মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে পথ চলার সময় উচ্চস্বরে যিকির করা শরীয়ত মতে বৈধ
নাহমাদুহু ওয়া নুছাল্লী আলা হাবীবিল মোস্তফাল করীম!
শ্রদ্ধেয়!
সুদক্ষ ও সুক্ষ্ম দৃষ্টি সম্পন্ন অভিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম! নিম্নলিখিত বিতর্কিত মাছআলায় আপনাদের অভিমত কি?
‘জায়েদ’ নামক জনৈক ব্যক্তির অভিমত হল- মৃত ব্যক্তিকে গোরস্থ করার জন্য নিয়ে যাবার সময় তদ্সঙ্গে পথচারীদের উচ্চরবে ‘যিকির করা’ শরীয়ত মতে নাজায়েজ বা অবৈধ বরং মাকরূহ তাহরীমী। তবে মৌলিক ‘যিকির’ জায়েজ। ফতোয়া ‘আলমগীরী’, ‘শামী’ ও ‘ফত্হুল ক্বাদীর’, ইত্যাদি কিতাবাদিতে বিস্তারিতভাবে তার উল্লেখ রয়েছে।
পক্ষান্তরে ‘খালেদ’ নামক জনৈক ব্যক্তির দাবী হল- মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে পথ চলার সময় উচ্চস্বরে ‘যিকির করা’ জায়েজ, মোস্তাহছান বা মোস্তাহাব। যুগোপযোগী মঙ্গলজনক পন্থাস্বরূপ ওলামা রব্বানী বর্তমানে এ পূণ্যময় কাজটির অনুমতি দিয়েছেন। সুতরাং তা আজ-কাল মুসলিম সমাজে প্রচলিত রয়েছে। উক্ত ‘আমলটির’ বৈধতার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। যেমন- ‘উছুল-ই ফিক্হবিদগণ’ বর্ণনা করেছেন।
এখন প্রশ্ন হল- তাদের মধ্যে কার দাবী সঠিক- খালেদের না জায়েদের?
খালেদের দাবী যদি সঠিক হয় তবে জায়েদের পেশকৃত দলিলাদির জবাব কি?
অকাট্য প্রমাণাদিসহ তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করুন। রোজ কিয়ামত আল্লাহ্ তায়ালার নিকট যথাযথ প্রতিদান প্রাপ্ত হয়ে ধন্য হবেন নিশ্চয়ই।
জবাব
اقول بتوفيق الله الوهاب واليه الـمرجع والـماب .
উপরোক্ত পরস্পর বিপরীতমুখী দুই বক্তব্যের মধ্যে খালেদ নামক ব্যক্তির অভিমতই সঠিক। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির ‘জানাজা’ বা লাশ নিয়ে পথ চলার সময় উচ্চরবে যিকির করা একটা জায়েজ বা বৈধ কাজ; শরীয়ত মতে তা মোস্তাহাব। যেমন- ‘মাজমায়ুল আনহোর’-২য় খণ্ডের ১৮৬পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়-
لا باس لتشيع الجنازة بالجهر بالقران والذّكر .
অর্থাৎ- উচ্চরবে কোরআন মজিদ কিংবা আল্লাহর যিকির পাঠরত অবস্থায় জানাজার পশ্চাদ্গমন শরীয়ত মতে নিষিদ্ধ নয়। কাজেই তাতে কোন ক্ষতি নেই।
“জামেউর রমূজ”-১ম খণ্ডের ১২৭পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়-
والاكتفاء مشعربانّه لا باس لمشيع الجنازة بالجهر.
অর্থাৎ- উচ্চরবে যিকির সহকারে ‘জানাজার’ পশ্চাদ্গমনকারীর জন্য কোন ক্ষতি নেই।
‘ফতোয়া শামী-১ম খণ্ডের ১১৯পৃষ্ঠায় বর্ণিত-
كلمة لا باس قد تستعمل فى المندوب كما صرح به فى البحر من الجنائز والجهاد فافهم .
অর্থাৎ- ‘জানাজা’ ও ‘জিহাদ’ সম্পর্কিত মাছআলাসমূহে لابــاس শব্দটি কখনো ‘মোস্তাহাব’ অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন- ‘বাহরুর রায়েক্ব’ এ অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। তাছাড়া উক্ত কিতাবের ১ম খণ্ডের ৬৫৮ পৃষ্ঠায় এবং ২য় খণ্ডের ১৮০পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়-
كلمة لاباس، دليل على انّـه مستحبّ .
অর্থাৎ- لاباس শব্দ দ্বারা কোন হুকুম ব্যক্ত করা হলে তা ‘মোস্তাহাব’ বলে প্রমাণিত হয়।
ইমাম নববী (رحمة الله) তাঁর প্রণীত ‘কিতাবুল আজকার’ এ উল্লেখ করেছেন-
يستحب له (اى للماشى) ان يكون مشتغلا بذكر الله تعالٰى .
অর্থাৎ- ‘জানাজা’ বা মৃত ব্যক্তিকে গোরস্থানে নিয়ে যাবার সময় পদাতিকদের আল্লাহ্ তায়ালার যিকিরে মশগুল হওয়া মোস্তাহাব।
‘গুনিয়াহ্’ নামক কিতাবের ৫৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়-
قال علاء الدين التاجرى ترك اولٰى .
অর্থাৎ- আলাউদ্দীন তাজেরী বলেছেন, জানাজার সাথে পথ চলার সময় ‘সরব-যিকির’ মকরূহ নয় বরং ‘অধিক উত্তম বর্জন’ মাত্র (অর্থাৎ দু’টি উত্তম কর্মের মধ্যে অধিকতর উত্তম কার্যটিই বর্জন করা)। মাকরূহ এ জন্যে নয় যে, কোন কাজ বা বস্তু মাকরূহ বলে প্রমাণিত করতে হলে তদ্প্রাসঙ্গিক কোরআন-হাদিস লব্ধ বিশেষ দলিলের প্রয়োজন।
যথা- ‘ফতোয়া শামী’তে উল্লেখ করা হয়-
اذ لابدّلها من دليل خاص .
অর্থাৎ- বিশেষ দলিল দ্বারাই মকরূহ প্রমাণিত হয়। অথচ ‘জানাজার’ সাথে পথ চলার সময় উচ্চরবে যিকির করার অবৈধতা সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট বা বিশেষ প্রমাণ নেই- না কোরআন মজিদে, না হাদিস শরীফে; বরং পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরীফের প্রকাশ্য অর্থে (دلالة النص) এটাই সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, যে কোন মুহূর্তে বা অবস্থায় যিকির করা জায়েজ বা বৈধ। যা ফকীহগণও সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছেন- উচ্চস্বরে হোক কিংবা নীরবে হোক যিকির করার নির্দেশ রয়েছে।
_____________
আল্-ক্বাওলুল হক্ব
(জানাজায় উচ্চরবে যিকির জায়েয প্রসঙ্গে)
রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল-কাদেরী (رحمة الله)
অনুবাদঃ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মন্নান (এম.এম.এম.এফ)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন