে তাদেরকে আহলে সুন্নাত বলা হয়। আহলে বেদা’ত বলা হয় না, অথচ প্রচলন করেছেন নতুন কাজের, কেননা হাদীস শরীফের মধ্যে উত্তম কোন কাজ নতুন প্রচলনকারীকে সুন্নতের উপর আমলকারী নামে ভূষিত করা হয়েছে। আর রসূলে পাক (ﷺ) ইজাদ (নব আবিষ্কৃত) ও সুন্নত দুই শব্দকে একই সঙ্গে উলে­খ করেছেন। ঐ সমস্ত কাজ সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে হুজুর পাক (ﷺ)-এর কৃতকর্ম হতে প্রমাণ না থাকলেও পবিত্র বাণী হতে প্রমাণিত আছে। সুতরাং ধর্মে নতুন কাজের সৃষ্টিকারীরা ‘সুন্নী’। কেননা ঐ কাজগুলোকে হুজুর পুরনুর (ﷺ) সুন্নত নামে অভিহিত করেছেন। বুঝা গেল কোন ভাল কাজ যে কোন সময়েই প্রচলিত হয়, সেটা বেদাতে ছাইয়্যেয়া বা নিকৃষ্ট বেদা’ত হতে পারেনা। বরং সেটা উৎকৃষ্ট বা হাছানা।



❏ হাদীসঃ من سن فى الإسلام سنة حسنة এর মধ্যে من যে শব্দটি রয়েছে তা অনির্দিষ্ট হওয়ার প্রেক্ষিতে চাইতো কুরুনে ছালাছাতে (নূরনবী (ﷺ) হতে পরবর্তী তিনটি যুগে) হোক বা এর পরে হোক সেটা উৎকৃষ্ট। এক্ষেত্রে যে কাজটা শরীয়তভিত্তিক হবে সেটাই বেদাতে হাসানা ও গ্রহণযোগ্য। যদি শরীয়ত সম্মত না হয় তাহলে তা হবে নিকৃষ্ট ও পরিত্যাজ্য।



❏ হাদীসঃ خير القرون قرنى ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم الخ


অর্থাৎ: উত্তম যুগ হল আমার যুগ অতঃপর ছাহাবাদের অতঃপর তাবেঈনদের যুগ---।



উক্ত হাদীসটিতে যুগ বা জমানার উন্নতমানের কথাই উলে­খ করা হয়েছে। অর্থাৎ- অপরাপর যুগ হতে তুলনামূলকভাবে রাসূলে পাক (ﷺ)-এর যুগই সর্বোত্তম। খাইর ও বরকত এবং বিভিন্ন প্রকারের বিশৃঙ্খলা, ঝগড়া-বিবাদ মুক্ত ইত্যাদির দিক দিয়ে রাসূলে পাক (ﷺ)-এর যুগই সর্বোৎকৃষ্ট, তারপর ছাহাবাদের যুগ, এরপর তাবেঈনদের যুগ। পরবর্তী যুগসমূহে মারামারি ঝগড়া-বিবাদ বাড়তে থাকবে। শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন মানুষের জন্য দুষ্কর হয়ে উঠবে। অশান্তির কালো মেঘে ছেয়ে ফেলবে এ বিশ্বভ্রহ্মান্ড। পার্থিব লোভী, হিংসুক, বিদ্বেষকারী ও মোহ-লালসা বেড়ে যাবে। উন্নতি ও স্বচ্ছলতা কমতে থাকবে।


উদ্ধৃত হাদীসটিতে উলে­খিত বিষয়াবলীর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। শরীয়তের নির্দেশ ও কর্ম পদ্ধতির দিকে ইঙ্গিত করা হয়নি। ভাল কাজ যেই যুগেই হোক না কেন সেটা ভাল আর মন্দ কাজ যে যুগেই হোক না কেন সেটা হবে মন্দ।



❏ ওদিকেই নির্দেশ করা হয়েছে এই হাদীসটিতে যে,


من سن فى الإسلام سنة حسنة الخ


অর্থাৎ: যখনি যে কেউ দ্বীনে ইসলামের মধ্যে কোন ভাল পদ্ধতি আবিষ্কার বা প্রচলন করবে তার জন্য পুণ্য বা ছওয়াব নিহিত রয়েছে আর যারা তদানুযায়ী আমল করবে তাদের জন্যও পুণ্য বা ছওয়াব নির্ধারিত রয়েছে।


বুঝা গেলঃ (خير القرون قرني) ‘খায়রুল কুরুনে করনি’ হাদীসটি যুগের খায়র-বরকত ও শান্তির সাথে সংশি­ষ্ট আর ‘মন ছান্না সুন্নাতান হাছানাতান’ হাদীসটি আমল তথা আহকামের সাথে সংশি­ষ্ট। অতএব, যে আমল বা কাজটা ভাল ও সৎ; সেটা কুরুনে ছালাছার মধ্যে প্রচলিত না থাকলেও তা মুস্তাহাব এবং মুস্তাহাছান (সুন্দরময়)। ঐ আমলের উপর সওয়াব দেয়া হবে। বস্তুত ঐ ধরণের আমলকে বেদা’ত বা পালনকারীকে বেদাতী বলা নিঃসন্দেহে হাদীস এবং শরীয়তের উছুল (ভিত্তিসমূহের) এর বিরোধীতামূলক কথা।


اهل قرون ثلاثة নিষ্পাপ নয়।


 فان اهل القرون الثلاثة غير معصوم بالاتفاق


অর্থাৎ- সকলের ঐক্যমত দ্বারা প্রতীয়মান যে,


 اهل قرون ثلاثة নিষ্পাপ নয়।


শরীয়তের দলীল দ্বারা যা প্রমাণিত তা সর্বাবস্থায় জায়েয আর শরীয়ত নাজায়েয বলেছে তা সর্বাবস্থায় নাজায়েয। দ্বীনের اصولات তথা দ্বীনের ধারাসমূহ পরিবর্তন পরিবর্ধনশীল নয়।


উপরোক্ত বেদা’ত তাদের ধারণাপ্রসূত বেদা’ত। কেননা শরীয়তের ভিত্তিতে মিম্বরে দরূদ শরীফ পাঠ করার কারণে কতলের হুকুম দেওয়াটা কোন দলীলের ভিত্তিতে জায়েয ছিল?



❏ ‘কাশ্ফ’ এর ১৪৫ পৃষ্ঠায় উলে­খ আছে:


ان الصلواة عليه مستحبة مطلق مع رفع الصوت وبدونه على المنارة وغيرها فيجوز مطلقًا .


সাধারণত হুজুর (ﷺ)-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা মুস্তাহাব, উচ্চস্বরে হউক কিংবা নিম্নস্বরে (গোপনে) হউক। আজানখানায় হউক কিংবা অন্য যে কোন জায়গায় হউক। কেবলমাত্র যেখানে পাঠ করা নিষেধ আছে তা ব্যতীত সর্বস্থানে উচ্চস্বরে কিংবা নিম্নস্বরে উভয়ই এক সমান।


رفع الصوت بالصلوات على النبى صلّى الله عليه وسلّم عند الاذان فان الصلواة عليه اذا كانت سنة لم يكن رفع الصوت بها بدعة وكان فاعلها مخيرا بين رفع الصوت وخففه .


দরূদ শরীফ পাঠ করা যখন সুন্নাত কাজেই উচ্চস্বরে পাঠ করা বেদা’ত নয়। দরূদ শরীফ পাঠকের ইখতিয়ার রয়েছে যে, সে উচ্চস্বরে পাঠ করুক কিংবা গোপনে পাঠ করুক। অতএব আজানের সময় উচ্চস্বরে দরূদ শরীফ পাঠে অসুবিধার কিছু নাই। বরং তা মুস্তাহাব ও মুস্তাহাছন।


نعم لو فعلت بقصد الخصوصية والورود كانت بدعة .


হ্যাঁ, যদি কেউ উক্ত কাজটি এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বলে মতপোষণ করে তা হবে বেদা’ত।


ولم يقصدان هذا ماموربه بخصوصه لم يكن مبدعا فى الدين مبد دلالة الادلة الشرعية بعمومها او اطلاقها على استحباب الصلوة على النبى صلّى الله عليه وسلّم فى اى وقت كان .


নির্দিষ্টকরণের ক্ষেত্রে যদি ماموربه হওয়ার ইচ্ছা না করে তবে فى الدين হবেনা। শরীয়তে যেখানে সাধারণভাবে মুস্তাহাব হওয়ার কথা বলেছে। হুজুর (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠ করার জন্য কোন সময়সীমা সুনির্দিষ্ট নাই বরং যেখানে যখন ইচ্ছা হয় কেবলমাত্র নিষেধকৃত সময় ব্যতীত তা মুস্তাহাব।


আমাদের এই বর্ণনার উপর ভিত্তি করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বহু আমল, মাছআলা ও আকীদা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হবে। উপরে বর্ণিত হয়েছে যে,



❏ ইমাম আবদুল গণি নাবেলছি হানাফী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেনঃ


 فالسان سنى


অর্থাৎ- নতুন ভাল কোন পদ্ধতির প্রচলনকারী হল সুন্নী।



❏ রাসূলে পাক (ﷺ) এগুলোকে সুন্নাত বলে আখ্যায়িত করে ইরশাদ ফরমানঃ


من سن سنة حسنة الخ


(যে ব্যক্তি সুন্দর সুন্নাতের প্রচলন করল)।


_________________

কিতাবঃ আযানের আগে দরূদ পড়া জায়েয

রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল-কাদেরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)

অনুবাদঃ গোলাম মোহাম্মদ খান সিরাজী

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন