(১) আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “উন্নতমানের ‘আজওয়াহ’ (মদীনা মুনাওয়ারার সর্বাপেক্ষা মূল্যবান খেজুরের নাম) এর মধ্যে প্রতিটি রোগের আরোগ্য রয়েছে।” আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী رحمة الله عليه এর বর্ণনা অনুসারে, “সাতদিন যাবত প্রতিদিন সাতটি করে ‘আজওয়াহ’ খেজুর খেলে ‘কুষ্ঠরোগ’ (সাদারোগ) দূরীভূত হয়।” (ওমদাতুল কারী, ১৪ খন্ড, ৪৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৫৭৬৮)
(২) তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “আজওয়া খেজুর জান্নাত থেকে।” এটা বিষ-আক্রান্তকে আরোগ্য দান করে।” (তিরমিযী শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ১৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২০৭৩)
বুখারী শরীফের বর্ণনানুসারে, যে ব্যক্তি সকালে ৭টা ‘আজওয়া’ খেজুর খেয়ে নেয়, ওই দিন যাদু এবং বিষ তাকে ক্ষতি করতে পারবে না।” (সহীহ বুখারী, ৩য় খন্ড, ৫৪০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৫৪৪৫)
(৩) সায়্যিদুনা আবু হুুরাইরা رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত, খেজুর খেলে ‘কুলাজ’ রোগ (কুলাজকে ইংরেজীতে APPENDIX বলা হয়) হয় না।” (কানযুল ওম্মাল, ১০ম খন্ড, ১২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৪১৯১)
(৪) তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “সকালে নাস্তা রূপে খেজুর খাও! এর ফলে পেটের ক্রিমি মরে যায়।” (জামেউস সগীর, ৩৯৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৬৩৯৪)
(৫) হযরত সায়্যিদুনা রবী ইবনে হাসীম رضى الله تعالى عنه বলেন: “আমার মতে গর্ভবতী নারীর জন্য খেজুর অপেক্ষা, আর অন্যান্য রোগীর মধু অপেক্ষা উত্তম অন্য কোন বস্তুর মধ্যে শেফা (আরোগ্য) নেই।” (দুররে মানসুর, ৫ম খন্ড, ৫০৫ পৃষ্ঠা)
(৬) সায়্যিদী মুহাম্মদ আহমদ যাহবী رضى الله تعالى عنه বলেন: “গর্ভবর্তীকে খেজুর আহার করানো হলে-
اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ
পুত্রসন্তান প্রসব করবে, যে সুশ্রী, ধৈর্য এবং পরম স্বভাবের হবে।”
(৭) যে ব্যক্তি উপবাসের কারণে দুর্বল হয়ে গেছে, তার জন্য খেজুর অত্যন্ত উপকারী, কেননা, এটার মধ্যে খাদ্যপ্রাণ (খাদ্যের উপাদান) ভরপুর রয়েছে। তা আহার করলে তাড়াতাড়ি শক্তি ফিরে আসে। সুতরাং খেজুর দ্বারা ইফতার করার মধ্যে এ রহস্যও রয়েছে।
(৮) রোযায় তাৎক্ষণিকভাবে বরফের ঠান্ডা পানি পান করে নিলে গ্যাস সৃষ্টি হয়ে পাকস্থলী ও কলিজা ফুলে যাবার আশংকা বেশি থাকে। খেজুর খেয়ে ঠান্ডা পানি পান করলে ক্ষতির আশংকা মুক্ত হওয়া যায়। অবশ্য, খুব বেশি ঠান্ডা পানি পান করা যে কোন সময়েই ক্ষতিকর।
(৯) খেজুর ও খিরা অথবা শসা অনুরূপভাবে খেজুর ও তরমুজ একসাথে খাওয়া সুন্নাত। এতে ও হিকমতের মাদানী ফুল রয়েছে। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমাদের পালনের জন্য এ সুন্নাতটাই যথেষ্ট। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অভিমত হচ্ছে, “এতে জৈবিক ও দৈহিক দূর্বলতা দূর হয়ে যায়। মাখনের সাথে খেজুর খাওয়াও সুন্নাত। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৪র্থ খন্ড, ৪১ পৃষ্ঠা, হাদীন নং-৩৩৩৪)
এক সাথে পুরাতন ও তাজা খেজুর আহার করাও সুন্নাত। ‘ইবনে মাজাহ’ শরীফে আছে-যখন শয়তান কাউকে এমন করতে দেখে তখন এ বলে (আফসোস করে) “পুরাতনের সাথে নতুন খেজুর খেয়ে মানুষ মজবুত দেহ বিশিষ্ট হয়ে গেলো।” (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ৪০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৩৩০)
(১০) খেজুর খেলে পুরাতন ‘কোষ্টকাঠিন্য’ দূর হয়ে যায়।
(১১) হৃদরোগ এবং যকৃত মুত্রথলী, প্লীহা ও অন্ত্রের রোগ-ব্যাধির জন্য খেজুর উপকারী। এটা কফ বের করে দেয়। মুখের শুষ্কতা দূর করে। যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে এবং প্রস্রাব সহজে বের হতে সাহায্য করে।
(১২) হৃদরোগ ও চক্ষুর কালো ছানি রোগের জন্য খেজুরকে দানা সহকারে পিষে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
(১৩) খেজুরকে ভিজিয়ে সেটার পানি পান করে নিলে, কলিজার রোগ- ব্যাধি দূর হয়ে যায়। আমাশয় রোগের জন্যও এ পানি উপকারী। (রাতে ভিজিয়ে ভোরের নাস্তায় ওই পানি পান করবেন, কিন্তু ভেজানোর জন্য ফ্রিজের মধ্যে রাখবেন না।)
(১৪) খেজুরকে দুধের সাথে গরম করে খাওয়া সর্বোত্তম শক্তিশালী খাদ্য। এ খাদ্য রোগের পরবর্তী দূর্বলতা দূর করার জন্য খুবই উপকারী।
(১৫) খেজুর আহার করলে আঘাত তাড়াতাড়ি পূর্ণ হয়ে যায়।
(১৬) প্লীহা রোগীর জন্য খেজুর উত্তম ঔষধ।
(১৭) তাজা-পাকা খেজুর ‘হলদে’ (যা বমির সাথে তিক্ত পানি বের হয়) ‘এসিডিঢী’ শেষ করে।
(১৮) খেজুরের বিচিগুলোকে আগুনে পুড়ে সেগুলো দিয়ে মাজন তৈরী করে নিন। এটা দাঁতগুলোকে উজ্জল করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
(১৯) খেজুরের পোড়া বিচির ছাই লাগালে আঘাতের রক্ত বন্ধ হয়ে যায় এবং আঘাত তাড়াতাড়ি বরে ওঠে।
(২০) খেজুর বিচিকে আগুনে ফেলে ধেঁায়া নিলে অর্শ্বরোগের ক্ষতগুলো শুকিয়ে যায়।
(২১)খেজুর গাছের শিকড়গুলো কিংবা পাতাগুলোর পোড়া ছাই দ্বারা মাজন তৈরী করে দাঁত মাজলে দাঁতের ব্যথা দূর হয়। শিকড় ও পাতাগুলো সিদ্ধ করে তা দ্বারা কুলি করলেও দাঁতের ব্যথা দূর হয়।
(২২) যে ব্যক্তির খেজুর খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া SIDE EFFECT দেখা দেয়, সে আনারের রস কিংবা পোস্তা-দানা অথবা কালো মরিচের সাথে খেলে اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ উপকার পাওয়া যাবে।
(২৩) আধ-পাকা ও পুরাতন খেজুর একসাথে খেলে ক্ষতি করে। অনুরূপভাবে, খেজুরের সাথে আঙ্গুর কিংবা কিসমিস বা মুনাক্কা মিলিয়ে খাওয়া, খেজুর ও ডুমুর ফল একসাথে খাওয়া, রোগ উপশম হবার সাথে সাথেই দূর্বলতার সময় বেশী খেজুর খাওয়া এবং চোখের রোগে খেজুর খাওয়া ক্ষতিকর। একই সময়ে পাঁচ তোলা (অর্থাৎ- প্রায় ৬০ গ্রাম) অপেক্ষা বেশী খেজুর খাবেন না। পুরাতন খেজুর খাওয়ার সময় ছিড়ে ভিতরে দেখে নেয়া সুন্নাত। কেননা, তাতে কখনো কখনো ছোট ছোট লাল বর্ণের পোকা থাকে। সুতরাং পরিস্কার করে খাবেন। যেই খেজুরের ভিতর পোকা হওয়ার সম্ভাবনা হয় তা পরিস্কার ছাড়া খাওয়া মাকরূহ। (আউনুল মাবুদ, ১০ম খন্ড, ২৪৬ পৃষ্ঠা)
বিক্রেতা খেজুরকে উজ্জল করার জন্য বেশীরভাগ সময় সরিষার তেল লাগায়। সুতরাং উত্তম হচ্ছে খেজুরকে কয়েক মিনিট পানিয়ে চুবিয়ে রাখা। যাতে মাছির আবর্জনা ও ধুলি-বালি আলাদা হয়ে যায়। গাছ- পাকা খেজুর বেশী উপকারী।
(২৫) মদীনা মুনাওয়ারার খেজুরের বিচি এদিক-সেদিক ফেলবেন না। কোন আদব সম্পন্ন জায়গায় অথবা সমুদ্রে ফেলবেন কিংবা বপন করে দিবেন। অথবা যাঁতাকল দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে ডিব্বায় ভরে রেখে দিবেন এবং সুপারীর স্থলে ব্যবহার করে সেগুলোর বরকত লুফে নিবেন। ‘মদীনা মুনাওয়ারা ’ হয়ে আসা যে কোন জিনিস চাই তা দুনিয়ার যে কোন ভূখন্ডের হোক না কেন, মদীনা পাকের আকাশের নিচে প্রবেশ করতেই সেটা মদীনার হয়ে যায়। সুতরাং আশেকগণ সেটার প্রতি আদব করেন।
_______________
কিতাব : ফয়যানে সুন্নাত
লেখক : আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন