সর্বদা দরূদ পাঠ করা উন্নত ধরণের মুস্তাহাব
❏ বেলায়তের রাজাধিরাজ শেরে খোদা হযরত আলী (رضي الله عنه) ফরমানঃ
لولا اجد ما فى ذكرالله لجعلت الصلواة النبوية عبادتى كلها .
অর্থাৎ- যদি আমি খোদার জিকির সংক্রান্ত নির্দেশগুলো না পেতাম তাহলে আমি অবশ্যই নবী মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ)-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করাকেই আমার যাবতীয় ইবাদত হিসাবে গ্রহণ করতাম। (সুবহানাল্লাহ্)
❏ বিশুদ্ধ হাদীসগ্রন্থ তিরমিযী শরীফে হযরত উবাই বিন কা‘আব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে: তিনি বলেন, “আমি প্রিয়নবী (ﷺ)-এর পাক দরবারে আরজ করলাম; ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমি আপনার প্রতি বিস্তর দরূদ শরীফ পাঠ করে থাকি; হুজুর! এখন আমাকে আদেশ করুন যে কি পরিমাণ দরূদ শরীফ আপনার জন্য নির্ধারিত করব। তখন প্রিয়নবী (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, যে পরিমাণে তোমার ইচ্ছা হয় পড়। আমি (বর্ণনাকারী) নিবেদন করলাম হুজুর এক চতুর্থাংশ পড়ব। নূরনবী মোস্তফা (ﷺ) ফরমান: তুমি যতটুকু চাও পড়। তবে দরূদ শরীফ বেশী করে পড় তাতে তোমার কল্যাণ হবে। অতঃপর আমি পুনরায় আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (ﷺ) অর্ধেক পড়ব। তিঁনি ইরশাদ ফরমানঃ যতটুকু ইচ্ছা হয় পড়। যদি এর চেয়েও অধিক পড়তে পার তাতে তোমার কল্যাণ হবে। অতঃপর আমি পুনরায় আরজ করলাম; ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! দুই তৃতীয়াংশ পড়ব। ফরমানঃ যে পরিমাণে ইচ্ছা হয় পড়। যদি এর চেয়েও বেশী পড়তে পার তাতে তোমার কল্যাণ হবে। আমি পুনরায় নিবেদন করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)!
أَجْعَلُ لَكَ صَلَاتِي كُلَّهَا قَالَ إِذًا تُكْفَى هَمَّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ .
অর্থাৎ- আমি সব সময়ের জন্য আপনার প্রতি দরূদ শরীফ পড়াকেই আমার অজিফা বা জপনায় পরিণত করব। তখন রসূলে পাক (ﷺ) ফরমানঃ তবেই তো সেটা তোমার দুশ্চিন্তা মুক্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট আর তোমার গুনাহসমূহ মুছে দেবার উপকরণ। (অর্থাৎ- এটি পরকালের সকল চিন্তা-ভাবনা বিদূরিত হবে আর তোমার সব পাপ মাফ করে দেওয়া হবে) [মেশকাত শরীফ]
উক্ত হাদীস শরীফ থেকে জানা গেল শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন বাধা না থাকলে সবসময় দরূদ শরীফ পাঠ করা উন্নত ধরণের মুস্তাহাব। তা থেকে একথাও জানা গেল যে, কুফুরী আর শির্ক ছাড়া ফিছক্ ও ফুজুরী গুনাহসমূহের কাফ্ফারা বা মোছনকারী হল দরূদ শরীফ (সুবহানাল্লাহ)।
❏ মোল্লা জামী (رحمة الله) তা কত সুন্দর করে ব্যক্ত করেছেন:
اگرچه غرق در فسق وفجورم
بحمد الله كه من عبد رسولم
অর্থাৎ- যদিও আমি পাপের মধ্যে ডুবে থাকি তথাপিও আল্লাহর শোকর আদায় করি এ জন্য যে, আমি রসূলে পাক (ﷺ)-এর বান্দা (উম্মত)।
বস্তুত ঐ পাক দরবার হতে একগুঁয়েমী করে ফিরে থাকা হতভাগার লক্ষণ মাত্র।
❏ কবি সুন্দর বলেছেন:
فجاء محمد سراجا منيرا
فصلوا عليه كثيرا كثيرا
অর্থাৎ- মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ) অত্যুজ্বল প্রদীপরূপে শুভাগমন করেছেন সুতরাং হে বিশ্ববাসী তোমরা এমন পবিত্র অস্তিত্বের (জাত) উপর অসংখ্যভাবে দরূদ শরীফ পড়তে থাক। অর্থাৎ মুস্তফা (ﷺ) আল্লাহ্ তায়ালার ফয়ূজাত বা অনুকম্পার সূর্যসাদৃশ। হে খোদার জ্যোতি অন্বেষণকারীরা! সেই খোদায়ী অনুকম্পা লাভের জন্য নূরনবী সরকারে দো’আলম (ﷺ)-এর নূরানী কদমে সদা-সর্বদা বিনম্রচিত্তে, বিনয়াবনত মস্তকে দরূদ-ছালামের তোহফা পাঠাতে থাক। তাহলে তোমরা খোদার আলোকে আলোকিত ও নূরানী হতে পারবে। হুজুর ছৈয়দে কায়েনাত (ﷺ) নবুওয়াত ও হেদায়তের সূর্য; যেটা উদিত হওয়ার পর অন্য কোন আলোকের প্রয়োজন পড়ে নাই। অপর সব আলো ঐ অত্যুজ্বল আলোকে হারিয়ে গেছে। সমগ্র সৃষ্টিজগত ঐ প্রধান ও অনির্বাণ আলোকবর্তিকার অন্বেষণকারী এবং মুখাপেক্ষী। এমন কি পূর্ববর্তী সব নবী (عليه السلام) ও ঐ নূরের প্রত্যাশী।
❏ হযরত ইমাম বুছিরী (رحمة الله) উলেখ করেছেন:
فانه شمس فضلهم كواكبها
يظهرن انوارها للناس فى الظلم
রসূলে পাক (ﷺ) ফয়েজ, বরকত, রহমত ও বুজর্গীর সূর্যস্বরূপ এবং সমস্ত আম্বিয়া কেরাম (عليه السلام) ঐ সূর্য হতে কিরণ লাভকারী নক্ষত্রস্বরূপ। যারা অন্ধকারের মধ্যে আপন নূর দিয়ে সমগ্র মানবজাতিকে পথ প্রদর্শন করে থাকেন। এমন কি চন্দ্রও কিরণ লাভের উদ্দেশ্যে সূর্যের মুখাপেক্ষী হতে হয়। কেননা আল্লাহ্ তায়ালা সূর্যকে আলোর কেন্দ্ররূপে তৈরী করেছেন। অনুরূপভাবে খোদার নূর (জ্যোতি) আর ফয়েজ (অনুকম্পা) এর কেন্দ্ররূপে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র নবী মুস্তফা (ﷺ)-কে। এ জন্যই পূর্ববর্তী নবীগণ (عليه السلام) ও নবী মুস্তফা (ﷺ) হতে নূর ও ফয়েজ তালাশ করে থাকেন। ইমাম বুছিরী (র.) সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
❏ আল্লাহ্ পাকও আদেশ করেছেনঃ
صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অর্থাৎ- হে অন্বেষণকারীরা! নবী মুস্তফা (ﷺ)-এর প্রতি অগণিত, বিস্তর পরিমাণে দরূদ ও সালাম নিবেদন কর।
❏ আবার মাওলানা আরেফ রুমীও সেদিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন:
زيں سبب فرمود حق صلوا عليه
كه محمد بود محتاج اليه .
অর্থাৎ- আল্লাহ্পাক সমগ্র সৃষ্টিকে রসূলে পাক (ﷺ)-এর দরূদ শরীফ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন এ কারণেই যে, নূরনবী (ﷺ) সৃষ্টি জগতের ‘‘মুহতাজ ইলাইহী” (ভিখারীর লক্ষ্যস্থল)। তিনি দাতা এবং সমগ্র মখলুক তারই দুয়ারের ভিখারী। বস্তুত ভিক্ষুক এবং দাতার মধ্যে নিগুঁঢ়, নিবিড় সম্পর্ক অপরিহার্য। এজন্যই আল্লাহর আদেশ হল:
صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
এই খোলা নির্দেশ অনুযায়ী শরীয়ত অসম্মত স্থান, কাল, পাত্র ব্যতীত প্রত্যেক সময়ে দরূদ শরীফ পড়া মুস্তাহাব ও উত্তম।
❏ মখ্দুম হযরত মাওলানা ছৈয়দ জমীর উদ্দিন সাহেব স্বরচিত এ পুস্তকে ‘‘ইয়ানাতুত্তালেবীন” ২৩৬ পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি দিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর লিখেছেন:
فبهذا ثبت الصلواة والسلام عليه قبل الاذان فبعض الفقهاء المحققين استحسن هذا .
অতএব, এ উক্তি থেকে আজানের পূর্বে মুস্তফা (ﷺ)-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা প্রমাণিত হল। কোন কোন ফোকাহা (ধর্ম বিশেষজ্ঞ) উক্ত আমলটাকে মুস্তাহাছান (সুন্দর ও সুশ্রী কাজ) বলে ব্যক্ত করেছেন।
_________________
কিতাবঃ আযানের আগে দরূদ পড়া জায়েয
রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল-কাদেরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)
অনুবাদঃ গোলাম মোহাম্মদ খান সিরাজী
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন