জানাজায় যিকির করা বিদয়াত কিংবা সুন্নাহর পরিপন্থী ও ধর্মে তেলেসমাতি নয়
‘ফত্ওয়া আফ্রিকাতে’ আ’লা হযরত মুজাদ্দিদে মিল্লাত (رحمة الله) ইমাম আবদুল ওহাব শা’রানী প্রণীত ‘‘আল বাহরুল মওরূদ ফিল্ মাওয়াছীক্বে ওয়াল য়ূহুদ” থেকে উদ্ধৃত করেছেন-
اخذ علينا العهود ان لانمكن احدا من الاخوان ينكر شيئًا بما ابتدعه المسلمون علٰى وجه القربة الى الله تعالٰى وراوه حسنا فانّ كل ما ابتدع على هذا الوجه من توابع الشريعة وليس فهو من قسم البدعة المذمومة فى الشرع .
অর্থাৎ- আমাদের প্রতিশ্র“তি নেয়া হয়েছে এ মর্মে যে, যেন আমরা কোন ধর্মীয় ভাইকে এমন কোন কাজকে মন্দ বলার সুযোগ না দিই; যে কাজ মুসলমানেরাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নব প্রচলিত করেছেন; অথচ তাঁরা সে কাজকে ভাল বলে মনে করে। কারণ যা কিছু এভাবেই নবপ্রচলিত হয় সে সবই হুজুর (ﷺ) এর শরীয়ত থেকেই গৃহীত এবং তা ‘সে সব বিদয়াত’ কার্যাদির শামিল নয় যে সব বিদয়াত মন্দ ও বর্জনীয় বলে শরীয়ত বর্ণনা করেছে।
উপরোক্ত বর্ণনা থেকেও বুঝা যাচ্ছে যে, যুগ পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে উচ্চরবে যিকির করা জায়েজ এবং মোস্তাহাব। কারণ এটা একটা দলীল সংক্রান্ত (فرعى) মাছয়ালা; ‘বুনিয়াদী’ নয়।
এখন যদি বলা হয় যে, ‘এ কাজটি’ সুন্নাহ’র পরিপন্থী; কিংবা ছলফে ছালেহীন এর আমলও নয়। তবে তার উত্তরে এ প্রসঙ্গে পূর্বোলেখিত জবাবই প্রযোজ্য ও যথার্থ হবে। তবুও এখানে সংক্ষিপ্ত ভাষায় এটাই বলা যাবে যে, এমন অনেক কাজ রয়েছে, যা ছল্ফে ছালেহীন এর আমল না হওয়া সত্ত্বেও তা মোস্তাহাব।
যেমন- ফত্ওয়া আজিজিতে উল্লেখ করা হয়- বিবাহ দিবসে কলেমা তৈয়্যবাহ, ঈমানে মুজমাল ও ঈমানে মোফাচ্ছাল এ বর্ণিত বিষয়াদি সম্পর্কে নবদম্পতিকে পুণঃ অবগত করানো মোস্তাহাব। অথচ তা ছলফে ছালেহীনের অনুকরণে নিশ্চয়ই নয়। তাছাড়া প্রচলিত তছবীহ পাঠ পূর্ববর্তী আলেমদের মতে বিদয়াত। কিন্তু পরবর্তী আলেমগণ, যেমন মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এবং অন্যান্য ফকীহ ও সুফীগণ, যেমন- হযরত জুনাইদ বাগদাদী (رحمة الله) প্রমূখের মতে তা মোস্তাহাব বলে প্রমাণিত। কেননা, মোস্তাহাব বা মোস্তাহাছান প্রমাণের জন্য বিশেষ দলীল এর প্রয়োজন হয় না; বরং যদি কোন কাজকে মুসলমানগণ ভাল মনে করে এবং তদানুযায়ী আমল করে তবে তা মোস্তাহাব হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। কিন্তু মকরূহ বা হারাম প্রমাণের জন্য নিষেধ সম্বলিত বিশেষ দলীল থাকা প্রয়োজন। মৌলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী ছাহেবও তাঁর লিখিত ফত্ওয়ায়ে রশিদিয়া’য় উল্লেখ করেছেন- এমন কি মাকরূহ তানজিহী প্রমাণের জন্যও নিষেধসূচক বিশেষ দলীল আবশ্যকীয়।
দ্বিতীয়তঃ যদি এ কাজটা সুন্নাহ পরিপন্থী হয়, তবে বলুন জানাজার সাথে পথচলার সময় কোন্ আমলটাই সুন্নাত? যদি বলা হয়- চুপ থাকা, তবে প্রশ্ন জাগে যে, চুপ থাকা যদি সুন্নত আর যিকির করা বিদয়াতই হয়, তবে ফকীহগণ আলোচ্য মুহূর্তে কোন মত পার্থক্য ব্যতিরেকেই মৌলিক যিকিরের অনুমতি কেন দিয়েছেন? তাতে কি সুন্নাত পরিপন্থী কাজ সম্পন্ন হবে না? ফকীহগণ কি একটা বিদয়াত কর্ম সম্পন্ন করার নির্দেশ দিলেন? মোটেই নয়।
এখন লক্ষ্য করুন! উচ্চরবে দোয়া করা বিদয়াত। যেমন: ফতোয়া বারহানার ৩২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়- وجهر بدعا بدعت ست (দোয়া উচ্চঃস্বরে করা বিদয়াত)। অথচ মৌং রশিদ আহমদ সাহেব ‘ফত্ওয়ায়ে রশিদিয়া’র ২১৮ পৃষ্ঠায় এক প্রশ্নের জবাবে উল্লেখ করেছেন যে, ফরজ নামাজের পর উচ্চরবে দোয়া করা জায়েজ; যদি শরীয়তসম্মত কোন কারণ প্রতিবন্ধক না হয়। এখন বলুন! উক্ত মৌলানা সাহেব কেন একটা অবৈধ কাজ সম্পাদনের নির্দেশ দিলেন? এতে কি তিনি বেদ্য়াতী হন নি?
আমাদের এখানকার আলেম নামের দাবীদার জনৈক ব্যক্তি তার লিখিত এক পুস্তিকায় লিখেছেন-
অর্থাৎ- উচ্চরবে যিকির করা মাকরূহ তাহরীমী এবং বর্জনীয় বিদ্য়াত। নিশ্চয়ই প্রশ্নে উল্লেখিত আলোচ্য কাজটি সুন্নাত পরিপন্থী মাকরূহ এবং বিদয়াতেই রূপান্তরিত। তা বর্জন করা ওয়াজিব, তাতে বাধা প্রদানের স্থলে নীরব ভূমিকা পালন করা ধর্মে তেলেসমাতি ও গড়িমশিরই নামান্তর মাত্র।
উক্ত উদ্ধৃতিতে সরবে যিকির করা মাকরূহ বা বিদয়াত বলে যে মন্তব্য করা হয় তার পাল্টা জবাব তো পূর্বে দেয়া হয়েছে; যা উক্ত মন্তব্যের ভ্রান্তি অনুধাবনের যথেষ্ট সহায়ক। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে- উপরোক্ত দয়ালু মুফতী সাহেব তাঁর মন্তব্যের স্বপক্ষে ‘কিতাবুল ইয়তেছাম’ থেকে উদ্ধৃত করে প্রমাণস্বরূপ পেশ করেছেন- بان السنة فى اتباع الجنازة الصمت .
অর্থাৎ- জানাজার সাথে পথ চলার সময় নীরব থাকাই সুন্নাত।
কিন্তু পক্ষান্তরে ফকীহগণ এ মুহূর্তে মৌলিক যিকিরের যে অনুমতি দিয়েছেন, তাতে তাঁর এ মন্তব্য ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়।
তাছাড়া মজার ব্যাপার হল- স্থানীয় এ মুফতী সাহেবের ফতোয়া থেকে এটাও প্রতিভাত হয় যে জানাজার সাথে পথ চলার সময় তাঁর মৃত্যু উপস্থিত হলেও তাঁকে হয়ত কলেমা (যিকির) পাঠ করা ব্যতীতই নীরবে মৃত্যুবরণ করতে হবে। কারণ, তাঁর ফতোয়া অনুযায়ী উক্ত সময়ে যিকির উচ্চারণ করা সুন্নত পরিপন্থী কাজ হবে। মৃত্যুকালে এমন এক বিদয়াত বা সুন্নত পরিপন্থী কাজ মুফতি ছাহেব দ্বারা কিভাবে সম্পন্ন হতে পারে?
তৃতীয় কথা হল- আল্লাহর যিকিরের নির্দেশ বা অনুমতি সব সময়ের জন্যই। কাজেই তাতে বাধা দেয়া কিংবা তা খারাপ বা বর্জনীয় বলে মন্তব্য করা মূর্খতা ছাড়া আর কি হতে পারে।
মুসলমানদের উচিৎ, একটা নিঃশ্বাস বা মুহূর্তও যেন স্বীয় মাবুদ (আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন) এর যিকির বা স্মরণ থেকে বাদ না পড়ে; বরং তাঁরই স্মরণকে সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে বরণ করা উচিৎ। যেমনিভাবে হুজুর (ﷺ) আল্লাহ তায়ালার স্মরণেই প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করতেন।
তিরমিযী শরীফে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত-
قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ اللهَ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ .
অর্থাৎ- তিনি বর্ণনা করেছেন- আল্লাহর প্রিয় রসূল (ﷺ) প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহকে স্মরণ করতেন।
বাকী রইল উচ্চরবে যিকির করার প্রসঙ্গ-উচ্চরবে যিকির করা তখনই উত্তম, যখন তা শরীয়ত মতে নিষিদ্ধ নয়। যেমন- পার্শ্ববর্তী মুসল্লীর অসুবিধা ও লোক দেখানোর মনোবৃত্তি সঞ্চার হবার সম্ভাবনা ইত্যাদি কারণের অবস্থিতির মুহূর্তে। কেননা, তখন নীরব যিকিরই উত্তম।
চতুর্থতঃ প্রশ্ন জাগে, জানাজার সাথে পথচলার সময় উচ্চরবে যিকির করা হারাম বা মাকরূহ তাহরিমী হবার কারণ কি? কোরআন মজিদের আয়াত কিংবা ছহীহ হাদিস দ্বারা কি তা নিষিদ্ধ বলে প্রমাণিত? যার ফলে তা পালনে ধর্মীয় বিষয়ে তেলেসমাতি বা গড়িমসির মত অবাঞ্চিত কর্মে লিপ্ত না হয়ে গত্যন্তর থাকে না? অথচ যারা জানাজা গর-জানাজা নির্বিশেষে সাধারণভাবেই সরব যিকিরকে হারাম বা মাকরূহ বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন অন্যান্য ফকীহগণ সাথে সাথে তাঁদের পাল্টা জবাব দিয়েছেন এবং উচ্চরবে যিকির করার বৈধতা অকাট্যরূপে প্রমাণিত করেছেন। যেহেতু হাদিস শরীফে বর্ণিত-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ (رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا) أَخْبَرَهُ أَنَّ رَفْعَ الصَّوْتِ بِالذِّكْرِ حِينَ يَنْصَرِفُ النَّاسُ مِنْ الْمَكْتُوبَةِ كَانَ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ . (مسند أحمد)
অর্থাৎ- হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- ফরজ নামাজ সমাপন করে ফেরার সময় উচ্চরবে যিকির করার প্রচলন নবী করীম (ﷺ) এর যুগেই ছিল।
অতএব, বুঝা যাচ্ছে যে, উচ্চরবে যিকির করা নবী করিম (ﷺ) এর যুগেও প্রচলিত ছিল। উল্লেখ্য যে, জানাজার সাথে পথচলার সময় উচ্চরবে যিকির করা কোন কোন ফকীহ্র মতে মাকরূহ তানজিহী বা অধিকতর উত্তম বর্জিত হলেও আসলে তা ধর্মীয় কাজে তেলেসমাতি বা গড়িমসি মোটেই নয়।
হ্যাঁ, যদি কোন আয়াত বা ছহীহ হাদিস দ্বারা উচ্চরবে যিকির সহকারে জানাজার সাথে পথচলা হারাম বা মাকরূহ বলে প্রমাণিত হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে ধর্মে তেলেসমাতি বা গড়িমসি হবে। নতুবা উচ্চরবে যিকিরকারীদের প্রতি ধর্মে তেলেসমাতি বা গড়িমসির অপবাদ সরাসরি হুজুর (ﷺ) ও ছাহাবা কেরামের প্রতিই নিক্ষিপ্ত হবে (নাউযুবিল্লাহ)।
পঞ্চমতঃ ভাল ও পূণ্যময় কাজকে বিদয়াত বা শিরক বলাই প্রকৃতপক্ষে ধর্মে গড়িমসি ও তেলেসমাতি; যে কাজ কোরআন মজিদের আয়াত, ছহীহ হাদিস কিংবা এজমা ই-উম্মত এর সম্পূর্ণ পরিপন্থী তা স্বীয় কৃতকর্মের অন্তর্ভূক্ত করাই হল ধর্মে গড়িমসি বা তেলেসমাতির শামিল।
যেমন-কাফির ও মুশরিকগণ সম্পর্কে যে সব আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে; তাদের মূর্তিপূজা র্শিক। তাদের নিজ হাতে গড়া মূর্তি লাত, ওজ্জা প্রভৃতির নামে জন্তু বলি দেয়া, মানত করা ইত্যাদি সম্পর্কে যে সব আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, সে সব আয়াতসমূহ মুসলমানদের বেলায় প্রযোজ্য বলে মন্তব্য করে মুসলমানদের প্রচলিত কোন কোন ভাল কাজের জন্য তাঁদের প্রতি নানা অপবাদ নিক্ষেপ করা এবং তাদের সম্পর্কে ফতোয়াবাজী করা। যেমন- ওলীর মাজারে গিয়ে তাদের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা, তথায় হাদিয়া, তোহফা ও নজর-নিয়াজ উপস্থাপন করা ইত্যাদি শরীয়তসম্মত কার্যাদির সাথে কাফির ও মুশরিকদের মূর্তিপূজা ও মূর্তির নিকট জন্তু বলি দেয়া ইত্যাদির মধ্যে সাদৃশ্য প্রমাণের অপচেষ্টা চালানো; এবং কোরআন-হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়াই হল প্রকৃতপক্ষে ধর্মে গড়িমসি ও তেলেসমাতি।
মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত পূণ্যময় কার্যাদিকে কাফির মুশরিকদের মূর্তিপূজা ও র্শিক কার্যাদির নামান্তর বলে ফতওয়া দিয়ে তাদেরকে অযথা বিদ্য়াতী বা মুশরিক বলাই যে প্রকৃতপক্ষে দ্বীনে তেলেসমাতি ও গড়িমসি।
হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন-
قَالَ إِنَّهُمْ انْطَلَقُوا إِلَى آيَاتٍ نَزَلَتْ فِي الْكُفَّارِ فَجَعَلُوهَا عَلَى الْمُؤْمِنِينَ . (صحيح البخارى)
অর্থাৎ-সে সব খারেজীরাই (খারেজী মতবাদ পুষ্ট আলেমগণ) এমন আয়াতসমূহ মুসলমানদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বলে ফতোয়া দেয় যে সব আয়াত আসলে কাফিরদের সম্পর্কেই নাজিল হয়েছে।
হ্যাঁ, তাদের মতানুযায়ী মাদ্রাসা বা অন্যত্র দ্বীনি শিক্ষা দিয়ে বেতন গ্রহণ করা ধর্মীয় কাজে গড়িমসি বা তেলেসমাতি হতে পারে। কেননা পূর্ববর্তী ফকীহগণ তা হারাম বলে যে অভিমত প্রকাশ করেছেন, আমাদের দেশীয় উপরোক্ত মুফতি ও আলেম নামধারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য হতে পারে।
ষষ্ঠতঃ প্রত্যেক পূণ্যময় কাজের ক্ষেত্রে كل بدعة ضلالة (প্রত্যেক বিদয়াতই পথভ্রষ্টতা) من احدث فى امرنا (যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মীয় বিষয়ে নূতন কিছু আবিষ্কার করে...) এ হাদিসদ্বয় দ্বারা মনগড়া ফত্ওয়াবাজি করা, পক্ষান্তরে- من سن فى الاسلام سنـة . الخ
(অর্থাৎ- যে ব্যক্তি ইসলামে কোন পূণ্যময় নূতন কাজের প্রচলন করে...) ও
ما رأه المسلمون حسنا فهو عند الله حسن .
(অর্থাৎ- মুসলমানগণ যা ভাল বা পূণ্যময় মনে করে তা আল্লাহর নিকট ভাল বা পূণ্যময়)- এ হাদিসদ্বয়ের প্রতি অবজ্ঞা করা এবং এগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত না করাই প্রকৃতপক্ষে ধর্মে গড়িমসি বা তেলেসমাতি। আসলে এসব পূণ্যময় কার্যাদি সমর্থন করা ধর্মের প্রতি অবহেলা বা গড়িমসি নয় বরং ধর্মীয় বিধানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা। দেখুন- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিবসদ্বয়ে ঈদের নামাজ সমাপনের পূর্বে নফল নামাজ পড়া মাকরূহ হওয়া সত্ত্বেও পরবর্তী ফকীহগণ সাধারণ মুসলমানদেরকে এ কাজে বাধা না দেয়াই উত্তম বলে মত প্রকাশ করেছেন।
দূররুল মোখতার-এ উল্লেখ করা হয়-
انما العوام فلا يمنعون من تكبير ولا تنفل اصلا لقلّة رغبتهم فى الخيرات كذافى البحر .
অর্থাৎ- সাধারণ মুসলমানদের তক্বীর বলা ও নফল নামাজে বাধা দেয়া মোটেই উচিত হবে না কেননা ভাল কাজে তাদের আগ্রহ নিতান্তই কম। বাহরুর রায়েকেও অনুরূপ উল্লেখ করা হয়।
অর্থাৎ- তকবীর নিম্নস্বরে বলুক কিংবা উচ্চস্বরে বলুক; অনুরূপ, নফল নামাজ ঈদগাহে পড়ুক বা অন্যত্র পড়ুক; ঈদের নামাজের পূর্বে পড়ুক বা পরে পড়ুক; কোন অবস্থাতেই তাদের বাধা প্রদান করা মোটেই উচিত হবে না (তাহতাবী)। বাহ্রুর রায়েক প্রণেতা এতে বাধা দানের পক্ষে যে মন্তব্য করেছেন তা তাঁর নিজস্ব মন্তব্য ‘মাজহাবের’ নয়। তাছাড়া জনসাধারণকে এতে বাধা প্রদান করলে এ ধরণের পূণ্য কর্ম থেকে তারা ক্রমে দূরে সরে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে বেশী; বিশেষতঃ আলোচ্য সময়ে (জানাজার সময়)। (ফত্ওয়ায়ে শামী, গায়াতুল আওতর ১ম খণ্ড ৩৮৬ পৃ.)
দুর্রুল মোখতার-এ উল্লেখ করা হয়-
العوام فلا يمنعون من فعلها لانهم يتركونها والاداء الجائز عند البعض اولى من الترك اصلا، كما فى القنية وغيرها .
অর্থাৎ- সাধারণকে এমতাবস্থায় (ঈদে) নফল নামাজ থেকে বাধা দেয়া যাবে না, এ জন্যেই যে, তারা নামাজ ছেড়ে দেবে। আর যা পালন করা কোন কোন ইমামের মতে জায়েজ তা একেবারে ছেড়ে দেয়া অপেক্ষা উত্তম। কেনিয়া ও অন্যান্য কিতাবাদিতে অনুরূপ অভিমত রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, সূর্যোদয়ের সময় নামাজ পড়া মাকরূহ হওয়া সত্ত্বেও ফকীহগণ সাধারণ লোকের জন্য তার অনুমতি দিয়েছেন। সুতরাং পাঠকবৃন্দ! এসব বিষয়ে সুক্ষ্ম নজর দিন।
আলহামদু লিল্লাহ্! উপরোক্ত বর্ণনা ও উদ্ধৃতি থেকে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, জানাজা নিয়ে পথচলার সময় উচ্চরবে যিকির করা জায়েজ ও মোস্তাহাব। এ পূণ্যময় কার্য থেকে বাধা দেয়া মোটেই উচিত হবে না। সুতরাং খালেদ নামক (শেষোক্ত) ব্যক্তিই সঠিক পথ ও মতের উপর প্রতিষ্ঠিত; ছওয়াব ও শুভ পরিণতির উপযোগী।
هذا عندنا والله تعالى ورسوله اعلم بحقيقة الحال وصدق المقال واليه المرجع والمال من شك فيه فهو للحق عنيد وعن الصراط المستقيم بعيد .
অর্থাৎ- আমি এখানেই আমার বক্তব্য সমাপ্ত করলাম। আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (ﷺ)ই এ বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞাত। আল্লাহরই প্রতি সবাইকে ফিরতে হবে। যে ব্যক্তি এতে সন্দিহান হবে সে অবশ্য সত্য প্রত্যাখ্যানকারী এবং সে-ই সরল সঠিক পথ থেকে দূরে অপসারিত।
وصلى الله تعالى على سيدنا وشفيعنا ومولنا وغياثنا ومغيثنا ورؤفنا ورحيمنا وحبيبنا محمد صلّى الله عليه وسلّم وعلى اله واصحابه وازواجه وانصاره وعلماء ملته واولياء واتباع امته أجمعين برحمتك يا ارحم الرحمين .
সমাপ্ত
_____________
আল্-ক্বাওলুল হক্ব
(জানাজায় উচ্চরবে যিকির জায়েয প্রসঙ্গে)
রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল-কাদেরী (رحمة الله)
অনুবাদঃ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মন্নান (এম.এম.এম.এফ)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন