দোয়া করার ১৭টি মাদানী ফুল


(প্রায় সব মাদানী ফুল আহসানুল বিআ লি আ-দাবিদ দোয়া মাআ' শারহি যাইলুল মুদ্দা'আ লি আহসানুল উই'আ” নামক গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা করাচী থেকে প্রকাশিত)



(১) প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ বার দোয়া করা ওয়াজিব। নামাযীদের এ ওয়াজিব, নামাযে সূরা ফাতিহার মাধ্যমে আদায় হয়ে যায়। কারণ اهد نا الصراط المستقيم (কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আমাদেরকে সােজা পথে পরিচালিত করাে) ও দোয়া এবং الحمد لله رب العلمين (কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি মালিক সমস্ত জগদ্বাসীর) বলাও দোয়া।  (১২৩, ১২৪ পৃষ্ঠা)


(২) দোয়াতে সীমা অতিক্রম করবেন না। যেমন আম্বিয়ায়ে কিরাম (আ.) এর পদমর্যাদা চাওয়া বা আসমানে আরােহনের আকাঙ্ক্ষা করা। এছাড়া উভয় জগতের সমস্ত কল্যাণ ও সর্বপ্রকার গুনাবলী চাওয়া নিষেধ। কারণ এসব গুণাবলীর মধ্যে আম্বিয়াদের পদমর্যাদাটাও রয়েছে, যা অর্জন করা যাবে না। (৮০, ৮১ পৃষ্ঠা)



(৩) যেটা অসম্ভব বা অসম্ভবের কাছাকাছি, সেটার দোয়া করবেন না। সুতরাং সব সময়ের জন্য সুস্থতা, নিরাপত্তা চাওয়া যে, মানুষ সারাজীবন কখনাে কোন প্রকার কষ্টে পতিত হবে না, এটা হল অসম্ভব অভ্যাসের দোয়া চাওয়া। অনুরূপভাবে লম্বাকৃতির মানুষের ক্ষুদ্র আকৃতির হওয়ার জন্য কিংবা ছােট চক্ষু বিশিষ্টের বড় চোখ লাভের দোয়া করা নিষেধ। কারণ এটা এমন কাজের দোয়া, যেটার উপর কলম জারী হয়ে গেছে অর্থাৎ এটা পূর্বে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। (৮১ পৃষ্ঠা)



(৪) গুনাহের দোয়া করবেন না, যেমন, অন্যের ধন যেন আপনার মিলে যায়। কারণ গুনাহের আশা করাও গুনাহ্। (৮২ পৃষ্ঠা)



(৫) আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার দোয়া করবেন না। (যেমন-অমুক আত্মীয়দের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগে যাক) (৮২ পৃষ্ঠা)



(৬) আল্লাহর নিকট শুধুমাত্র নিকৃষ্ট বস্তু চাইবেন না, কেননা পরওয়ারদিগার খুবই ঐশ্বর্যশালী। তাই নিজের মনােযােগ সর্বদা


তারই প্রতি রাখুন এবং প্রতিটি বস্তু তাঁরই কাছে চান। (৮৪ পৃষ্ঠা)



(৭) দুঃখ ও বিপদে ভীত হয়ে নিজের মৃত্যুর দোয়া করবেন না। মনে রাখবেন যে, পার্থিব ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য মৃত্যু কামনা করা না জায়িয ও দ্বীন-ধর্মের ক্ষতির ভয়ে (মৃত্যু কামনা করা) জায়িয। (অর্থাৎ - যেমন এই দোয়া করা যে, ইয়া আল্লাহ্ আমার দ্বারা দ্বীন ধর্মের, সুন্নীয়তের ক্ষতি সাধন হওয়ার পূর্বেই আমার মৃত্যু নসীব কর)। (৮৫, ৮৭ পৃষ্ঠা)



(৮) শরয়ী প্রয়ােজন ব্যতীত কারাে মৃত্যু ও অনিষ্ট (ধ্বংস) এর দোয়া করবেন না। তবে যদি কোন কাফিরের ঈমান গ্রহণ না করার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস বা প্রবল ধারণা হয় ও (তার) বেঁচে থাকাতে দ্বীনের ক্ষতি হয় অথবা কোন অত্যাচারির তাওবা করার ও অত্যাচার ত্যাগ করার আশা না থাকে এবং তার মৃত্যু, ধ্বংস সৃষ্টিকুলের জন্য উপকার হয় তবে এ ধরণের মানুষের জন্য বদ্-দোয়া করা শুদ্ধ হবে। (৮৬, ৮৯ পৃষ্ঠা)



(৯) কোন মুসলমানকে এ বদ্-দোয়া দেবেন না যে, “তুই কাফির হয়ে যা।" কারণ অনেক আলিমের মতে (এধরণের দোয়া করা) কুফরী আর বাস্তব সত্য এটাই যে, যদি কুফরকে ভাল ও ইসলামকে মন্দ জেনে এ রূপ বলে, তবে নিঃসন্দেহে কুফরী। অন্যথায় বড় গুনাহ কেননা মুসলমানের (মন্দ কামনা করা) হারাম। বিশেষতঃ অমঙ্গল চাওয়া (যে অমুকের ঈমান নষ্ট হয়ে যাক) সব ধরণের অমঙ্গল থেকে নিকৃষ্ট। (পৃষ্ঠা ৯০)



(১০) কোন মুসলমানের উপর লানত (অভিশাপ) দেবেন না ও তাকে মরদূদ (বিতাড়িত) ও মলউন (অভিশপ্ত) বলবেন না এবং যে কাফিরের কুফরের উপর মৃত্যু নিশ্চিত নয় তার উপরও নাম নিয়ে লানত করবেন না। এমনিভাবে মাছি, বাতাস ও প্রাণহীন বস্তুসমূহ (যেমন-পাথর, লােহা ইত্যাদি) ও প্রাণীজগতের উপর অভিশাপ দেয়া নিষিদ্ধ। তবে বিচ্ছু ইত্যাদির ব্যাপারে হাদীসে পাকে অভিশাপ এসেছে। (৯০ পৃষ্ঠা)



(১১) কোন মুসলমানকে এ বদ দোয়া দেবেন না যে, “তাের উপর খােদার গজব নাজিল (অবতীর্ণ) হােক ও তুই দোযখে যা," কারণ হাদীস শরীফে এটার প্রতি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। (১০০ পৃষ্ঠা)



(১২) যে কাফির হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে তার জন্য ক্ষমার দোয়া করা হারাম ও কুফরী। (পৃষ্ঠা ১০১)



(১৩) এ দোয়া করা, “হে খােদা! সকল মুসলমানের সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করে দিন।” জায়িয নেই। কারণ এতে ঐসব হাদীসে মুবারকের তাকীব (অর্থাৎ-মিথ্যা প্রতিপন্ন করা) হয়ে থাকে, যেগুলােতে অনেক মুসলমানের দোযখে যাওয়া সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে। (১০৬ পৃষ্ঠা)



তবে এভাবে দোয়া করা, “সমস্ত উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ) এর মাগফিরাত (অর্থাৎ-ক্ষমা) হােক বা সমস্ত মুসলমানের ক্ষমা হােক" জায়িয। (১০২ পৃষ্ঠা)



(১৪) নিজের জন্য নিজের বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ ও আওলাদের জন্য বদ্-দোয়া করবেন না। জানা নেই যে, যদি সেই মুহূর্তটা দোয়াকবুল হওয়ার সময় হয়ে থাকে আর বদ্-দোয়ার প্রভাব প্রকাশ হওয়াতে পরে আবার যেন অনুশােচনা করতে না হয়। (১০৭ পৃষ্ঠা)



(১৫) যে বস্তু অর্জিত রয়েছে, (অর্থাৎ নিজের কাছে বিদ্যমান রয়েছে) সেটার দোয়া করবেন না। যেমন-পুরুষেরা বলবেন না যে, “ইয়া আল্লাহ! আমাকে পুরুষ করে দাও।” কারণ এটা ইতিহাযা! (তামাসা) করা। তবে এরূপ দেয়া যাতে শরীয়াতের নির্দেশ পালন বা বিনয় ও বন্দেগীর বহি:প্রকাশ অথবা পরওয়ারদিগার ও মদীনার তাজদার (ﷺ) এর প্রতি ভালবাসা অথবা ধর্ম বা ধার্মিকদের প্রতি অনুরাগ, বা কুফর ও কাফিরদের প্রতি ঘৃণা ইত্যাদির ফায়দাসমূহ্ অর্জিত হয় তাহলে তা জায়িয। যদিও এ বিষয় গুলাে অর্জিত হওয়া নিশ্চিত। যেমন-দরূদ শরীফ পাঠ করা, উসীলা, সিরাতে মুস্তাকীম (সঠিক পথ) এর, আল্লাহ্ ও রাসুলের শত্রুদের উপর শাস্তি ও অভিসম্পাতের দোয়া করা। (১০৮,১০৯ পৃষ্ঠা)



(১৬) দোয়াতে সংকীর্ণতা করবেন না। যেমন-এভাবে চাইবেন না যে, ইয়া আল্লাহ্ শুধু আমার উপর দয়া করুন বা শুধুমাত্র আমাকে ও আমার অমুক অমুক বন্ধুকে নেয়ামত দান করুন। (১০৯ পৃষ্ঠা)



উত্তম হল, সকল মুসলমানকে দোয়াতে অন্তর্ভূক্ত করে নেয়া। এর একটা উপকার এটাও হবে যে, যদি নিজে ঐ নেক বিষয়ের হকদার নাও হয় তবে নেক্কার মুসলমানদের ওসীলায় (তা) পেয়ে যাবে।



(১৭) হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযযালী (رحمة الله) বলেন: দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দোয়া করবেন এবং কবুল হওয়ার প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখবেন। (ইহইয়াউল উলুম, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৭০)।

_______________

কিতাব : ফয়যানে সুন্নাত

লেখক : আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)

সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন