বেদা’তের বর্ণনা এবং প্রকৃত বেদা’ত সম্পর্কে আলোচনা

 

বেদা’তের বর্ণনা এবং প্রকৃত বেদা’ত সম্পর্কে আলোচনা


প্রশ্নঃ ইবাদতের কর্মের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে হুজুর (ﷺ) থেকে প্রমাণিত হওয়া আবশ্যক। যদি হুজুর (ﷺ) থেকে প্রমাণিত না হয় তাহলে সে কর্ম ইবাদতের অন্তর্ভূক্ত করা بدعت سيئه হবে।

উত্তরঃ البدعة ادخال ما ليس من الدين فى الدين যা দ্বীন তথা শরীয়ত দ্বারা প্রমাণিত নয় তা দ্বীনের অন্তর্ভূক্তি করা বেদা’ত। অর্থাৎ-


من احدث فى امرنا فليس منه এর মাপকাঠি অনুযায়ী বিদা’ত আর যা فى امرنا এর অন্তর্ভূক্তি না হয়ে বরং للدين অর্থাৎ (لامرنا) দ্বীনের সত্যায়ন ও হক এবং সুদৃঢ়তার জন্য হয় তখন فى امرنا এর অন্তর্ভূক্ত নয়।



❏ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী মিম্বর কিংবা আজানখানায় হুজুর (ﷺ)-এর উপর উচ্চস্বরে দরূদ শরীফ পড়তে নিষেধ করেছে।


انه قتل رجلا اعمى كان مؤذنا صالحا ذاصوت حسن نهاة عن الصلواة على النبى صلّى الله عليه وسلّم .


অর্থাৎ- একজন নেক ও সৎ এবং সুকন্ঠশীল অন্ধ মোয়াজ্জিনকে রাসূল পাক (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠ করা থেকে নিষেধ করার পরও দরূদ পাঠ করার কারণে কতল করা হয়েছে।



অথচ বেদা’ত উহাই যা কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী হবে। অর্থাৎ যা শরীয়তের মধ্যে নাই এমন কিছুকে শরীয়তে অন্তর্ভূক্তি করা।


ادخال ما ليس من الدين فى الدين كاباحة محرم او تحريم مباح او ايجاب ما ليس بواجب ندبه او نحو ذالك سواء كانت فى القرون الثلاثة او بعدها .


মুবাহ্কে হারাম কিংবা হারামকে মুবাহ অথবা ওয়াজিব হিসেবে গ্রহণ করা যা ওয়াজিব কিংবা মুস্তাহাছন নয় এধরনের কর্মকে অর্থাৎ মুবাহকে হারাম আর হারামকে মুবাহ মনে করা অথবা ওয়াজিব ইত্যাদি মেনে নেয়া যা ওয়াজিব নয় এটিই হচ্ছেঃ احداث فى امـرنا  



❏ প্রখ্যাত ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) ফরমানঃ


ان احداث مالا ينازع الكتاب والسنة ليس بمذموم


অর্থাৎ- যে কাজগুলো কোরআন ও হাদীসের পরিপন্থী না হয় তা মজমুমা বা ঘৃণিত বেদা’ত হতে পারে না।



❏ শীর্ষস্থানীয় ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) ফরমানঃ


وما احدث من الخير ولم يخالف من ذالك فهو البدعة المحمودة  


অর্থাৎ- উত্তম কাজগুলোর মধ্যে যেগুলো নতুন প্রচলন করা হয়েছে এবং (কুরআন-হাদীসের) উল্টো হয়নি। সুতরাং তা বেদা’তে মাহমুদা (প্রশংসনীয় বেদা’ত)।



❏ আল্লামা তাপতাজানী প্রণীত শরহে মোকাছেদ ও আবদুন্নবী বিন আবদুর রসূল রচিত দস্তুরুল ওলামা কিতাবে আছেঃ


ومن الجهلة من يجعل كل امر لم يكن فى زمن من الصحابة بدعة مذمومة وان لم يقم دليل على قبح بقوله صلى الله عليه وسلم اياكم محدثات الامور ولا يعلمون المراد بذالك ان يجعل فى الدين ما هو ليس منه .


অর্থাৎ- কতগুলো জাহেল বা মূর্খ ব্যক্তি ছাহাবাদের যুগে ছিল না এমন কাজগুলোকে বেদাতে মজমুমা বা নিন্দনীয় নব আবিষ্কার বলে থাকে। যদিও বা এটা মন্দ হওয়ার কোন প্রমাণ নাই। আর এর মর্ম সম্পর্কে না জেনে এ হাদীসটিকে প্রমাণ হিসেবে খাড়া করে যে, “(ধর্ম) নতুন আবিষ্কৃত কাজ হতে বেঁচে থাক।” অথচ ধর্মের মধ্যে ধর্মবিরোধী সব কাজ হতে নিষেধ করা হয়েছে।



❏ ‘দুর্রুল মুখতারে’ আছে:


وهى اعتقاد خلاف المعروف عن الرسول صلّى الله عليه وسلّم .


অর্থাৎ- রাসূলে পাক (ﷺ)-এর মনোনীত আক্বীদাসমূহের পরিপন্থি সকল আক্বীদার (ধর্মবিশ্বাস) নাম বেদা’ত।


এখন আমি এমন কিছু বেদা’ত ও মাকরূহ কাজের কথা উলে­খ করছি যার মধ্যে প্রত্যেক দল নিমজ্জিত আছেন। জিজ্ঞাসা করি তাদের প্রতিফল কি হবে? যথা: মসজিদের দেয়ালে কোরআনে পাকের আয়াত লিখা।



❏ যা ফোকহায়ে কেরামরা নিষেধ করেছেন:


لا ينبغى الكتابة على جدر انه اى خوفا من ان تسقط وتوطا . شامى، ج/১، رقم: ৬৬৩


অর্থাৎ- পড়ে যাওয়া বা পদদলিত হওয়ার আশঙ্কায় মসজিদের দেয়ালে কোরআন শরীফের আয়াত এবং সম্মানিত বস্তু লেখা সঙ্গত নয়। অথচ নিষেধ সত্ত্বেও মসজিদের দেয়ালে দেয়ালে লিখিত কোরআনের আয়াত বা হাদীস শরীফ দৃষ্টিগোচর হয়।


লোকেরা কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে। দেখুন এর ভিতর কত বেদা’ত জড়িয়ে রয়েছে। পারা পারা করে সাজানো, জের, জবর, পেশ ইত্যাদি লাগানো, রুকু বাঁধা আমাদের সম্মুখস্থ কুরআনের বর্তমান অবস্থা ইত্যাদি এসব কাজের অস্তিত্ব নূরনবী (ﷺ)-এর জমানার পরেই হয়েছে।



❏ মসজিদে মুয়াজ্জিনের জন্য মিনারা করাটাও বেদা’ত। যেমনঃ


فالمنارة فى نوع البدعة


(মসজিদের মিনারা বেদা’ত)



এতদসত্ত্বেও অধিকাংশ মসজিদে মিনারা করা হয়েছে, যার উপর আজান দেয়া হয়। অথচ উক্ত কাজটা বেদা’ত।



❏ এ কারণে ইমাম আবদুল গণি নাবেলছি (رحمة الله) ফরমানঃ البدعة المستحبة


(মসজিদের মিনারা মুস্তাহাব জাতীয় বেদা’ত)



এইভাবে অপরাপর কাজগুলোও পরিমাপ করা যেতে পারে। মাদ্রাসা যেখানে নাহু, ছরফ, মানতেক, বালাগাত, উছুল ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত করা হয় তাও বেদা’ত।


অথচ লোকেরা বিভিন্ন প্রকারের সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে উক্ত বেদাতটিকে আরো মজবুত ও দৃঢ় করে তোলে। কিতাব রচনা করা, শরীয়তের আইন-কানুন, সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো ইত্যাদি কাজও বেদা’ত।



❏ হাদীকাতুন্নদীয়াহ নামক কিতাবে উলে­খ আছে:


والمدرسة المبنية للعلم وقراة القرآن وتصنيف الكتب الشرعية ونظم الدلائل


অর্থাৎ: এলম হাছিল ও কোরআন পাঠের জন্য মাদ্রাসা স্থাপন, শরীয়তসংক্রান্ত পুস্তকাদি রচনা এবং শরীয়তের প্রমাণাদি শ্রেণীবদ্ধ করা এসব কাজ একেবারে বেদা’ত।



কিন্তু এসব বেদাতের মধ্যে প্রত্যেক ফেরকার আলেমগন প্রত্যক্ষভাবে সবসময় ডুবে আছে। হেরেম শরীফের মধ্যে চার ইমামের চারটি মুসল্লা, নবী মুস্তফা (ﷺ)-এর যুগেও ছিল না। ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেঈন কারো যুগে ছিল না, এমনকি চার মাজহাবের ইমামরাও এ কাজটা করতে বলেননি অথচ আলেম সম্প্রদায় এ কাজটা সম্পর্কে লিখেছেন: لكنها بدعة حسنة لا سيئة  (কিন্তু কাজটি উৎকৃষ্ট বেদা’ত, নিকৃষ্ট বেদা’ত নয়) এখন বলুন অতসব বেদা’তের পরিণাম কি হবে। সুতরাং আজানের পূর্বে দরূদ শরীফ পড়ার ব্যাপারেও তাই। এতে আজানের বাক্যগুলোতে কোন ক্ষতি হয় না বরং উপকারই হয়। অতএব এটা নাজায়েয বা নিকৃষ্ট বেদা’ত হতে পারে না। তাহলে একথা দ্বিধাহীনভাবে স্বীকার করতে হবে যে, ওগুলো সব বেদা’তে হাছানা বা উৎকৃষ্ট বেদা’ত। আর বেদাতে হাছানার আদায়কারীকে আহলে বেদা’ত বা বেদা’তী বলা হয় না, বরং আহলে সুন্নাত বা সুন্নী বলা হয়।


_________________

কিতাবঃ আযানের আগে দরূদ পড়া জায়েয

রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল-কাদেরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)

অনুবাদঃ গোলাম মোহাম্মদ খান সিরাজী

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন