ইবরাহিম (عليه السلام)-এর কুরবানি কবুল এবং বর্তমান কুরবানির প্রচলন


কেমন আশ্চর্যের দৃশ্য! আল্লাহ’র সন্তুষ্টির জন্য পিতা কর্তৃক পূত্রকে কুরবানি!! (আল্লাহু আকবার)। যখন পিতা-পূত্র উভয়েই রবের ফায়সালার উপর অবনতচিত্তে রাজি, তখন পিতা পূত্রকে উপোর করে শোয়ালেন। কুরআনের ভাষায়:

فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ

-“যখন পিতা-পূত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং ইবরাহিম তাঁকে জবাই করার জন্য শায়িত করলেন।” ১৩


১৩ - সূরা আস-সাফফাত: ১০৩।



ছুরি চালাবার আগে পূত্র বলল, আব্বাজান! তিনটি আবদার রক্ষা করুন:



❏        প্রথমত, আমার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে দিন, যেন নড়াচড়ার কারণে আপনার কষ্ট না হয় এবং আপনার শরীরে রক্তের ছিটা না পড়ে।



❏        দ্বিতীয়ত, আমার চোখে কাপড় বেঁধে দিন, যেন মুহাব্বতের আতিশয্যে ছুরি চালানো বন্ধ না হয়ে যায়।



❏        তৃতীয়ত, আমার রক্ত মাখা জামাটি আমার মায়ের কাছে পৌঁছে দিবেন, যেন তাঁর অন্তরে একটু স্বস্তি আসে।



এদিকে পিতা পূত্রের গলায় ছুরি চালাচ্ছেন, ঐদিকে ছুরি ভোতা হয়ে গেছে। দু’বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে ছুরিটি যখন পাহাড়ের দিকে নিক্ষেপ করলেন, তখন একটি পাথরের উপর পড়ে তা ছুরির আঘাতে দু’খন্ড হয়ে যায়। ছুরির বক্তব্য যেন এমন:



اَلْخَلِيْلُ يَأْمُرُنِيْ بِالْقَطْعِ وَالْجَلِيْلُ يَنْهَانِيْ



-‘খলিল আমাকে কাটতে হুকুম করেন, আর জলিল (আল্লাহ) আমাকে নিষেধ করেন।’



আবার ছুরি হাতে যখন পূত্রকে কুরবানি করতে প্রস্তুত হলেন, তৎক্ষনাৎ হযরত জিবরাইল আমিন বেহেশত হতে একটি দুম্বা নিয়ে ইবরাহিম (عليه السلام)-এর ছুরি ইসমাইল (عليه السلام)-এর গলায় পৌঁছার আগেই হাজির হলেন এবং ইসমাইল (عليه السلام)কে সরিয়ে তদস্থলে দুম্বাটি রেখে দিলেন। দুম্বা কুরবানি হয়ে গেল। রবের পক্ষ হতে আওয়াজ আসল:



وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ - قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ - إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلَاءُ الْمُبِينُ - وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ - وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ



-“তখন আমি তাঁকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দেই। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম জবাই করার জন্য এক মহা জন্তু। আমি তার জন্য এ বিষয়টি পরবর্তীদের জন্য রেখে দিয়েছি।” ১৪


১৪ - সূরা আস-সাফফাত: ১০৪-১০৮।



জ্ঞাতব্য যে, ইবনু কাছির বর্ণনা করেন, হযরত ইসমাইল (عليه السلام)-এর পরিবর্তে জান্নাতি যে দুম্বা বা ভেড়াটি দান করা হয়েছিল, এর নাম জারির, রং ছিল সাদা, বড় বড় চক্ষু ও শিং বিশিষ্ট। এটা জান্নাতে ৪০ বছর প্রতিপালিত হয়েছিল। এটা সে জন্তু যা হযরত আদম (عليه السلام)-এর বড় ছেলে হযরত হাবিল কুরবানি করেছিলেন।



হযরত ইবরাহিম (عليه السلام)-এর কুরবানি আল্লাহ কবুল করে নিলেন, আর এ স্মরণিকা স্বরূপ সেই কুরবানি ধারা কিয়ামত পর্যন্ত জারি করে দিলেন। এখনো প্রতি বৎসর সে স্মরণকেই উজ্জীবিত করা হয়।

_________________

কুরবানি (ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও আহকাম)

গ্রন্থনা ও সংকলন:

মুফতি মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন আন-নাজিরী

অধ্যক্ষ, জামি‘আ-এ-‘ইলমে মদীনা, নেত্রকোণা

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন