আমার কদম সকল ওলীগণের গর্দানের উপর’

 

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

হযরত গাউছে পাকের বাণী

‘আমার কদম সকল ওলীগণের গর্দানের উপর’

এর মর্মার্থ এবং কুতুবিয়াত পদমর্যাদার আলোচনা

প্রশ্ন: হুজুর সাইয়্যেদেনা গাউছে পাক (رحمة الله) এর বাণী-

قَدْمِىْ هَذِه عَلٰى رَقَـبَةِ كُلِّ وَلِـىّ اللهِ .

অর্থাৎ আমার এ কদম প্রত্যেক র্আলাহর ওলীগণের গর্দানের উপর রয়েছে। তাঁর এ বাণী গাউছে পাক এর যুগের সাথে কি নির্দিষ্ট? তাঁর যুগের পরের আউলিয়ায়ে কেরামের ক্ষেত্রেও কি প্রযোজ্য?

বর্তমানে তিনি কুতুবিয়াত এর পদ মর্যাদায় অভিষিক্ত আছেন কি না? আর এ পদ মর্যাদায় কখন থেকে অভিষিক্ত? এবং কখন পর্যন্ত থাকবেন? সবিস্তারে দলীলসহ বর্ণনা করার জন্য একান্তভাবে অনুরোধ রইলো।

নিবেদক

ছালেহ আহমদ

উত্তর: আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করছি। গাউছে পাক বলেছেন:

اَفَلَتْ شُمُوْسُ الْاَوَّلِيْنَ وَشَمْسُنَا

 اَبَدًا عَلٰى اُفُقِ الْعُلٰى لَا تَغْرُبُ

অর্থ: আমাদের পূর্বের লোকদের সূর্য ডুবে গেছে। আর আমাদের সূর্য সর্বদা সুইচ্চ মর্যাদার আকাশে উদীয়মান থাকবে। আর তা কখনও অস্তমিত হবে না।

এখানে اَبَدًا শব্দটি ব্যবহার করেছেন। اِلٰى يَوْمِ الْقِيٰمَةِ বলেননি। অর্থাৎ আমাদের সূর্যের রৌশনী হক্ব পথের অনুসন্ধানীদেরকে সদা সর্বদা সুপথ দেখাতে থাকবে। বাস্তবিক পক্ষে কোন আল্লাহর ওলি হুজুর গাউছে পাকের উসিলা এবং মাধ্যম ব্যতিত وِلَايَتْ এর মর্তবা লাভ করতে পারে না।

জানা দরকার: বেলায়তে মুহাম্মদী, বেলায়তে মুস্তফরী আলাইহিস্ সালামু ওয়াস্ সালাম এর মহা গুরুদায়িত্বভার বহনকারী হচ্ছেন ইমামুল মাশারিক ওয়াল মাগারিব হযরত আলী রাদ্বিআল্লাহু আনহু। এ জন্যে সকল আকতাব, আবদাল ও আওতাদগণের (যারা নির্জন অবস্থানকারী আউলিয়াগণের অন্তর্ভূক্ত এবং ولايــت এর সমস্ত পরিপূর্ণতার দিকটিই তাদের মধ্যে প্রবল) مقام এর পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব কুতবুল কাওনাইন মুস্তফা (ﷺ) এর সাহায্য সহযোগিতার উপরই নির্ভরশীল।

আর আউলিয়া মাশায়েখগণের অধিকাংশ সিল্সিলা তাঁর সাথে সম্পৃক্ত। এ কারণেই মুহাম্মদী বেলায়েত এর বাহক হচ্ছেন একমাত্র হুজুর সাইয়্যেদেনা মাওলা আলী (رضي الله عنه) (আল্লাহ্ তাঁর চেহারাকে সম্মানিত করুন)।

কুতুবুল আকতাব: অর্থাৎ কুত্বে মদার এর মাথা মুবারক সাইয়্যেদুল কাওনাইন এর পবিত্র কদমের নিচে অবস্থিত। আর কুত্বে মদার তাঁরই সাহায্য ও সহানুভূতির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সকল কর্মকাণ্ড আঞ্জাম দিয়ে থাকেন। মাদারিয়াত এটি একটি বিশাল পদবী। হযরত ফাতেমাতুয্ যাহরা ও ইমামাইনে কারিমাইন অর্থাৎ হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হুসাইন (রাদ্বিআল্লাহু আনহুমা)ও এ মকামে অধিষ্ঠিত। (মকতুবাতে ইমাম রাব্বানী, দফতরে আউয়াল)

হযরত ক্বাযী সানাউল্লাহ্ পানিপতি (رحمة الله) স্বরচিত তাফসীরে

وَاَنْتُمْ تَتْلٰى عَلَيْكُمْ اٰيٰت اللهِ وَفِيْكُمْ رَسُوْله الخ

এ আয়াতের অধীনে উল্লে­খ করেছেন।

অনুবাদ: তোমাদের নিকট আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হচ্ছে। আর তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) উপস্থিত রয়েছেন। (কুরআন মজীদ)

তিরমিযী শরীফে হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, বিদায় হজ্জে হুজুর (ﷺ) স্বীয় ক্বছওয়া নামক উষ্ট্রির উপর সওয়ার হয়ে সমবেত সমস্ত সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে খুত্বা দিতে গিয়ে ইরশাদ করেন, হে সকল মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে এমন কিছু রেখে যাচ্ছি তা যদি তোমরা দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধর তাহলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব আর দ্বিতীয়টি হলো আমার আহলে বায়ত। উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হযরত সানাউল্লাহ্ পানিপতি (رحمة الله) বলেন, আমার বক্তব্য হলো-

قُلْتُ اَشَارَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَّلَام اِلٰ اَهْلِ الْبَيْتِ لِاَنَّهُمْ اَقْطَابُ الْاِرْشَادٍ فِى الْوَلَاَيَةِ اَوَّلُه عَلِىُّ عَلَيْهِ السَّلَامُ ثُمَّ اَبْنَائه اِلٰى الْحَسَنِ الْعَسْكَرِىِّ وَاٰخِرُهُمْ غَوْثُ الثَّقلَيْنِ مُحِىُّ الدِّيْنِ عَبْدُالْقَادِر الْجِيْلٰنِىْ رَحْمَه الله عَلَيْهِ. لَا يَصِلُ اَحَدْ مِنْ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ اِلٰى دَرْجَةِ الْوِلَايَةِ اِلَّا بِتَوَسُّطِهِمْ كَذَا قَالَ الْمُجَدِّدُ رَحْمَه اللهُ عَلَيْهِ

অনুবাদ: সরকার দো আলম (ﷺ) আহলে বাইতে কেরামের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। কেননা, আহলে বাইতে কেরামই اَقْطَابُ الْاِشَادِ فِى الْوِلَايَاتِ এর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছেন হযরত আলী (رضي الله عنه)। এরপর তাঁর সন্তানগণ হতে হযরত ইমাম হাসান আসকারী পর্যন্ত। আর তাঁদের সর্বশেষ হচ্ছেন হযরত গাউছে সাক্বালাইন মুহীউদ্দীন আবদুল কাদের জিলান (رحمة الله) এ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত

পূর্বের এবং পরের কেউ তাঁদের মাধ্যম ছাড়া বেলায়তের মর্যাদায় পৌঁছতে পারেন না। তেমনিভাবে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (رحمة الله) মতামত ব্যক্ত করেছেন। (তাফসীরে মাজহারী: ১০৩)

سيف المسلول থেকে فتوى مسعوديه এর মধ্যে ফকীহুল হিন্দ হযরত মাসঊদ শাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী লিখেছেন,

অনুবাদ: এ মহা পদমর্যাদা হযরত সাইয়্যেদেনা আদম (عليه السلام) এর আবির্ভাবের সময় হতে হযরত আলী মুরতাজা এর রূহে নির্ধারিত হলো। হযরত আলী (رضي الله عنه) পার্থিব জগতে আগমনের পূর্বে আগেকার উম্মতগণের মধ্যে যারা ولايت এর মর্যাদা লাভ করতেন তারা হযরত আলী মুরতাজা (رضي الله عنه)) এর রূহে পাকের মাধ্যমে তা লাভ করেছেন। আর তাঁর সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে পরলোক গমন পর্যন্ত সকল সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনগণ এ মহা দৌলত তাঁরই মাধ্যমে অর্জন করেছেন। আর তাঁর পরলোক গমনের পর এ মর্যাদা যথাক্রমে হযরত হাসান মুজতবা, হযরত হুসাইন শহীদে কারবালা, ইমাম যয়নুল আবেদীন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের, হযরত ইমাম জাফর সাদেক, ইমাম মুসা কাজেম, ইমাম আলী রজা, ইমাম মুহাম্মদ নক্বী, ইমাম আলী নক্বী ও ইমাম হাসান আসকারী (রাদ্বিআল্লাহু আনহুম)কে এ মহা পদমর্যাদা সোপর্দ করা হয়। হযরত ইমাম আসকরির ওফাতের পর হতে সাইয়্যেদুশ শুরাফা, গাউসুছ ছাক্বালাইন, মুহীউদ্দীন আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর আবির্ভাবের সময় পর্যন্ত। যখন তিনি জন্মগ্রহণ করেন, এ বরকতময় পদমর্যাদা তাঁকে ন্যস্তপূর্বক হযরত ইমাম মুহাম্মদ মাহদী এর আবির্ভাব পর্যন্ত মানব ও দানবের গাউছের বরকতময় রূহে সমর্পিত হয়। এ জন্য হযরত গাউছে পাক ঘোষণা করেছেন যে,

قَدَمِىْ هَذِه عَلٰى رَقَبَةِ كُلِّ وَلِىّ اللهِ

অর্থাৎ: আমার এ কদম সকল আল্লাহর ওলীগণের গর্দানের উপর রয়েছে।

আর যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবেন এ ‘মহা পদমর্যাদা’ তাঁকেই সোপর্দ করা হবে। سيف المسلول কিতাবের শেষাংশ:

رِجَالُ هٰذِه الْاُمَّةِ اَكْثَرُ اِرْشَادًا وَاَقْوٰى تَاثِيْرًا فِى النَّاسِ بِالْجَذْبِ اِلٰى اللهِ تَعَالٰى مِنْ رِجَالِ الْاُمَمِ السَّابِقَةِ . وَكَانَ قُطْبِ اِرْشَادِ كَمَالَاتِ الْوَلَايَةِ عَلِىّ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَا بَلَغَ اَحَدٌ مِنَ الْاُمَمِ السَّابِقَةِ دَرْجَةَ الْاَوْلِيَاءِ اِلَّا بِتَوَسُّطِ رُوْحِه . ثمَّ كَانَ بِتِلْكَ الْمَنْصَبِ الْاَئِمَّةُ الْكِرَامُ اَبْنَائَه اِلٰى الْحَسَنِ الْعَسْكَرِىْ وَعَبْدِ الْقَادِرِ الْجِيْلِىْ وَ مِنْ لَّمْ قَالَ : ’’وَوَقْتِىْ قَبْلَ قَلْبِىْ قَدْ صَفَالِى‘‘ وَهُوَ عَلٰى ذَالِكَ الْمَنْصَبِ اِلٰى يَوْمَ الْقِيَمَةِ وَ مِنْ ثُمَّ قَالَ: اَفَلَتْ شُمُوْسُ الْاَوَّلِيْنَ وَشَمْسُنَا . اَبَدًا عَلٰى اُفُقِ الْعُلٰى لَاتَغْرُبُ .   (مظهرى, صـ১২০)

অর্থ: পূর্ব যুগের উম্মতগণের আউলিয়ায়ে কেরামগণের তুলনায় উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ) এর উম্মতগণের আউলিয়ায়ে কেরামগণ মানুষের মধ্যে সঠিক পথপ্রদর্শক এবং শক্তিশালী প্রভাব  বিস্তারে আল্লাহ্ তায়ালার দিকে আকৃষ্টকারী এরাই অধিক। হযরত আলী (رضي الله عنه) বেলায়তি পরিপূর্ণতায় কুতুবে ইরশাদের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। পূর্বের উম্মতগণের কেউ হযরত আলী (رضي الله عنه) এর মাধ্যম ছাড়া আউলিয়া এর মর্যাদায় পৌঁছতে পারেননি।

অতঃপর এ পদমর্যাদা আইম্মায়ে কেরাম তথা তাঁর আওলাদগণ হযরত ইমাম হাসান আসকারী ও আবদুল কাদের জিলানী লাভ করেন। তৎপ্রতি ইঙ্গিত করতে গিয়ে গাউছে পাক (رضي الله عنه) বলেছেন-

وَوَقْتِىْ قَبْلَ قَلْبِىْ قَدْ صَفَالِىْ  -. وَهُوَ عَلٰى ذَالِكَ الْمَنْصَبِ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَمَةِ وَ مِنْ ثُمَّ قَالَ :  

اَفَلَتْ شُمُوْسُ الْاَوَّلِيْنَ وَشَمْسُنَا

اَبَدًا عَلٰى اُفُقِ الْعُلٰى لَاتَغْرُبُ .  (مظهرى, صـ১২০)১১

অনুবাদ: আর তিনি (গাউছে পাক) কিয়ামত পর্যন্ত এ পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত থাকবেন। এর উপর ভিত্তি করে তিনি বলেছেন- পূর্বেকার সকলের সূর্যগুলো অস্তমিত হয়ে গেছে। আমাদের সূর্য সুউচ্চ মর্যাদার আকাশে উদীয়মান থাকবে। কখনও অস্তমিত হবে না। (মাজহারী: ১২০)

হাফেজ যাহাবী (رحمة الله) বলেন, হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর বুযুর্গ পিতার নাম হযরত আবু ছালেহ জঙ্গী দোস্ত। হাফেজ যয়নুদ্দীন ইবনে রজব (رحمة الله) স্বরচিত কিতাব طبقات এর মধ্যে বর্ণনা করেন যে, হযরত শায়খ আবদুল কাদের ইব্নে আবু ছালেহ আবদুল্লাহ্ জঙ্গী দোস্ত ইব্নে আবু আবদুল্লাহ্ আল্জিলী বাগদাদী তিনি যাহেদ যমানার শায়খ এবং আল্লামা, আরেফীনদের শীরমনি, সুলতানুল মাশায়েখ এবং ত্বরীকতপন্থীদের সর্দার ছিলেন। আল্লাহর সৃষ্টি জগতে সকলের নিকট সমাদৃত ছিলেন। তাঁর বরকতময় সত্তার দ্বারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বিরাট শক্তি লাভ করেছে। বেদআতী ও কামরিপুর অনুসারীরা লাঞ্ছিত হয়েছে। দূর ও নিকটের বিভিন্ন দেশ ও শহর থেকে তাঁর নিকট বিভিন্ন ফতোয়া আসত।

কাযিউল কোযাত (প্রধান বিচারপতি) মুহিব্বুদ্দীন আল্-আলিমী স্বরচিত “তারীখ” এ বর্ণনা করেছেন যে, সাইয়্যেদেনা শায়খ আবদুল কাদের জিলানী হাম্বলী মতাবলম্বীদের ইমাম ছিলেন।

ইমাম হাফেজ আবু আবদুল্লাহ্ মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ ইব্নে মুহাম্মদ আল্ বারযালী আল্ আশ্বাণী স্বরচিত কিতাব المشيخة البغدادية এর মধ্যে বর্ণনা করেন, হযরত শায়খ আবদুল কাদের (رحمة الله) বাগদাদে হাম্বলী ও শাফেয়ী মাজহাবদ্বয়ের ফকীহ, মুফতী এবং উভয় মাজহাবের অনুসারীগণের শায়খ ছিলেন। তৎকালীন সর্বস্তরের ফোকাহা ও সকল জনসাধারণের নিকট সমাদৃত ছিলেন। অত্যন্ত মিষ্টভাষী ও দানশীল ছিলেন। তাঁর শরীর মুবারকের ঘাম সুগন্ধ ছিল। স্বাধীনচেতা ও দৃঢ়পদ এর অধিকারী ছিলেন।

হযরত সুহাইল ইবনে আবদুল্লাহ্ তস্তরী বর্ণনা করেন, হযরত শায়খ সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানী একদা এক বিশেষ সময়ে নামাজ আদায়ের পর রাব্বুল আলামীন এর দরবারে মুনাজাত করতে গিয়ে বলেন:

اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَسْئَلُكَ بِحَقِّ مُحَمَّدٍ حَبِيْبِكَ وَ خَيْرِ خَلْقِكَ وَاٰبَائِىْ اِنَّكَ لَا تَقْبِضْ رُوْحَ مُرِيْدٍ اَوْ مُرِيْدَةٍ لَاذُوْابى اِلَّا تَوْبَةٍ .

অনুবাদ: হে আল্লাহ্! আমি তোমার দরবারে তোমার হাবীব এবং তোমার সর্বোত্তম সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ)কে উসীলা বানিয়ে প্রার্থনা করছি। আমার সকল মুরীদ ও মুরীদগণের মুরীদান যারা আমার সাথে সম্পৃক্ত তাদের কাউকে তওবা ছাড়া মৃত্যু দিওনা।

শায়খুল ইসলাম হাফেজুদ্দুনিয়া শেহাবুদ্দীন আহমদ ইব্নে হাজার আসক্বালানী (رحمة الله)কে গাউছে পাকের বাণী قَدَمِىْ هٰذِه عَلٰى رَقَبَةِ كُلِّ وَلِىّ اللهِ এর মর্মার্থ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তার জবাবে বলেন, গাউছে পাকের বাণীর অর্থ হচ্ছে যে, তাঁর কারামত এত বেশী প্রকাশ হবে অন্যায়ের পক্ষের ব্যক্তি ছাড়া তাঁর কারামতগুলো আর কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তাঁর আবির্ভাবের যুগে এমন উচ্চ মর্যাদা ও কারামতের অধিকারী কেউ ছিল না।

শায়খুল ইসলাম হাফেজ ইয্যুদ্দীন ইবনে আবদুচ্ছালাম বর্ণনা করেন, গাউছে পারেক কারামতগুলো এত অধিক বর্ণনা দ্বারা সুপ্রমাণিত, এ রকম কারো কারামত প্রমাণিত নয়।

এত অধিকহারে তাঁর অলৌকিক কারামত প্রকাশিত হওয়া সত্বেও তিনি উপস্থিত মহা অনুভূতি, প্রখর বুদ্ধিমত্তা এবং শরীয়তের বিধান পরিপূর্ণভাবে পালন করতেন এবং অন্যকেও তৎপ্রতি দাওয়াত দিয়ে গেছেন। শরীয়ত পরিপন্থীদের তিনি মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন। দানশীল, সুন্দর আচরণকারী ও অনেক সন্তানেরও জনক ছিলেন। ইবাদত ও মুজাহেদার মধ্যে সদা সর্বদা লিপ্ত থাকতেন। তাছাড়া তার মধ্যে আরও অনেক প্রশংসনীয় গুণাবলীর সমাহার।

সুতরাং যার মধ্যে এত গুণাবলী বিদ্যমান তিনি পরিপূর্ণ কামেল বুযুর্গ হওয়ার ব্যাপারে আদৌ কোন সন্দেহ থাকতে পারে? হযরত গাউছে পাকের অসংখ্য অলৌকিক ক্ষমতা বা কারামতের প্রকাশ হওয়া বস্তুত এটি শরীয়তপ্রণেতা হযরত নবীয়ে করীম (ﷺ) এরই মহান ছিফত বা গুণ। তাই তো গাউছে পাক ঘোষণা করেছেন; قَدَمِىْ هٰذِه عَلٰى رَقَبَةِ كُلِّ وَلِىّ اللهِ হযরত খলীফা ইবনে মুসা মুলকী (رحمة الله) বলেন, আমি একদা দো’জাহানের সর্দার (ﷺ)কে স্বপ্নযোগে তাঁর দীদার লাভ করে প্রশ্ন করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! শায়খ আবদুল কাদের জিলানী বলে থাকেন, قَدَمِىْ هٰذِه عَلٰى رَقَبَةِ كُلِّ وَلِىّ اللهِ আমার এ কদম আল্লাহর সমস্ত ওলীগণের স্কন্ধে রয়েছে। জবাবে নবীজি বললেন:

صَدَقَ الشَّيْخُ عَبْدُ الْقَادِرْ كَيْفَ وَهُوَ الْقُطْبُ وَ اَنَا اَرْعَاهُ .

অনুবাদ: শায়খ আবদুল কাদের সত্য বলেছেন। আর তিনি কেন সত্য বলবেন না। কেননা তিনি স্বয়ং কুতুব। আমিই তাঁর দেখাশুনা করি। এ জন্য গাউছে পাক বলেছেন:

وَسِرِّىْ فِى الْـعُـلْيَا بِـنُـوْرِ مُـحَمَّدٍ        ۞        فَـكُـنَّـا بِـسِـرِّ اللهِ قَـبْـلَ الـنَّـبُـوَة

وَلِىْ نَشَأةٌ فِى الْحُبِّ مِنْ قَـبْلِ اٰدَمَ        ۞        وَسِرِّى سَرٰى فِى الْكَوْنِ مِنْ قَبْلِ نَشْأَتِىْ

كُلُّ قُطْبٍ يَـطُوْفُ بِالْبَـيْتِ سَـبْـعًا        ۞        وَاِنَّ الْـبَـيْـتَ طَائِـفٌ بِـخِـيَـامِـىْ

اَنَا كُنْتُ قَبْلَ الْقَبْلِ قُطْبًا مُبَجَّلًا        ۞        وَطَافَتْ بِى الْاَمْلَاكُ وَالرَّبُّ سَمَّانِـىْ

فَــمَنْ فِىْ رِجَـالِ اللهِ نَالَ مَكَانَـتِىْ        ۞        وَجَدِّىْ رَسُوْلُ اللهِ فِى الْاَصْـلِ رَبَّانِىْ

اَنَا قَادِرُى الْـوَقْـت عَبْدُ الْـقَـادِر        ۞        اُكَنّٰى بِمُحِـىٍّ الدِّيْنِ وَالْاَصْلُ كِيْلَانِىْ

وَشَاهَدْتُ مَافَوْقَ السَّمٰوٰتِ كُـلِّهَا        ۞        كَذَا الْعَرْشُ وَالْكُرْسِىْ فِىْ طَـىِّ قَبْضَتِىْ

اَنَا قُطْبُ اَقْطَابِ الْوَجُوْدِ حَقِيْقَةً        ۞        عَلٰى سَائِرِ الْاَقْـطَابِ عِـزِّىْ وَحُرْمَـتِـىْ

وَجَدِّىْ رَسُوْلُ اللهِ اَعْنِىْ مُحَمَّدًا        ۞        اَنَا عَـبْـدُ قَـادِرٍ دَامَ عِــزِّىْ وَرِفْعَـتِـىْ

= الفيوضات الربانية

অনুবাদ: ১. এবং হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর নূরের মাধ্যমে ঊর্ধ্বজগতে আমার গোপন রহস্য প্রমাণিত হয়েছে। অতঃপর নবুওয়াতের প্রকাশের পূর্বে আমি আল্লাহর রহস্য ভাণ্ডারে গোপন ছিলাম।

২. সাইয়্যেদেনা আদম (عليه السلام) এর সৃষ্টির পূর্ব থেকে আমার লালন-পালন আল্লাহ্ তায়ালার প্রেমের জগতে হয়েছিল এবং আমার জন্মের পূর্ব থেকে সৃষ্টিজগতে আমার গোপন রহস্য বিস্তার লাভ করেছে।

৩. প্রত্যেক কুতুব বায়তুল্লাহ্ শরীফের চতুর্দিকে সাতবার করে প্রদক্ষিণ করে থাকেন, আর বায়তুল্লাহ্ শরীফ আমার ঘরের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করে।

ইমাম আ’লা হযরত শাহ্ আহমদ রজা (رحمة الله) বলেছেন:

দলীল: যেমন গাউছে পাক (رحمة الله) স্বয়ং ইরশাদ করেছেন:

وَلَيْسَ يَصِحُّ فِى الْاَعْيَانِ شَيْـئٌ

اِذَا اِحْتَاجَ النَّهَارُ اِلٰى دَلِيْلِ . (جواهر المضيئة)

যদি দিনের বেলা প্রমাণ ও দলীলের মুখাপেক্ষী হয় তাহলে হাক্কায়েক হতে কোন হাক্বীক্বত প্রতিষ্ঠিত হবে না।

৪. আমি সময়ের সূচনা হওয়ার পূর্ব থেকেই সম্মানিত কুতুবুল আকতাব ছিলাম। আর রূহানী জগতের সম্রাট তথা আউলিয়া কেরাম আমার চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করেছিলেন এবং মহান রাব্বুল আলামীন স্বয়ং আমার নাম রেখেছেন।

৫. অতঃপর আল্লাহর ওলীগণের মধ্যে কে আমার মর্যাদা লাভ করেছে? আর আমার নানাজান আল্লাহর প্রিয় রাসূল (ﷺ) মূলত: আমাকে লালন-পালন করেছেন।

৬. আমি সময়ের উপর ক্ষমতাবান এবং মহান ক্ষমতাবান প্রভুর বান্দা হই। আমার ডাক নাম মুহীউদ্দীন রাখা হয়েছে। অথচ আমি জিলানী বা গিলানী বংশোদ্ভুত।

৭. আমি আসমান সমূহের ঊর্ধ্বে যা কিছু আছে তা স্বচক্ষে অবলোকন করেছি। তেমনিভাবে আরশ ও কুরছি আমার মুষ্ঠির ভাজের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে।

৮. আমি বাস্তবিক পক্ষে অস্তিত্বশীল জগতের কুতুবগণের কুতুব হই। আর আমার সম্মান ও মর্যাদা সমস্ত কুতুবগণের উপর সৃষ্টিগতভাবে প্রতিষ্ঠিত।

৯. আর আল্লাহর রাসূল অর্থাৎ মুহাম্মদ (ﷺ) হলেন আমার নানাজান। আমি মহান ক্ষমতাশালী প্রভুর বান্দা হই। আমার সম্মান ও উঁচু মর্যাদা স্থায়ীভাবে রয়েছে।

_____________

কালামুল আউলিয়া ফি শানে ইমামিল আউলিয়া

রহমাতুল্লাহে তায়ালা আলাইহিম আজমাঈন

রচনায়:মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী

অনুবাদ: অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ নুরুল আলম খাঁন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন