সাপ বিচ্ছুর দংশনে ঝাড়ফুঁক ও এর মাধ্যমে বিনিময় গ্রহণ করা

 

সাপ বিচ্ছুর দংশনে ঝাড়ফুঁক ও এর মাধ্যমে বিনিময় গ্রহণ করাঃ

❏ হাদিস ১০:

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্নিত আছে, তিনি বলেনঃ


”একবার আমরা সফরে ছিলাম। একস্থানে আমরা অবতরণ করি। হঠাৎ একটি দাসী এসে বললোঃ


এ জায়গার গোত্রের নেতাকে সাপে কেটেছে। আমাদের লোকেরা এখন সবাই অনুপস্থিত। ঝাড় ফুঁক দিতে পারে এমন কেউ আপনাদের মধ্যে আছে কি? আমাদের মধ্য হতে একজন তার সাথে গেল। সে যে```ঝাড় ফুঁকও``` জানতো তা আমরা জানতাম না। তথায় গিয়ে সে কিছু ঝাড় ফুঁক করল। আল্লাহর অপার মহিমায় তৎক্ষণাৎ সে সম্পূর্ণ রুপে আরোগ্য লাভ করল। অনন্তর সে ৩০ টি ছাগী দিল এবং আমাদের অতিথেয়তায় অনেক দুধও পাঠিয়ে দিল। সে ফিরে আসলে আমরা তাকে জিজ্ঞাস করলাম:


তোমার কি এ বিদ্যা জানা ছিল? সে বললঃ আমি তো শুধু সুরা ফাতিহা পড়ে ফুঁক দিয়েছি। আমরা বললাম,  তাহলে এই প্রাপ্ত মাল এখনও স্পর্শ করো না। প্রথমে রসুলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞেস করো। মদিনায় এসে আমরা রসুল্লল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এ ঘটনা হুবুহু বর্ণনা করলাম।তিনি বললেনঃ এটা যে ফুঁক দেওয়ার সুরা তা সে কি করে জানলো? এ মালভাগ করো। আমার জন্যেও এক ভাগ রেখো।



তথ্যসূত্রঃ


● সহীহ বুখারী ”ফাযায়িলুল কুরআন” অধ্যায়।


● সুনানে আবু দাউদ



মুসলিম শরীফে হাদিসটি এসেছে এভাবেঃ



عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ أَنَّ نَاسًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانُوا فى سَفَرٍ فَمَرُّوا بِحَىٍّ مِنْ أَحْيَاءِ الْعَرَبِ فَاسْتَضَافُوهُمْ فَلَمْ يُضِيفُوهُمْ. فَقَالُوا لَهُمْ هَلْ فِيكُمْ رَاقٍ فَإِنَّ سَيِّدَ الْحَىِّ لَدِيغٌ أَوْ مُصَابٌ. فَقَالَ رَجُلٌ مِنْهُمْ نَعَمْ فَأَتَاهُ فَرَقَاهُ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَبَرَأَ الرَّجُلُ فَأُعْطِىَ قَطِيعًا مِنْ غَنَمٍ فَأَبَى أَنْ يَقْبَلَهَا. وَقَالَ حَتَّى أَذْكُرَ ذَلِكَ لِلنَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم-. فَأَتَى النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ. فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَاللَّهِ مَا رَقَيْتُ إِلاَّ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ. فَتَبَسَّمَ وَقَالَ وَمَا أَدْرَاكَ أَنَّهَا رُقْيَةٌ ثُمَّ قَالَخُذُوا مِنْهُمْ وَاضْرِبُوا لِى بِسَهْمٍ مَعَكُمْ


হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) উনার বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উনার একদল সাহাবী সফরে ছিলেন। তারা আরবের কোন গ্রাম দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তাদের কাছে আতিথ্য চাইলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করল। তারা বলল, তোমাদের কেউ কি ঝাড় ফুঁক জানে? আমাদের এই গ্রামের সরদারকে বিচ্ছু দংশন করেছে। এক সাহাবী বললেন, হ্যাঁ! আমি ঝাড় ফুঁক জানি। অতএব তিনি তাদের সাথে গেলেন এবং সুরা ফাতিহা পাঠ করে তাকে ঝাড়লেন। সে ভাল হয়ে গেল। তাকে এক পাল বকরী দেয়া হল। কিন্তু তিনি তা গ্রহন করলেন না এবং বললেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উনাকে জিজ্ঞেস করে নেই। অতএব তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উনার কাছে এসে সবকিছু বর্ণনা করলেন এবং বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ পাক উনার শপথ! আমি সুরা ফাতেহা ছাড়া অন্যকিছু কোন দুয়া পড়িনি। তিনি মুচকি হেসে বললেন এটা যে দুয়া তা তুমি কিভাবে জানলে? অতপর তিনি বললেন, তাদের থেকে বকরি গ্রহণ কর এবং আমাকেও একটা ভাগ দিও। (মুসলিম শরীফ ৭/২৬৯ হা. ৫৫৭০ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, কুরআন এবং দুআর সাহায্যে ঝাড় ফুঁক করে বিনিময় নেয়া জায়েয।)



❏ হাদিস ১১:



সহীহ মুসলিমের কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, ফুঁক দাতা হযরত আবু সাঈদখুদরী (رضي الله عنه)।


তথ্যসূত্রঃ


(তাফসির ইবনে কাসির ১ম খন্ডসুরা ফাতিহার ফযীলত)



❏ হাদিস ১২:



হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,


নবী করীম(ﷺ) এর সাহাবীদের একটি দল পানির কোন ঘাট ( কুপ) এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন,যাদের মধ্যে ( কুপওয়ালাগণের) একজনকে বিচ্ছু কিংবা সাপ দ্বারা দংশিত লোক ছিলো। তখন ঘাট বা কুপ ওয়ালাদের মধ্যে একজন তাঁদের নিকট এসে বলল, আপনাদের মধ্যে কেউ ঝাড়ফুঁক কারী আছেন? কুপ বা ঘাট ওয়ালাদের মধ্যে একজন লোক বিচ্ছু কিংবা সাপ দ্বারা দংশিত হয়েছে। তখন সাহাবীদের মধ্যে একজন কিছু সংখ্যক ছাগলের শর্তে গেলেন। অতঃপর সুরা ফাতিহা পড়ে ঝেড়ে দিলেন। সে সুস্থ হয়ে গেলো। তিনি তাঁর সঙ্গীদের নিকট ছাগলগুলো নিয়ে আসলেন। সাহাবীগণ তা অপছন্দ করলেন। তাঁরা বললেন, আপনি আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়েছেন? অবশেষে তাঁরা মদীনা মুনাওয়ারায় আসলেন। আর আরয করলেন,হে আল্লাহর রসুল! ইনি আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়েছেন। তখন রসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, নিশ্চয় পারিশ্রমিক নেয়ার সর্বাদিক উপযোগী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব।



তথ্যসূত্রঃ


●[সহীহ বুখারী]


●অন্য এক বর্ণনায় এমনি রয়েছে যে, তোমরা ঠিক কাজ করেছো। সেটা ভাগ করে নাও এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও এক ভাগ রেখো!”


●[মিশকাত শরীফ “বাবুল ইজারা” অধ্যায়,হাদিস নং২৮৫১]



❏ হাদিস ১৩:



عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ رَخَّصَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- لأَهْلِ بَيْتٍ مِنَ الأَنْصَارِ فِى الرُّقْيَةِ مِنَ الْحُمَةِ.


হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক আনসার পরিবারের লোকদের বিষক্রিয়ার ঝাড় ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন। (মুসলিম শরীফ ৭/২৬৪ হা. ৫৫৫৫ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, বদ নজর, ফুসকুড়ি, ব্রণ, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির দংশনে ঝাড় ফুঁক করানো উত্তম।)



❏ হাদিস ১৪:



جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يَقُولُ أَرْخَصَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- فِى رُقْيَةِ الْحَيَّةِ لِبَنِى عَمْرٍو.


قَالَ أَبُو الزُّبَيْرِ وَسَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يَقُولُ لَدَغَتْ رَجُلاً مِنَّا عَقْرَبٌ وَنَحْنُ جُلُوسٌ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-. فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرْقِى قَال مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَفْعَلْ



হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বনু আমর গোত্রের লোকদের সর্প দংশনে ঝাড় ফুঁক করার অনুমতি দিয়েছেন। আবু যুবাইর বলেন, আমি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহকে (رضي الله عنه) উনাকে বর্ণনা করতে শুনেছি, আমাদের একজনকে বিচ্ছু দংশন করল। আমরা তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে বসা ছিলাম। এক ব্যাক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ (ﷺ)! আমি ঝেড়ে দেই? তিনি বলেন, তোমাদের যে কেউ তার ভাইয়ের উপকার করতে পারে সে যেন তা করে।


(মুসলিম শরীফ ৭/২৬৭ হা. ৫৫৬৪ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, বদ নজর, ফুসকুড়ি, ব্রণ, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির দংশনে ঝাড় ফুঁক করানো উত্তম।)

__________________

কিতাবঃ তাবিজ ও ঝাড়ফুঁকের বিধান

লেখক, অনুবাদক, সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন