আজানের আগে-পরে দরূদ পড়ার ফজিলত
হযরত বেলাল (رضي الله عنه) হতে আজানের পূর্বে দরূদ পড়ার প্রমাণ
আজানের পর দরূদ শরীফ বা দোয়া পড়ার ব্যাপারে হয়ত কারো দ্বিমত নাই।
❏ কেননা হাদীসে পাকে স্পষ্ট ‘নছ’ (প্রামাণ্য বাক্য) আছে যে,
ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللهَ لِي الْوَسِيلَةَ -الخ .
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি আজানের পর আমার উপর দরূদ শরীফ পড়বে, তার প্রতি আল্লাহ্ পাক দশবার করুণা বর্ষণ করবেন। অতঃপর আল্লাহর নিকট আমার জন্য উছিলা প্রার্থনা কর।
এখন কথা হল আজানের আগে দোয়া ও দরূদ শরীফ পড়ার ব্যাপার। আমি এখন পাঠকমহলের সান্ত্বনাদায়ক একটি বর্ণনা প্রামাণ্য ও বিশুদ্ধ হাদীসগ্রন্থ আবু দাউদ শরীফ হতে উপস্থাপন করছি, যাতে উক্ত মাছআলাটা পরিস্কার হয়ে যায়।
❏ হযরত উরওয়া বিন জোবায়ের (رضي الله عنه) বনু নুজারের এক মহিলা হতে বর্ণনা করেছেন:
قَالَتْ كَانَ بَيْتِي مِنْ أَطْوَلِ بَيْتٍ حَوْلَ الْمَسْجِدِ فَكَانَ بِلَالٌ يُؤَذِّنُ عَلَيْهِ الْفَجْرَ فَيَأْتِي بِسَحَرٍ فَيَجْلِسُ عَلَى الْبَيْتِ يَنْظُرُ إِلَى الْفَجْرِ فَإِذَا رَآهُ تَمَطَّى ثُمَّ قَالَ اللَّهُمَّ إِنِّي أَحْمَدُكَ وَأَسْتَعِينُكَ عَلَى قُرَيْشٍ أَنْ يُقِيمُوا دِينَكَ قَالَتْ ثُمَّ يُؤَذِّنُ قَالَتْ وَاللهِ مَا عَلِمْتُهُ كَانَ تَرَكَهَا لَيْلَةً وَاحِدَةً هَذِهِ الْكَلِمَاتِ. (أبى دواد شريف)
অর্থাৎ- মহিলাটি এরূপ বর্ণনা করেছেন যে, মসিজদের চতুঃপাশের্ব অবস্থিত সকল ঘর হতে আমার ঘরটি ছিল খুব উঁচু। হযরত বেলাল (رضي الله عنه) ঐ ঘরের উপরে এসে ফজরের আজান দিতেন। তবে তিনি প্রথম থেকে এসেই ওখানে বসে ছুবহে ছাদেকের দিকে দেখতেন। যখন ছুবহে ছাদেক হয়ে যেত তখন অনেক্ষণ বসে থাকার দরুন অবশ হয়ে যাওয়াতে এপাশ ওপাশ গা ভাঙতেন আর হাই তুলতেন। তারপর (এই দোয়া) বলতেন ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আহমদুকা--- অর্থ: হে আল্লাহ্! আমি তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং তোমার নিকট কুরাইশদের তরে সাহায্য প্রার্থনা করছি যাতে তারা তোমার ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করে (অর্থাৎ মুসলমান হয়ে যাক) তারপর তিনি আজান দিতেনঃ আমি (বর্ণনাকারী) খোদার শপথ করে বলছি; কখনো তাকে উক্ত দোয়াটি (ভুলেও) বর্জন করতে দেখিনি। এ থেকে পরিস্কার প্রতীয়মান হল; আজানের পূর্বে দোয়া বা প্রার্থনা করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। আর সেই সময়ে ঐ প্রকারের দোয়া অধিকতর প্রযোজ্য ছিল। এ জন্যই হযরত বেলাল (رضي الله عنه) ঐ দোয়াটাই পড়তেন; যেন কুরাইশরা মুসলমান হয়ে আল্লাহর দ্বীনের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন। যখন আজানের পূর্বে দোয়া করা হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হল তাহলে সমগ্র দোয়ার ভান্ডার দরূদ শরীফ কি করে নাজায়েয ও বেদা’ত হতে পারে। অথচ আলেমগণ বর্ণনা করেছেন যে, দরূদ ও সালাম দোয়া হতে অনেক শ্রেষ্ঠ।
মুসলমান! চিন্তা করে দেখুন হযরত বেলাল (رضي الله عنه) ঐ দোয়াটা পড়ার পর আজান দিতেন। কেউ কি একথা বলার দুঃসাহস করতে পারত যে, হযরত বেলাল (رضي الله عنه) আজানের কলমা বা বাক্যগুলো বদলে দিয়েছেন বা তাতে নিজের তৈরী কোন বাক্য ঢুকিয়ে দিয়েছেন অথবা বর্ধিত করেছেন কিংবা ঐ দোয়াটা আজানের অংশ হয়ে গেছে? না কেউ এ ব্যাপারে মুখ খোলার সাহস রাখে না। উলেখিত হাদীস শরীফ হতে একথাও প্রমাণিত হল যে, ঐ দোয়াটা উচ্চ স্বরে পাঠ করা হত তা না হলে ঐ মহিলাটি কি করে প্রত্যহ ঐটা শুনতে পেতেন। মনে রাখা চাই যে, আজান হল ইবাদত।
❏ যেমনঃ ফোকহায়ে কেরামরা উলেখ করেছেন:
الاذان عبادة يقصد منها الخشوع لله (كتاب الفقه)
অর্থাৎ- আজান হল ইবাদত। এর মাধ্যমে অন্তরে খোদাভীতি জাগরণের ইচ্ছা পোষণ করা হয়। কেননা ইবাদতের পূর্বে এবং পরে দরূদ শরীফ পড়া মুস্তাহাব সাব্যস্ত হল। কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা উত্তম ইবাদত।
❏ যেমন হাদীস শরীফে আছে:
أَفْضَلَ الْعِبَادَةِ تِلَاوَتِ الْقُرآن .
অর্থাৎ- নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হল কোরআন মজীদ পাঠ করা। কিন্তু সেই তেলাওয়াতের পূর্বে ও পরে দরূদ শরীফ পাঠ করা হয়। এখন বলুন এর কারণ ও প্রমাণ কি আছে। একথা অবশ্যই মানতে হবে যে, ওলামাগণের মতে ইবাদতের আগে ও পরে দরূদ শরীফ পড়া মুস্তাহাব। কেউ যদি কুরআন শরীফ তেলাওয়াতের পূর্বে দরূদ শরীফ পাঠ করে, তাতে কি কেউ একথা বলবে যে, দরূদ শরীফ কুরআনের অংশ হয়ে যাওয়ার ভয় আছে; তাই না পড়াই ভাল হবে।
❏ আজানের পর তো মতভেদ ছাড়াই দরূদ শরীফ পড়া শরীয়তসম্মত। যেমনঃ
الصلواة على النبى عقبه مشروعة بلاخلاف سوأ كانت من المؤذن او من عيره (كتاب الفقه)
অর্থাৎ-আজানের পর রাসূলে পাক (ﷺ)-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা ইমামদের মতভেদ ছাড়াই প্রমাণিত ও শরীয়ত সম্মত। তাতে আজানদাতা ও শ্রোতা উভয়ের জন্য একই হুকুম।
আর এই নির্দেশ হাদীস শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং এটা অবশ্যই করণীয় মুস্তাহাব। এর বিরুদ্ধাচারণকারী ফাছেক ও পাপী। আজানের পূর্বে দরূদ পড়া তো মুস্তাহাব। তবে তা হাদীস শরীফে স্পষ্ট না থাকার কারণে বর্জনকারী ফাছেক হবে না। কিন্তু এটা মূল ভিত্তি (উছুলী) আর ফেকাহ্শাস্ত্রবিদদের রীতি (কাওয়ায়েদ ফক্হীয়া) অনুসারে কেয়াছ (ইসলামের চতুঃশাস্ত্রের একটি) এবং শরীয়তের প্রমাণাদির অন্তর্ভূক্ত। অতএব আজানের পূর্বে দরূদ শরীফ না পড়ার জন্য শাস্তি অথবা পড়ার জন্য বাধ্য বাধকতা নাই।
_________________
কিতাবঃ আযানের আগে দরূদ পড়া জায়েয
রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল-কাদেরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)
অনুবাদঃ গোলাম মোহাম্মদ খান সিরাজী
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন