হযরত গাউছে পাকের কুতুবিয়াতের ব্যাপকতার বর্ণনা

 

হযরত গাউছে পাকের কুতুবিয়াতের ব্যাপকতার বর্ণনা


প্রশ্ন: قَدَمِىْ هَذِه عَلٰى رَقَبَةِ كُلِّ وَلِىّ اللهِ এর মর্মানুযায়ী গাউছে পাকের এ মর্যাদা তাঁর আবির্ভাবকালের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তাঁর পূর্বের এবং পরের আউলিয়া কেরাম এর বাইরে। ইমাম রাব্বানী কাইয়্যেমে দাওরানী, কুতবে যমানি হযরত শায়খ মুজাদ্দিদে আল্ফেসানী সিরহিন্দী (رحمة الله) স্বরচিত مكتوبات شىريف এর ১ম খণ্ড ২৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লে­খ করা হয়েছে যে, যদি গাউছে পাকের পূর্বের এবং পরের আউলিয়াগণকে এ ঘোষণার অন্তর্ভূক্ত করা হয়, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনগণের উপরেও তাঁর ফযীলত অধিক হওয়া অপরিহার্য হয়ে যায়। অনেক হাদীস দ্বারা সুসংবাদপ্রাপ্ত হযরত ইমাম মাহদী এর উপরও তাঁর মর্যাদা অধিক হওয়া আবশ্যক হয়ে যায়।


বাহ্জাতুল আসরার কিতাবে উল্লে­খ করা হয়েছে:

فِىْ وَقْتِهَا عَلٰى رَقَابِ الْاَوْلِيَاءِ فِىْ ذَالِكَ الْوَقْتِ .



অর্থাৎ: এ হুকুম গাউছে পারেক সময়কাল পর্যন্ত সীমিত ছিল।



উত্তর: মুহাক্কেকীন কেরাম বলেছেন, ইমামে রাব্বানী মুজাদ্দিদে আলফেসানী এ মর্যাদায় হযরত গাউছে পাকের স্থলাভিষিক্ত ছিলেন। হযরত গাউছে পাকের প্রতিনিধিত্বের দ্বারা এ মুয়ামালাটি মুজাদ্দিদে আল্ফেসানীর সাথে এমনভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন যেমন- نور القمر مستفاد من نور الشمس অর্থাৎ চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। সে সূর্যের আলো দ্বারা আলোকিত মাত্র। হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী (رحمة الله) এর মূল রহস্যকে সংক্ষিপ্তভাবে مكاشفات غيبيه নামক কিতাবে উল্লে­খ করেছেন-




 



 



 




অর্থাৎ: বড় বড় আউলিয়া কেরামদের মধ্যে কুতুব, গাউছুস সাক্বালাইন, কুতুবে রব্বানী মুহীউদ্দীন শায়খ আবদুল কাদের জিলানী এ মহান দৌলত দ্বারা সম্মানিত হয়েছেন। এ খাছ মর্যাদা খুব কম আউলিয়াগণেরই নছীব হয়ে থাকে।



সিলসিলায়ে আলিয়া নকশ্বন্দিয়া মুজাদ্দেদিয়ার সম্মানিত বুযুর্গ হযরত শাহ্ ফকীরুল্লাহ্ আলভী (رحمة الله) বলেন:



 




অর্থ: অতএব, অখণ্ডনীয় কাশ্ফ দ্বারা প্রমাণিত হলো, গাউছে পাকের কদম মুবারক পূর্বের ও পরের সকল আউলিয়া কেরামের স্কন্ধে বিদ্যমান। কাদ্দাসাল্লাহু আসরারাহু) এবং এ সম্পর্কে যা কিছু আলোচনা করা হলো তা তুমি ভাল করে জেনে রাখবে। -



(মাকতুবাত শাহ্ ফকীরুল্লাহ্ মাকতুব নং-৪৯)



হযরত শাহ্ হাবীবুল্লাহ (رحمة الله) বলেন, ইমাম মুজাদ্দিদে আলফেসানীর বক্তব্য:



 



অর্থাৎ: এ বিধানটি তাঁর যুগের আউলিয়া কেরামের ব্যাপারে প্রযোজ্য, তাঁর অর্থাৎ গাউছে পাকের পূর্বের ও পরের আউলিয়াগণের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়।



ইমাম রবব্বনী তাঁর শেষ সময়ে এ সম্পর্কে যা বলে গেছেন তা প্রাথমিক সময়ে তাঁর পূর্বের বক্তব্যকে রহিতকারী। হযরত শায়খ মুজাদ্দিদ তাঁর জীবনের শেষ পর্যায়ে হযরত গাউছে পাকের শ্রেষ্ঠ মর্যাদার কথা বর্ণনা করেছেন। -দফতরের সুয়াম, মাকতুব নং ১২৩



উল্লে­খ রয়েছে যে, যারা নবুয়তি নিকট যামানার সাথে সম্পর্ক রাখেন বস্তুত তাঁরা মূলের মূল পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন। এ পথে যারা পৌঁছতে পারেন তাঁরা আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম এবং তাঁদের আছহাব তথা সাথীর মর্যাদায় বিভূষিত। তাঁরা উম্মতের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন এ মহান দৌলত দানে ধন্য করে থাকেন। কিন্তু এরা সংখ্যার দিক দিয়ে অনেক কম। এ পথে কোন মাধ্যম ও প্রতিবন্ধকতা নেই। এ পথে সম্পৃক্তগণ যা ফয়েজ হাসিল করে থাকেন কারো মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি মূল থেকে অর্জন করেন। তাদের মধ্যে কেউ কারো জন্য প্রতিবন্ধক হন না।



দ্বিতীয় এমন পথ রয়েছে যারা قرب ولايت  এর সাথে সম্পর্ক রাখে। সকল আওতাদ, আবদাল, নুজাবা এবং সমস্ত আল্লাহর ওলীগণ এ পথে পৌঁছে থাকেন। এ পথের অর্থ হচ্ছে ত্বরীকতের বিশেষ পথ, বরং প্রচলিত جـذبه  এর আওতাধীন রয়েছে। এ পথের واسطه বা মাধ্যম সাবেত রয়েছে। এ পথের সন্ধানপ্রাপ্তদের পেশওয়া এবং দিশারী এবং তাঁদের ফয়েজ লাভের মূলকেন্দ্র হচ্ছেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু। এ স্তরে স্বয়ং হুজুর সাইয়্যেদে আলম (ﷺ) এর উভয় নূরানী কদম মুবারক হযরত আলী (رضي الله عنه) এর বরকতময় মাথার উপর রয়েছে।



হযরত ফাতেমাতুয্ যাহরা (رضي الله عنه) এবং হাসানাইন করীমাইন তথা ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)ও এ স্তরে তাঁর শরীক রয়েছেন। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (رحمة الله) বলেন, আমার বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে যে, হযরত আলী (رضي الله عنه) তাঁর জন্মের পূর্বেও তিনি এ মহাস্তরের আশ্রয়ে ছিলেন। যেমনিভাবে জন্মের পরেও আছেন। এ পথে যার কাছে ফয়েজ ও হেদায়েত পৌঁছে থাকে তা তাঁর উসিলায় পৌঁছে থাকে। কেননা এ পথের সর্বশেষ নোকতা বা বিন্দু এটিই। আর এ সএরর কেন্দ্রস্থল তাঁর সাথে সম্পর্ক রেখে চলে। যখন হযরত আলী (رضي الله عنه) এর পালা পূর্ণ হলো এ আজিমুশ্শান মর্যাদা ধারাবাহিকভাবে হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) এর উপর ন্যস্ত করা হয়। তাঁদের পরে বারজন ইমামের মধ্যে হতে প্রত্যেকের সাথে এ ধারাবাহিকতা ঠিক থাকে।



উল্লে­খিত বুজুর্গগণের যুগে তেমনিভাবে তাঁদের ইন্তিকালের পর যারাই ফয়েজ ও হেদায়েত লাভ করছিলেন, ঐ বুজুর্গদের মাধ্যমই লাভ করেছিলেন। তাঁদের যুগের আকতাব ও নুজাবা যেই হোক না কেন, তাঁদের সকলের লক্ষ্যস্থল এবং আশ্রয়স্থল তাঁরাই। কেননা সকল দিক বা প্রান্ত মূলকেন্দ্রের সাথে একত্রিত না হয়ে উপায় নেই। এ ধারাবাহিকতায় হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর পালা এসে পড়লো। উল্লে­খিত মহা পদমর্যাদা এ বুজুর্গের উপরই ন্যস্ত হলো।



উপরে উল্লে­খিত সকল ইমাম ও শায়খ জিলানী ব্যতীত কোন ব্যক্তি এ কেন্দ্রের উপর বিদ্যমান নয়। এ পথে সকল আকতাব ও নুজাবা যে ফয়েজ ও বারাকাত প্রাপ্ত হয়ে থাকেন তা শায়খ (গাউছে পাক) এর উছিলায় লাভ করে থাকেন। কেননা এ কেন্দ্র শায়খ ব্যতীত আর কেউ লাভ করেননি। তাই শায়খ জিলানী (رحمة الله) বলেন-



اَفَلَتْ شُمُوْسُ الْاَوَّلِيْنَ وَشَمْسُنَا



                       اَبَدًا عَلٰى اُفُقِ الْعُلٰى لَا تَغْرُبُ



অর্থাৎ: পূর্বের (ওলীগণের) সূর্য অস্তমিত হয়েছে। আর আমার সূর্য অস্ত যায়নি বরং সর্বদা উদীয়মান রয়েছে।



কছিদাংশে উল্লে­খিত ‘সূর্য’ দ্বারা হেদায়েতের ফয়জের সূর্য বুঝানো হয়েছে। আর ‘সূর্য’ অস্ত যাওয়া মানে উল্লে­খিত হেদায়েত ও ফয়েজ জারী না হওয়া। যেহেতু হযরত শায়খ জিলানী এর অস্তিত্বের দ্বারা যে মুয়ামালা পূর্বের কুতুবগণের সাথে সম্পৃক্ত ছিল তা হযরত শায়খ জিলানীর উপর ন্যস্ত করা হয়। এতে তিনি সঠিক পথ ও হেদায়েত পৌঁছানোর মাধ্যমেও উছিলায় পরিণত হলেন। যেমনিভাবে তাঁর পূর্বের বুজুর্গগণ হয়েছিলেন। যখন পর্যন্ত ফয়েজ এর উছিলায় মুয়ামালা স্থায়ী থাকবে তা তো শায়খ এর উছিলা এবং মাধ্যমেই থাকবে। এ কারণেই গাউছে পাক যথার্থই বলেছেন-



اَفَلَتْ شُمُوْسُ الْاَوَّلِيْنَ وَشَمْسُنَا



                       اَبَدًا عَلٰى اُفُقِ الْعُلٰى لَا تَغْرُبُ



“তরজুমা” হযরত মাওলানা আলেমুদ্দীন (رحمة الله) নক্শবন্দী, মুজাদ্দিদী যিনি সর্বজন গৃহীত (দফতরে ছুয়াম, মাকতুব নং: ১২৩ তরজুমা ৬৭৯ পৃষ্ঠা)। মাকতুবাতে ইমাম রব্বানী। এ মাকতুব শরীফ অধ্যয়ন না করার কারণে কতক লোক এমন বিরুপ ধারণা পোষণ করছেন যে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (رحمة الله) হযরত গাউছে আজমের শ্রেষ্ঠত্বকে তাঁর যুগের ওলীগণের উপর দেওয়াকে কখনও মেনে নেননি।



অত্যন্ত আক্ষেপের বিষয় এই যে, এ মাকতুবাত গ্রন্থটি উলামা ও ফুজালাগণের দৃষ্টিগোচর কেন হয়নি?



গাউছে পাক বলেছেন,



بِلَادُ اللهِ مُلْكِىْ تَحْتَ حُكْمِىْ



                          وَوَقْتِىْ قَبْلَ قَلْبِىْ قَدْ صَـفَالِىْ



অর্থাৎ: আল্লাহ্ তায়ালার সকল রাজ্য আমার নিয়ন্ত্রণাধীনে। আমার রূহানী অবস্থা আমার দেহ সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে পরিচ্ছন্ন ছিল। এ পদ্যাংশে হুজুর গাউছে পাক (رحمة الله) বলেন, যত কামালিয়াত ও বুজুর্গী মানবের মধ্যে আল্লাহ্ তায়ালা দান করেছেন, তা সে মানবের রূহ সৃষ্টির সময় দান করেছেন। বর্তমানে আমার যে বুজুর্গী ও পরিপূর্ণতা রয়েছে, তা (বুজুর্গী) আমার রূহ সৃষ্টির সময় দান করা হয়েছিল। অর্থাৎ পৃথিবীর আধ্যাত্মিক রাজত্ব তাঁরই নিয়ন্ত্রণে দেয়া হয়েছে। হুজুর (ﷺ)কে যে নবুয়ত দান করা হয়েছে তা পার্থিব জীবনের চলি­শ বছর পরে দান করা হয়নি বরং ঐ সময়ের পূর্বেই নবীজির নবুয়ত দান করা হয়েছে যখন সাইয়্যেদেনা আবুল বশর আদম (عليه السلام) পানি এবং মাটির মাঝে অবস্থান করেছিলেন অর্থাৎ তখনও তাঁকে সৃষ্টি করা হয়নি।



হাদীসে পাকে নবীজী (ﷺ) ইরশাদ করেছেন:



كُنْتُ نَبِيًّا وَاٰدَمُ بَيْنَ الْمَاءِ وَالـتُّـرَابِ .



আমি ঐ সময় নবী ছিলাম যখন আদম (عليه السلام) পানি এবং মাটির মাঝে অবস্থান করছিলেন। হুজুর গাউছে পাক বলেন:



وَوَلَّانِىْ عَلٰى الْاَقْطَابِ جَمْعًا



                    فَحُكْمِـىْ نَافِـذٌ فِىْ كُلِّ حَالِىْ



অনুবাদ: আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু আমাকে সমস্ত ‘আকতাব’ গণের উপর হাকিম বানিয়েছেন। অতএব, আমার হুকুমত সর্বাবস্থায় জারী রয়েছে।



যখন কোন ওলী এমন স্তরে উন্নীত হন, তখন তাঁর মাধ্যমে কুফুরী ও গোমরাহীর অন্ধকার এমনভাবে দূরিভূত হয়ে যায় যেমনিভাবে সূর্য ও চন্দ্রের আলো দ্বারা রাতের অন্ধকার দূর হয়ে যায়।



কতেক মুহাক্কেকীন এর মতে কুতুব এবং গাউছ এক ব্যক্তিই হয়ে থাকেন। আবার কখনো কুতুব বাদশাহী পদেও উন্নীত হয়ে থাকেন। যখন কোন কুতুব পরলোকগমন করেন, তখন ‘আওতাদ’ থেকে একজনকে ঐ পদে আসীন করা হয়।



গোটা পৃথিবীতে ‘আবদাল জামাত’ চলি­শজন আউলিয়া নিয়েই গঠিত হয়। নবী করীম (ﷺ) এর খাঁটি ইশ্ক ও মুহাব্বত যাঁদের অন্তরে থাকে এ স্তরের আউলিয়াগণকে আল্লাহ্ পাক কামালিয়াত এর মর্যাদায় উন্নীত করে তাদের স্তরকে পরিবর্তন করতে থাকেন। আর এ স্তরটি হচ্ছে نـجباء গণের সর্বশেষ স্তর। এ স্তরের আউলিয়া কেরামের উছিলা নিয়ে আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে রহমতের বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করা হয়।



হযরত মাহবুবে সোবহানী (رحمة الله) বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা মুহাব্বত করে আমাকে সকল কুতুবগণের উপর হাকিম করেছেন। আমার হুকুম সর্বাবস্থায় অর্থাৎ আমার পার্থিব হায়াত ও পরলোক গমনের পরেও পার্থিব দিন হোক বা রাতে, সকালে অথবা সন্ধ্যায় সদা সর্বদা জারী রয়েছে।



تصوف এর কিতাবসমূহে আউলিয়াল্লাহ্গণের বিভিন্ন স্তর ও মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। যেমন-কুতুবুল আকতাব, আফরাদ, আওতাদ, আবদাল, নুজাবা, নুকাবা, আরেফ, সালেক, ছালেহ ছুফী, ছাহেবে ঈমান।



আল্লাহ্ তায়ালার ইবাদত ও রিয়াজত এবং ইশ্কে রাসূল (ﷺ) এর মাধ্যমে এ মর্যাদাসমূহ লাভ হয়। ওলীউল্লাহর স্তর হলো تصوف এর আলোকে আল্লাহ্ পাকের দোস্ত।



হুজুর গাউছে পাক তাঁর বাণী যা বিশ্বে ‘কছিদায়ে গাউছিয়া’ নামে খ্যাত, এ কছিদার একাংশে গাউছে পাক বলেন:



مَقَامُكُمُ الْعُلٰى جَمْعًا وَلَكِنْ



                     مَقَامِىْ فَوْقَكُمْ مَازَالَ عَالِىْ



হে আউলিয়া, আকতাব ও আবদালগণ! আপনাদের সকলের মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে। কিন্তু আমার মর্যাদা আপনাদের মর্যাদা থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। আর এ মর্যাদা সদা সর্বদা ঊর্ধ্বে থাকবে।



সাইয়্যেদেনা গাউছে আজম (رحمة الله) এ কছিদাংশে সকল আকতাবকে উৎসাহ দান করতে গিয়ে মর্যাদার উন্নতির পন্থা বাতলিয়ে দিচ্ছেন যে, যদি তাঁরা ঐ বর্তমান মর্যাদাকে চূড়ান্ত মর্যাদা বুঝে থাকেন, তাহলে তা প্রকাশ না করা বাঞ্চনীয়। যদি তাঁরা নিজ ধারণা অনুযায়ী নিজেদেরকে কামেল বলে মনে করেন, এ মর্যাদার উপরে আর কোন মর্যাদা অবশিষ্ট নেই। তাহলে এ ধরনের ধারণা তাঁদের সঠিক হবে না। কেননা, নৈকট্যের জন্য অশেষ মর্যাদা রয়েছে। হে আল্লাহর ওলীগণ! আপনারা সবাই আমার মর্যাদা থেকে অনেক নিম্নে অবস্থান করছেন। অতএব, আমাকে অনুসরণ করার প্রচেষ্টা চালানো উচিত। যদ্বারা আপনাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।



هُوَ بَاطِنٌ نَبُوَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـلَايَكُوْنُ اِلَّا لِورَاثِتِه لِاِخْتِصَاصِه بِالْاَكْمَلِيَّةِ فَـلَا يَكُوْنُ خَاتم الْوِلَايَةِ وَقُطْبُ الْاَقْطَابِ اِلَّا عَلٰى بَاطِنِ خَاتَمِ النَّبُوَّةِ .



অর্থাৎ: কুতুবিয়াত পদ মর্যাদা নবুয়তে মুহাম্মদী (ﷺ) এর আধ্যাত্মিক অবস্থা। আর এ পদটি তার উত্তরাধিকারী ছাড়া কেউ লাভ করতে পারেন না। কেননা প্রকৃত কামালিয়াত লাভে ধন্য হওয়া তাঁদেরই বৈশিষ্ট্য। সুতরাং خاتم الولايت এবং قطب الاقطاب বাতেন خاتم النبوة ছাড়া হতে পারে না।



افـراد : ঐ واصلين جماعت এর নাম, যারা কুতুবের আওতার বাইরে অবস্থান করেন। কেননা আফরাদগণ ফেরেশতাগণের আশ্রয়াধীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁরা যমীনে দায়িত্বশীল ফেরেশতাদের ঊর্ধ্বে থাকেন।



قطب : বলা হয় যারা সমগ্র সৃষ্টির অস্তিত্ব ও গুঢ়তত্ত্বাসমূহের প্রত্যক্ষকারী হয়ে থাকেন। যেমন জ্যোতিবিদ্যা জগতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সম্পাদনের জন্য মেরুকেন্দ্র নির্বাচন করা হয়। যেমন: আসমান, যমীন, বিশ্বজগত, ইহকাল ও পরকাল তথা সমগ্র অস্তিত্বশীল সৃষ্টি এবং যা ভবিষ্যতে সৃষ্টি হবে সবগুলোর ব্যবস্থাপক ও তদবীরকার হচ্ছেন মুস্তফা (ﷺ) যিনি قُطب الْكَوْنَيْنِ পদে আসীন রয়েছেন। আউলিয়া কেরামগণের ‘‘কুতুব’’ পদ মর্যাদাটির বিভিন্ন স্তর রয়েছে।



(১) قُطب الاقْطَابِ : ‘কুতুব’ কুতুবুল আকতাব এর অধীনস্ত একটি স্তর।



(২) قُطْبُ الْارشَادِ : ইনি হেদায়েত এর কেন্দ্রস্থল হন। যাঁর মাধ্যমে সমূহ গোমরাহী ও কুফুরী বিদূরিত হয়।



(৩) قُطب الْاَوْتَادِ : এ স্তর ‘নুজাবা’ গণের সর্বশেষ ধাপ হতে আরম্ভ হয়।



হুজুরে গাউছে পাক (رحمة الله) যেমনিভাবে তিনি قُطْبُ الْاَقْطَابِ তেমনিভাবে তিনি قطب الاوتاد , কুতুবুল এরশাদ এবং فردও বটে।

_____________

কালামুল আউলিয়া ফি শানে ইমামিল আউলিয়া

রহমাতুল্লাহে তায়ালা আলাইহিম আজমাঈন

রচনায়:মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী

অনুবাদ: অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ নুরুল আলম খাঁন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন